আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুঁজিবাজার প্রশিক্ষণ

দেশের পুঁজিবাজারকে যথাযথভাবে বিকশিত করতে হলে পেশাদারি ও জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা আনা প্রয়োজন। প্রয়োজন বিনিয়োগকারী ও কারবারিদের পুঁজিবাজারের মৌলিক কাঠামো ও অর্থায়ন শাস্ত্র সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান। আর এসব প্রয়োজন মেটানোর তাগিদ থেকেই গত বছরের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম)। এক বছর পেরিয়ে এসে দেখা যায়, এখনো তেমন কোনো গতিময়তা আসেনি প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে। দৃশ্যমান কর্মকাণ্ডের মধ্যে ১১টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজনই চোখে পড়ে।

নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও যেতে হচ্ছে। সীমিত জনবল ও নিজস্ব শিক্ষক-প্রশিক্ষক না থাকায় পুরোপুরিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। বিকল্প হিসেবে এখন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের খণ্ডকালীন অংশগ্রহণে চলছে এসব কার্যক্রম। তবে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী সভাপতি আবদুল হান্নান জোয়ারদার প্রথম আলোকে জানান, আগামী বছর থেকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে। প্রথমে এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে কোর্সের পাঠ্যক্রম তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন চলছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠদানের উপযুক্ত প্রশিক্ষক বাছাইয়ের কাজ। হান্নান জোয়ারদার জানান, ডিপ্লোমা কোর্সটি চালু হলে ইনস্টিটিউটটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রূপ পাবে। এরপর ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা (মাস্টার্স কোর্স) ও গবেষণা কার্যক্রম চালু করা হবে। এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগসূত্র ঘটানো হবে।

পেছনের কথা: প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। তবে এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের ধারণাটি প্রথমে আসে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির জন্য আলাদা একটি কোম্পানিও গঠন করা হয়। এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) তত্ত্বাবধানে একটু একটু করে অগ্রসর হয় এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রয়াস। ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে বিআইসিএমের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

নিয়োগ দেওয়া হয় লোকবল। আর ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনের বিজিআইসি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বিআইসিএম। বর্তমানে এই অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে। অবিলম্বে বিআইসিএমের ওয়েবসাইটও চালু করা হবে বলে জানান হান্নান জোয়ারদার। সরকারের পাশাপাশি বিআইসিএম প্রতিষ্ঠায় আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি), দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হলেও মূলত এটি সরকারি অর্থায়ন ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিত্ব। পদাধিকারবলে এসইসির চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। যেদিকে মনোযোগ: দেশে ব্যাংকিং খাত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাংকিং পেশার চাহিদা বেড়েছে। একইভাবে ভবিষ্যতে পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাত সুষ্ঠুভাবে বিকশিত হয়ে সংশ্লিষ্ট দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদাও তৈরি হবে।

সেই সঙ্গে বাড়বে এ খাতের জ্ঞান আহরণের আকাঙ্ক্ষাও। আর তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, সিকিউরিটিজ আইন, আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ, আর্থিক প্রতিবেদনের আন্তর্জাতিক মান, বাজার কারসাজি ও সুবিধাভোগী ব্যবসা, সিকিউরিটিজের মূল্যনির্ধারণী কৌশল, আর্থিক প্রতিবেদনে ফাঁকি, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব ও জবাবদিহি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গত এক বছরে ১১টি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণে অংশ নেন বর্তমান পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাধারণ বিনিয়োগকারী, সাংবাদিকসহ প্রায় তিন শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী। সমৃদ্ধ পাঠাগার: শুরু থেকেই একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়। এ জন্য দেশ-বিদেশ ঘুরে সংগ্রহ করা হয় আর্থিক ও পুঁজিবাজারবিষয়ক বিশ্বখ্যাত সব বই।

বিআইসিএম কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পাঠাগারে রয়েছে চার হাজারের বেশি বই, যার বেশির ভাগই সংগ্রহ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে। এসব সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে: ফিন্যান্স, অ্যাকাউন্টিং, অর্থনীতি, আইন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ কোষ ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, ব্যাংকিং, বিমা, নিত্যনতুন আর্থিক পণ্য, সিকিউরিটিজ আইন এবং সাধারণ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশ্বখ্যাত লেখক ও প্রকাশকদের বই। সরেজমিনে পাঠাগারটি ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে রয়েছে অক্সফোর্ড, ব্লুমবার্গ, হার্ভার্ড বিজনেস প্রেস, উইলি, নিউ ওয়াসি বুক করপোরেশন, এইচবিএস প্রেসসহ বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থার মূল্যবান বিভিন্ন বই। তবে কর্তৃপক্ষ জানায়, এখনো পাঠাগারটি পুরোপুরি চালু হয়নি। শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পাঠাগারটিও শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

জনবলকাঠামো: বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে সার্বক্ষণিক তিনজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের একজন নির্বাহী সভাপতি, একজন প্রশাসন ও অর্থবিষয়ক পরিচালক এবং অন্যজন হিসাব কর্মকর্তা। অবশ্য এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ৯৭ জন জনবল নিয়োগের একটি সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন করেছে, যা সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। প্রস্তাবিত জনবলকাঠামোয় অধ্যাপক পদে চারজন, সহযোগী অধ্যাপক পদে চারজন, সহকারী অধ্যাপক পদে আটজন, প্রভাষক পদে আটজন এবং অনুবাদক পদে দুজন কর্মকর্তা নিয়োগের আবেদন জানানো হয়েছে। দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের জন্য দেশের অভ্যন্তরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতনকাঠামো নির্ধারণেরও প্রস্তাব করেছে পরিচালনা পর্ষদ।

পাশাপাশি বিআইসিএমের স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে দুই একর জমি চেয়েও আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি অর্থ মন্ত্রণালয় ঘুরে এখন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.