যখন সারা দেশের তরুণ প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে রাজপথে। ঠিক সে মুহূতে জামাতপন্থী পত্রিকা হিসেবে পরিচিত ‘দৈনিক নয়া দিগন্ত’ এবং ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকা অব্যাহতভাবে ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিনের পত্রিকার দিকে নজর দিলেই এ বিষয়গুলো বোঝা যায়। শুক্রবারের (৮ ফেব্রুয়ারি) মহাসমাবেশের একটি ছবি প্রকাশ করে সেখানে ক্যাপশনে বলা হয় ‘গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ’ (প্রথম পৃষ্ঠা, দৈনিক সংগ্রাম, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)।
অন্যদিকে একই তারিখে প্রথম পাতার শিরোনামের পাশে কালারফুল বক্সেও শিরোনাম হয়েছে ‘শাহবাগে ধাওয়া খেয়েছেন সাজেদা চৌধুরীরা: পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে’।
এ সংবাদের ভেতরে উল্লেখ করা হয়, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসে পানির বোতলের ঢিল প্রথমে খেয়েছেন সরকার দলীয় উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এছাড়াও শাহবাগে অবস্থানরত তরুণদের ‘মস্কোপন্থি’ বলেও উল্লেখ করে পত্রিকাটি। এ রিপোর্টে একইসঙ্গে শাহবাগ ঘটনাটিকে সরকারের সাজানো নাটক বলা হয়।
এ রিপোর্টে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আছে বিচার ট্রাইব্যুনাল। হিলারি ক্লিনটনের প্রসঙ্গ এনে বলা হয়, ‘...মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে র্যাপের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে হিলারি ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, তাদের দূত স্টিফেন জে র্যাপ তাকে জানিয়েছেন, ১৯৭৩ সালের যে আইনের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল বিচার কাজ চলছে সে আইনটির বিভিন্ন ত্রুটি ও দুর্বলতা রয়েছে।
...’
এভাবেই বিভ্রান্তিমূলক সংবাদে এ পত্রিকাটি জামাতের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। দুটি পত্রিকা শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের নিঃস্বার্থ আন্দোলনকে সরকারের সাজানো নাটক বলছে অন্যদিকে এও বলছে সরকার এসব মস্কোপন্থিদের ফাঁদে পড়ে গেছে।
অন্যদিকে একইদিন ৯ ফেব্রুয়ারি নয়াদিগন্ত পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘শাহবাগের সমাবেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি’। কিন্তু তার পাশে ‘যুদ্ধাপরাধের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে: জাতিসঙ্ঘ’ শিরোনামে আরও একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। অন্যদিকে প্রথম পাতায় আরও একটি সংবাদে বলা হয় ‘শাহবাগ চত্বর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে’।
এ রিপোর্টে বলা হয়, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ চত্বর থেকে মানুষ ঘরে ফিরে যাচ্ছে। তবে চত্বরে শুধুমাত্র উপস্থিত আছেন বামপন্থি এবং ছাত্র লীগ নেতারা।
অথচ বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগে বাড়ছে মানুষের ভিড়। রাজনৈতিক দর্শনের উর্ধ্বে চলে গিয়ে তরুণ প্রজন্মের শুধু একটাই দাবি ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার’।
শাহবাগে এখন একটাই দর্শন।
১০ ফেব্রুয়ারি রবিবার দৈনিক সংগ্রামের প্রথমপাতা পুরোটা জুড়েই রয়েছে প্রপাগান্ডা। যার মধ্যে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড প্রধানের বিবৃতির বরাত দিয়ে সংগ্রাম বলছে, ‘ইসলামী নেতৃবৃন্দসহ রাজবন্দিদের প্রতি অবিচার বন্ধ করে অবিলম্বে মুক্তি দিন’। অন্যদিকে আরও একটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘শাহবাগে বাম ও ছাত্রলীগের আন্দোলনে গণমানুষের সম্পৃক্ততা নেই’। আরও বলা হয়, সবাই ‘তরুণ প্রজন্ম’ শব্দটি ব্যবহার করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়।
তবে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি হলো বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। শুধু তাই নয় তিনি বীর উত্তম। তিনি এক সভায় গিয়ে বক্তব্যে বলেছেন, ‘ঘরে বড় বড় রাজাকার রেখে বাইরের রাজাকারের বিচার জনগণ মানবে না’ (প্রথম পাতা, দৈনিক সংগ্রাম, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)। এছাড়াও একদিন আগে ৯ ফেব্রুয়ারি নয়া দিগন্ত পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়তে বিশেষ কলামও লিখেছেন।
এভাবেই তরুণপ্রজন্মের আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে এদুটি পত্রিকা। বিশেষ করে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকাও মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পাকিস্তানি দোসরদের মূখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৩
সূত্র : Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।