সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ আমার হাবিজাবি লেখা পড়ে কারো মেজাজ খারাপ হলে আমি দায়ী নই!! "
"
"
"
"
নুহা তীব্র স্বরে বললো, “এসব কি বলছো মা?”
-“কেন, আগে থেকেই তো ঠিক করা আছে”। ক্ষীণ কন্ঠে মা বললেন।
-“আশ্চর্য! এখন কি আগের পরিস্থিতি আছে? দুদিন পর মারা যাচ্ছি আর আজ হবে এনগেজমেন্ট”?
-“মারা যাচ্ছিস কে বললো? অসুখ বিসুখ কোন ব্যাপার না। বিয়ের পর চিকিৎসা হবে, তুই সুস্থ হয়ে যাবি”।
-“আজগুবি কথা বলো না তো মা! বিয়েই হবে না আর বিয়ের পর চিকিৎসা! আমি অসুস্থ অবস্থায় কিছুতেই বিয়ে করবোনা।
সুস্থ হয়ে নেই তারপর দেখা যাবে। আর হ্যা মা, তুমি কিন্তু অবশ্যই তাদেরকে আমার অসুখের ব্যাপারে ইনফর্ম করবে”।
শাহানা আগে থেকেই ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছিলেন, তিনি কথা সাজিয়েই এসেছেন। অনুরোধ করার ভঙ্গিতে বললেন, “প্লিজ, আজকের দিন টা যেতে দে। আমি অবশ্যই ওদেরকে তোর সমস্যার কথা জানাবো।
আজকে সবকিছু ঠিক করা হয়ে গেছে, এখানে আর ঝামেলা করিস না। আর হ্যাঁ, তোকে কিছু বলতে হবেনা, এদিকটা আমিই সামাল দিব”।
নুহা হতাশ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে না মা এ ব্যাপারে কোন কথা বলবে। যা করার তারই করতে হবে।
শাহানা চিন্তিত মুখে রান্নাঘরের দিকে এগুলেন। অনেক কাজ বাকী পরে আছে। নুহার শ্বশুরবাড়ীর লোকজন আসবে। অনেক বড়লোক ফ্যামিলি, সবকিছু সাবধানে করতে হবে। ওদের অবশ্য নুহাকে খুব পছন্দ হয়েছে।
পছন্দ না হবার কারণ নেই অবশ্য। মেয়ে তার রূপে গুনে কোনদিকে কম না।
তিনি সাবধানে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন। তাঁর ভাগ্যটাই এমন। হঠাৎ করে নুহার ক্যান্সার ধরা পরে গেল।
অনেক কান্নাকাটি করে এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছেন। শুধু কান্নাকাটি করলেই হবেনা। মেয়েকে পার করতে হবে। বিয়ের আগে কোনভাবেই অসুখের কথা জানতে দেয়া যাবেনা, তাহলে বিয়েটা হবেনা। বিয়ের পর জানলে ওরা নিশ্চয়ই চিকিৎসার ব্যাবস্থা করবে।
এত এক্সপেনসিভ চিকিৎসা তার দ্বারা করা সম্ভব না। নুহার শ্বশুর হুলুস্থুল রকমের বড়লোক। ছেলের বউকে নিশ্চয়ই দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। ব্যাপারটা দেখতে খারাপ লাগছে ঠিকই কিন্তু কিছু করার নেই।
বাস্তবতা খুব কঠিন। নুহা ঝামেলা করবে এটা আগে থেকেই ধরে রেখেছিলেন। এজন্য খুব সতর্কভাবে এগুতে হবে। খুব ভালো হয় আজ কোনভাবে হুট করে বিয়ে হয়ে গেলে। বড়লোকের ব্যাপার-স্যাপার বোঝা যায়না।
হয়তো দেখা যাবে একজন বলে বসবে আজই বিয়ে হয়ে যাক, তারপর বড় করে অনুষ্ঠান করা যাবে। একজন কাজি যোগাড় করে রাখা যায় কি? অনেক কাজ, বোনের ছেলেটাকে খবর দেয়া দরকার। ছেলেটা অনেক কাজের। আর তিনি একাই বা ক’দিক সামলাবেন?
নুহা চুপচাপ ভাবছে। সবকিছু সুন্দরভাবে সাজানো ছিলো।
সপ্তাহ দুয়েক আগে ওর সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। ক্যানসারের মাঝামাঝি পর্যায়ে সে। এখনো ভালোভাবে চিকিৎসা করলে বাঁচার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু সেজন্য দেশের বাইরে যেতে হবে। অনেক খরচের ব্যাপার, ওদের আর্থিক অবস্থা কোনকালেই এত ভালো ছিলোনা। বাবা মারা যাবার পর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
মার ছোট একটা চাকরী আর বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে চলছে সংসার। আর অসুখ নিয়ে বিয়ের কোন মানে হয়না। সবাই করুণার চোখে তাকাবে, এটা সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব না। ওরা অসুখের কথা জানলে অবশ্যই বিয়ে হবেনা এবং না জানিয়ে বিয়ে করলে বিয়ের পর অবশ্যই বড় ধরণের ঝামেলা হবে। তাছাড়া জেনেশুনে একজনের জীবনে ঝামেলা করার কোন মানে নেই।
যে কটা দিন বাঁচে নির্ঝঞ্জাট বাঁচতে চায়।
নুহা ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। কি হতো আর মাসখানেক পর অসুখটা ধরা পড়লে? কিংবা আবরারের সাথে বিয়ের কথা হবার আগে? কত স্বপ্নই না সে দেখেছিলো!গায়ে হলুদে কি কি গান বাজবে সেটাও ঠিক করে ফেলেছিলো। হানিমুনে কোথায় যাওয়া যায় সেটাও ঠিক করা আছে।
আবরারকে নুহার বেশ পছন্দ হয়েছিল। সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে তার হাসিটা। এতো সুন্দর করে কেউ হাসতে জানে আবরারকে না দেখলে জানাই হতোনা নুহার।
জোর করে মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেললো। মার উপর ভরসা করা যাচ্ছেনা।
মনে হচ্ছে মা তাকে গছিয়ে দিতে চাইছে, অসুখের কথা জানাবেনা। তার ধারণা বিয়ের পর জানার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মেয়েকে নিয়ে ওঁরা আমেরিকা দৌড়ে যাবে চিকিৎসার জন্য, ওদের সে সামর্থ্য আছে। কি হাস্যকর কথা!
আচ্ছা,এখুনি আবরারকে ফোন করে দিলে কেমন হয়? সেটাই ভালো। বিয়ে হবেনা শুধু শুধু এনগেজমেন্টের মানে হয়না। যত দ্রুত সম্ভব এই পাট চুকিয়ে ফেলা ভালো।
চোখের পানি মুছলো সে। আবরারের সাথে কথা বলার সময় কিছুতেই কাঁদা যাবেনা। মোবাইলটা কোথায় গেল? চার্জ আছে তো? মনে মনে কথা গুছিয়ে নিতে লাগলো নুহা।
পুরো বাড়িতে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। ভাইয়ের সাথে যাওয়ার জন্য জেবা চলে এসেছে, বড়চাচা এসেছেন।
মেয়েরা সবাই সাজুগুজু নিয়ে ব্যস্ত। রশীদ সাহেব গিফটের দিকে খেয়াল রাখছেন। মেয়ের বাড়িতে ভালো ভালো উপহার নিয়ে যেতে হবে। রাহেলা বেগম এটা সেটার তদারকি করছেন।
শুধু যাকে ঘিরে এত আয়োজন তার কোন কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছেনা।
সে তার ঘরে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।
নুহা মাত্র ফোন করেছে। ওর নাকি ক্যান্সার ধরা পড়েছে। সুন্দর করে গুছিয়ে বললো সব। এখন বিয়ের কোন মানে হয়না তাও জানালো।
সম্ভবত তার মা না জানিয়ে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।
ওর একবার মনে হলো এটা ভুয়া খবর। হয়তো নুহার পছন্দের কেউ আছে এতোদিন কোন কারণে বলতে পারেনি আজ এই ঘটনা সাজিয়েছে। নইলে এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বললো কিভাবে? অবশ্যই সব সাজানো। পরক্ষণেই মনে হলো নুহা যা বলেছে সব সত্যি।
চমৎকার এই মেয়েটা সত্যি সত্যিই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। হঠাৎ করে আবরারের প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়ে গেল।
নুহা কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছেনা। ও না করে দেয়ার পরও ওরা এসেছে কেন? ভদ্রতা রক্ষা করার জন্য? কি দরকার ছিল? আবরারের সাথে কথা বলার সময় তো সে একদম চুপসে গিয়েছিল। তখন মনে হয়েছিল প্রোগ্রাম ক্যানসেল।
এখন কি মনে করে হঠাৎ?
ছাদে নুহা আবরারের মুখোমুখি বসে আছে। সে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। আবরার অবশ্য সেটাকে পাত্তা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। নুহার অগ্নিদৃষ্টি উপেক্ষা করে সুন্দর করে হাসলো।
-“হাসছেন কেন?” কঠিন স্বরে জিজ্ঞেস করলো নুহা।
-“এমনি”।
আবরার আবার হাসল।
-“শোন নুহা, তুমি রেগে আছো। একটু শান্ত হও”।
-“শুধু শুধু এসেছেন আপনারা।
যাবার সময় ঠিকই না করে যাবেন। শুধু শুধু মাকে কষ্ট দিচ্ছেন। বেচারী আশা করে আছে। এই অভদ্রতাটুকু না করলে কি হতোনা”?
-“তুমি ভুল বলছো। আমি দ্রুত কাজ শেষ করতে চাই।
হাতে বেশী সময় নেই”।
-“মানে কি? কিসের কাজ”?
আবরার আবারো হাসলো।
-“শুধু শুধু হাসবেন না। জোকারের মতো লাগছে আপনাকে”।
- “মোটেও না।
আমার হাসি খুব সুন্দর এটা আমি জানি। তোমার রাগ কমে যাচ্ছে”। আবারো হাসলো সে।
নুহা মুখ ঘুরিয়ে নিল। আবরারের কথা সত্য।
নুহা খুব চেষ্টা করছে মুখটাকে কঠিন করে রাখতে, পারছেনা।
-“শোন নুহা আমি চাই আজকেই বিয়েটা হোক। কথা বার্তার এক পর্যায়ে বড়চাচা বিয়ের কথা তুলবেন। এভাবে প্ল্যান করেই এসেছি। খুব দ্রুত তোমাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাব।
এজ আরলি এজ পসিবল্। আরেকটা কথা, মা-বাবাকে এটা এখুনি জানানোর দরকার নেই। আমিই সব জানাবো”।
নুহা মনে হলো সে ঘোরের মধ্যে আছে। এসব কি শুনতে পাচ্ছে? সব শুনেও ছেলেটা কেন রাজি হচ্ছে?আস্তে আস্তে ওর মুখের কাঠিন্য সরে যাচ্ছে।
বেঁচে থাকার লোভ অনেক বড় লোভ। সুন্দর একটা জীবনের হাতছানি থেকে চোখ ফেরাতে ইচ্ছা করছেনা কেন যেন। সে দ্বিধায় পড়ে গেছে।
না না! তার অবশ্যই নিষেধ করা উচিত।
-“এসব কি বলছেন? কেন জীবনে ঝামেলা জড়াবেন? তাছাড়া আমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও খুব কম”।
ক্ষীণকন্ঠে বললো নুহা, কন্ঠে আগের মতো জোর নেই।
-“কেন বলছি জানো? আজকে তোমার ফোন পাওয়ার পর আমি আবিষ্কার করলাম তোমাকে ছাড়া আমি চলতে পারবোনা। অল্প বাঁচার কথা বলছো? তুমি যত অল্পই বাঁচো না কেন তোমাকে আমার খুব দরকার। প্লিজ তুমি না করোনা”।
নুহার সারা শরীর কেঁপে উঠছে।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। সব স্বপ্ন না তো? এখুনি হয়তো ঘুম ভেঙ্গে যাবে। সে আবরারের দিকে তাকালো।
-“প্লিজ নুহা”!
আবরারের চোখে অনুনয়, মুখে অভয়ের হাসি। সে হাসিতে ওলট-পালট হয়ে গেলো নুহার একা থাকার সমস্ত পণ।
আবরারকে সে এখন দেখতে পাচ্ছেনা। চোখভর্তি জল নিয়ে কি কাউকে দেখা যায়?
পাশের বাড়িতে কে যেন গান ছেড়ে রেখেছে-
...ছিল মন তোমারি প্রতিক্ষা করি
যুগে যুগে দিন রাত্রি ধরি
ছিল মর্মবেদনা ঘন অন্ধকারে
জনম জনম গেলো বিরহ শোকে...
বধু কোন আলো লাগলো চোখে...
( সরবে পূর্বপ্রকাশিত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।