আকাশলীনা] মুক্ত প্রাণ, স্বপ্নের সোপান
আকাশলীনা
অগ্রহায়ণ ১৪১৭] নভেম্বর ২০১০] সংখ্যা ০৫] বর্ষ ০১]
--------------------------------------------------------------------------
পাঠ-পূর্বক বিজ্ঞপ্তি]
আকাশলীনা মূলত একটি ছোট পত্রিকা; এটি প্রতি বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে মুদ্রণ কাগজে প্রকাশিত হয়।
বলা যেতে পারে, সাদা-কালোয় প্রকাশিত এটি আমাদের রঙিন এক স্বপ্নের গল্প!
এখানে মূল পত্রিকার বর্তমান সংখ্যাটি অনলাইন পাঠকদের জন্য সরবারাহ করা হয়েছে। ভালোলাগা-মন্দলাগা বিষয়ে যে কেউই মন্তব্য করতে পারেন...
পত্রিকাটির মুদ্রিত কপি নিয়মিত পেতে চাইলে; আপনিও ঠিকানা লিখে জানান। আমাদের সম্পাদনা পরিচিতি এবং সরাসরি যোগাযোগ করার ঠিকানা এই লেখার নিচে উল্লেখ আছে।
সকলকে ধন্যবাদ।
- সম্পাদক, আকাশলীনা
--------------------------------------------------------------------------
মূল পত্রিকা এখান থেকে শুরু-
--------------------------------------------------------------------------
সম্পাদকীয়]
ঋতুচক্রের পালাবদলে, কার্তিক শেষে তাই আবারও অগ্রহায়ণ হাজির।
রোদ্দুরে সোনারঙ, বাতাসে নতুন ধানের গন্ধ, প্রাণে শীতার্ত অনুভূতি- হেমন্তের এই মধ্যক্ষণে দাঁড়িয়ে, হেমন্তবরণে এরচেয়ে মোক্ষম সময় আর কী হতে পারে?
প্রকৃতির এমনতরো শুভক্ষণে, তাই আকাশলীনা-ও সেজেছে হেমন্ত আয়োজনে।
নিয়মিত বিভাগগুলোর পাশাপাশি, হেমন্তের যে চিরন্তন সাজ- আশা করছি, তার কিছুটা হলেও স্বাদ পাবেন আমাদের এ আয়োজনের মাধ্যমে।
এবার একটা সুখবর- কাগুজে মুদ্রণের পাশাপাশি, এখন থেকে অনলাইনেও পড়তে পারবেন আকাশলীনা!
বৈশ্বয়িক প্রচারণার লক্ষ্যে; এবং পত্রিকার মুদ্রণ সংখ্যা যাঁদের হাতে পৌঁছাচ্ছে না- আশা করছি, এ সুবিধায় লেখক-পাঠক-শুভানুধ্যায়ীদের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবে আকাশলীনা।
পবিত্র ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা।
সবার ভালো হোক- এই শুভ কামনা। []
--------------------------------------------------------------------------
কবিতা]
যখন হেমন্ত আসে
হানিফ রুবেল
শুকনো শাখায় একটি বিহঙ্গ
মৃদু সমীরণে কয়েকটি পাতা শাখাচ্যুত হয়ে
আপাততো ঠাঁই নিয়েছে মৃত্তিকার বুকে
অরণ্যে নেমেছে সন্ধ্যা, তবুও বিহঙ্গটির ঘরে ফেরার তাগিদ নেই
তখনও আমাদের পুকুরে কয়েকটি পাতিহাঁস
জলজ উদ্ভিদে খাবার অন্বেষণে ব্যস্ত...
শিকারি চোখে একটি বক শিকারের অপেক্ষায়,
আর মাঠ ভরা ফসল... বাতাসে পাকা ধানের গন্ধ
যেনো হলুদ শাড়ি গায়ে জড়িয়ে, মাঠে নেমেছে কৃষকের কৃষাণি-
এরকম দৃশ্যেই তো চিত্রিত ছিলো গত হেমন্তের শেষ সন্ধ্যাগুলো । []
-------------------------------------------------------------------------
প্রকৃতি]
হেমন্ত এসেছে তবু...
আশরাফুল হক
আসলে এ রোদটাই পাগল করা। চাঁপা ফুলের মতো যা এ মুহূর্তে জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েছে আমার মনের ভেতর, মিথ্যে কথার শহর থেকে দূরে কোথাও নিয়ে যাবে বলে। যেখানে হেমন্ত এসে গেছে।
আর হালকা হলুদ পাতায় আলগোছে পা ফেলে নামছে কুয়াশা। তাকে যদি একটি মেয়ে বলি... খুব কি ভুল হবে? হেমন্ত নিয়ে লিখতে বসে কুয়াশাকে মনে হচ্ছে একটি মেয়ের মতোই!
তাহলে শিউলি বিছানো পথকে কী বলবো? সেই বাঁকা-চোরা পথ... যা আমার শৈশব-কৈশোরে ছিলো... এখন হারিয়ে গেছে... কঙ্কাবতীর মতো... এমন কি, তেপান্তরের মাঠ, ঘাট, বন-বাদাড় তন্ন তন্ন করেও যাকে কোনোদিন খুঁজে পাবে না ডালিম কুমার!
সত্যি, নগরজীবন থেকে আর সব ঋতুর মতো হেমন্তও হারিয়ে গেছে। বিশ্বাস না হলে পঞ্জিকায় চোখ রেখে দেখুন, এখন কার্তিক গিয়ে অগ্রহায়ণ; যা কিনা হেমন্তের শুরুর বেলা গড়িয়ে শেষের আয়োজন। অথচ শহুরে রোদে চাঁপা ফুলের রং ধরেনি, বরং ধুলো আর ধোঁয়ায় সবকিছুই মলিন...
তবে নিশ্চিত, এই কংক্রিটের জঙ্গল থেকে দূরে কোথাও শরতের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে হেমন্ত, যেখানে কাশফুল... শিউলি... সাদা মেঘ... আর রোদ-ছায়ার লুকোচুরির মধ্যে বিস্তীর্ণ সোনার ধান ক্ষেতে দুলছে উদাসী হাওয়া... সেই হাওয়ায় মাটির গন্ধে মাতাল দিগ্-বধূরা। রোদের সোনা ছড়িয়ে পড়েছে মাটির আঁচলজুড়ে, আর ঠিক তখনই আদিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে বেজে উঠেছে বাঁশি... সেই বাঁশি শুনে আকাশ খুশি হবে এবং তারপরই ঘুম ভেঙে জাগবে চন্দ্রাহত পাগলটা, যে ঘরে বন্দি।
হেমন্ত যাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে “এই বাংলার মায়া ভরা পথে” বেরিয়ে পড়ার জন্য।
তবে যদি সে বেরিয়ে পড়তে নাও পারে, তার জন্য রইলো আকাশ ভরা তারা এবং রবীন্দ্রনাথের গান...
জানি, এতক্ষণে আপনার মনে পড়ছে আলোর উৎসব দীপাবলির কথা। তমসা থেকে মুক্তির এই উৎসব হেমন্তের বিশেষ অনুষঙ্গ। তবে প্রধান অনুষঙ্গটি অবশ্যই নবান্ন। সেখানে ফসল কাটা থেকে শুরু করে ঘরে তোলা, রান্না করা ও খাওয়া পর্যন্ত উৎসব-প্রিয় বাঙালি জীবনের এক প্রণত মনোভাব ছড়িয়ে আছে।
হেমন্তকে আশ্রয় করে লোকসংস্কৃতির এ প্রকাশটাও তাই দারুণ।
কিন্তু নবান্ন হোক কিংবা এক টুকরো রবীন্দ্রনাথ, শিক্ষিত বাঙালির হেমন্ত-বিলাস জীবনানন্দ ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকেই যায়। তাই “ঘাসের ভেতরে শুকনো মিয়োনো ছেঁড়া” হলুদ অশত্থ পাতা পড়ে থাকলে, সন্ধ্যার আবছা আঁধারে কুয়াশা নামতে দেখে চিল উড়ে গেলে, তাকে খুব মনে পড়ে। তখন বিড়বিড় করে বলি-
যেখানে আকাশে খুব নীরবতা, শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে ক্রমে যেখানে মানুষ আশ্বাস খুঁজেছে এসে,
সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছে;
সেই ব্যাপ্ত প্রান্তরে দু-জন,
চারদিকে ঝাউ, আম, নিম, নাগেশ্বরে হেমন্ত আসিয়া গেছে-
চিলের সোনালি ডানা হয়েছে খয়েরি,
ঘুঘুর পালক যেনো ঝরে গেছে, শালিকের নেই আর দেরি,
হলুদ কঠিন ঠ্যাং উঁচু করে ঘুমোবে সে শিশিরের জলে,
ঝরিছে-মরিছে সব এইখানেÑ বিদায় নিতেছে ব্যাপ্ত নিয়মের ফলে... []
>
লেখাটি আমাদের বিশেষ সংগ্রহ থেকে প্রকাশিত
--------------------------------------------------------------------------
গল্প]
চাঁদের বুড়ির ভালোবাসার চিঠি
কাজী তুহিন
হালকা কুয়াশা জড়ানো নীলাকাশ। মৃদু শীতল প্রকৃতি।
সাদা মেঘের ভেলা মাঝে মধ্যেই একটু-আধটু দেখা যায়। কাশফুল বেশিরভাগ ঝরে গেলেও কিছু ডাটায় শুভ্র কেশ এখনও শোভাবর্ধন করছে। বোঝাই যায়- শরৎ চলে গেলেও তার রূপচর্চার প্রসাধনী সব নিয়ে যায়নি; কিছুটা রেখে গেছে হেমন্তের জন্য! কার্তিক গিয়ে অগ্রহায়ণ শুরু, তাই ফসলে ভরে উঠেছে ক্ষেত। কোথাও ধান পেকে গেছে, কোথাওবা আধপাকা।
অনীকদের এলাকাটা নিম্নভূমি হওয়ায় মাঠের পানি পুরোপুরি শুকায়নি এখনও।
ছোট ছেলেমেয়েরা চালন দিয়ে দলবেঁধে চিংড়ির ভুষি ধরছে। তার সঙ্গে অন্য ছোট মাছও উঠে আসছে। বিশেষ করে পটকা মাছ উঠলে ওরা বেশি মজা পায়। সে মাছ নিয়ে ওদের এক বিশেষ খেলাও শুরু হয়! লেজ ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে সমস্বরে বলে ওঠে- ‘পোটকা ফোল ফোল/ কাল বেয়ানে রাইন্ধা দিমু/ ইলিশ মাছের ঝোল!/ পোটকা ফোল ফোল...’
নীল আকাশের মাঝ দিয়ে শিকল বেঁধে লাঙলের মতো আকৃতি ধারণ করে বকেদের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য, প্রকৃতির মাঝে এক অপরূপ চিহ্ন এঁকে দেয়। শিশুরা তাই দেখে দল বেঁধে বলতে থাকে- ‘শিকল ভাঙ, লাঙল ভাঙ! শিকল ভাঙ, লাঙল ভাঙ!’
সে যে কি আনন্দের দৃশ্য! অনীকও আর দশটি শিশুর মতো হেমন্তের এই আনন্দ উদযাপন উপভোগ করে।
গাঁয়ের দুরন্ত মিষ্টি সোনামণি অনীক। ওর চাহনি, বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ; কথা বলার ঢং, কৌতূহলী দৃষ্টি, অপরের আদর-আহ্লাদ পাওয়ার তৃষ্ণা, নিষ্পাপ মায়াবি অভিব্যক্তি, সামান্য পাকামো, দুষ্টুমি... সবকিছুই যেনো ছোট-বড় সবাইকে মায়াবি আবেশে কাছে টানে। এই ছোট্ট অনীকের নিষ্পাপ শুভ্র মনেও দাগ কাটে হেমন্তের প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্যাবলি।
শ্যামল সুন্দর রুপালি বাংলার সুশীতল এ গ্রামে জন্ম অনীকের। গ্রামের নাম ভালুকশী হলেও, বড় হয়ে অনীক মনে মনে এর নাম রেখেছিলো সুখপুর! এটি অবশ্য অনেক পরের কথা।
যাই হোক, সত্যি- এখানে নেই সুখের শেষ। প্রকৃতি যেনো সুখের এবং রূপের ডালি সাজিয়েছে অনীকের জন্য। বিশেষ করে হেমন্ত এলেই ছোট্ট অনীকের মনে বারবার আনন্দ খেলা করে।
হেমন্তের সকালে, উত্তরের বাতাস এসে শীতের আগমনের বার্তা দিয়ে যায়। ছোট্ট অনীক উঠোনে তার সঙ্গীদের সঙ্গে খেলা করছিলো।
হঠাৎ বাতাসে ভেসে এসে তার গায়ে জড়ালো মাকড়সার আঁশের মতো কিছু একটা। যার রঙ কার্পাস তুলোর মতো শুভ্র। সেটা দেখে সে খুব মজা পেলো। আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। অদূরে তার দাদু জল চৌকিতে বসে হেমন্তের সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে, ছোটদের আনন্দ উপভোগ করছিলেন।
অনীক দৌড়ে গিয়ে দাদুকে বললো ‘দেখো দাদু, কী মজা! আমার গায়ে সাদা সাদা এগুলো কি জড়ালো?’
দাদু হেসে হেসে বললেন, ‘চাঁদের বুড়ি তোমাকে চিঠি পাঠিয়েছে। বুড়ি চাঁদে বসে বসে সারা বছর সুতা কাটে; আর শীতের আগে এই সময়টায়, তোমার মতো ছোট্ট দাদুমণিদের জন্য উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দেয় তার সুতাগুলো। এ যেনো তোমাদের কাছে তার ভালোবাসার চিঠি!’
অনীক দাদুর কথাগুলো শুনে অবাক হয়; আনন্দ পায় এবং মনে মনে সম্পূর্ণরূপে দাদুর কথাগুলো বিশ্বাস করে।
একদিন জ্বলজ্বলে জোছনা রাতে, পৃথিবী সেদিন জোছনার আলোয় ভেসে যাচ্ছিলো- দাদু অনীককে উপরের দিকে তাকাতে বললেন। অনীক দেখতে পায় চাঁদের বুড়ির ভালোবাসার চিঠিগুলো ভেসে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে... অনীক দেখলো কিছু চিঠি জড়িয়ে আছে গাছের ডালে, কিছু আছে ওদের ঘরের চালে।
অনীকের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তার বন্ধুদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বেড়ায়, ‘ওই যে দেখ, চাঁদের বুড়ির ভালোবাসার চিঠি!’
হেমন্ত এলেই জমির আল শুকিয়ে যায়। অনীক ও তার বন্ধুরা খেলা করতে হারিয়ে যায় সোনালি ধানের হলুদ আভায়। ধানের গন্ধ, হাজার রকমের ঘাস ফুল ছোট্ট অনীকদের মধ্যে বিস্ময় ও আনন্দ জাগিয়ে তোলে। পাকা ধানের ছড়া নিয়ে খেলা করে ওরা।
কলমি ফুল, ঝুমকো ফুলের নাম দেয় ওরা দুল! এমনই ফুল-দুল ও হাজার রকমের ঘাস ফুল নিয়ে, খেলা করতে করতে ওরা হারিয়ে যায় হেমন্তের ধূসর প্রকৃতি থেকে স্বপ্নের লালপরী, নীলপরীর দেশে। আর ঠিক এ সময়টাতেই ঘরে ঘরে পিঠাপুলির ধুম পড়ে যায়...
০২.
ছোট্ট অনীক বুঝতো না ঋতু চক্র কী, হেমন্ত কাকে বলে। সে শুধু অপেক্ষায় থাকতো চাঁদের বুড়ি তার ভালোবাসার চিঠি কবে পাঠাবে। কলমি ফুল, ঝুমকো ফুল আর হাজার রকমের ঘাস ফুল নিয়ে খেলার দিন আবার কবে আসবে?
একসময় অনীক অনেক বড় হয়। জানতে পারে, ঋতু চক্রের তত্ত্ব।
জানতে পারে চাঁদের বুড়ির সুতাকাটার সত্যতা। তাই হেমন্ত এখন তার চোখে নতুন রূপে ধরা দেয় রবিঠাকুর-জীবনানন্দের কাব্যে...
তারপরও, এই অণীকের কাছে অমলিন থেকে যায় শৈশবের সেই চিরন্তন হেমন্ত! []
--------------------------------------------------------------------------
দূর দেশে]
প্রাণপণ মরুযাত্রা
হাসান খুরশীদ রুমী
[১৮৬০ সালের ঘটনা। গ্রীষ্মে অস্ট্রেলিয়ার উপনিবেশ ভিক্টোরিয়ার রাজকীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেন, অস্ট্রেলিয়ার মধ্যাঞ্চলে একটি অভিযান পরিচালনার। উদ্দেশ্য হলো, সেখানকার অনাবিষ্কৃত মরু অঞ্চল পার হয়ে উত্তর উপকূল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আবার ফিরে আসা। সেই কমিটিই রবার্ট বার্ক নামক এক অভিযাত্রীকে দলের নেতা নির্বাচন করেন।
পরবর্তীতে রবার্ট-কে একটি দল গঠন করতে বলা হয়; এবং অভিযান চালাবার জন্য ভারত থেকে উট আমদানি করার অনুমতি দেন। অতপর সে বছরই আগস্টের ২০ তারিখ, রবার্ট বার্ক পুরো দলবল নিয়ে মেলবোর্ন ত্যাগ করেন প্রচুর রসদ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ...
প্রিয় পাঠক, গল্প-উপন্যাসে আমরা অনেক অ্যাডভেঞ্চার কাহিনিই পড়েছি। কিন্তু সত্যি কাহিনি ক-টা জানি? রিচার্ড প্ল্যাট-এর ইলাস্ট্রেটেড বুক অব গ্রেট অ্যাডভেঞ্চারস-এর সূত্র অবলম্বনে রচিত এ অনুবাদটি, আপনাদের কাছে কিছুটা কাঠখোট্টা লাগতে পারে। তবু আমরা আশা করছি বিচিত্র স্বাদের এ রচনাটি সবার ভালো লাগবে। জানবেন এ অভিযানের নায়কেরা কল্পনার নায়কদের চেয়েও ঢের বেশি সাহসী ও বাস্তববাদী ছিলেন।
]
অভিযাত্রী দল :
আইরিশ বংশোদ্ভূত রবার্ট ওহারা বার্ক [১৮২০-১৮৬১] ছিলেন একজন পুলিস সুপারিনটেন্ডেন্ট। অভিযান বিষয়ক জ্ঞান তাঁর ছিলো না, প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করার দক্ষতাও ছিলো না। শুধুমাত্র পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণেই এ অভিযানের নেতা হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ইংরেজ ভদ্রলোক উইলিয়াম উইলসকে [১৮৩৪-১৮৬১] নিয়োগ দেন তাঁর দলের পরিদর্শক এবং জ্যোতির্বিদ হিসেবে। কাজের লোক চার্লসকে [১৮১৮-১৮৬১] উত্তরে যাওয়ার পথে ম্যানিডিতে নিয়োগ দেন এবং জন কিং-কে [১৮৪১-১৮৭২] নিয়োগ দেন উট রক্ষণাবেক্ষণকারীর সহকারি হিসেবে।
সত্যি ঘটনা :
মেলবোর্ন থেকে বেরুনোর পরপরই অভিযাত্রী দলে সমস্যা দেখা দিলো। ঘোড়ায় টানা এবং প্রাণীর দল, অভিযাত্রীদের ভারী বোঝা নিয়ে ঠিকভাবে চলতে পারছিলো না। যে কারণে, ঘোড়া আর উটের মধ্যে প্রায়ই মারামারি বেঁধে যাচ্ছিলো। অবস্থা এমন, দলের লোকগুলোর নিজেদের মধ্যেও বনিবনা হচ্ছিলো না। দলের নেতা রবার্ট বার্ক কর্তৃত্ব দেখান বটে, কিন্তু কাজ যে কি করেন! পথের দিশাও দিতে পারেন না ঠিকমতো; পথ না চিনলে কি কোনো অভিযাত্রীর চলে?
রবার্ট তাঁর অভিযানের ফোরম্যানের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে তাঁকে বরখাস্ত করলেন।
এমন কি, এরপর তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড এবং চিকিৎসকও দল ছাড়তে বাধ্য হলো। অবশেষে অক্টোবরে দলের বাকিরা মেনিনডি পৌঁছান। ওখানে গিয়ে রবার্ট বার্ক নতুন উদ্যমে আবারও দল গোছাতে শুরু করেন।
আরও দ্রুত এগোতে চাইলেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী অভিযাত্রী জন ম্যাকডুয়েল স্টুয়ার্টও একই উদ্দেশে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করেছেন।
ব্যাপারটা এখন এমন দাঁড়ালো, যেনো প্রতিযোগিতা!
রবার্ট দলের অর্ধেক সদস্যকে মেনিনডি-তে রেখে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। কেনোনা, দল ছোট হলে এগোতে সহজ হবে। তাই সাতজন নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলেন তিনি।
তিন সপ্তাহের একটু বেশি সময়ে রবার্ট এবং তাঁর বাছাই করা সঙ্গীরা অর্ধেক দূরত্বে কুপার ক্রিকে পৌঁছে যান। রাবার গাছের ঠাণ্ডা ছায়ায় ক্যাম্প করেন তাঁরা।
কিন্তু স্থানটা ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ ছিলো না। কালো মাছির ঝাঁক আর শত শত ইঁদুর তাঁদের রসদ খেয়ে ফেলতে লাগলো। জুতো এবং যন্ত্রপাতিও আস্ত রাখেনি।
প্রায় এক মাস তাঁরা কুপার ক্রিকে থাকলেন। এ সময় উত্তরে যাবার পথ এবং পানি খুঁজলেন।
কিন্তু যেদিকেই চাইলেন, খটখটে প্রান্তর। শেষ পর্যন্ত আবারও দলকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন রবার্ট বার্ক। এবার তিনজনকে কুপার ক্রিকে রেখে গেলেন। বাকিদের নিয়ে দ্রুত এগিয়ে গেলেন উত্তর দিকে। দেখা পেলেন অ্যাবরিজিনদের।
ওরা তাঁদের খাবার দিলো এবং দেখালো কি করে পানি খুঁজে বের করতে হয়। কিন্তু রবার্ট ও তাঁর দলের লোকেরা অ্যাবরিজিনদের অবিশ্বাস করলেন।
সমতলে অভিযাত্রী দলটি ভালোই এগোয়। শেলউইন পর্বতমালায় পৌঁছে পাহাড় ডিঙ্গানোর সিদ্ধান্ত নিলেন রবার্ট। পাহাড়ের ওপরে ওঠার ফলে উটগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো।
বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। বৃষ্টি ধুলোময় মাটিকে ভিজিয়ে দিলো আর মানুষ এবং পশুগুলো কাদায় পিছলে যেতে থাকে...
তারপরও জানুয়ারির শেষে তাঁরা নিজেদের লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যায়। সে সময় মাত্র একজন সঙ্গী নিয়ে উত্তর উপকূলে, কারপেন্টারিয়া উপসাগরের দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগলেন রবার্ট। ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেলবোর্ন ত্যাগ করার প্রায় ছয় মাস পর তাঁরা সমুদ্রের এতো কাছে পৌঁছে গেলেন যে, নোনা দরিয়ার হাওয়া নাকে এসে লাগছিলো সবার।
কারপেন্টারিয়া উপসাগরের তীরে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গল ধীরে ধীরে সাগরের পানির সঙ্গে মিশে গেছে।
অভিযাত্রীরা জট পাকানো ম্যানগ্রোভ জলাভূমির মধ্য দিয়ে কষ্ট করে হেঁটে এগোলেন। তাঁরা এর আগে মহাসাগর দেখেননি। শেষ পর্যন্ত তাঁরা লক্ষ্যে পৌঁছেছেন ঠিকই। তবে রবার্টের চিন্তা শেষ হয় না- ম্যাকডুয়েল স্টুয়ার্ট কি তাঁর আগেই পৌঁছে গেছে? তাঁরা কি কুপার ক্রিকে ফিরে যাওয়ার দীর্ঘ যাত্রায় বেঁচে থাকতে পারবেন?
রবার্ট ও উইলস অপেক্ষারত সঙ্গীদের কাছে ফিরে এলেন, তারপর চারজনে মিলে দক্ষিণে রওনা হলেন। উত্তর দিকের যাত্রায় আট সপ্তাহ লেগেছিলো; ফিরতি যাত্রার জন্য তাঁদের মাত্র পাঁচ সপ্তাহের রেশন মজুদ ছিলো।
যে প্রাণীই ধরতে পারলেন- এমন কি পোকামাকড়ও সংগ্রহে রাখলেন; খাবার যোগ্য মনে হয় এমন গাছ-গাছড়াও বাদ গেলো না। একবার একটা সাপ খাওয়ার পর রবার্ট বার্ক অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ময়দা এবং বিস্কুট ফুরিয়ে গেলে, অভিযাত্রীরা নিজেদের ঘোড়াগুলো হত্যা করে খেয়ে ফেললো! কুপার ক্রিক থেকে মাত্র ১১২ কিলোমিটার দূরে থাকতে, গ্রে নামের ওদের একজন সঙ্গী মারা যায়।
তিনদিন পর তাঁরা দিগন্তে কুপার ক্রিকের রেখা দেখতে পেলেন। ভাবতে লাগলেন, আর অল্প সময়ের মধ্যেই রেখে যাওয়া বন্ধুদের জড়িয়ে ধরবেন; খাঁড়ির মাঝে ডুবে যাবেন এবং এর পানি দিয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া গলা ঠাণ্ডা করতে পারবেন।
হয়তো কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মেলবোর্নেও ফিরে যাওয়া যাবে...
কিন্তু কিছুই ভাবনামতো হলো না। রবার্ট ওহারা বার্ক, উইলিয়াম উইলস, জন কিং- এগিয়ে গিয়ে গাছের নিচে বন্ধুদের কাউকে খুঁজে পেলেন না।
তাঁরা সবটুকু শক্তি দিয়ে চিৎকার করে সঙ্গীদের ডাকলেন। কোনো উত্তর এলো না। পাগলের মতো পরিত্যক্ত ক্যাম্প খোঁজার পর উইলিয়াম একটা গাছে খোদাই করা মেস্যাজ দেখলেন- ডিআইজি তিন ফুট উত্তর-পশ্চিম।
অ্যাপ্রিল ২১, ১৮৬১।
‘২১ অ্যাপ্রিল?’ ভাবলো উইলিয়াম, ‘তবে তারিখটা যে আজই!’
ওঁরা তিনজন আলগা মাটি তুলে ফেললেন। আধামিটার খোঁড়া হতেই এক বাক্স রসদ আর তার নিচে মুখবন্ধ করা বোতল পেলেন। তাতে আরেকটা মেস্যাজও পেয়েছেন তাঁরা। নিশ্চিত হলেন, তাঁদের অন্য তিন সঙ্গী মাত্র আধঘণ্টা আগে ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেছেন।
কিন্তু রাবার্ট, উইলিয়াম ও জন বুঝলেন যে, নিজেদের এতো দুর্বল দু-টো উট নিয়ে সঙ্গীদের ধরতে পারবেন না।
অগত্যা ওঁরা তিনজনই মাউন্ট হোপলেসের ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, সবচেয়ে কাছের ইউরোপীয় উপনিবেশের দিকে রওনা হলেন। এটা ছিলো একটা মারাত্মক ভুল। তাঁদের কাপড়-চোপড় শতছিন্ন হয়ে গেছে, দ্রুত তাঁদের রেশন শেষ হতে থাকলো এবং তৃষ্ণায় আরও দুর্বল হয়ে পড়লেন।
দুই মাস পর উইলিয়াম উইলস আর হাঁটতে পারলেন না, তাঁকে ছাড়াই তাঁর দুই সঙ্গীকে এগিয়ে যেতে জোর করলেন।
রবার্ট বার্ক মারা গেলেন এর কয়েক দিন পর। যখন জন কিং, উইলিয়ামকে খোঁজার জন্য ফিরে গেলেন, তখন তিনিও মৃত। জনশূন্য প্রান্তরে একা হয়ে জন অ্যাবরিজিনদের সাহায্য চাইলেন; যাদের তাঁরা একসময় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবু অ্যাবরিজিনরা তাঁকে আশ্রয় দিলো এবং দুই মাস খাওয়ালো। দু-মাস পর একটা উদ্ধারকারী দল এলো; কিন্তু উদ্ধারকারীরা প্রথমে জন-কে চিনতেই পারেনি।
‘তুমি কে?’ কৌতূহল দমাতে না পেরে একজন উদ্ধারকারী জিজ্ঞেসও করেন।
রোদে পোড়া লোকটা জবাব দিলেন, ‘আমি জন কিং, স্যার। ...অভিযাত্রী দলের একমাত্র জীবিত শেষ ব্যক্তি!’ []
>
রচনাটির ভূমিকা লিখেছেন সাইফুল আমিন। এটি আমাদের বিশেষ সংগ্রহ থেকে প্রকাশিত।
--------------------------------------------------------------------------
বন্ধুর কাছে মনে কথা]
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে সীমাহীন...
ইপ্সিতা
কর্মব্যস্ততার এই যুগে মানুষের জীবনে অবসরের বড় অভাব।
তবুও প্রতিদিন জীবনের এই পথ চলতে গিয়ে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কোনো না কোনো সময় মন ছুটে যায় স্মৃতির পাতায়- যা সীমাবদ্ধ থাকে না নির্দিষ্ট একটি মধুর বা বেদনাবিধুর স্মৃতিতে। আসলে, আমাদের জীবনে এখন আর এমন কোনো পূর্ণ অবসর নেই; যে কারণে নিজেদের চিন্তাধারাগুলোও এখন আর একটি জয়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। তবুও আমার, কোনো এক বর্ষণমুখর দিনে, সেই এক পাগল প্রেমিকের না বলা কথাগুলো আজ শুনতে বড্ড ইচ্ছে করছে। বৃষ্টির দিনের অবসরে, ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে যখন সেই হারানো দিনের স্বাদ নিতে যাই; তখনই স্মৃতির পাতায় সে মুখটি ভেসে ওঠে। একদিন যার কথা শুনতে চাইনি, আজ বৃষ্টির দিনের অবসরে, সেদিনের সে ঘটনাই মধুর স্মৃতি বলে মনে হয়...
প্রতিটি পূর্ণিমা রাত আমার বুকের স্পন্দনকে বাড়িয়ে দেয়।
মনে পড়ে, এক পূর্ণিমা রাতে স্বপ্নের এক রাজকুমার এসেছিলো তার ঢাল নিয়ে। এখনও নিস্তব্দ দুপুরে, পড়ন্ত বিকেলে, রাতের আঁধারে- যখন ছোটখাটো অবসরগুলো কাটে, তখনই সেই সুখ-স্মৃতিগুলোই যেনো স্থান করে নেয় সমস্ত মনজুড়ে।
মনে পড়ে, সেই অগোছালো জীবনে ছিলো না কোনো স্থিরতা। পরিচিত হয়েছিলো দু-টো মন সময়ের পথ ধরে, এগিয়ে চললো তারই ধারাবাহিকতায়। ওই মধুর স্মৃতি নিয়ে, সে আসবে বলে কতো স্বপ্ন এঁকেছি।
এখনও যেনো সেই স্বপ্নের রাজ্যেই আছি! এসবে অন্য এক অনুভূতির কথাই মনে হয়- যেনো ঘুম থেকে উঠছি... কিংবা বহুদিন বাদে বৃষ্টির জলে ঝাঁপাঝাঁপি করছি... “কে মোরে ফিরাবে অনাদরে? কে মোরে ডাকিবে কাছে? কাহার প্রেমের বেদনায়, আমার মূল্য আছে?”
মাঝে মাঝে স্মৃতির তীরে ভিড় করে স্কুল-কলেজের ফেলে আসা সেই দিনগুলো এবং আরও কতো কী! কিন্তু সব স্মৃতিকে ভাসিয়ে সামনে চলে আসে সেই পূর্ণিমা রাত- যেদিন স্বপ্নের রাজকুমার মেলে ধরেছিলো তার আকাশ। শুরু হয়েছিলো নতুন এক পথচলা... এখনও যেনো স্বাপ্নিক চোখে ভেসে আসে নানা রঙের রাঙ্গায়িত স্বপ্নের সেই দিনগুলো; যা দিয়ে যায় মৃদু আনন্দের ছোঁয়া।
আজও অবসরের মুহূর্তে ভেসে চলি ফেলে আসার সেই দিনগুলোতে। মনে হয় এইতো সেদিন... []
>
উত্তর বালুবাড়ি, দিনাজপুর
-------------------------------------------------------------------------
সম্পাদক সমীপেষু]
[প্রিয় পাঠক, আকাশলীনা-র প্রতিটি সংখ্যা হাতে পাবার পর থেকে আপনার মূল্যায়ন কি? দিন দিন কি উত্তরণের পথে এগোচ্ছি, নাকি আমাদের যাত্রাপথ নিম্নগামী? পত্রিকা বিষয়ে যে কোনো সমালোচনার কথা জানিয়ে আপনিও লিখুন। -সম্পাদক]
গত সপ্তাহে পত্রিকা পেয়েছি।
পেয়ে ভালো লেগেছে, ভালো লাগছে পড়তেও। ভেবেছিলাম পুরোটা মন দিয়ে পড়ে, তবেই মতামত জানিয়ে উত্তর দেবো। সে কারণেই আকাশলীনা ব্যাগে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। তৃতীয় সংখ্যায় ওমর ফারুক, বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং সাইফুল আমিন-এর লেখা পড়েছি। বন্ধুত্ব নিয়ে লেখাটি পড়ে স্মৃতিকাতর হয়েছি, শরতের কথা হৃদয় ছুঁয়েছে, কবি মান্নান সৈয়দ-এর জীবনকথা মুগ্ধ করেছে আরেকটিবার; যদিও তাঁর জন্যে বেদনা আছে।
সম্পাদকীয় পড়ে জেনেছি কতোটা শ্রম, ভালোবাসা আর স্বপ্ন আছে এই পত্রিকাটি প্রকাশের পেছনে। মোদ্দা কথা আপনাদের পত্রিকায় আনন্দ পেয়েছি। এই আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। অব্যাহত থাকুক আকাশলীনা-র পথ চলা...
>
কেকা অধিকারী; পরিচালক, এইচআরএম, টিএলএম বাংলাদেশ, ঢাকা
আকাশলীনা পেলাম। বরাবরের মতো চতুর্থ সংখ্যাটি মন্দ হয়নি।
পাঠকের লেখা বাড়ানো উচিত। মূল গল্প “মূর্তি গায়েব!”, এটা কুইজ হিসেবেই ভালো শোভায়। বোধহয় সম্প্রতি প্রকাশিত কোনো গল্প ছাপালে, সেটায় আর তেমন কোনো আবেদন থাকে না।
আকাশলীনা-এ পাঠকরা যেনো লিখতে পারে, এমন কোনো আয়োজনের ব্যবস্থা করলে কেমন হয়? ভেবে দেখবেন!
>
রবি; ই অ্যান্ড আই ফিটার, বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স, যশোর
সব বড় বড় গাছই তো একদিন চারাগাছ থাকে। তারপর কোনোটা হয় শাল, আর কোনোটা সেগুন।
আমাদের আকাশলীনা সেগুন হয়ে ওঠার অপেক্ষায়; সাথেই আছি, সাথেই থাকবো...
>
মাহবুব আলম; শাহরাস্তি, চাঁদপুর
--------------------------------------------------------------------------
প্রতিবাদ]
আত্মহত্যার মিছিল :
এই প্রতিকারহীনতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
বগুড়ার রূপালি ফিরতে পারেনি। চরম অপমান আর অসহায়তার মখে আত্মহত্যা করেছে। সিঁথিতে বখাটের লাঞ্ছনার সিঁদুর মুছে ফেলতে মৃত্যুকে তাই কাছে ডেকে নিয়েছে সে। ফলে, নারায়ণগঞ্জের সিমি, খুলনার রুমী, গাইবান্ধার তৃষাদের মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো আরও একটি নাম। নিপীড়িতের আত্মহত্যার প্রবনতা যে প্রতিকারহীনতরই পরিণাম; তা অস্বীকারের উপায় নেই।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতো মানবাধিকার সংস্থার দেওয়া তথ্যানুসারে, ২০০৯ সালে এভাবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো সাত। ২০০৬-এ ছিলো পাঁচ। অথচ এ বছরের গত পাঁচ মাসেই ১৮ জনের আত্মহত্যা এবং অক্টোবরের প্রথম ১৫ দিনে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার ৪২ জন। গত মাসের প্রথম দিকে দেশের অনেক এলাকায় বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছে ২০ জন। এর মধ্যে নারী ও শিশু ১৮ জন।
মেয়ের অপমানে বাবার আত্মহত্যার ঘটনাও আমরা দেখেছি।
এদিকে ইভ টিজিং-এর প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছেন তিনজন। বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ২০১০ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৭১ জন। এর মধ্যে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অ্যাসিড-সন্ত্রাস ও যৌতুকের শিকার হয়ে মৃত্যুকে বেছে নিতে হয়েছে ২৩ জনের।
এতো অপরাধ; অথচ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলাগুলোর ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই উচ্চ আদালতে টেকে না। এই ঘাটতি আর এই অসহায়তাই নির্যাতিতদের আত্মহননের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিচারহীনতা এবং লাঞ্ছনাকারীর চেয়ে লাঞ্ছিতকে খারাপ চোখে দেখার অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
এই বাস্তবতা যতোটা নারকীয়, রূপালিদের আত্মহত্যা ততোটাই প্রতিবাদী। রূপালিরা বাঁচতো; যদি আমরা, সরকার, সমাজপতি, অভিভাবকসহ সবার প্রতিরোধ আরও জোরদার হতো।
তাহলেই রূপালিরা নিরাপদ হবে, রূপালির মায়ের মতো মায়েরা শূন্য ঘরে হাহাকার করে বেড়াতেন না। বিপন্ন মেয়েদের বাঁচাতে তাই জানিয়ে দিতে হবে- তাদের সহর্মমী সমগ্র সমাজ; বখাটেদেরও বুঝিয়ে দিতে হবে সমাজের শাসন না মানলে, নারীদের শ্রদ্ধা করতে না শিখলে, তাদের পরিণতিও হবে ভয়াবহ। [সংক্ষেপিত]
>
সমাজের ভিন্ন-ভিন্নভাবে প্রতিটি ধাপে নারীদের প্রতি পুরুষের যে অসম্মানিত আচরণ; তার প্রতিবাদ-স্বরূপ এ লেখাটি প্রত্রস্থ হলো। এটি আমাদের বিশেষ সংগ্রহ থেকে প্রকাশিত।
--------------------------------------------------------------------------
আকাশলীনা
অগ্রহায়ণ ১৪১৭] নভেম্বর ২০১০]
সংখ্যা ০৫] বর্ষ ০১]
কৃতজ্ঞতা] হিমেল অনার্য
সম্পাদক] নোমান ভূঁইয়া
শব্দ বিন্যাস ও সমন্বয়] সৈয়দা সুধন্যা
প্রচ্ছদের ছবি] সমকাল-এর সৌজন্যে
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠাসজ্জা] রঙছুট
বিশেষ সহযোগিতায়]
শফিক হাসান, মহিবুল হাসান কাউসার
সাবরিনা আহমেদ
যোগাযোগ]
+88 018 18 731377 [সাইফুল আমিন]
মূল্য] ১০ টাকা
[স্বপ্নের কোনো মূল্য হয় না।
তবু যাঁরা এই স্বপ্ন কিনতে চান,
তাঁদের জন্য এই নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ]
সম্পাদক ও প্রকাশক
নোমান ভূঁইয়া কর্তৃক সার্কুলার রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত;
এবং হাতিরপুল, ধানমন্ডি, ঢাকা- ১২০৫
থেকে মুদ্রিত
একটি প্রজন্ম প্রকাশনা
=============================================
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।