পৌষের বিকেল,নরম আলো। হালকা হালকা শীত। অপেক্ষার শেষ প্রহরে ট্রেনটা চলতে শুরু করেছে। বাহারি হকার,ভিক্ষুক আর যাত্রীদের আলাপচারিতা সব মিলে মনে হচ্ছে ট্রেনের কামরায় পৌষের মেলা। কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে।
এখন ট্রেনের সব জানালা বন্ধ। আমার যাত্রা সঙ্গী মানে আমার পাশের জন কানে এয়ারফোন লাগিয়ে চোখ বুজে রয়েছেন। এতটা পথ কথা না বলে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু উপায়ও নেই। কারণ এত মানুষের মাঝেও আমার পরিচিত কেউ নেই।
একদিকে স্বাধীনতার আনন্দ অন্যদিকে একাকিত্বের কষ্ট। প্রতিযোগীতার দৌড়ে কার যে জয় হবে বুঝতে পারছি না। অবশেষে মি এয়ারফোন চোখ খুললেন। এবার তিনি চা এর অর্ডার দিয়ে বই পড়তে শুরু করলেন। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সমগ্র।
তার মানে গোয়েন্দা কাহিনীতে ঝোঁক আছে। হালকা বেগুনী টি শার্ট,ডার্ক ব্লু জিন্স,ফ্রেম ছাড়া চশমা বেশ লাগছে। মনে হচ্ছে আমারও এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা প্রয়োজন। চা শেষ করে অতি উৎসুক হয়ে আমি বলে বসলাম,আপনি কোথায় যাচ্ছেন?এক কথায় তার জবাব দেওয়ানগঞ্জ। আপনি?জামালপুর।
যাক অন্তত কথা বলার মত কাউকে পাওয়া গেল। জার্নিটা খুব একটা বোরিং হবে না। আর কী বলা যায় ভাবতে ভাবতে তিনিই বললেন,একা যাচ্ছেন?আমি বললাম না। আর কে আছে?এইতো আপনি,আপনারা সবাই। তিনি মৃদু হাসলেন।
হাসিতে শব্দের কম্পন শব্দোত্তর ছিল বলেই হয়তো ওটা নিঃশব্দের হাসি ছিল। কিন্তু ঐ কম্পন আমাকে প্রচন্ড কম্পিত করল। এরপর প্রশ্ন উত্তর পাল্টা প্রশ্ন পাল্টা উত্তরে ট্রেনের কামরা হয়ে গেল কফি হাউস। কাপের পর কাপ চা এর কাছে পৌষের ঠান্ডা আর গভীর রাতের নিদ্রার কোন ঠাঁই ছিল না। মি এয়রফোন প্রতি কাপ চা এর জন্য তিন চামচ চিনি নিচ্ছিলেন।
তিনি যে খাবার ব্যাপারে প্রচন্ড স্বাধীন এটাই তার প্রমাণ। তার স্বাধীনতায় সংক্রমিত হয়ে একটা হকারকেও ফিরিয়ে দিইনি। সেদ্ধ ডিম,চানাচুর,ঝালমুড়ি,বার্মিজ কুল,আমড়া,চকোলেট,ট্রেনের নাস্তা এমন কি মিষ্টি পান সব গোগ্রাসে গিলেছি। এরপর ভিক্ষুকের গলায় গান-রূপালী নদীরে রূপ দেইখা তোর হইয়াছি পাগল। মি এয়ারফোনের পারফিউমের স্মেলটা বেশ কড়া।
কোন ব্র্যান্ড বুঝতে পারছি না। জিঙ্গেস করা উচিৎ না অনুচিৎ সেই দন্দ্বে ব্র্যান্ড অজানাই রয়ে গেল। তবে জানা হল অনেক কিছুই। ভাল লাগা মন্দ লাগা,পরিবার-পরিজন,পড়াশোনা,বিশ্ব রাজনীতি-অর্থনীতি হ য ব র ল। একেবারে খিচুড়ি।
ভোর হতে চলল,আঁধার কেটে কেটে আলোর উঁকিঝুঁকি। আমাকে নেমে যেতে হবে। পরাজিত কষ্টটা আবার জেগে উঠতে চাইছে। এবার সে জয়ী হতে চায়। ঘোর কাটতে না কাটতেই মুখে পুরা হাওয়াইমিঠাইয়ের মত ট্রেনটা প্লাটফর্ম ছেড়ে দূর কুয়াশায় মিলিয়ে যায়।
। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।