আমার ব্লগ এ কিছু আজব আজ লেখা পোস্ট করবো যা কিছুটা ভিন্ন হলেও জীবনের করুণ সত্যি। কিছুটা কাল্পনিক আবার কিছুটা বাস্তবের সমন্নিতরুপ থাকবে প্রতিটি লেখায়। ......। অবশেষে চোখ খুলল রায়হান। প্রায় তিন দিন পর।
চোখ খুলেই কিছুটা অবাক সে। তার আশে পাশে শুধু সে কিছু যন্ত্রপাতি আর নিজেকে একটা সাদা বিছানার মধ্যে শুয়ে এসে দেখতে পেল। ঘর বন্ধ, চারদিকে কেমন যেন হাহাকার আর অনেক অস্থির বলে মনে হলও। কি হয়েছে তার?-প্রশ্ন করে নিজেকে। করতেই যেন তার মনে ব্যাপক চাপ পরে।
কিছুটা ঝাপসা ঝাপসা লাগে চারপাশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যায় সে। তখন সে ধীরে ধীরে যেন তার পূর্বদিনগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনে পড়তে থাকে ওর।
চারদিকে একটা খুশির আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবাই আজ অনেক খুশি।
বিষয়টি ছিল খুশির, তাই সবাই যেন আজ একটু বেশি। আর খুশি হবেই না কেন? আজ যে, পরিবারের বড় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু খুশির আমেজের মধ্যেও কিছু টা আক্ষেপ আছে রায়হানের। থাকবে না কেন? বড় বনের বিয়ে অথচ মাত্রও দশদিন পরেই। এত তাড়াতাড়ি কি করে সে বিয়ের প্রস্তুতি নিবে সে? বিয়েতে যে আলাদা এক ধরনের প্রস্তুতি দরকার তার।
বিয়ে যে হতে যাচ্ছে, তার বড়বোনের, যার আদরের ভাই সে। তাই সে চেয়েছিল কিছুটা আলাদা করতে। কিছুটা ভিন্ন, কিছুটা দারুণ। কিন্তু সেসব চিন্তা করার সময় কথায় এখন? সব কিছুই যে এখন শুধু সময়ের ব্যবধানে শেষ হয়ে যাবে। সময়ই তো পাবেই না রায়হান।
কিন্তু এই দশ দিনের মধ্যেই যত টুকু সম্ভব যা কিছু আয়োজন করার করে নিলো সে। অনেক বেছে-টেছে জামা-কাপর কিলল সে। আর নিজের জমানো টাকা দিয়ে কিনল ভিন্ন একটা উপহার যা থাকবে তার বোনের জন্য। উপহারটি সে এমন ভাবেই পছন্দ করেছিল জাতে দেখার সাথে সাথেই বুঝতে পারে উপহারটি কার দেয়া। অনেক কিছুই তোঁ জানা ছিল তার, টাই উপহারটি বাছাই করতে মোটেও ঝামেলায় পড়তে হননি তাঁকে।
কিন্তু কিছু-একটা তাঁকে কিছুদিন থেকেই কষ্ট দিচ্ছিল যা সে কাউকেই বলতে পারছিল না। বিয়ের সকল প্রস্তুতি আজ শেষ। সবাই এসে খুশির আমেজে। কিন্তু খুশি থেকেও যেন খুশি নেই রায়হানের মাঝে। কি নিয়ে যেন আজকাল ডুবে থাকে সে।
কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলে কিছু হয়নি ওর।
ঘুমিয়েছিল নিজের ঘরেই। কাক-ডাকা ভরের রোদের আলোয় আজ তার ঘুম ভাঙল। বাসায় অনেক আত্মীয়-সজনদের ভিড়। তাই নিজের ঘরকে চিনতে আজ কিছুটা কষ্ট করতে হল তার।
কিন্তু কি আর করা, কাউকে কিছু বলতে পারে না। সবাই তো তার আপনজন। কাউকে কিছু বলে কষ্ট দেয়ার মতো ছেলে ছিল না রায়হান। তাই সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে বলেই ধরে নিলো সে। আর তো মাত্রও তিনদিন, কারণ আজ রাতেই তো তার বোনের গায়ে-হলুদের অনুষ্ঠান।
তার মধ্যে অনুষ্ঠানটিও তার বাড়ির ছাদে।
অনুষ্ঠানের দায়িত্বগুলো ভাগ করে দেয়া হয় আগেই যাতে কোন সমস্যা না হয়। অনুষ্ঠানের খাবার দিকটা খেয়াল রাখার দায়িত্ব পড়ে রায়হানের ওপর। অনুষ্ঠানের সন্ধ্যা থেকেই কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে এসে সে। কিছু একটা চিন্তা তাঁকে অনেক আগে থেকেই ঢুকচ্ছে।
এক পর্যায়ে কষ্টটা সহ্য না করতে পেরে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে। ছেড়ে-দিয়েছিল অনেক আগেই কিন্তু যখনি সে কষ্ট অনুভব করে তার হৃদয়ে তখনই সে বন্ধুত্ব করে ধূমপানের সাথে।
একটা সময় ছিল যখন সে নিজেই ধূমপানকে পছন্দ করত না। তার অপছন্দ পরিমাণটা এতই ছিল যে, সে এর গন্ধটাও সহ্য করতে পারত না। কিন্তু আজ সে একজন নিয়মিত ধূমপানকারী।
ধূমপানের শুরু হয় কলেজ জীবন থেকে। কলেজ জীবনে একবার প্রেমে পড়ে সে। প্রথমে সেই মেয়েটি ছিল তার বন্ধু। কিন্তু ধীরে ধীরে কখন যে এমনটা হয়, নিজেও বুঝতে পারে না। সেই মেয়ের হাসি ছিল, একটি ছোট বাচ্চা যখন কোন কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে হাসে তেমন।
সব কিছু তেই একটু বেশি চাঞ্চল্যটা কাজ করত তার মধ্যে। এভাবে চলে যায় অনেক দিন। প্রায় কলেজ জীবন শেষ, এমন সময় তার মনে হয়, মেয়েটাকে তার বলা দরকার। কিন্তু যখন বলতে যায়, তখন জানতে পারে যে, মেয়েটি আরেকটা ছেলেকে ভালবাসে। সেটা শোনার পর কোন কষ্ট পায়না।
হয়তো পায় কিন্তু বিষয়টা কাউকে বলার দরকার মনে করে না।
কিন্তু সেই কষ্টকে ভুলার জন্যই সে নিজের বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। সবাই জানার চেষ্টা করলেও কিছুই বলে না সে। দিনের পর দিন এভাবে ছলতে থাকে। ধীরে ধীরে সে জড়িয়ে পড়ে ধূমপানের সাথে।
এমন ভাবেই জড়িয়ে পড়ে যে, কষ্ট পেলেই সে ধূমপান না করে থাকতে পারে না। বিষয়টি শুধু জানত তার বিয়ে হতে যাওয়া বন।
তবে একটা বদ অভ্যাস ছিল রায়হানের। সে কখনো সিগারেট খেয়ে পা দিয়ে পা দিত না। তাই অভ্যাসের কারণে সেইদিন রাতেও সে এই কাজ টা করে না।
বরং এইভাবেই ফেলে দেয়। কিন্তু এমন একটা জায়গায় ফেলে যে সেখান থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়। যা বাড়ির ছাদের একটি অংশে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে ওর বোনের বসার কথা।
রায়হান তখন হঠাৎ করে চোখ খুলে এবং দেখতে পায় ওর সাথে ওর বাবা-মা দাঁড়িয়ে এসে একটি অন্যরকম দৃষ্টি নিয়ে। তখনি তার ছোট বোন রায়হানকে জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠে।
ও মনে করেছিল হয়তো ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে ও কাঁদছে। রায়হান জিজ্ঞাসা করলো, বিয়ে কি ঠিক মতো হয়ে গেল?
কিন্তু বলার সাথে সাথেই যেন সবার চোখ দিয়ে নীরবেই পানি পড়তে লাগল। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না ও। ছোট বোনটি বড় বোনের রেখে যাওয়া উপহারটি এনে ওকে দিল। ছোট সেই প্রাণবন্ত বোনটি বলে, ভাইয়া, ভাইয়া, এই নাও তোমার উপহার, বোলো আপি রেখে গেছে তোমার জন্য।
উপহারটির প্যাকেট খুলে একটি সুন্দর ও ভাইবোনের সম্পর্কের এক অনন্য ছবি আর সাথে একটি চিঠি। চিঠিটি পড়ে যেন চোখের পানি পড়তে শুরু করে তা যেন থামার ছিল না।
“ভাই, আজ চলে যাব তোমায় ছেড়ে অন্য এক জায়গায়। কিন্তু যাওয়ার আগে একটি অনুরধ করতে চাই তোমায়। জানি এমন একটা পর্যায় গিয়ে তুমি ধূমপান শুরু করেছে যা তোমার না, বরং সবার খতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তাই ছোট্ট ভাইটি আমার, তোমার বড় বোনের একটি কথা রাখো, আমি জানি না কেন এবং কিভাবে তুমি া পথে পা দিলে, শুধু চাই তুমি যেন ফিরে আশ এই পথ থেকে। যদি ভাবো এটি আমার শেষ চাওয়া তোমার কাছ থেকে তাহলে এটি তাই। “
বোনের এই শেষ আশাই যে প্রকৃত অর্থে শেষ আশা হয়ে রবে টা হয়তো বোনেরও জানা ছিল ন। কিন্তু মনে মনে খুশি হয়েছিল সে কারণ তাই ছিল অমন। মুহূর্তেই মনে পড়ে সেই দিনের রাতের কথা।
হুট করে বলে বসে সে বোনের সাথে কথা বলতে চায় এবং এইটাও জিজ্ঞাসা করে তার সত্য সেই বোনটিকে, সে বোনকে উপহারটি দিতে ভুলে যায়নি তো?
অনেক বার বলার পরও যখন কেউ তাঁকে কোন উত্তর দিল না, তখন কিছুটা ভয় কাজ করলো তার মধ্যে। তখন ওর ছোট্ট বোনটি বলে উঠল, বোনকে তো সবাই মিলে মাটির ঘরে রেখকে এসেছিল সবাই। এইবার এর বুঝতে বাকি রইল না কেন সবাই চুপ করে আছে। কারণ, ছোট্ট কাল থেকেই তার ছোট্ট বোনটি কবরকে বলে মাটির ঘর............। ।
মনের মধ্যে তখন শুধু একটি প্রশ্নই ঘুরতে থাকে, এইটা কি ছিল? সাধারণ মৃত্যু নাকি হত্যা? কষ্ট বেশি পাওয়ার তো বেশি কথা ছিল তার বাবামায়ের, কিন্তু পাচ্ছিল ও। এর কেউ জানুক র নাই জানুক ও তো জানত কেন তার বোনটি মারা গেল.........!
আজই হসপিটাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছিল। কিন্তু ও বাসায় না গিয়ে চলে যায় তার বোনের সেই মাটির ঘরের পাশে। বোনকেও তো একটি চিঠি দিতে চেয়েছিল কিন্তু বোন তো পড়তে পারল না......। হইত এই আক্ষেপটিও থাকবে ওর।
চিঠিটিতে লিখেছিল-
“নিদারুণ এই পথে কখনই আশার ইচ্ছা সিল না। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু কারণে করিয়ে যাই এই পথে, শুরু করি ধূমপান। জানি পসন্দ নয় তোমার। কিন্তু এটি ছাড়াও যে এখন একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার আমার জন্য। তবুও, কথা দিচ্ছি, আর কোনদিন করবো না।
এটি হবে তোমার বিয়েতে তোমার এই আদরের ছোট ভাইয়ের উপহার”
একদিকে চাওয়া আর আরেক দিকে উপহার। সত্যি যেন ছিল দুই ভাইবোনের মধ্যের মনের মিল। অনেক বার মানা করেছিল ওকে ওর বোন। কিন্তু শুনেনি কখনো। যদি শুনত তাহলে হয়তো আজ এমন একটা দিন দেখতে হতো না রায়হানকে।
কেন আমরা তখন বুঝি ও উপলব্ধি করি কোন কিছু যখন সেই জিনিসটা আমাদেরকে কষ্ট দেয়।
দুইটি প্রশ্ন আজ সবার কাছে। আসলেই কি তাহলে ভালবাসা মানুষকে এতই কষ্ট দেয় যার ফলাফল রায়হানের এমন একটা হয় যা ওর জীবন থেকে কেঁড়ে নিলো প্রিয় বোনকে। .........এটি সবার কাছে হয়তো ছিল ভাগ্যের একটি খেলা। কিন্তু রায়হানের কাছে হত্যার চেয়ে কম কিছু কি ছিল? দোষ তো ছিল রায়হানের, তবুও কেন শাস্তি পেল ওরই বোন? আজ হইত কারো কাছেই এই প্রশ্নের জবাবটি নেই।
কিন্তু সাড়া জীবনের জন্যই কিন্তু রায়হান নিজের ও ওর বোনের কাছে হয়ে থাকবে, অতৃপ্ত এই ক্ষমার মধ্যেই যেন রায়হানকে বেছে থাকতে হবে অতৃপ্তি একটি কষ্ট ভরা জীবন নিয়ে যা সাড়া জীবন ওকে কষ্ট ও ধিক্কার ছাড়া কিছুই দিবে না। যখনি দেখবে কাউকে ধূমপান করতে হয়তো মুখ-ফুটে বলতে পারবে না কিছুই, কিন্তু ওকে মনে করিয়ে দিবে সেই দিনগুলো কথা।
দ্বিতীয়ত, আমরা কেন তখন কোন জিনিস থেকে শিক্ষা নেই যখন সেই জিনিসটি আমাদের মনে এমন একটি দাগ টেনে দেয় যা কখনই সম্ভব হয়না। কেন? প্রশ্ন রইলো সবার কাছে.....................। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।