আমি জন্ম নিতে যাওয়া একটি বৃহৎ প্রজাতির অভিজাত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাগেরহাট নামক জেলার অজ- রামপালে আমার জন্মানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। জায়গাটা বেশ বিশ্রী চারপাশে জল ভর্তি খাল আর বিল ,বেশ অস্বস্তিকর। এই কালো –বেটে বাঙ্গালীর দেশে আমার মোটেও জন্মানোর ইচ্ছা ছিল না। ভারতের মত মহান দেশে যদি জন্ম নিতে পারতাম তবে কতই না গর্ব করতে পারতাম ।
আমি ভারতেই জন্ম নিতাম ,কিন্তু আমার জন্য যে জায়গা নির্ধারিত ছিল সেটা নাকি কি সব বনাঞ্চল –টনাঞ্চলের থেকে ২০ কিমি ভিতরে ,এই অজুহাতে সে দেশের কাটখোট্টা কিছু মানুষ ও সংস্থার আন্দোলনে সে দেশে আর জায়গা হল না ,খুবই ব্যথিত ও অপমানিত বোধ করলাম। তা যাই হোক শেষ মেশ এই দেশে জায়গা হল ,কি আর করার । এখন আমারে নিয়া আপনেরাই গর্ব করবেন ,১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবেন বলে কথা , ভাগ্যের নির্মম পরিহাসই বটে। তবে আপনাদের একখান বিষয় খুবই ভালো লাগছে সেটা হইল,আপনারা ওগো মতন বন-টন নিয়ে আন্দোলন করেন না। আপনাদের কি এক বন-জঙ্গল আছে না ? কি যেন ,কি যেন...
ও মনে পড়ছে সুন্দর...বন ।
হুম সুন্দরবন ,এই জঙ্গলের থেকে ১০ কিমির ভিতরে আমার জন্য জায়গা ঠিক করা সত্ত্বেও আপনারা বেশ ভদ্র,এই একটা দিক থেকে আপনাদের তারিফ না করে পারা যায় না। তবে এদেশেও কিছু দেহুদা লোক লাফালাফি করা শুরু করছে ,কিন্তু খুশির খবর হচ্ছে আপনাদের মিডিয়া এসব প্রচার না করে দেখিয়ে দিয়েছে ওরা উট পাখি নয়।
আপনারা আসলেই ভাল ,আমি আসবো বলে আপনারা আমার জন্য ১৮৩৪ একর জমি রেখেছেন। যদিও আপনারা আমার পছন্দ তবুও যখন আমার জন্য এত কিছু করছেন আমি আপনাদের জন্য কিছু না করে কি পারি। আপনারা আমরা থেকে কত্ত কিছু পাবেন তা বলে শেষ করা যাবে না।
আপনাদের এই গরীবি দূর করতে সবেচেয়ে বেশী যা দরকার তা হল শিল্পায়ন , তার জন্য লাগবে বিদ্যুৎ আর আমার কাছ থেকেই পাবেন ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ !এছাড়া প্রতিদিন পাবেন ১৪২ টন সালফার ডাই অক্সাইড(so2) আর ৮৫ টন নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড(NO2) লোকে এদের ক্ষতিকর বলে তবে আমি এদের উপকারিতা আপনাদের বলি ,মন দিয়ে শুনবেন কিন্তু । আপনারা সকলেই জানেন সালফিউরিক এসিড শিল্প ক্ষেত্রে জন্য খুবই দরকারি । এই এসিড তৈরির প্রধান উপাদান হল এই সালফিউরিক এসিড ,বুঝেছেন তো।
শুধু তাই নয় এই সব গ্যাসের প্রভাবে আকাশ হতে এসিড বৃষ্টি আকারে পড়বে আর আপনারা সেই ফ্রিতে পাওয়া এসিড গুলো সংগ্রহ করে শিল্পায়ন ঘটাবেন। আর যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌছাতে আরও দেরি হবে সে সব এলাকায় এই এসিড ব্যাটারি ভর্তি করে দিয়ে আসবেন ।
ফলে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা পুরোন হবে। দেখছেন তো খালি লাভ আর লাভ!
আর ও আছে কি... কি...? ও মনে পরেছে ,মনে পরেছে ছাই । আমি প্রতি যে বছর ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা ভজন করিব তা হতে বছরে আপনারা উচ্চ গুনাগুন সমৃদ্ধ ৯ লাখ ৫০ হাজার টন ছাই পাবেন। ভয় পাবেন এ থেকে কি ভাবে লাভবান হবেন তার ফর্দ আপনাদেরকে দেই । আপনারা অতীব গরীব ,তাই যারা টুটপেস্ট কেনার সামর্থ্য রাখেন না তারা এই ছাই মাজন হিসেবে ব্যাবহার করিতে পারেন।
এছাড়া এই ছাইয়ে পাবেন বিভিন্ন মুল্যবান ধাতু যেমন, পারদ ,সীসা ,আর্সেনিক ,নিকেল ,ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম ,ব্যারিয়াম। এরা একটু আদটু বিষাক্ত হলেও এগুলো সংগ্রহ করে প্রচুর বিদেশী ডলার কামাইতে পারবেন । আরো আছে আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন হীরা গঠিত হয় কার্বন থেকে । আর ছাই বলতে গেলে এক রকম কার্বনের আধার । তাই এই দিকেও একটু ট্রাই মারতে পারেন...।
এই দেখি বেহেসেবি লাভ!
আমি আগেই বলেছি আমি অভিজাত প্রজাতির একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র । আমার একটা স্ট্যাটাস আছে । তাই কম দামী কয়লা আমার হজম হয়না । এই দেশি কয়লার দাম টন মাত্র ৮৫ ডলার । প্রথমে ভেবেছিলাম এই দেশি বিশ্রী কয়ালায় হয়ত আমায় ভজন করিতে হইবে ,এই ভেবে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
তারপর হঠাৎ একদিন জানতে পারি, আমার জন্য ১৭৩ ডলার দামে বিদেশী কয়লার ব্যাবস্থা করা হচ্ছে,শুনেই মনটা খুশিতে আত্মহারা । এই কয়লা গুলো আসবে ভারত ,ইন্দোনেশিয়া ,দক্ষিণ আফ্রিকা হতে । আমার এই টন টন খাদ্য গুলো আসবে সুন্দরবন না না সুন্দরজঙ্গল দিয়ে ,এরে কেন জঙ্গল বলছি তা একটু পরেই বলব । জঙ্গলটাতে বেশ দূষণ হতে পারে । তাতে কি হয়েছে এতে আপনাদেরও কোন ক্ষতি নাই আমারও কোন ক্ষতি নাই ।
আর আপনাদের বার বার বলে রাখি নিজেদের গরীবি স্টাইল পরিবর্তন করেন । আর কত দিন ২ টাকা ইউনিটের কমদামী বিদ্যুৎ দিয়া জীবন যাপন করবেন । জীবন যাত্রার মান বাড়ান । সুখবর হল আপনাদের এই দুর্দিন শেষ হতে চলেছে । এখন আমার কাছ থেকে আপনারা ১৪ টাকা প্রতি ইউনিট দরে বেশীদামী বিদ্যুৎ পাবেন ।
আস্তে আস্তে আপনাদের স্ট্যাটাস পরিবর্তন হতে শুরু করবে ।
এত সুসংবাদের মধ্যে একটি শঙ্কার কথা না বলে পারছি না। আপনারা হয়ত জানেন কিছু বেহুদা লোক আমাকে এখানে জন্মাতে না দিতে গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বোনা শুরু করেছে । আমার কারনে নাকি ওই সুন্দর জঙ্গলের ব্যাপক বিপর্যয় হবে । একটা জঙ্গলের বিপর্যয়ের অজুহাতে নিশ্চয় আপনারা আমার জীবন বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে চাইবেন না।
আর জঙ্গলটা সাফ হইলে তো আপনাদেরই লাভ,মেলা জমি পাবেন । আপনাদের এই ঘনবসতির গরীবি দেশে এই জমা জমি খুবই কাজে দিবে । ওরা আপনাদের হয়ত বুঝাবে এই জঙ্গল আপনাদের ঝর -দূর্যোগ হতে আপনাদের বাচাবে । এই সব বাজে কথা ,এই সব কথায় একদম কান দিবেন না। তাই সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে আমার পক্ষে আওয়াজ তুলুন।
আমাকে টিকিয়ে রেখে আপনাদের স্ট্যাটাস বাড়িয়ে তুলুন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।