ক্যাটাগরি: আজাইড়া গল্প। সিরিয়াসলি!
উৎসর্গঃ ১৩-১৪ বছর বয়সী পুলাপাইন যারা কমিক-কার্টুন ( আজাইরা-গাজাখুরি জিনিস) পছন্দ করে। যারা স্পাইডার ম্যান কিংবা সুপার ম্যান পড়ে নিজেদেরও সেই সুপার হিরো কল্পনা করে। তাদের কল্পনাটাই আমার কাছে অনেক আগ্রহের। তাই সেই ধরনের গল্প।
ইচ্ছা মত লেখা।
ও! উৎসর্গ আমার এক বান্ধবীকেও। যে শুধু শুধু রেগে যায় কিন্তু আসলে রাগে না।
.
দুঃস্বপ্নের প্রহর
আপনার কাছে কি লাইটার হবে? টেনশনে থাকলে সবকিছু গুবলেট করে ফেলি। দেখেনতো অবস্থা, সিগ্রেট এনেছি, লাইটার আনতে ভুলে গেছি।
আমি মোটামুটি এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম। মোটামুটি কারন, ট্রেনে উঠার পর থেকেই আমি বিস্মিত হয়ে আছি। আসলে রেগে ছিলাম। ফার্স্ট ক্লাসে বুকিং দিয়েও কি একটা ঝামেলায় দেখা গেল এই বগিটা দুইজনে বুকিং দিয়ে বসে আছি। ফিরে যেতে ইচ্ছে করছেনা,তাই ট্রেনে উঠেই পড়লাম।
আর তখনি বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কাটা খেলাম। ধরেই নিয়েছিলাম হয়ত বয়স্ক কোন ব্যাক্তি বা কোন বিশাল বন্ধু-বান্ধবের এক জটলা দেখব, কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ অবাক করে বগির দরজা খুলে দিল এই মেয়েটি। বিস্ময়ের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই ঘিরে ধরল অস্বস্তিতে। অস্বস্তি পূর্ণতায় রুপ নিল যখন আবিস্কার করলাম বগিতে এই মেয়েটি আর আমি ছাড়া কেউ নেই।
নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এভাবে যাওয়া অসম্ভব। মেয়েটা মনে হয় আমার অস্বস্তিটা ধরতে পেরেছে। আমাকে নেমে যেতে দেখে বল্লো, আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন। আমি বিনয়ী হয়ে বল্লাম, না না,সেরকম কিছু না। আপনারই হয়তো সমস্যা হবে,তাই আমি নেমে যাচ্ছি।
“আমার সমস্যা হলে আমি নিজে থেকেই আপনাকে জানাতাম,কিংবা আমি নিজেই নেমে যেতাম,আপনি প্লিজ থাকুন,আমার কোন সমস্যা নেই”। ভাবলাম, আসলেই নেমে যাওয়ার ভিতরে তেমন কোন যুক্তি নেই,তাছাড়া দিনের বেলার জার্নি, ট্রেনের ভিতর,ক্যান্টিনে ঘোরাঘুরি করেই দিন পার করে দেয়া যাবে। ব্যাগটা সিটের উপরে রেখে জানলার পাশে এসে বসে পড়লাম। বিস্ময় আর অস্বস্তির রেশ তখোনো পুরোপুরি কাটেনি। এরই মাঝে মেয়েটির লাইটার চেয়ে এই প্রশ্ন।
আমার কাছে লাইটার আছে। কিন্তু সাত-পাচ কিছু না ভেবেই বলে বসলাম, দুঃখিত। মেয়েটা কি ধরতে পেরেছে? একটু হাসলো মনে হয়। মেয়েটা হয়তো দেশের বাইরে থাকে,বাংলাদেশে থাকলে এভাবে সিগ্রেটের জন্য লাইটার চাওয়ার কথা না। এইসব আবোল-তাবোল ভাবছি আর অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টা করছি,এর ভিতর মেয়েটি আবার জিজ্ঞাসা করল-
- আচ্ছা আপনি কোথায় যাচ্ছেন?সমুদ্র আমার দেখা হয়না অনেকদিন।
সেই ছোট্টবেলায় দেখেছি,তারপর আর যাওয়া হয়নি। আপনিও কি চিটাগাং এ যাবেন?
এবার আমি একটু বিরক্ত হলাম,মেয়েটা মনে হয় কথা বলতে পছন্দ করে, ইচ্ছে করেই তাই মিথ্যা বল্লাম - না,আমি সমুদ্র দেখতে যাচ্ছিনা, কাজে যাচ্ছি।
মেয়েটা এবার হাসছে,বেশ শব্দ করেই হাসছে। ট্রেন চলতে শুরু করেছে, কিন্তু ট্রেন চলার শব্দ ছাপিয়ে আমার কানে বাজছে মেয়েটির হাসি।
.
অস্বস্তি,মেয়েটির হাসি কিংবা মিথ্যে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আমি একটু রেগে গেলাম।
একটু রুক্ষ হয়েই বল্লাম,হাসছেন কেন? আমি তো হাসির কিছু বলি নি। ট্রেনে করে কি মানুষ শুধু সমুদ্র দেখতেই যায়?
মেয়েটি মনে হয় একটু আহত হল। আহত গলায় বল্লো-
-দেখুন, আপনি কিন্তু অযথাই রেগে যাচ্ছেন,আজ আমার একটা বিশেষ দিন,খুব টেনশন হচ্ছে। টেনশন কাটানোর জন্য বেশী বেশী হাসার চেষ্টা করছি। তাছাড়া আমাদের পরিচয় কিন্তু ভালভাবে হচ্ছেনা।
আমি তানিয়া, তানিয়া আলম। পড়াশুনা করছি।
চা খেতে ইচ্ছে করছে খুব। রাগ ঝেড়ে উঠে দাড়িয়ে বল্লাম-
-আমি জামান। আর্কিটেক্ট।
-তাই! দারুন। আমার ক্রিয়েটিভিটি দেখতে অনেক ভালো লাগে। বাই দ্যা ওয়ে, আমার কাছে চা আছে, চায়ের দুইটা কাপও আছে। আপনি চাইলে আমরা এক সঙ্গে খেতে পারি।
অবাক হলাম।
মেয়েটি বুঝলো কিভাবে আমি চা খেতে যাচ্ছি? আমার অবাক হয়ে তাকানো দেখে মেয়েটি মৃদু হাসল। মৃদু হেসে বল্লো-
-আমি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারি। এমনকি কিছু ভবিষ্যৎও বলতে পারি। তবে সেটা সবসময়ই খুব ভয়ংকর একটা স্বপ্নের মতো হয়। আমি খুব কষ্ট পাই।
তাই খুব টেনশনে থাকি,স্বপ্নটা ভেঙ্গে যাবার অপেক্ষায় থাকি।
আমি আগের জায়গায় বসে পড়লাম। প্রচন্ড রাগ লাগছে এবার। ইচ্ছা করছে মেয়েটার মুখের উপর খুব খারাপ কিছু একটা বলি। গাজাখুরির একটা সীমা আছে।
-আপনার চা। প্লিজ এভাবে মুখ ভার করে বসে থাকবেন না। আমার কাছে সময় অনেক কম,কারন স্বপ্নটা ভয়ংকর হলেও খুব ছোট।
-আপনি দয়া করে আমার সাথে এ ধরনের আজগুবি কথা বলবেন না। সমুদ্র দেখতে যাচ্ছেন,সমুদ্র নিয়ে চিন্তা করুন।
-বুঝতে পারছি আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না, বিশ্বাস করার কথাওনা। তবে যারা আমাকে এই স্বপ্নটা দেখায়,তারা আমাকে সমুদ্রের পাড়ে কোন ছোট্ট একটা বাড়িতে আমার ঘুম ভাঙ্গাবে। এই দুস্বপ্নের ধকলটা যেন সহজেই আমি কাটিয়ে পরবর্তী স্বপ্নের জন্য প্রস্তুত হতে পারি,এর জন্য তারা সব কিছুই করবে।
আমি উঠে দাড়ালাম, এধরনের অসুস্থ আজগুবি কথা শোনার চেয়ে ট্রেনের ক্যান্টিনে বসে থাকাটা অনেক ভাল। নিজেকে গালি দিতে ইচ্ছে করছে।
কেন যে আগেই বের হলামনা। বিরক্তি নিয়ে মেয়েটিকে বল্লাম, আপনি আপনার স্বপ্ন ভাঙ্গার অপেক্ষা করুন। আমি বের হয়ে যাচ্ছি।
দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটি আবার শব্দ করে হেসে উঠলো। হেসে বল্লো-
সানাহকে কিছু বলতে চান? হয়তো ওকেও কোনদিন দেখব আমার স্বপ্নে।
আমি পাথরের মতো জমে গেলাম। এই মেয়ে সানাহর কথা কিভাবে জানবে?সানাহর সব বন্ধু-বান্ধবীকেই তো আমি চিনি। তাছাড়া ওর বন্ধু-বান্ধবীর গন্ডীও অনেক ছোট। আমি ঘুরে তাকালাম মেয়েটির দিকে। ঠোটে মৃদু হাসি।
আচ্ছা এমন কি হতে পারেনা যে সানাহ আমাকে তার এই বান্ধবীর কথা কোন ভাবে বলতে ভুলে গেছে?কিন্তু তার এই বান্ধবী আবার আমাকে চিনে। এখন মজা করছে?
-না,সানাহ আপনাকে বলতে ভুলে যায়নি। কারন সানাহ আমাকে চিনেই না। আর আমিও আপনাকে চিনিনা।
আমি চমকে উঠলাম।
মেয়েটা কি সত্যিই আমার মনের কথা বুঝতে পারছে? চমকে ওঠার ভাবটা গোপন করে আমি সিটের উপর বসে পড়লাম আবার। মেয়েটি অসম্ভব চালাক। আমার ভাব-ভঙ্গী দেখে নিখুত ভাবে বলে দিচ্ছে আমি কি ভাবছি। মনে মনে একবার বাহবাও দিলাম। এ অবশ্যই সানাহ কে কিংবা আমাকে কোনভাবে চিনে।
এইজন্যই হয়ত আমার সাথে ট্রেনে যেতে কোন সমস্যা ছিল না। একটু পরেই আবার হেসে বলবে কেমন বোকা বানালাম?
-আপনি এখোনো আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। আপনাকে বোকা বানাবার কোন ইচ্ছাই নেই আমার। প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করুন, আপনাকে কিংবা সানাহকে আমি চিনি না।
আমি ভয়ানক ভাবে চমকে উঠলাম, কারন মেয়েটি এখন আমার সাথে কথা বলছে তার ঠোট একটুও না নাড়িয়ে,সম্পূর্ন আমার মাথার ভিতরে।
আমাকে আরো অবাক করে বল্লো,
- এই ট্রেনের আগের ট্রেনেই সানাহ চিটাগাং এর জন্য উঠেছে। মেয়েটি সম্পূর্ন একা। অনেক কাদছে। আপনি ওর সাথে যেতে পারতেন,ওকে একা পাঠিয়ে পরের ট্রেনে গিয়ে সারপ্রাইজ দেওয়ার বুদ্ধিটা মোটেই ভাল হয়নি। এখন দেখুন, আমার স্বপ্নে ঢুকে পড়েছেন।
কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। এটা অসম্ভব ভয়ংকর একটা স্বপ্ন। ট্রেনটা একটু পরেই ভয়ানক একসিডেন্ট করবে। গড়িয়ে খাদে পড়ে যাবে। কেউই বাচবেনা।
আমি খুব দুঃখিত যে আপনাকে আমি নেমে যেতে দেইনি। ওরা মানা করেছিল। ওদের কথা আমাকে যে মানতেই হবে। আমি অত্যন্ত দুঃখিত।
আমি কথা বলতে পারছিনা, কে যেন আমার সমস্ত শক্তি কেড়ে নিয়েছে,শুধুই তাকিয়ে আছি।
জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছে,আপনি কে?মেয়েটি মনে হয় বুঝতে পারল। বল্লো-
-আমি জানিনা আমি কে। শুধু দেখি কিছু স্বপ্ন। ভয়ংকর সব স্বপ্ন। অনেক যন্ত্রনা, অনেক কষ্ট পাই যখোন স্বপ্নগুলো দেখি।
অনুভব করি কেউ বা কারা আমাকে দিয়ে এই স্বপ্নটা দেখাচ্ছে। তাদের হাসি শুনতে পাই যখোন তারা আমাকে এই অসহ্য যন্ত্রনা পেতে দেখে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি পারলে অবশ্যই আপনাকে বাচাবার চেষ্টা করতাম। আপনার বান্ধবী সারপ্রাইজটা পাওয়ার কান্না-আনন্দ মিশ্রত মুখটা একবার হলেও দেখতে চাইতাম।
আমি পারছিনা আর ধরে রাখতে এই স্বপ্নটা।
.
আমার কানে বাজছে ট্রেনের ঝুম-ঝুম শব্দ। চোখের কোনা দিয়ে দেখতে পেলাম সামনে একটা বড় খাদ আসছে,তার ভিতরে একটা মেয়ের তার স্বপ্ন ধরে রাখার তীব্র চেষ্টা করে যাচ্ছে,যন্ত্রনায় তার মুখ বিকৃত হয়ে উঠছে।
পূর্বে আমারব্লগে প্রকাশিত Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।