জীবন ভুল না হতে পারে,হয়তো সময় ভুল ছিল। সুন্দরবনকে ভোট দিন। গত কয়েক বছরের বাজ ওয়ার্ড । বাসে,টেলিভিশনে,পত্রিকায় সব জায়গাতেই এই ভোটের আবেদন। আমি প্রতিদিন তিনটি করে ভোট দিই গত দুই সপ্তাহ ধরে,দিয়ে যাচ্ছি,যতদিন পোল খোলা থাকবে দিয়ে যাব।
একজনে একটির বেশী ভোট দিতে পারে কিনা আমি শিউর না,তারপরো রিস্ক নিতে আমি রাজী নই।
কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ একদিন ফেসবুকে দৈববাণীর মত এক নোটের আবির্ভাব ঘটলো প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য্য নির্বাচন: কতবড় ধান্দাবাজী!!! নামে। লেখক বাংলাদেশের গণমাধ্যমের পরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব। নোটটি দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়তে লাগলো বঙ্গমাতার ফেসবুকচারী সন্তানদের মাঝে। পুরোটা পড়ে না পড়ে ফেসবুক জেনারেশনের আমরা লাগাতারে শেয়ার দিতে লাগলাম ।
অনেকেই ভোট দেওয়া বন্ধ করলেন। কেউ আফসোস করতে লাগলেন।
কিন্তু আগ্রহ নিয়ে নোটটি পড়তে গিয়ে কিছু খটকা লাগলো। তিনি আমাদের ভোট দানে নিরুৎসাহিত করার জন্য বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন।
1. এই প্রতিযোগীতার কোন দাম নেই (তিনি তার ফেসবুক বন্ধু মারফত জেনেছেন)।
2. সংঘটনটি ভুঁইফোড়। শুধু অনলাইনেই উপস্থিতি।
3. ভোটিং প্রক্রিয়াটি অস্বচ্ছ এবং প্রশ্নসূচক।
এখন আসুন খানিকটা আলোচনা করা যাক এই পয়েন্টগুলো নিয়ে। দেখা যাক লেখকের নোটের সাথে বাস্তবতার পার্থক্য কতটুকু।
১)আপনার কি খেয়াল আছে তারা প্রথমবার যখন ঘোষনা দিয়েছিল? অনেক সংবাদ মাধ্যমে তা লাইভ দেখিয়েছিল। ফলাও করে ছেপেছিল প্রতিটি ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্ট মিডিয়ায়। Times,Gurdian,NyTimes এ খুঁজলে এখনো পাবেন। বেশীরভাগ দেশের সরকার ক্যাম্পেইন করেছিল তাদের ওয়ান্ডার্সগুলো নিয়ে। জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছিল নতুন সাত আশ্চর্যের নাম।
আসুন দেখি বিদেশী কিছু পত্রিকা দেখি এই প্রতিযোগীতা নিয়ে।
1. ভোট চেয়ে বৃটিনের জনপ্রিয় পত্রিকা গার্ডিয়ানের আবেদন বৃটিশদের কাছে।
2. গার্ডিয়ানের আরো এক টী প্রতিবেদন
3. স্টোন হ্যাঞ্জের জন্য ভোট চেয়ে গার্ডিয়ানের আবারো আবেদন।
4. নিউ সেভেন ওয়ন্ডার্স নিয়ে টাইমেস এর ফটো এসে।
5. নিউইয়র্ক টাইমেস এর ফ্রন্ট পেজ রিপোর্ট
6. সিএনএন এর রিপোর্ট
7. এই ক্যাম্পেইনকে বুস্ট করার জন্য ফিলিপাইন সরকারের ৫০০ পেসো এর মুদ্রা চালু।
এই লিস্ট আরো কন্টিনিউ করা যাবে। কারণ আগেই বলেছি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বেশ গুরত্ব সহকারেই এই প্রতিযোগীতার খবর দিয়ে এসেছিলো বাছাই থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত।
২)এই সংঘটন ভুঁইফোড় এবং শুধু অনলাইন ভিত্তিক কিনা তা নিয়ে আমার অন্তত বেশ সন্দেহ আছে। কারণঃ
1. এই সংঘটনটী সুইস সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং সুইস সরকারের নিয়ন্ত্রণের অধীনে পরিচালিত।
2. জাতিসংঘের সহযোগী সংঘটন হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
যেখানে খুব অল্প কিছু সংঘটনই রয়েছে এই লিস্টে।
3. পর্তুগালের লিসবনে জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফাইনাল লিস্ট ঘোষণা। যাতে উপস্থিত ছিলেন হিলারী সোয়াঙ্ক,জেনিফার লোপেজ,ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ড হতে শুরু করে নোবেল বিজয়ী পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের পুরো ভিডিও পাবেন নীচের লিঙ্কগুলোতে। দেখতে ভুলবেন না যেন এই চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠানটি।
একটা ভুঁইফোড় সংঘটনের এত প্রেস কাভারেজ পাওয়া এবং এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
৩) হ্যাঁ। ভোটিং প্রক্রিয়াটি অস্বচ্ছ। তারা নিজেদের ওয়েবসাইটেই লিখেছে এসএমএস ভোটিং থেকে তারা টাকা রাখছে যাতে করে তারা তাদের সংঘটন চালাতে পারে। মোবাইল কোম্পানীগুলোও কমিশন পাচ্ছে। বর্তমানে ভোটিং মানেই হলো এক ধরনের ব্যাবসা।
আমেরিকা বলুন,আর ভারত বলুন এবং আমাদের দেশের কথাই বলুন। এই ভাবে বলা যায় যে,তারা আসলে নিজেদের লাভের জন্যেই এই প্রতিযোগীতায় জড়িত হচ্ছে। কিন্তু আমাদেরতো প্রচার দরকার সুন্দরবনের। তাদের সংঘটনের ট্রান্সপারেন্সী,ব্যবসা নিয়ে আমাদের ভাবারতো দরকার নেই। না হয় করলো তারা একটু ব্যাবসা।
কিন্তু তাদের এই ব্যাবসা দিয়ে অন্তত আমাদের দেশের নাম,সুন্দরবনের নাম আন্তর্জাতিকভাবে বারবার উচ্চারিত হবে,যেখানে প্রাকৃতিক দূর্যোগ,রাজনৈতিক সহিংস তা এবং দূর্ঘটনার নিউজবাদে পজেটিভ কোন নিউজ আমাদের দেশের ব্যাপারে খুঁজে পাওয়ায় দুস্কর।
তাই আসুন,বিভ্রান্ত না হয়ে আমরা সুন্দরবনকে ভোট দিয়ে যাই। গতবার ২২০ টি দেশ থেকে ১০০ মিলিয়নের বেশী ভোট পরেছিল। আমরা না দিলে আমরা পিছিয়ে পড়বো। ভারত এবং চায়না কিন্তু ঠিকি গতবার ম্যানমেইড ওয়ান্ডার্স এর তালিকায় ভোটিং এর মাধ্যমে তাদের তাজমহল এবং গ্রেট ওয়াল তুলে এনেছিল।
আর ভোট দেওয়ার নিয়মটি জানেনতো?ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে SB লিখে পাঠিয়ে দিন 16333 নম্বরে। নিজে ভোট দিন,অন্যকে উৎসাহিত করুন। বঙ্গমাতা আজ আপনার কাছে দুটো টাকা আর আধ মিনিট সময় চাইছে। নিরাশ করবেন না নিশ্চয়? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।