It is too much tough to lead a very simple life হাসি আর কান্নার মাঝের দূরত্ব যে এত কম হতে পারে না দেখলে কখনই হয়ত বিশ্বাস করতাম না। আশ্চর্য এই মানবিক অনুভূতিগুলো। কিছুক্ষণ আগেও অঝোরে বৃষ্টিধারা ঝরছিল চোখদ্বয় দিয়ে। আর মুহুর্তের মাঝেই মুছে গেছে সে রূপ, চকচক করছে আনন্দে। যদিও সেই কষ্টের ছাপ মুছে যায় নি এখনও, চিবুকে চোখের জ্বলধারার পথ এখনও স্পষ্ট।
অজানা অচেনা নাম না জানা ৫-৬ বছরেরে দুই পিঠেপিঠি ভাইবোন এর কথা বলছি। প্রত্যন্ত গ্রামের উপর দিয়ে চলে যাওয়া পিচঢালা রাস্তার আশেপাশে কোথাও হবে ওদের বাড়ি।
আইসক্রিমওয়ালার ডাক শুনে নিজেদের অন্তরের লালসাকে দমন করতে না পেরে মায়ের বালিশের নিচ থেকে ১০ টাকা চুরি করে এসছিল ওরা আইসক্রিম খেতে। কিন্তু বিধাতাতো ওদের কপালে আইসক্রিম রাখেন নাই এইটা তো ওরা জানেনা। দুইটার দাম ১২ টাকা, কিন্তু ওদের কাছে আছে ১০ টাকা।
দোকানদার দিলো না। বার বার করে অনওরোধ করল দেয়ার জন্য। দিরলা তো না ই, উল্টো বিরক্ত হয়ে বলল "টাকা দেওনের মুরদ নাই তো খাইবার চাস ক্যান? যা বাপের কাছে গিয়া চা। "
এই শেষোক্তিটিই মনে হয় ওদের চোখের জলধারার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। বাপের কাছে গিয়ে চাইলে হয়তো পাওয়া যেত।
কিন্তু বিধাতার সাথে ওদের যে কোধায় সত্রুতা তা ওদের অজানাই রয়ে গেছে। বাপ যে নেই ওদের, বছর দুই হল চলে গেছে না ফেরার দেশে।
"ওই হালা কি ভাবছ এত? আইনস্টাইন হইয়া গেলি নাকি? চিন্তার সাগর লইয়া বইসছ মনে হয়। "
কে কথা বলে? ও আচ্ছা, ওইটা তো আমাকেই বলা। আমার বন্ধু আমাকে বলছে।
খনিকের জন্য মোহগ্রস্থ হয়ে পরছিলাম। আমরা ৭ বন্ধু মিলে মাইক্রোবাসে করে কোথায় যেন যাচ্ছি। রাস্তায় অনেক মজা করতেছি। কিন্তু হঠাৎ বাইরের কোন শব্দ কানে আসায় মাইক্রো থামাতে বলেছিলাম। সেই থেকেই ওরা একটু বিরক্ত।
সম্ভবত আইসক্রিমওয়ালা সেই কান ঝাঝালো, হৃদয় পোড়ানো কথাটিই মনে হয়। যাই হোক, নেমে গিয়ে ২ টা আইসক্রিম হাতে দিতেই ওদের এই কান্না-হাসি মাখানো অপূর্ব সুন্দর অনুভূতিটুকু দেখার সৌভাগ্য হল। সাথে দু চারটে কথাবার্তা হল।
ফিরে এসে সিটে বসেই এই কথাগুলো ভাবছিলাম। আচ্ছা আসলে দোষটা কার? গরীব হয়ে আইসক্রিম খাইতে চাওয়া দোষ? নাকি মা মানুশের বাসায় কাজ করে কম টাকা আয় করে এইটা দোষ? নাকি ওদের বাপ মরে যাওয়াটা দোষ? নাকি দোষটা ওদের দাদার? যে কিনা মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেনাই।
গ্রামর মাস্টার ছিল, কোনমতে তো সংসারটাতো চলে যেত, ক্যান গেল? এখন নিজের উত্তরসূরিরা টাকার কাছে পরাধীন্।
আচ্ছা আমি এদর নিয়ে ভাবতাছি কেন? ওদের আইসক্রিম ই বা কিনে দিলাম কেন? চিনিনা, জানিনা, কিসের মায়ায় পেয়ে বসেছিল আমাকে? নাকি শংকাগ্রস্থ হয়ে? আমি যদি আজ মারা যাই, অসম্ভব কিছু না রাস্তাঘাটের যে অবস্থা, তখন আমার ছোটবাবুটার যদি আইসক্রিম খেতে মনে চায় তখন কে কিনে দিবে?
তাইতো! এইটাতো চিন্তা করিনাই। ছোটখাট চাকরী করি, সম্পত্তি বলতে কিছু নাই। বউ ওতো শিক্ষিতও না। আমি মারা গেলে তো কিছু করতেও পারবেনা।
চাকরী কে দিবে? খাবে কি? বাবুটাকে পড়াবে কিভাবে? নাকি আর একটা বিয়ে বসবে? বাবুটার কি হবে তাহলে?
না আর পারছিনা চিন্তা করতে। মাথাটা জ্যাম হয়ে গেছে। বুকের ভিতর পাথর পড়ে আছে মনে হয়। কি লাভ এইসব চিন্তা করে? বাদ সব বাদ। যা হবার হবে।
ওই মামা, কি গান জানি চালাইতাছিলা, ধিনকা চিকা না?
ড্রাইভারঃ হ মামা, ঐডাই।
আবার চালাও, সাউন্ড বাড়াও।
হৈ ধিনকা চিকা. ধিনকা চিকা, ধিনকা চিকা. ধিনকা চিকা হে হে হে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।