আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোচিং সেন্টার বন্ধ আন্দোলন এবং কিছু অপ্রিয় সত্য

অনেক স্বপ্নই অধরা তাই বলে কি স্বপ্ন দেখবো না !!!! সম্প্রতি বাংলাদেশের শিক্ষাবিদেরা তথা শিক্ষাবোদ্ধারা বেশ উঠেপড়ে লেগেছেন কোচিং সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে। তাদের দাবী – কোচিং সেন্টারগুলো দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে । কোচিং সেন্টারগুলোতে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের কোমল মনের উপরে চাপ সৃষ্টি করে তাদের প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিচ্ছে। তাই কোচিং সেন্টারগুলোকে বন্ধ করে দিতে হবে যে করেই হোক। বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় এ সম্পর্কিত কিছু বোদ্ধাদের মতামত দেখে এই অধমের মনে কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হলো।

তাই লেখক না হয়েও লেখার মতো দুঃসাহসিক কাজে হাত না দিয়ে পারলাম না। এইসব শিক্ষাবিদদের প্রতি আমার প্রশ্নঃ “আপনি কি আপনার বাড়ি তৈরির সময় ভিত আগে না দিয়ে ছাদ তৈরি করেছিলেন?” কোচিং সেন্টারগুলো কেন গড়ে উঠেছে সেটা আগে আমাদের বুঝতে হবে। কোচিং সেন্টারগুলো গড়ে ঊঠেছিলো আমাদের শিক্ষার্থীদের যাদের বাসায় বাবা-মা পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননা তাদের ক্লাসের পড়ার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য। আর বাসায় যেখানে ২ জন ব্যক্তি বাচ্চাকে সব বিষয় দেখান সেখানে কোচিংএ সব বিষয়ের আলাদা আলাদা শিক্ষক থাকেন। আমি স্কুল কলেজের শিক্ষকদের কথা বলছিনা, যারা ক্লাসে না পড়িয়ে ব্যাচে পড়ান।

আমি বলছি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা বা সদ্য পাশ করা একদল মেধাবী শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত কোচিং সেন্টারগুলোর কথা যেখানে আসলেই স্কুল কলেজের শিক্ষকদের চাইতেও কোন কোন ক্ষেত্রে যোগ্য শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেন তারা। আমার এই কথাতে আবার অনেক শিক্ষকই মুখ গোমড়া করে বসে থাকবেন, তাই আমার কথার স্বপক্ষে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করছি- ১। প্রাইমারি স্কুল বা হাই স্কুলের কতজন শিক্ষক নিজ নিজ বিষয়ের উপরে ক্লাস নিচ্ছেন সেটা নিশ্চই আমাদের সবার জানা। হাতে গোনা কয়েকটি বিষয় যেমনঃ বাংলা ছাড়া আর প্রায় সব বিষয়েই এক বিষয়ে পাশ করা শিক্ষক আর এক বিষয়ের ক্লাস নেন। স্বীকার করতে না চাইলেও এটাই বাস্তবতা, সরেজমিনে গিয়ে দেখে আসুন।

কোচিং সেন্টারে শিক্ষক নিয়োগের সময় এটা অনেক ভালোভাবে দেখা হয় যে শিক্ষকের ব্যাকগ্রাউন্ড কী। কারন তাদের অভিভাবকদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। ২। প্রাইমারি স্কুল বা হাই স্কুলের শিক্ষকেরা চাকরি করেন সরকারের। পড়াতে পারা আর ডিম পাড়া তাদের কাছে একই ব্যপার মনে হয়।

ক্লাসে শিক্ষার্থীরা বুঝলো কি না বুঝলো তা নিয়ে তাদের কোন মাথব্যাথা নেই। বরং না বুঝলে তো আরো ভালো তাদের ব্যবসার জন্য... ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বাসায় আলাদা করে ব্যাচ পড়তে আসবে, টু পাইস কামাই হবে। ক্লাসে পড়াবে ঘোড়ার ডিম, ছাত্রছাত্রীরা যারা শুধু ক্লাস করবে তারা পরীক্ষার খাতাতেও পাবে ঘোড়ার ডিম। কোচিং এ না গিয়ে কি আর উপায় আছে? অপরপক্ষে কোচিং সেন্টারগুলোতে প্রতিটি শিক্ষক টিকে থাকে যুদ্ধ করে। ক্লাসে না পড়াতে পারলে, না বুঝাতে পারলে ফিডব্যাক খারাপ আসবে, আর সেটা হলে পরবর্তীতে আর ক্লাস পাবেনা।

তাই একথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি- স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা টিকে আছেন বেত আর নাম্বার পকেটে থাকার ক্ষমতার জোরে আর কোচিং সেন্টারগুলোর ভাইয়া নামক শিক্ষকেরা টিকে আছে যোগ্যতার বলে। ৩। এবার একটু কমার্শিয়াল কথা বলি। একটা স্কুল বা কলেজে যে টাকা অভিভাবকেরা বা সরকার দেয় সেটা দিয়ে আর কয়টিই বা পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। বরং পরীক্ষা না নিলে তার খরচটা পকেটে চালান দেয়া যাবে এবং সেটার জন্য কারও কাছে জবাবদিহি তো করতে হচ্ছেনা।

কিন্তু বাজারে কোচিং সেন্টার কিন্তু একটা নয়, অনেক। এতগুলো কোচিং সেন্টারের মাঝে টিকে থাকতে হলে নিয়মিত ক্লাস আর পরীক্ষা নিয়েই টিকে থাকতে হবে। এখন আপনারাই বুঝে দেখুন কেন ছাত্রছাত্রীরা কোচিং সেন্টারে যায়। এত কথা বলে ফেললাম, সবাই হয়তো মনে করছেন যে কোচিং সেন্টার তুলে দেয়ার বিপক্ষে কথা বলছি আমি। ব্যাপারটা তা নয়।

আমি বলতে চাচ্ছি ছাগলের মতো ব্যা ব্যা না করে সঠিক পথে আসুন। আগে ঘরের ভিত তৈরি করুন। দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঠিক শিক্ষক নিয়োগ দিন। শিক্ষকদের জবাবদিহিতার পথ তৈরি করুন। প্রয়োজনে আপনাদের চোখের বালি “কোচিং সেন্টারগুলোর” কাছ থেকে ট্রেনিং নিন এ ব্যাপারে।

শিক্ষকদের বেতন ভাতা বাড়িয়ে প্রাইভেট বা টিউশনির পথ থেকে সরিয়ে আনুন। টাকা হালাল করে খাওয়া শিখুন। সরকার থেকে বেতন নিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়ার জন্য। তাদের ধরে ধরে নিজেদের টাকা উৎপাদনকারী মেশিন বানানোর জন্য না। দেশের সমস্ত স্কুল কলেজে শিক্ষার মান নিশ্চিত করুন, শিক্ষার্থীরাই কোচিং বর্জন করবে।

আপনাদের আর কষ্ট করে ভাষন দিতে হবে না, বড় বড় দুর্বোদ্ধ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবেনা, কলাম লিখতে হবে না (যদিও কলাম লেখেন কি জন্য সেটাও একটা দেখার বিষয়)। আমি নিজে একজন ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। ক্যাডেট কলেজের স্যারেরা প্রাইভেট বা টিউশনির সাথে জড়িত নন। খুব কাছে থেকে দেখেছি যেসব শিক্ষকদের মনে প্রাইভেট পড়ানোর ধান্দা থাকেনা তারা ক্লাসে কতটা আন্তরিক হতে পারেন শিক্ষাদানের ব্যাপারে। কই ... আমাদের তো কোন প্রাইভেট পড়তে হয়নি , কোন কোচিং করতে হয়নি , আমরা নিজেরাই এর প্রয়োজন বোধ করিনি।

তাই শিক্ষকদের বলছি – টাকা টাকা করবেন না। শিক্ষাদান একটি মহান পেশা। একে কলুষিত করবেননা। কোচিং সেন্টারগুলো আপনাদের প্রাইভেট পড়ানোর সম্মানীতে ভাগ বসাচ্ছে বলে ঈর্ষাপরায়ন হবেননা। ক্লাসে ঠিকমতো শিক্ষাদান করুন, কোচিং সেন্টারগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

আর শিক্ষাবিদদের বলছি আপনাদের শিক্ষকদের ক্লাস নেবার প্রতি মনযোগী করার জন্য পদক্ষেপ নিন, কাজে লাগবে। হঠাৎ হঠাৎ শিক্ষানীতি পরিবর্তন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলবেন না। তারা গিনিপিগ নয়, আমাদেরই ভবিষ্যত প্রজন্ম। লেখকঃ আরিফ হাসান শিক্ষার্থী (বিবিএ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়) এক্স-ক্যাডেট, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।