বন্ধুর কাছে মনের কথা পৌছাঁবার এক আবেগী প্রত্যয় নিয়ে ১৪১৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবন মাসে ( জুলাই ২০১০) যাত্রা করে নোমান ভূঁইয়া সম্পাদিত ভিন্ন আয়োজনে অন্য সাময়িকী ‘আকাশলীনা’৷ দেখতে দেখতে আকাশলীনার বয়স এক বছর হতে চললো৷ তো এই এক বছরে আকাশলীনার কাছ থেকে আমরা কি পেলাম ? আমাদের সব প্রত্যাশা কি আকাশলীনা পূরন করতে পেরেছে? উত্তর হবে- নিশ্চয়ই না৷ প্রথম তিনটি সংখ্যা বেরোবার পর চতুর্থ সংখ্যায় আকাশলীনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দু’কলম লিখেছিলাম৷ নতুন একটি প্রকাশনার ভালো দিকগুলোই তখন শুধু তুলে ধরেছিলাম৷ কিন্তু এখন আকাশলীনা পরিপক্ক হয়েছে এবং হচ্ছে৷ তাই এর ভুলগুলো তুলে ধরা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বৈকি ? প্রথম সংখ্যায় শ্রদ্ধেয় লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বর্ষা নিয়ে একান্ত ভাবনা আমাদেরও শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়৷ এ ধরনের লেখা প্রকাশের জন্য সম্পাদককে ধন্যবাদ৷ এই লেখাটি নাকি বিশেষ সংগ্রহ থেকে প্রকাশিত৷ বিশেষ সংগ্রহ বলতে সম্পাদক কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা আমার বোধগম্য নয়৷ বিশেষ সংগ্রহ থেকে লেখা প্রকাশ করা হলে লেখকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে কেন? সম্পাদকের বিশেষ সংগ্রহ মনে হয় শেষ হয়ে গেছে৷ কারন এখন আর লেখার শেষের এই ’ লেজ’ টুকু চোখে পড়ে না৷ ২য় সংখ্যায় আফ্রিকান বিয়ে উত্সব নিয়ে বিশেষ লেখা এবং গল্পকার শফিকুল ইসলামের [ বর্তমান নাম শফিক হাসান] গল্প এপার-ওপার ভালো লেগেছে৷ ৩য় সংখ্যায় ফারুক ওয়াসিফের ইরাক যুদ্ধ বিষয়ক লেখা [একই ধরনের লেখা আগে প্রথম আলো’তে সম্ভবত পড়েছি ]এবং আব্দুল মান্নান সৈয়দকে নিয়ে বিশ্বজিত্ ঘোষের লেখা চমত্কার হয়েছে৷ ৪র্থ সংখ্যায় ইশতিয়াক হাসানের ‘মূর্তিগায়েব’ এবং হাসান ফেরদৌরে ‘আফগান কন্যা:আয়েশা কাহিনী’ ভালো লেগেছে৷ তবে ইশতিয়াক হাসানের লেখাটি পড়ে মনে হলো কোথায় যেন গল্পটি আগে পড়েছি৷ কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছি না৷ তবে সম্ভবত কালের কন্ঠ’র ম্যাগাজিন ‘মগজধোলাই’ ৷ ৫ম সংখ্যায় হাসান খুরশীদ রুমী’র ‘প্রানপন মরুযাত্রা’ কারে কন্ঠ’র ছোটদের ম্যাগাজিন ‘টুন টুন টিন টিন’ এ প্রকাশিত৷ লেখাটি ভালো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু যত ভালো লেখাই হোক, পূনঃপ্রকাশিত হলে ‘পূনঃপ্রকাশিত’ কথাটি লেখা থাকলে ভালো হয়৷ অন্যথায় কেউ কেউ এটাকে পাঠকের সাথে প্রতারনা হিসাবে ভাবলে তাকে দোষ দেয়া যাবে না৷ ৬ষ্ঠ সংখ্যায় দু’কালজয়ী প্রতিভা মার্ক টোনে এবং লেভ তলস্তয়কে নিয়ে জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর আয়োজনটি সত্যিই চমত্কার৷ ৭ম সংখ্যাটি আকাশলীনার শোকসংখ্যা৷ একজন পাঠিকার মৃত্যুতে ভিন্ন মাত্রার সাময়িকী আকাশলীনার শোক প্রকাশের এ ভিন্ন ধরনের আয়োজন তথা শোকের প্রকাশ সত্যিই অসাধারন৷ এ ধরনের আবেগকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারা যায় না৷ সম্পাদকের সাথে পুরো পাঠক সমাজও একাত্মতা প্রকাশ করেছে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়৷ ৮ম সংখ্যার ১৪ পৃষ্ঠায় ভালোবাসা বিশেষঃ কবিতা’র কবির নাম কি ঠিক আছে ? সম্পাদক আমাদের মানিকগঞ্জের সাবরিনা আপুকে সারবিনা বানিয়ে ফেললেন! এরকম ভুল, বিশেষ করে ভুল বানান প্রায়শই চোখে পড়ে৷ এটি আমাদের ভীষণভাবে হতাশ করে, ব্যথিত করে৷ ৯ম সংখ্যার ৩ পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ নিবন্ধের সাথে যে ইলাস্ট্রেশন ছাপা হয়েছে সেখানে একটি গুরুতর ভুল রয়েছে৷ ৫৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের পরিবর্তে ৫৬ হাজার বর্গমাইল হবে৷ আমাদের দেশের আয়তন ৫৬ হাজার বর্গকিলোমিটার নয় ১,৪৩,৫৭০ বর্গকিলোমিটার৷ ১১তম সংখ্যায় কবিগুরুর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী সংখ্যা হিসাবে মাত্র একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে যাতে দুটি চিঠি রয়েছে৷ রবীন্দ্রনাথের চিঠি মানেই আমাদের জন্য বিশাল পাওয়া, কিন্তু আরো বেশী কিছু পাঠককে উপহার দেওয়া কি দুঃসাধ্য ছিল? রবীন্দ্রনাথের প্রতি সম্পাদকের এত কার্পণ্য কেন? বেশির ভাগ মূল রচনার ক্ষেত্রে দেখা যায় ভাষা, গাঁ থুনি, বলার ঢং একই ধরনের ৷ এতে পাঠকের মনে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে- একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন নামে মূল রচনা লিখেন কিনা? সত্যিই যদি এ ধরনের কিছু হয়ে থাকে তবে পাঠকদের অনুশোচনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না৷ বিষয়টির প্রতি সম্পাদক দৃষ্টি দেবেন বলে আশা করি৷ আকাশলীনার স্লোগান কোনটি? বন্ধুর সাথে মনের কথা? সব সংখ্যা দেখে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক৷ কিন্তু দ্বিতীয় সংখ্যাতে দুটি স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে ‘ভিন্ন আয়োজনে অন্য সাময়িকী’ এবং ‘বন্ধুর কা েমনের কথা’৷ আকাশলীনার প্রতি সংখ্যাই সময়োপযোগী এবং সংশ্লিষ্ট মাসের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে ফিচার থাকে যা আমাদের দারুনভাবে নাড়া দেয়৷ আকাশলীনার প্রায় প্রতি সংখ্যাতেই আমরা এক বা একাধিক সচেতনতামূলক নির্দেশনা পাই ভিন্ন আঙ্গিকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে৷ পানি, গ্যাস কিংবা বিদ্যুতের অপচয় রোধ করার জন্য এ ধরনের সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপনের জন্য অবশ্যই সম্পাদক ধন্যবাদ পাবেন সকল শ্রেনীর পাঠকের কাছ থেকে৷ লিটলম্যাগগুলোতে আমরা সাধারণত যা দেখি না, সম্পাদক তা উপহার দিতে চেষ্টা করছেন৷ যেমন ১০ম সংখ্যার ১১ পৃষ্ঠায় সিনেমার গল্প যা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে৷ অন্য পাঠকরা বিষয়টিকে কিভাবে নেন তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে৷ ভালো না লাগলে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ লিখবেন৷ আমি প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয়’র শেষ লাইনটি পাঠকরে স্মরন করিয়ে দিতে চাই- ‘এর প্রতিটি সংখ্যায় আপনি পাবেন নতুন স্বপ্নে সমৃদ্ধ রঙিন স্বপ্নের ঘ্রান’৷ আমার মনে হয় সম্পাদক তার কথা রাখতে আপ্রান চেষ্টা করছেন এবং এ চেষ্টা অব্যাহত থাকুক সবসময়- এ কামনা করি৷ মো. শহীদুল কায়সার লিমন পরিচালক রেমাশ গ্রন্থ সম্ভার বড়নল, ভিটিপাড়া (বরমী), শ্রীপুর, গাজীপুর-১৭৪৩ মুঠোফোন- ০১৯১১৭৫৮৫৩৩, ০১৭১১১০৮৬৮৪ মেইল-
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।