শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... কোটরে পড়া চোখ দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে, ভাই রাতে কি ভাল ঘুম হয়না? আমি যখন বলি এই ঘুম হারামজাদার যন্ত্রনার জন্য অর্ধেক পড়া বইয়ের সংখ্যা এখন প্রায় পনের। তারা আমার বালিশের পাশে স্তুপ হয়ে আছে।
দু এক দিন আগে সৈয়দ আবুল মকসুদ সাহেব আমাদের এলাকায় বেড়াতে এসেছিলেন। পরিচয়ের মধ্যে এক পাকা দাড়ি চুলের শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে বললেন,"পাকা দাড়ি চুল মানুষকে বিভ্রান্ত করে। একটা মানুষের আসল নকল বয়স বুঝতে দেয়না।
আমি কিছুদিন দাড়ি রেখেছিলাম । তখন আমাকে এখনকার চেয়ে বেশি বৃদ্ধ মনে হতো। "
আমারও তাই ধারনা। পাকা চুলের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে যদিও এখনো কাঁচা চুলের সাথে প্রতিদন্দিতা করতে পারছেনা কিন্তু কিছু দিন পরেই যে করবে তার লক্ষ্যন সুস্পষ্ট। এই সুস্পষ্ট পাকা চুলের দিকে তাকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে।
ভাই আপনার বয়স কত?
আমি হেসে বলি চুল দেখেই তো বুঝতে পারছেন?
আমার হাড়জিরজিরে শরীরটা দেখে মানুষ দন্দে পড়ে। প্রশ্ন করে তুমি কোথায় পড়? তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি তারা একটা স্কুলের নাম আশা করে। যখনই আমি বলি আমিতো গ্রাজুয়েশান শেষ করে এখন একটা জব করি। তখন দ্রুত অপ্রস্তুত হওয়া থেকে বাঁচতে প্রায়ই আবোল তাবোল দু একটা কথা বলে ফেলে। আর যারা কম ভন্ডামি করতে পারে।
তারা বলে আপনাকে দেখে আমি মনে করেছিলাম কোন পিচ্চি মানুষের মতো। হা হা হা... এবং হি হি হি...। ব্যপারটা যেহেতু আমি জানি এবং এটা নিয়ে আমার তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। তাই আমিও হা হা হা...হি হি হি...। এভাবেই চলছে।
এই বৈচিত্রের জন্য লোকজনের আচরনেও অনেক বৈচিত্র চলে আসে। অফিস গুলোতে সবচেয়ে বেশি এই সমস্যার মুখমুখি হই। আমার অফিসিয়াল পরিচয় দেয়ার আগে কখনো আমি বসতে পেরেছি এমন হয়নি। কলেজ গুলোতে তবু প্রন্সিপাল পরিচয় পাওয়ার পরেই বসতে বলে । কিন্তু স্কুল গুলোতে তা হয়না।
আমি অন্তত ২০টি সরকারী বে-সরকারি বড় বড় স্কুলগুলোতে পরিচয় দেবার পরেও বসতে বলার ভদ্রতাটা পাইনি। এর উল্টা ঘটনা দেখা যায় নিয়মিতই এখান সেখানে রাস্তা ঘাটে।
একটা বডি বিল্ডার চেহারা আর কোট টাইকে কেন এত মূল্যায়ন করা হয়?
এটা আমার মনেও প্রশ্ন। কেন?
কারনটা আমার কাছে যেমন মনে হয়। কম বেশি সবাই শক্তের ভক্ত? ডাকসাইটের একজন লোক নিশ্চয় ডাকসাইটের কোন ঝামেলা করে ফেলতে পারে।
একটা নিরিহ চেহারার মানুষ কখনোই তা পারবেনা।
আমাদের যারা দুইশত বছর শাসন করলো সেই ব্রিটিশদের প্রতি আমাদের এক প্রকার ঘৃনা থাকার কথা। কিন্তু সেই ঘৃনা এখন ভালবাসা হয়েছে। ঘৃনা ভালবাসায় রুপান্তরিত হওয়া ভাল তবে সবসময় নয়। আমরা পাকিস্তানকে ঘৃনা করি।
আমরা যুদ্ধপরাধীদের ঘৃনা করি। তাই আমৃত্যু তাদের ঘৃনাই করে যাব। ভালবাসা এখানে হতে পারেনা। হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। আমাদের দেশের উপর যারা কাঠি ঘুড়াচ্ছে তাদেরও আমরা ঘৃনা করবো।
কিন্তু হায় আমরা ক্রমশ তাদের প্রমেই বেশি হাবুডুবো খাচ্ছি। সেই মানুষ গুলোকেই আমরা আদর্শ নামে পূজা করছি। আমাদের নিজেদের বিকলাঙ্গ হিসেবে কল্পনা করি।
কিন্তু কেন?
স্বভাবতই আমাদের দেশের নব্বই ভাগ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগে। ভৌগলিক পরিবেশ এবং নানান কারনে আমাদের শারীরিক আকার ছোট,কাল এবং কিছুটা খিটমিটে মনে হয়।
বাঙ্গালি যেহেতু ইংরেজদের(বিদেশি) মতো হতে পারছেনা তাই তাদের আফসুসও থেকে যাচ্ছে। এই আফসুস থেকে একটা হিনমন্যতা তৈরি হচ্ছে। যা বৃটিশদেরই তৈরি। বৃটিশরা আমাদের সাথে যে সব আচরন করেছিল। এবং যেই আচরনের জন্য আমরা বিদ্রুহী হয়ে উঠেছিলাম।
এসব এখন ইতিহাস। এখন যারা একটু সুবিধার অবস্থানে আছেন তিনিই নিজেকে বৃটিশ ভাবেন। এটা হয়তো নিজের অজান্তেই । তাই সব সময় তার চারপাশের মানুষ থেকে নিজেকে আলাদা করার একটা স্বভাব নিজেই আয়ত্ব করে নিয়েছেন। আমি আমার ভাইয়ের থেকে ভাল চাকরি করি।
বন্ধুর চেয়ে ভাল বাড়িতে থাকি। এবং হলিউডের নায়কের প্রায় কাছাকাছি আমার চেহারা। অন্যরা তো সাধারণ। এখন সাধারণ থেকে তিনি কতটা উপরে এর একটি প্রতিদন্ধিতা নিজের মাঝেই করে যাচ্ছেন সব সময়। এই কাজটার সহজ উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন কোন লোককে কতটা অবজ্ঞা করা যায়।
এই অবজ্ঞার মাপকাঠিই হচ্ছে সাধারণ এবং সুবিধা অবস্থানের লোকটির। নিজের বাহুর পেশিকে সব সময়ই বিশাল করে দেখে।
হুমায়ুন আজাদের কথাটা মনে পড়ে। " আমরা বাঙ্গালীরা অফিসে গেলে কখনো কাউকে বসতে বলিনা। ,বাসায় দড়জায় নক করলে বলে কি চাই?"
কিন্তু কেন এমন হয়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।