আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাংবাদিকতা ও আদালত অবমাননা

লেখার কিছু নাই.. রেজাউল করিম আইন সাংবাদিকতা করতে গেলে আদালত অবমাননার ঘটনায় পড়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। আইনাঙ্গন সম্পৃক্ত কোনো আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংবাদ প্রকাশিত হবে, আর সেটার সঙ্গে আদালত অবমাননার ব্যাপারটি সম্পৃক্ত থাকবে না এটা কেমন দেখায়। দেশ বিদেশে প্রথম শ্রেণীর পত্রিকাগুলোতে আইনাঙ্গনের অনেক উল্লেখযোগ্য সংবাদে লেখক, সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ২ দফায় বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই বাক স্বাধীনতার একটা সীমা টেনে দিয়েছে আদালত অবমাননার বিষয়টি।

কনটেমপট অব কোর্টস অ্যাক্টস বা আদালত অবমাননা আইন, যা ১৯২৬ সালের ১২ নং আইন। তাতে আদালত অবমাননার কোনো সংজ্ঞা দেওয়া নেই। এ জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। আদালত অবমাননা সংক্রান্ত প্রকাশিত রায়গুলোর সারসংপে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিমকোর্ট তাদের একটি রায়ে। যা ১৯৮৩ সালের অল ইন্ডিয়া রিপোর্টস-এর ১১৫১ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে।

ওই রায়ে দেওয়া আদালত অবমাননার সংজ্ঞায় বলা হয়, “বিচার কাজে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। আর নিজের পদবি একজন বিচারককে এমন প্রশিণ দেয়, যার অশিতে তিনি সংবেদনশীল হওয়ার বদলে সহানুভূতিশীল হন। অন্যদের চেয়ে একজন বিচারক মামলারত ব্যক্তিদের অহমিকা, হতাশা, অনুভূতি ও মানসিক চাপ বেশি হƒদয়ঙ্গম করতে সম। তবুও এর একটা সীমারেখা থাকা অত্যন্ত জরুরি। একজন বিচারকের প্রতি এমন অপবাদ রচনা কখনো হতে পারে না, যার ফলে বিচারব্যবস্থা হুমকি কিংবা নষ্টের সম্মুখীন হবে।

এর অর্থ এই নয় যে বিচারকদের রা করা আবশ্যক। কারণ বিচারকরা নিজেদের রা করতে অসমর্থ নন। এর প্রকৃত অর্থ জনগণের স্বার্থ ও অধিকারের উদ্দেশ্যেই বিচারব্যবস্থাকে শুধু অপবাদ-রটনা থেকে সুরা করতে হবে। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সুপ্রিম কোর্ট আদালত অবমাননার ব্যাপারে আরো সংপ্তি ও স্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। সেটা হচ্ছে, ‘যদি মিথ্যা কিংবা অযথার্থ সংবাদটি প্রকাশের প্রতিক্রিয়া ওই আদালতের প্রতি সর্বসাধারণের তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞার উদ্রেক হয়, যাতে আদালতের সুশৃঙ্খল কার্যে তাৎণিক হুমকি কিংবা বিপর্যয় হয়, সে েেত্র আদালত অবমাননা হবে।

অর্থাৎ আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র একটি মিথ্যা বা অযথার্থ প্রতিবেদনকে তখনই অবমাননাকর বিবেচনা করা হবে যখন প্রতিবেদনটি প্রকাশের ফলে তাৎণিক প্রতিক্রিয়ায় আদালতের সুশৃঙ্খল কার্যে তাৎণিক হুমকি বা বিপর্যয় হবে। ১৯০৪ সালের ঘটনা। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডা অঙ্গরাজ্যে ‘পোনিকেম্প’ নামে একটি সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, একজন বিচারক একটি ধর্ষণ মামলা ডিসমিস করেছেন, যেহেতু আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যথাযথ গঠন করা হয়নি এবং ফোরিডার আদালত কর্তৃক অপরাধী লোকদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টেকনিক্যাল বা খুঁটিনাটি কারণে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। সম্পাদকীয়তে এ কথা লেখা উচিত ছিল যে পরদিন ওই আসামিদের বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগ গঠন করা হয় এবং তাদের বিচারের জন্য গঠিত জুরিদের বিদায় দেওয়া হয়নি। সম্পাদকীয়তে অযথার্থ প্রতিবেদনটি লেখার জন্য আদালত অবমাননার দায়ে ওই পত্রিকার সম্পাদকের শাস্তি হয় এই সিদ্ধান্তে যে সম্পাদকীয়তে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে পূর্ণ সত্য গোপন করা হয়েছিল।

পত্রিকাটির সম্পাদক ওই রায়ের বিরুদ্ধে ফেডারেল সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করেন। সুপ্রিম কোর্ট আপিলটি মঞ্জুর করেন। রায়ে এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় যে অঙ্গরাজ্যটির আদালত কর্তৃক তর্কিত সম্পাদকীয় বিষয়ে মূল্যায়ন সঠিক ছিল না। পত্রিকাটির সম্পাদককে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা যাবে না। এই কারণে যে, সম্পাদকীয়টির ভুল তথ্য দেওয়া ও মন্তব্য করা তেমন স্পষ্ট ও আশু আশঙ্কামূলক ছিল না, যার ফলে অঙ্গরাজ্যের আদালতগুলোর এবং বিচারকদের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতা বিকল বা তিগ্রস্ত হয়েছে।

বিচারাধীন বিষয়ে ধ্র“পদী আলোচনা কি আদালত অবমাননাকর? প্রশ্নটির উত্তর মাদ্রাজ হাই কোর্ট দিয়েছেন ১৯৭৪ সালের হনুমন্থ রাও বনাম পণ্ডাভিরম মামলায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এখন প্রশ্নটির বিবেচনায় প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিষয়টি মনে রাখতে হবে। তা ছাড়া অবশ্যই মনে রাখতে হবে একটি ন্যায্যবিচারে মামলারত ব্যক্তিদের স্বার্থ ছাড়াও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ থাকতে পারে। সেটা হচ্ছে, ব্যক্তিস্বার্থের ভারসাম্য রাকারী শক্তি হিসেবে জনস্বার্থের উপস্থিতি এবং সেখানে জনস্বার্থ মুখ্য বিধায় আদালতের রায়ের পূর্বে ও পরে নায্য আলোচনা ও মন্তব্য অনুমোদনযোগ্য। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.