সমাজকর্মী বাড়ির একজন সদস্যকে হত্যার অপরাধে বাড়ির অন্যান্য সদস্যগন সেই হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি তুললো। যথারীতি হত্যাকারীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো। হত্যাকারী নিজেকে বাঁচানোর অন্যকোন উপায় অন্তর না পেয়ে, বিচার প্রার্থী পরিবারের সদস্যদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললো.....বিচার প্রার্থীরা সৎ না, তাঁরা রাতে ঠিকমত ঘুমায় না, তাঁদের দাম্পত্য জীবনে সমস্যা আছে, তাঁদের ভিতর প্রেম বলতে নেই তাঁরা নিষ্ঠুর ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ হাস্যকর বিষয়।
বিচার প্রার্থী পরিবারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠার পর তাঁদের কি করা উচিৎ? শুধু ফাঁসির দাবিতেই কথা বলা? না নিজেদের চরিত্রের বিচার বিশ্লেষন করা? উত্তর...অবশ্যই ঐসব ফালতু অভিযোগ কর্নপাত না করে শুধু ফাঁসির দাবিতেই কথা বলা। কারন হত্যাকারীর বিচারের সাথে হত্যাকারীর অভিযোগের কোন সম্পর্ক নেই।
অভিযোগ তোলা হয়েছে শুধুমাত্র বিচার প্রার্থীদের বিভ্রান্ত করার জন্যে। ফলে বিচার প্রার্থীরা যদি না বুঝে তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ খন্ডনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলে সেটা হত্যাকারীর উদ্দেশ্যকেই সফল করবে!
ক্যুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায় দেবার পর, সেই রায় প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির রায়ের দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তে আন্দোলন শুরু হয় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে। দ্রুত সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে...
১. সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় নিশ্চিত করার দাবিতে।
২. যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতে।
হতচকিত হয়ে পড়ে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা। দিশেহারা হয়ে যায় যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত-শিবির এবং তাদের লালন-পালনকারী দল বিএনপি। তারা হয়ে যায় পাগলা কুত্তা। তৈরী করে নীলনক্সা, মেতে উঠে ‘৭১ এর কায়দায় হত্যাযজ্ঞ এবং সেই সাথে শুরু করে অপপ্রচার। হত্যাযজ্ঞের প্রথম স্বীকার হয় ব্লগার প্রকৌশলী রাজীব হায়দার।
কেন তারা হত্যা করেছিলেন ব্লগার রাজিব হায়দারকে? উদ্দেশ্য ছিল...
১. যেহেতু আন্দোলনের সামনের নেতৃত্বে ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিষ্ট, সে কারনে রাজীবকে মেরে অন্য ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিষ্টকে ভয় দেখানো।
২. রাজীবকে মারার পর অপপ্রচারের মাধ্যমে আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।
প্রথম উদ্দেশ্যটিতে তারা সফল হতে পারেনি ঠিকই কিন্তু দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটির ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই সফল হয়ে গেলো। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সেই সফলতার অনেকটাই আসলো আমাদেরই হাত ধরে। কেউ বুঝে কেউ না বুঝেই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়লাম তাদের অপপ্রচার ঠেকাতে, যা ঠেকাতে গিয়ে উলটো অপপ্রচারকে প্রচারে পরিনত করতে সহযোগীতা করলাম।
অনেকে বুঝতেই পারলাম না, কিভাবে জড়িয়ে গেলাম তাদের অপপ্রচারের ফাঁদে! জোড়ে সোড়ে প্রচার শুরু করলাম....আমরা এই না সেই, হ্যান না ত্যান। যার কোন দরকারই ছিল না।
এই আমাদের দ্বারা যেখানে প্রতিটা মুহুর্ত ফেসবুক-ব্লগের পাতা ভরে থাকতো...যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির কথায়, জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার কথায়। সেখানে আমরা শুরু করে দিলাম নিজেদেরকে হ্যান-ত্যান, এই-সেই প্রমান করার চেষ্টায়। শুধু অনলাইনেই নয়, মাঠে-ঘাটে-আড্ডায় সেখানেও এই আলোচনার কমতি রাখলাম না।
চুপকরে শুধু দেখা আর শোনা ছাড়া কিছুই বলবার থাকলো না, না থাকলো কোন উপায়। নিজে চুপ থাকলে অন্তত, অপপ্রচারে একজনের অংশগ্রহন অনিশ্চিত করে...শান্তনা রইলো সেটুকুই।
পরিশেষে একটাই কথা, আসুন আমরা জামাত-শিবির-বিএনপি’র অপপ্রচারে অংশগ্রহন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখি। সেটা পজিটিভ বা নেগেটিভ যেকোন অংশগ্রহনই হোক। অপপ্রচার, অপপ্রচারই।
আন্দোলনকে মূল জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলার জন্যে ওদের যে অপপ্রচার, সেটা ওরাই করুক। আমরা থাকি....যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবির প্রচারে অটুট। শেষ যুদ্ধে জয় আমাদেরই হবে। জয় বাংলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।