পরে বলব! দুঃখিত, আমি কোন সম্রাট হতে চাই না। সেটা আমার জন্য নয়। আমি কাউকে শাসন অথবা জয় করতে চাই না। আমি অবশ্যই ইহুদী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, পারতপক্ষে সবাইকে সাহায্য করতে চাইবো। মানবজাতির বিশিষ্ট হল আমরা সকলেই একে অন্যকে সাহায্য করতে চাই।
আমরা সবাই একে অন্যের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়ে পাশে থাকতে চাই। আমরা একে অপরকে ঘৃণা আর অশ্রদ্ধা করতে চাই না। পৃথিবী অনেক সমৃদ্ধ এবং এখানে সবার সমান অধিকার রয়েছে, এবং পৃথিবী সবাইকে সমান সুবিধা দিয়েছে। এখানে জীবনের চলার পথ সুন্দর বাধাহীন। কিন্তু আমরা সে পথ থেকে দূরে সরে এসেছি।
লোভ আমাদের পবিত্র আত্মাকে বিষাক্ত করে তোলেছে, পৃথিবী ঘৃণার শৃঙ্খলে হয়েছে অবরুদ্ধ, আমাদের ধাবিত করেছে নির্বোধ দুর্বিপাক এবং রক্তক্ষয়ের মাঝে। জীবনমান উন্নয়নে এসেছে গতিশীলতা, কিন্তু নিজেদের মানবতাবোধ ও মুক্ত ধারার চিন্তা চেতনাকে করেছি রুদ্ধ; প্রযুক্তির প্রাচুর্য আমাদের আরও লোভী করে রেখেছে। আমাদের অর্জিত জ্ঞান আমাদের করেছে শুধু পরের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধানে অভ্যস্ত ছিদ্রান্বেষী, এবং আমাদের চাতুরটা নির্মম ও নিষ্ঠুর। আমরা অনেক বেশী চিন্তাশীল কিন্তু আমাদের অনুভূতি অতি নগণ্য। প্রযুক্তি আর যন্ত্রপাতির চাইতে আজ আমাদের মানবতার, চাতুরটার চাইতে উদারতা ও নম্রতার অত্যন্ত প্রয়োজন।
এসব গুণহীন জীবন হয়ে ওঠে হিংসাত্মক এবং সবকিছু হবে নিঃশেষ। প্রযুক্তি বিশ্বকে তথা মানবজাতিকে আজ কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। সে উদ্ভাবনই আজ হাহাকার করছে মানবতার জন্য, চিৎকার করছে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের জন্য; আমাদের সকলের ঐক্যের জন্য।
আজও আমার কণ্ঠস্বর বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, লাখো হতাশ নারী, পুরুষ আর শিশু আজ প্রচলিত এক সমাজ ব্যবস্থার বলি, যা তাদের পীড়িত করে এবং রুদ্ধ করে নিরপরাধ জনগণকে। সেইসকল মানুষ যারা আমাকে শুনতে পারছেন তাদের বলছি - নিরাশ হবেন না।
যে দুর্গতি আজ আমাদেরকে ঘিরে ধরেছে তা আর কিছু নয়, আমাদের লোভেরই প্রতিফলন; সেইসব কটু মানুষের তিক্ততা যারা মানুষের প্রগতি নিয়ে ভিত। মানুষের ঘৃণা লোপ পাবে আর স্বৈরাচার নিপাত যাবে, এবং যে ক্ষমতা তারা মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল, তা পুনঃস্থাপিত হবে, এবং আমৃত্যু মানুষের স্বাধীনতা কখনোই লোপ পাবে না।
বীর যোদ্ধারা! নিজেদেরকে জানোয়ারদের কাছে সপে দিও না, যারা তোমাদের তাচ্ছিল্য করে, ক্রীতদাস করে রাখে; তারা তোমাদের জীবনযাত্রা করে নিয়ন্ত্রিত, হুকুম করে কি করতে হবে, কি ভাবতে হবে আর কি অনুভব করতে হবে! তারা তোমাদের অত্যাচার করে, শোষণ করে, পশুর ন্যায় আচরণ করে, ব্যবহার করে যুদ্ধে অপচয়যোগ্য মূল্যহীন সৈনিকের মত! নিজেদেরকে ঐসব ভয়ঙ্কর ব্যক্তিদের কাছে সপে দিও না - ঐসব যান্ত্রিক মানুষগুলো, যন্ত্রের ন্যায় তাদের মন এবং যন্ত্রের মতন তাদের হৃদয়! তোমরা যন্ত্র নও! তোমরা গবাদিপশু নও! তোমরা মানুষ! তোমাদের অন্তরে মানবজাতির প্রতি রয়েছে ভালবাসা! তোমরা ঘৃণা করতে শেখনি! তোমাদের অপ্রিয় ঘৃণা; শুধুমাত্র সেসব অপ্রিয় এবং ভয়ঙ্কর ব্যক্তিদের জন্য।
বীর সেনারা! দাসত্বের জন্য লড়াই করো না! স্বাধীনতার জন্য লড়াই করো! সেন্ট লিউক এর সপ্তদশ অধ্যায় এ উল্লেখ্য আছে “ঈশ্বরের রাজত্ব মানুষের মাঝে”, একজন বা একটি দলের মধ্যে নয়, সকল মানুষের মাঝে! তোমাদের মাঝে! তোমরা, তোমাদের সেই ক্ষমতার আছে, যে ক্ষমতা বিপ্লব ঘটাতে পারে, এনে দিতে পারে অপার আনন্দ, সুখ আর শান্তি! তোমরা, তোমাদের মাঝে জীবনকে মুক্ত এবং সুন্দর করার সে শক্তি আছে, আছে জীবনকে চমৎকার ও রোমাঞ্চকর করে তোলার সে ক্ষমতা। তাহলে চলুন, গণতন্ত্রের প্রয়োজনে সে শক্তিকে ব্যবহার করি।
চলুন সকলে ঐক্যবদ্ধ হই। সবাই যুদ্ধ করি একটি নতুন পৃথিবীর জন্য, একটি সুন্দর পৃথিবী যা সবাইকে সমান কাজ করার সুযোগ দেবে, তরুণদের দেবে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা আর প্রবীণদের নিরাপত্তা। মনে রাখবেন, এ সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েই কিন্তু জানোয়ারেরা ক্ষমতায় আরোহণ করেছেন। কিন্ত তারা মিথ্যা বলেছেন! তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন নি। কোনদিন করবেন ও না! স্বৈরশাসকেরা নিজেরা পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে জনগণকে দাসত্বে নিয়োজিত করে! আসুন আমাদের ঐসকল প্রতিশ্রুতি পূরণে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরি! আসুন পৃথিবীকে মুক্ত করার এ সংগ্রামে যোগ দিন! জাতীয় সকল প্রতিবন্ধকতাকে ধংস করতে হবে! সকল লোভ-লালসার সাথে ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতাকে ধংস করতে হবে! আসুন লড়াই করি একটি সত্য পৃথিবীর জন্য, যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রগতি মানুষকে সুখ-সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করবে।
যোদ্ধারা, গণতন্ত্রের জন্য, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই!
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
Click This Link
http://luis.impa.br/chaplin.html
মুখবদ্ধঃ দেশের আজ যে অবস্থা, হাল ধরার জন্য আমাদের এরকমই একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের আজ ভীষণ প্রয়োজন।
অনুবাদে অনেক কাঁচা, ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।