আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তেমনি আছে ‘কাগজের ফুল’এর সেই বাড়ি : নেই কেবল স্বপ্নদর্শী সেই মানুষ

সত্য ও ন্যােয়ের প্রতীক তেমনি আছে ‘কাজলের ফুলে’র সেই বাড়ি কেবল স্বপ্নদর্শী সেই মানুষ। শিবালয় উপজেলার শেষ প্রান্তে ইছামতি নদীর তীরে সলজানা গ্রামের শেখ একাম উদ্দিনের বাড়ি দেখে ফেরার পথে বাধা পেয়েছিলেন তারেক মাসুদ। কাজের লোক লাভলু তাকে নিষেধও করেছিলেন। কিন্তু কোনো বাধা-নিষেধের তোয়াক্কা না করে কেবল গাড়ি চালকের তাড়াহুড়ার কারণে চলে এসেছিলেন ভালোবাসার মানুষ ক্যাথরিন ও প্রিয় চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরকে নিয়ে, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছা হয়নি। পথিমধ্যে ঘাতক বাস কেড়ে নেয় দেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ ৫ জনের প্রাণ।

বিশিষ্ট এই দুই ব্যক্তিকে হারিয়ে চিত্রজগৎ ও সাংবাদিক অঙ্গন আজ শোকাহত। তারেক মাসুদ তার প্রিয় মানুষ চিত্রগ্রাহক মিশুক মনিরকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই বাড়িটি দেখাতে। সত্যি অবাক হওয়ার মতো সেই বাড়ি। নদীর তীর ঘেঁষে শান বাঁধানো ঘাট, পুরো বাড়িতে সারি সারি নারকেল ও খেজুর গাছ। বাড়ির সামনে নদীতে ভেশাল পেতে মাছ ধরছে জেলেরা।

বাড়িটি দেখতে একেবারে ছবির মতো। এই বাড়িতে তারেক মাসুদ চিত্রায়ন করতে চেয়েছিলেন তার স্বপ্নের ছবি ‘কাগজের ফুল’। শেখ একাম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাদের বিশাল হলুদ বাগানে পড়ে আছে এঁটেল মাটি। যা দিয়ে তারেক মাসুদ বানাতে চেয়ে ছিলেন একটি মাটির ঘর। নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাঁঠাল গাছ।

যেখানে তিনি বাঁধতে চেয়েছিলেন নায়িকার দোলনা। বাড়িতে বানানো হচ্ছে ছনের ঘর ও টালির ঘর। সব কিছু ঠিকঠাক, নেই শুধু তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনির। তাদের মৃত্যুতে একিম উদ্দিনের পরিবারের সদস্য ও এলাকার মানুষ শোকে কাতর। বাড়ির মালিক একিম উদ্দিন জানান, গত বছর বর্ষাকালে তারেক মাসুদ হঠাৎ হাজির হন তার বাড়িতে।

বাড়িতে ওঠেই তিনি (তারেক মাসুদ) জানান, ‘কাগজের ফুল’ নামের একটি ছবির স্যুটিং করার জন্য তিনি একটি স্পট খুঁজছেন। নদীপথে যাওয়ার সময় তার একেম উদ্দিনের বাড়িটি পছন্দ হয়েছে। একেম উদ্দিন বলেন, তারেক মাসুদের সঙ্গে কথা বলে তাকে আমার অনেক পছন্দ হয়। পরে ভাইদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে বাড়িতে স্যুটিং করার অনুমতি দেই। গত বছর তাদের স্যুটিং করার কথা ছিল।

কিন্তু তখন নদীর পানি কম থাকায় স্যুটিং করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া গত বছর ছোটখাট কাজ করানোর জন্য তিনি ২৩ হাজার টাকা এবং বাকি কাজ করানোর জন্য তিনি এবার প্রায় ৮০ হাজার টাকা দিয়েছেন। স্যুটিংয়ের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছেন। তিনি বলে,ন আমি (শনিবার) একটি বিশেষ কাজে ঢাকায় ছিলাম। আমি বাড়িতে থাকলে তারেক মাসুদকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে দিতাম না।

একিম উদ্দিনের ছেলের বউ রোকসানা আক্তার বলেন, গত শনিবার সকালে বৃষ্টির মধ্যে তারেক মাসুদ তার দলবল নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আধাঘণ্টা অবস্থান করার পর যখন তারা বের হয়ে যান সে সময় বাড়ির উঠানের পেয়ারা গাছের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তারেক মাসুদ। এ সময় রোকসানা তাকে পেয়ারা নিতে বললেও তিনি নেননি। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ বাড়ির উঠানের গাছের কৎবেল ঝুলতে দেখে তাকিয়ে ছিলেন। এ সময় তাকেও কৎবেল নিতে বললে তিনি নেননি।

তিনি বলেন তারেক মাসুদের গাড়ির ড্রাইভারের তাড়াহুড়ার জন্য তারা চলে যান। ওই বাড়ির ১২ বছরের ছেলে সুজন বলেন, তারেক মাসুদ ও মিশুক মনির স্যার যখন চলে যান তখন তাদের ছাতা বাড়ির কামরাঙ্গা গাছে আটকে যায়। এ সময় সুজন তাদের বলেন, স্যার বাধা পড়েছে একটু বসে যান। কিন্তু তাদের ড্রাইভারের তাড়াহুড়ার জন্য তারা চলে যান। ওই খানে কাজ করা লাবলু খান বলেন, মাসুদ স্যার আমাকে খুব আদর করতেন।

গত বছর থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তার কাজের দেখাশোনা আমি নিজে করতাম। তিনি বলেন, মাসুদ স্যার ঢাকায় যাওয়ার আগে আমাকে একটি রেইন কোট দিয়ে গেছেন। তার কথা আমি কোনো দিন ভুলতে পারবো না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.