আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন আমরা রিক্সাওয়ালা জয়নালের পাশে দাঁড়াই

সত্য যেখানে অসহায় আমি সেখানে হতে চাই সহায় ও সঙ্গী। বাচাল, ভন্ড, ধর্মব্যাবসায়ীরা, মিথ্যাবাদী, সত্য গোপনকারী, অন্ধ দলীয় সমর্থকরা আমার ঘৃনার পাত্র। আজ দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে একটা খবর দেখলাম "রিক্সা চালিয়ে হাসপাতাল" আমার মত হয়ত অনেকেই লেখাটা পড়েছেন বা পড়েন নাই। যদি কেউ না পড়ে থাকেন, তাহলে খবরের শিরোনামে দেয়া লিংকে ক্লিক করে পড়ে নিতে পারেন। রিক্সাওয়ালা আর কেউ নন, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পরানগঞ্জ ইউনিয়নের টানহাসাদিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিন।

বাবা মো. আবদুল গনি ছিলেন ভূমিহীন কৃষক। আবদুল গনির চার ছেলে ও ছয় মেয়ের মধ্যে জয়নাল সবার বড়। অভাব-অনটনের সংসারে পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি কারও। কিন্তু এই অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষটি যে কাজটি দীর্ঘদিন তার শ্রম দিয়ে করে যাচ্ছেন তা হল রিক্সা চালিয়ে তার গ্রামে একটি ০৬ বেডের হাসপাতাল ও একটি বিদ্যালয়। যেখানে সম্পূর্ন বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ এবং বিদ্যালয়ে বিনা খরচে পড়ালেখা ও বই পত্র।

আর তিনি এগুলোর ব্যয় বহন করছেন ঢাকা শহরে রিক্সা চালিয়ে যা পান তা দিয়ে। রিক্সা চালানোর টাকা দিয়ে তিনি ঔষধ ও স্কুলের বই খাতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র ক্রয় করেন। আর গ্রামে কিছু জমি, একটি দুধের গাভী বর্গা, একটি ছোট পুকুরে মাছ চাষ ইত্যাদির মাধ্যমে যা আসে তা দিয়ে কোন মতে চলে যাচ্ছেন। এই জয়নালের কোন বড় পুঁজি নেই যে বড় একটা হাসপাতাল করবেন, নেই কোন বড় ফান্ড যা দিয়ে তিনি একটা বড় এবং পুরোপুরি সম্পূর্ন স্কুল বলতে যা বুঝায় তা প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু তারপরও তিনি করেছেন যা তার কোনদিন করার কথা নয়, যেটা করার কথা ছিল আমাদের দেশের ধনবানদের।

যাদের বেসুমার টাকা আছে, সম্পদ আছে তারা এটা করেন নাই। এই রিক্সাওয়ালা জয়নালের বাবার ৩০ বছর আগে হঠাৎ করে বুকে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়। সে সময় তাদের গ্রাম বা আশেপাশে কোন হাসপাতাল বা ভাল ডাক্তারও ছিলনা। এলাকার কিছু ঔষধের দোকান ছিল, আর ঐ ঔষধের দোকানদাররাই আবার অনেক রোগের চিকিৎসা করতেন। ঐদিন জয়নাল তার বাবাকে নিয়ে তিনি রাত আটটার দিকে দুই কিলোমিটার দূরে মীরকান্দাপাড়ায় যান।

সেখানে মেহছেন বেপারীর ওষুধের দোকান ছিল। মেহছেনের বাবা জসিমউদ্দিন ছিলেন এলাকার কুখ্যাত রাজাকার। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে দোকানে পৌঁছালে মেহছেন তাচ্ছিল্য করে বলেছিল, "রাজাকারের দোকানে ওষুধ নিতে আইছো ক্যান? তোমরার কাছে ওষুধ বেচুম না। " বিমুখ হয়ে মুমূর্ষু বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন ছেলেরা। রাত ১০টার দিকে বাবা মারা যান।

এই মৃত্যু স্তব্ধ করে দেয় জয়নালকে। এরপর তিনি পারি জমান ঢাকায়। "বাবার কুলখানির পর গাঁয়ের কয়েকজন মুরব্বি নিয়ে বসলেন জয়নাল। তাঁদের বলেন, ‘এই রইল আমার মা আর ভাইবোনরা। ওগো সমস্যা হইলে আপনেরা দেইখেন।

আমি চললাম। ’ স্ত্রী লাল বানু ও দেড় বছরের মেয়ে মমতাজকে নিয়ে ট্রেনে ঢাকার পথে ছোটেন জয়নাল। " রিক্সা চালিয়ে যে টাকা পান তা দিয়ে সংসার খরচ করার পর বাকী টাকা অতি কষ্ট করে আস্তে আস্তে জমাতে শুরু করলেন। খুলেছেন দুটি ফিক্সড ডিপোজিট ব্যাংক হিসাব। এভাবে জয়নালের ২০ বছর কেটে যায় ঢাকার অলিতে গলিতে রিক্সা চালিয়ে।

ব্যাংকে জমানো টাকা ২০০১ সালে তার পরিমান দাড়ায় ১লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের চুড়ান্ত পর্যায়ে হাত দেন তিনি। কিনেছেন ২৪ শতাংশ জমি। আর সেখানেই গড়ে তুলেছেন ০৬ শয্যা বিশিস্ট হাসপাতাল "মমতাজ হাসপাতাল" এবং একটি তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত পাঠ দান যোগ্য বিদ্যালয়। হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ দেয়া হয়।

আর বিদ্যালয়ে বিনামুল্যে পাঠদান ও বইখাতা দেয়া হয়। তিনি এখন ঢাকায় এসে ৩-৪ দিন রিক্সা চালিয়ে যে টাকা পান তা দিয়ে হাসপাতালের ঔষধ, ডাক্তারের বেতন, স্কুলের বই খাতা ইত্যাদি খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে, দুধেল গাভী বর্গা নিয়ে, পুকুরে মাছ চাষ করে কোন রকম চলে যাচ্ছেন। এখানে শুধু তিনি নিজেই শ্রম দিচ্ছেন না, তার স্ত্রী, পুত্র, মেয়ে, পুত্র বধু সহ পরিবারের সবাই বিনা পয়সায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ লোকের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়।

আর স্কুলে এখন ১২০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়ানো হচ্ছে। এখন তার বয়স হয়েছে । আর পারছেননা। তাই হাসপাতালের ভবিষৎ নিয়ে তিনি বড়ই চিন্তিত। যার জন্য তিনি অনেক বিত্তবান ব্যাক্তি এবং বিভিন্ন সংস্থার কাছে সাহায্য চেয়েও পান নাই।

উল্টো পেয়েছেন উপহাস ও প্রতারনা। অসম্ভবকে জয় করা জয়নাল পড়ন্ত বয়সেও কারও আশায় বসে থাকতে রাজি নন। জীবিকার পথে এখনো সচল তিনি। রিকশা চালিয়ে যে টাকা পান, তা দিয়েই চালান হাসপাতাল, বিদ্যালয় ও মক্তব। আজ আমি আমাদের ব্লগের মাধ্যমে সকলের কাছে আবেদন করছি কেউ যদি পারেন এই মহৎ উদ্যোগকে বাচিয়ে রাখতে সহায়তা করুন।

যার যা সামর্থ্য আছে, যেভাবেই পারেন, আসুন আমরা জয়নালের পাশে দাঁড়াই। উৎসাহ যোগাই এভাবে হাজার হাজার জয়নালের জন্ম হতে। আমার একটি জিজ্ঞাসাও মাথায় বার বার দোলা দেয়। এই জয়নালকে দেখে কি আমাদের দেশের প্রধান মন্ত্রী, বিরোধী নেত্রী, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, আমলা, বিত্তবানেরা, শিল্পপতিরা তথা বুদ্ধিজীবি ও সুশীল সমাজের বাসিন্দারা কি কিছুই শিক্ষা নিতে পারেন না ? আমার আবেদন এই রিক্সাওয়ালা জয়নালের কাছ থেকে সত্যিকার দেশপ্রেম ও মানবতা প্রেম কি তা শিখে নিন !!! জাতি অনেক উপকৃত হবে, দেশ এগিয়ে যাবে, বিশ্বের কাছে আমরাও মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারব, দেশ ও দেশের রাজনীতিকে নিয়ে গর্ব করতে পারব। [পাঠক বৃন্দ কেউ যদি এই জয়নালের সাথে যোগাযোগ করতে চান, তবে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের সাথে বা প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করুন।

তারাই আপনাকে রিক্সাওয়ালা জয়নালের কাছে পৌছে দিতে সহায়তা করতে পারবেন। ] আমি যাদের কাছে কৃতজ্ঞ : "দৈনিক প্রথম আলো" এবং এর প্রতিবেদক জনাব কামরুজ্জামান, ময়মনসিংহ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।