এখানে দিন-রাত্রি সমান
কাগজে কলমে হলেও গত কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা গেছে। মন্ত্রী পরিষদ সদস্য ও সংসদ সদস্যরাও এখন করের আওতায়। দেশের আর সব উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের মত তাদেরও এখন থেকে আয় কর দিতে হবে। বাস্তবে বিষয়টি কে কতটুকু মেনে চলবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায় কিন্তু তারপরও সিদ্ধান্তটি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। এই সংবাদটির পাশাপাশি আরো একটি সংবাদ আমাকে আনন্দিত করেছে।
নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র, সেলিনা হায়াৎ আইভি তিনি তার সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেছেন। এ দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র হিসেবে তিনি ইতোমধ্যেই যেমন দৃষ্টান্ত হয়ে গেছেন তেমনি এই চমৎকার সিদ্ধান্তের কারণেও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন বলে মনে করি। তথ্য মতে, আইভির ব্যাংক হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা জমা আছে। তিনি পিতার বাড়িতে থাকেন, নিজে কোন বাড়ির মালিক নন। তিনি জানিয়েছেন তার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ তার স্বামী বহন করেন।
পিতার কাছ থেকে পাওয়া ১৪ শতাংশ জমির মালিকানা তার হলেও তিনি নিজে পৌর মেয়র হিসেবে যে সম্মানী পেতেন তাই দিয়ে চলতেন। তার কোন ব্যবসাও নেই বলে তিনি দাবি করেছেন। ধন্যবাদ জানাই আইভিকে, জনগণ ভবিষ্যতে অবশ্যই তার সম্পদের হিসেবকে মিলিয়ে দেখবে।
কিন্তু এ তো গেল জনপ্রতিনিধিদের কথা। আয়কর ও সম্পদের হিসেব কি শুধু জনপ্রতিনিধিরাই দেবেন? শুধু এদের কাছ থেকে হিসেব নিলেই কী প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন হবে? আমি তা মনে করিনা।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল শ্রেণি আমাদের দেশে রয়েছে। তারা আমাদের বিচারক, যাদের নামের আগে মাননীয় কিংবা বিজ্ঞ শব্দটি লেখা এক অর্থে বাধ্যতামূলক। সাম্রাজ্যবাদী ভঙ্গিতে মাথাও নুয়াতে হয় তাদের দরবারে। এই মাথা নুয়াবার রীতি আমাদের সংসদ থেকে বিলুপ্ত হলেও আদালতে এখনো রয়ে গেছে। এটা গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক বলেই মনে করি।
তো এই বিচারকদের সম্পর্কে আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানি। আমি বিচারক বলছি, বিচারপতি বলছি না। কারণ জেলা পর্যায়ের বিচারকদের কথাই আমি এখানে বুঝাতে চেয়েছি। ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জেলা পর্যায়ের বিচারকদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়। জেলা আদালতের প্রত্যেক আইনজীবীই জানেন কোন বিচারকের কাছে কতটুকু প্রস্তাব করলে তাদের মক্কেলের জামিন হবে, শাস্তি হবে লঘু।
আইনজীবীরা এটাকে তাদের পেশাগত কৌশল হিসেবেই দাবি করেন। একজন সরকারী আইনজীবী আমাকে বলেছেন, প্রথম জীবনে তিনি কিভাবে একজন সৎ বিচারককে অসৎ করেছেন এবং তার পেশাগত স্বার্থ হাসিল করেছেন। এই ঘটনা বেশ গর্বের সাথেই বয়ান করেছেন। সেই বিচারক নাকি এখন অঢেল সম্পদের মালিক।
জেলা পর্যায়ের বিচারকেরা এই ঘুষ লেনদেনের সাথে যে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত তা তো বেশ অনেক দিন আগে সাবেক এক প্রধান বিচারপতি স্বীকারই করে গেছেন।
মামলার রায় পক্ষে নেবার জন্য বিচারকদের বাড়িতে টিভি, ফ্রিজ, এসি সহ নগদ অর্থও পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমাদের সৎ (!) বিচারকরা সেগুলো ফিরিয়ে দিয়ে অসামাজিক হতে চাননা। রেখে দেন। সুতরাং রায় দেবার বেলায় যে কী ঘটতে পারে তা নিশ্চই আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এর ফলাফল সহজেই অনুমেয়।
বিচারের বাণী নিরবে কাঁদে। যাদের অঢেল সম্পদ আছে, বিচারকদের খাজনা দেবার সামর্থ আছে বিচারের রায়ও তাদের সম্পদ হয়ে যায়। আর নিগৃহিত ও নিপীড়িত হয় অসহায়রা, দরিদ্ররা। তাই এই সব অসৎ বিচারকদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের সম্পদের হিসাবও প্রকাশ করা জরুরী বলেই মনে করি, এটাই করা উচিত। একজন নতুন বিচারক যখন দায়িত্ব নেবেন তখন তার সম্পদ কত আর যখন পেশা জীবনের মাঝপথে যাবেন তখন তার সম্পদ কত- সেটা মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন অবশ্যই আছে।
এটা গণপ্রজাতন্ত্রে জনতার অধিকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।