'' তোকে কতবার বলছি আমার সাথে যখন থাকবি তখন সিগারেট তানবি না । ধুর হালা , একটা শেষ হইলো কেবল এখন আবার আরেকটা ধরাইতেছস । আমার কথা শুইনা কিরা উঠছে , না ? ''
'' আমার সিগারেত্র আমি টানুম যখন খুশি তখন টানুম । যার সামনে ইচ্ছা তার সামনে টানুম । কোন সমস্যা ? ''
'' তাহলে আমার ইচ্ছা অনুযায়ী আমিও তোর সামনে থেকে চলে যাচ্ছি ।
''
'' নাহ । আমার সামনে থেকে আমার অনুমতি ছাড়া কেউ যাইতে পারে না । ''
'' দুই ফুত ঘর না , তার মধ্যে আবার রাজত্ব ? ''
ঘরটা দুই ফুট না আরও বড়ই । এটি একটি পুরাতন গ্যারেজ । একান্ত আপন ও জরুরি কোন কথা আমাকে বলতে হলে বাপ্পি আমাকে এই জায়ায় নিয়ে আসে ।
আইজন্ন আমার চলে যাওয়া হয় নি ।
মাঝে মাঝে ওকে দেখি রাস্তার মোড়ে কয়েকটা ' আজব ' ছিরিয়া ধাঁচের পুলাপাইনের সাথে আড্ডা দিতেছে । তখন যদি আমি ওর কাছে যাই ও আমাকে তাড়িয়ে দেয় । যাচ্ছে তাই ব্যাবহার করে । তখন মনে হয় ও কি আসলে আমার বন্ধী না শত্রু ? কিন্তু যখন আমাকে খুঁজে বের করে এই গারেজে নিয়ে আশে একান্তই আপন কিছু কথা বলতে তখন নিজেকে ওর জীবনের একটি অংশ মনে হয় ।
'' ওই , দুই দিন ধইরা কিছুই খাই না । ভাত খাওয়া তোর বাসায় । ''
আমি তো শুনে পুরোই থ । তখন আমি বললাম , '' কেন কি হইছে ? ''
উত্তর পেলাম না । জানতাম উত্তর পাবো না ।
ওর কাছ থেকে সকল প্রশ্নের উত্তর আশা করা বোকামি ।
বাসায় ওকে নিয়ে গেলাম । আমাদের বাসায় ওর বড়ই দুর্নাম আছে । তবুও আম্মাকে মানালাম । ভাত খাওয়ালাম ।
হঠাৎ একটা জিনিস মাথায় খেলে গেলো । ও তো আমার সামনে সিগারেট টানছিল প্যাকেট থেকে বের করে । তাহলে ?
'' ওই ব্যাটা বাপ্পি
ভাত পাও না চা খাও ,
সাইকেল দাবড়াইয়া পায়খানায় যাও ? ''
'' মানে কি ? ''
'' মানে বুঝো না , না ?সিগারেট টানতে পারো টাকা দিয়ে কিনে কিন্তু ভাত খাইতে পারো না ? নাক খাইয়া থাকো ? ''
'' টাকা দে । ''
'' আমার প্রশ্নের উত্তর দে , আগে । এরপর টাকার প্রসঙ্গ ।
''
বাপ্পি তখন পকেট থেকে এন্তিকাটার বের করে । ভিতর থেকে ব্লেড ঠ্যালা দিয়ে বের করে আমার দিকে তাক করে । টাকা না দিলে সে আমার গায়ে পোঁছ মারবে । প্রথমে আমি ফাজলামি হিসেবে নিলেও পরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলাম । আমার মানিব্যাগে অল্প কিছু টাকা ছিল ।
তাই ওকে দিয়ে দিলাম । এরপর বাপ্পি বিদায় হল । এই ঘটনার রেশ আমার মনে অনেক গভীর এক দাগ কেটেছে । অনেক চেষ্টা করেও ভুলতে পারছিলাম না ।
কোন এক কারণে আব্বা তাড়াহুড়ো করে বাসা পরিবর্তন করে অনেক দূরে নিয়ে যায় আমাদের ।
কিন্তু আমার মনে একটা সংশয় থেকে যায় শেইদিনের সেই ঘটনা কি আব্বা জেনেছে কোনভাবে ?
প্রথম দিকে বেশ খুশি খুশিই লাগছিল যাক পিছু ছুটলো । । কিন্তু দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে মনে হতে লাগলো আমি ছাড়া ওই পাগলার আর কে আছে মনে কিছু কথা বলার । কিছু প্রশ্ন মনে জাগতে লাগলো হ্যাঁ বোধক ও না বোধক উত্তর দিতে থাকলাম মনে মনে ব্যাখ্যাসহ ।
সেই প্রশ্নগুলো বিভিন্ন ধরনের ।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রশ্ন । হয়তো একই প্রশ্নের ভিন্ন উত্তর । হয়তো ভিন্ন ব্যাখ্যা বের করতাম ।
==
এক এক করে বেশ কটি বছর চলে গেলো কলেজ জীবনের বেরি টপকিয়ে ইউনিভার্সিটিও পাড় করলাম । পা রাখলাম চাকরির জীবনে এর কিছু কাল পরেই ফুলের সন্ধানে পেয়ে তাকে নিজের করে নিলাম ।
শুরু হল নতুন সংসার নতুন জীবন , শুরু হল ভালোবাসার , ঝগড়ার , মধুরতার দাম্পত্য জীবন ।
কত কিছু ঘটে গেলো কিন্তু সেই পাগলটাকে ভুলি নি । আমি আমার উনাকেও বলতে ভুলিনি সেই পাগলের কথা ।
স্পষ্ট মনে আছে সেদিন শুক্রবার ছিল । একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠলাম আমরা দুজনে ।
সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা ছিল । বৃষ্টি হলে অনন্যার সাথে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো বলে মনে মনে ঠিক করে রাখলাম । বৃষ্টির আবহাওয়ায় খিচুড়ি খেলাম তৃপ্তি করে । খাওয়া শেষে অনন্যা গেলো চা আনতে । তখন রং চা খেতে কেন যেন ইচ্ছা করছিলো ।
হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠলো । দরজা খোলার পর একটা বজ্রপাতের শব্দ পেলাম । শব্দটা বিকট ছিল । আশেপাশে কোথাও পড়েছে কিন্তু তা আমার মাথায় পড়েছে বললেও খুব ভুল বলা হবে না । কারণ দরজায় বাপ্পি দাঁড়িয়ে ছিল ।
এতটুকুও পরিবর্তন হয় নি চেহারার যার জন্য সহজেই চিন্তে পেরেছি ।
আমার হতভম্ব ভাব কাটতে বেশ সময় লেগে গেলো । ও দরজার বাহিরে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ । ভিতরে এনে ওকে বসালাম । ওকে খুব নিশ্তেজ লাগছিল ।
বুঝলাম কোন সমস্যা আছে । অনন্যাকে ওর সম্পর্কে সব কথাই বলেছিলাম । ও আজ বাড়িতে এসেছে বললে হয়তো ভয় পেটে পারে তবুও ডাকলাম ।
'' অনন্যা , এদিকে আসো । আমার সেই পাগল বন্ধু বাপ্পি এসেছে ।
''
অনন্যা একটু ভয়ে ভয়েই ঘরে ঢুকল । সালাম দিয়ে বাপ্পির কুশল জিজ্ঞেশ করলেও বাপ্পি যেমনটি ছিল তেমনটিই রয়ে গেলো । অনন্যাকে আমাদের জন্য চা আনতে বললাম ।
'' কিছু কথা বলবো '' বাপ্পি বলে উঠলো । গলার শরেও পরিবর্তন এসেছে ,
জিজ্ঞেস করলাম , '' কিরে সিগারেট আনাবো ? ''
'' না ।
'' উত্তরটা ওর সাথে মানানসই নয় । আজ ওর সাথে মানানসই নয় এই রকম অনেককিছুই দেখতে পাচ্ছি । তাই বেশি চমকালাম না ।
ও - ওর একান্ত কিছু কথা গারেজে বলতো কারণ ও অন্যের মুখ দেখে সে সকল কথা ও বলতে পারে না । তাই আজ বুঝলাম এখানে ওকে বসিয়ে রাখলে ও বসেই থাকবে কিছুই বলবে না ।
তাই বাপ্পিকে লাইব্রেরী রুমে [ আমার নিজের বাসার একটি ছোট অংশ ] নিয়ে গিয়ে সব পরদা টেনে দিলাম , দরজা বন্ধ করে দিলাম , লাইত বন্ধ করলাম ।
বললাম , '' শুরু কর । ''
'' কথাগুলো কাউকে না বলে শান্তি পাচ্ছি না । তাই তোর ঠিকানা বের করে চলে এলাম । তোর কাজ শুধু শোনা ।
আমি কথা শেষ করেই উঠে চলে যাবো । ''
'' শর্ত মঞ্জুর । ''
'' হাজারটা মেয়ের মধ্যেও ও ছিল আলাদা , ছিল অনন্য , ছিল মহনীয় , মাতাল করা রুপের অধিকারী । দেখেই ওকে পছন্দ করে ফেললাম । প্রেম বলবো না কারণ জিনিসটা শুধু আমার পক্ষ থেকেই ছিল ।
ওকে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে গেলাম । ওর সম্বন্ধে জানার ইচ্ছা আমাকে ঘিরে ধরল । ওর বান্ধবী আবার আমার এক বন্ধুর ছোট বোন । ওর ছোট বনে কাছ থেকে মহনীয় মেয়ের সকল তথ্য যোগাড় করলাম । তার নাম ছিল ইফা ।
দুই অক্ষরের ছোট নামের মানুষটি যে এতো রূপবতী তা বোঝা মুশকিল ।
আমি তখন কলেজ শেষ করে কোন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পেরে ছন্নছাড়া । ইফা তখন কলেজে নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রী । আমার এই পরিস্থিতিতে আমি আমার সকল ধ্যান ওর দিকে নিলাম । কষ্টকে ভুলে থাকার জন্য ।
ইফার ফোন নাম্বার যোগাড় করলাম কিছুদিনের মধ্যে । এরপর ইতস্তবোধ করতে লাগলাম । ফনে ওর সাথে কি বলে কথা শুরু করবো ? ও কি মনে করবে ? এই সকল চিন্তা মাথায় ঘুরপাক করতে লাগলো ।
কাছের বন্ধুরা সাহস যোগাতে লাগলো । কিন্তু ওদের এই সম্পর্কে ধারণা আছে বলে আমি মনে করি না ।
ওরা সবাই একজন মেয়ে বন্ধুর খোঁজ থেকে পেয়ে গেছে যেও কিনা একজন ছেলে মন্ধুর খোঁজে ছিল । এটাকে আমি ভালোবাসা বলতে নারাজ । একজনের অভাব আরেকজন মেটায় , একজন আরেকজনে দেখানোর এক বিশ্রী প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ।
আমি এতে বিশ্বাসী নই । আমি বিশ্বাসী পথ চলতে থাকবো হঠাৎ একজন তার রূপ গুন দিয়ে আমাকে টেনে ধরবে আর যেতে দেবে না ।
বাঁধন ছুটে গেলেও আঁচড় দিয়ে যাবে আর আবার পথছলা অন্য কোন তানের অপেক্ষায় । না জোর করে মানুষ দেখানো গিট দিয়ে লাভ নেই ।
তবে ভয় হয় যদি গিট শক্তভেবে থাকি কিন্তু কোন সময় অপাশ থেকে দড়ি চেতে দেয় তবে আমি তো অতলে হারিয়ে যাবো ।
অনেক ভেবে চিনতে ফোন করলাম । ভেবে দেখলাম ওর শ্তহে তো আমার বেশ কয়েকবার চোখা চখি হয়েছে ।
হয়তো আমায় চিনবে । ওর জন্যই তো ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি । ওর আগমন ও প্রস্থান উভয়ই দেখি ।
'' হ্যালো , ইফা আছে । ''
'' জি , বলছিলাম ।
আপনি কে বলছিলেন ? ''
'' আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি । তুমি আগে বল তুমিই তো ইফা নাকি ? ''
'' হ্যাঁ , কেন ? কি চান ? ''
'' দেখো ...... ''
'' ফোনে কি দেখবো ? ''
'' একটু দাড়াও । ''
'' দাঁড়াবো কেন ? ''
'' চুপ । একেবারে চুপ । আমি কিছু কথা বলবো শুধু শুনো ।
কথা শেষ হলে এরপর যা কিছু জিজ্ঞাস করার করো । দুই এক মিনিটের মধ্যে কথা বলা শেষ করছি ।
তোমাদের কলেজের বাহিরে আমাকে হয়তো প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছো ... ''
''আপনি ... ''
'' চুপ । কথা শেষ করি আগে ।
আমি তারেই খুঁজে বেড়াই যে রয় মনে আমার মনে
সে আছে ব'লে
আমার আকাশ জুড়ে ফতে তারা রাতে ;
প্রাতে ফুল ফুটে রয় বনে আমার বনে ।
এতো রুপের খেলা রঙের মেলা অসীম সাদায় কালোয় ।
এটি রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন অনেক আগে । কাকে দেখে জানি না । কিন্তু তোমাকে এখন দেখে আমার এই হাল ।
আর মোবাইল হাতে রাখো একটা গান পাঠাচ্ছি ।
গানটা আমার মনের ভাব প্রকাশ করবে । ''
বলে আমি ফোন কেটে দিলাম । আর রবন্দ্রনাথের লেখা
'' ভালোবাসি ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জ্বলে স্থলে বাজায় বাঁশি । ''
গানটি পাঠিয়ে দেই ওর নাম্বারে । এরপর আমি আমার মোবাইল বন্ধ করে রেখে দিই ।
আর বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকি ।
জানিস , ওই রাতে কি পরিমাণ সিগারেট টানছিলাম হিসাব নাই । ওই চিন্তা থেকে শরে যেন অন্যকিছু নিয়া চিন্তা করতে পারি শুধু সেই জন্য ।
পরেরদিনের অপেক্ষায় আর কি ঘটতে যাচ্ছে সেই চিন্তায় অধীর হয়ে রইলাম । ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে সিগারেট টানতে থাকলাম ।
সময় কাটতে লাগলো ।
সকাল আটটায় কলেজে ক্লাস শুরু । আমি সাতটার দিকে থাকলাম কলেজের সামনে । সময় যেন থমকে গেছে । ওকে দেখলাম , কিন্তু আমায় দেখেও না দেখার ভান করে কলেজের ভিতরে ঢুকে গেলো ।
আমি তাকিয়ে রইলাম ।
কলেজে ছুটির পর আমি ওর মুখের খোঁজে থাকলাম । সব মেয়েই এক এক করে বের হতে লাগলো । কিন্তু ওর দেখা পেলাম না । মনে করলাম , হয়তো শাবার আগে বের হয়ে আমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেচগে ।
আশাহত হয়ে যখন ফিরে যাবো বলে মনঃস্থির করলাম
তখন ওর দেখা পেলাম । আমার দিকেই আসছিল । ও আমার যত নিকটে আসতে লাগলো আমার হৃদস্পন্দন তত বৃদ্ধি পেটে লাগলো । আমার থেকে এক হাত দূরে এসে দাঁড়িয়ে গেলো । কি ঘটতে পারে তা চিন্তা করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেললাম ।
স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম জানি না কতটুকু সক্ষম হয়েছিলাম
'' আপনি কি রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ? ইফা ের কাছ থেকে এই প্রশ্ন শুনে একটু হকচিয়ে গেলাম ।
'' হ্যাঁ , আমি তার বেশ বড় ধরএন্র ভক্ত । ''
'' হুম , বুঝলাম । তা তার কি কি বই পড়েছেন ? ''
''খুব বেশি না । ' শেষের কবিতা ' অল্প পড়েছি ।
আর কিছু ছোট গল্প , পাঠ্যবইয়ের কবিতা ও গল্প আর বাসায় ' সঞ্চয়িতা ' আছে । ''
'' তাহলে খুব বেশি তো পড়েন নি । কিন্তু এতো বড় ভক্ত হলেন কিভাবে ? ''
'' হুমায়ুন আহমেদ এর বই পরে তার ভক্ত হয়েছি । ''
'' বুঝলাম না । ''
'' উনি নিজেও রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ছিলেন ।
বিভিন্ন জায়গায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃত করতেন । সেই থেকে । ''
'' বুঝলাম । তা গতকাল রাতে কি হয়েছিল ? ''
'' আজকের এই সময়ের জন্য গতকালের রাতের উদ্ভব হয়েছিল । ''
'' এখানে কি শুধু আমার জন্য দাঁড়ানো হয় নাকি সবার জন্য ? ''
'' গোলাপ যেথায় দেখেছি শেথায় রুখেছি ।
''
'' বাহ । তো আজকে যাই । ''
সেইদিনটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর দিনগুলোর মধ্যে একটি । এরপর বেশ কয়েকবার ইফার সাথে আমার কথা হয় ওর কলেজ ছুটির পর । টুকটাক জিনিস নিয়েই কথা হয় ।
একদিন অক্কে বললাম রাতে ওদের বাসার ছাদে থাকতে । ও কারণ জিজ্ঞাসা করলো কিন্তু আমি ওকে কিছু বললাম না ।
যথাসময়ে ও ছাদে উপস্থিত হলও , আমিও হলাম । ঐ দিন ছিল জ্যোৎস্না রাত ।
'' জ্যোৎস্না তোমার সাথে উপভোগ করার ইচ্ছা ছিল ।
'' ওকে বললাম ।
ও ছুও করে থাকলো । আমার ডান হাত জড়িয়ে ধরল । কিছু সময় কাটালাম স্বপ্নের মতো ।
এরপর বেশকিছুদিনের মধ্যে দুজনেই প্রেমের সাগরে ডুবে গেলাম ।
বেশকিছুদিন জ্যোৎস্না আমরা একসাথে উপভোগ করেছি এক অপরের হাত ধরে । প্রতিবারই শিহরিত হয়েছি কোমল পরশে ।
আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা একটু আজবই ছিল । আমরা না পারকে মানুষকে নিজেদের সম্পর্ক দেখিয়ে বেড়াতাম , না কোন খাবার দোকানে খাবার অর্ডার করে না খেয়ে কথা বলে চলে আসতাম । আমরা প্রকৃতির মাঝে প্রেম খুঁজতাম , আর কোথাও পেলে তা অবলোকন করতাম ।
একদিন ওদের বাসার চাঁদের মেঝে আমি গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে ভোরে দিলাম । গোলাপের ঘ্রাণ আর জ্যোৎস্না রাত অসাধারণ একটি পরিবেশের সৃষ্টি হলো । পরিবেশকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য বৃষ্টির যেন তড় সইল না । ধুম বৃষ্টিতে আমরা দুজনে ভিজলাম , গোলাপের মিষ্টি ঘ্রাণের সাথে জ্যোৎস্নার আলো । সে এক অদ্ভুত সুন্দর মুহূর্ত ।
ঐ মুহূর্তই ছিল ওর সাথে আমার কাটানো শেষ মুহূর্ত । ''
এইবার প্রথমবারের মতো আমি কথা বললাম , '' কেন ? পরে কি ওর সাথে অন্যজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে ? ''
'' নাহ । ঐ রাতে আমি ওকে মেরে ফেলেছিলাম । ''
বিনা মেঘে বজ্রপাত বলে একটা কথা আছে । কিন্তু বাপ্পির এই কথাটা আমার কাছে বিনা আকাশে বজ্রপাতের মতো লাগলো ।
ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম , '' কেন এবং কীভাবে ? ''
'' কীভাবে ? - এর উত্তর আমি দিবো না তবে কোন কষ্ট ছাড়াই মৃত্যু দিয়েছি এবং সুন্দর এক পরিবেশে । ''
ও একবার যেটা না বলেছে ঐটা আবার জিজ্ঞাস করা বোকামি ।
'' তাহলে বল কেন ? ''
'' যতদিন যাচ্ছিল ইফাই আমার কাছে সব হয়ে যাচ্ছিল । আমার অন্তরে ওর জায়গা বাড়তে থাকলো । চিন্তা করলাম ঐ তো আমার সব ।
ওকে পেলে তো আমি সবই পেয়ে গেলাম । আর সব পেয়ে গেলে তো জীবনের তৃপ্তি নেই । আজকে চলি রে । ''
বলেই ও উঠে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো । বাপ্পি বেরিয়ে যাওয়ার পরে হন্তদন্ত হয়ে অনন্যা রুমে ঢুকল ।
'' বাপ্পি কি বলে গেলো ? কিসের জন্য এসেছিল ? ''
আমি কোনটারই উত্তর দিলাম না । চুপ করে রইলাম । বারিন্দায় গেলাম । বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল । বৃষ্টির মধ্যে বাপ্পি ভিজে হেঁটে যাচ্ছিল ।
বৃষ্টির মধ্যে বোঝা যায় না কেউ কাঁদছে না কি । কিন্তু আন্দাজ করতে পারলাম বাপ্পি কাঁদছে ।
তখন আমার সেই ইচ্ছার কথা মনে পড়ে গেলো । অনন্যাকে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম বৃষ্টিতে ভিজতে । বৃষ্টি তুমি কতই সুন্দর ।
সব ধুয়ে ফেলতে পারো কিন্তু মানুষের অন্তরকে ধুতে পারো না ।
জীবন আগের গতিতেই চলতে লাগলো । তবে মাঝে মাঝে বাপ্পির বাপ্পির কথা মনে পড়ে । দিন কয়েক বাদে একটা চিঠি পেলাম । যেটা বাপ্পির কাছ থেকে এসেছে ।
চিঠিতে যা লেখাছিল -
'' আবার একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম ইফাও তো আমাকে চাইতো । আমিও ওর কাছে ওর সব কিছু ছিলাম । তাহলে আমি কীভাবে স্বার্থপরের মতো নিজের ইচ্ছাপুরন করলাম ওর ইচ্ছার দাম না দিয়ে । তাইই এখন ওর কাছে গিয়ে দেখি কি বলে ? তুই যখন এই চিঠি পড়ছিস তখন আমি বহু দূর .................. ''
হৃদপিণ্ডে একটা কি যেন অনুভব করলাম । যেন কএউ জোরে আঘাত করলো হাতুরি দিয়ে ।
জীবনটাই হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো । দেখতে সুন্দর , খেতে মিষ্টি কিন্তু পরক্ষনেই উধাও ।
হঠাৎ করে মনে পড়লো আজকে তো জ্যোৎস্না রাত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।