"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
দুর্ঘটনার গল্প
কদিন আগে আমার এক বান্ধবী ছোট্ট অথচ মর্মস্পর্শী এক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আমার অর্কুট এ্যাকাউন্টে স্ক্র্যাপ করেছিল। ঘটনাটা আমার মনে ভীষণ দাগ কেটেছিল। জানিনা আপনারা সেই ঘটনাটা জানেন কী না। সে অবশ্য বলেছিল আমি যেন অন্তত ১৫ জন বন্ধুবান্ধবীকে তার এই স্ক্র্যাপটা হুবহু পাঠিয়ে দেই। যাতে তারাও এই ঘটনা জানতে পারে।
আজ আমি আপনাদের সাথে সেই ছোট্ট ঘটনা বা দুর্ঘটনা যাই বলুন তা শেয়ার করছি। মূল লেখাটা ছিল ইংরেজীতে। আমি সেটা নিজের মতো করে বাংলায় ভাবানুবাদ করে পোষ্ট করলাম। ঘটনাটি এমনঃ
এক ছেলে ও এক মেয়ে দুজন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একদিন তার দুজনে মোটরবাইকে করে যাচ্ছিল।
রাস্তা মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। কিছুক্ষণ বাদেই মোটরবাইক তীব্র গতিতে ছুটতে লাগলো। স্পীড মিটারের কাঁটা তখন ১০০’র ঘর ছুঁই ছঁই করছে। মেয়েটা পেছনে বসা। ছেলেটাকে সে জড়িয়ে ধরে আছে।
মেয়েটা বার বার ছেলেটাকে বাইকের স্পীড কমানোর জন্য অনুরোধ করছিল। কিন্ত ছেলেটা কিছুতেই তার কথায় কান দিচ্ছিল না। যেন মেয়েটার কোন কথাই সে শুনতে পাচ্ছে না। ভয়ে, আতঙ্কে তখন মেয়েটার চোখ মুখ ফ্যাকাশে। মোটরবাইকের গতি আর কিছুতেই কমছে না।
এই ফাঁকে দুজনের মধ্যে কিছু কথা হলো...
মেয়েঃ প্লীজ ! স্পীডটা কমাও ! আমার ভীষণ ভয় করছে ! কথা শোন ! প্লীজ, স্পীড কমাও !
ছেলেঃ নাহ্ ! স্পীড কমাবো না। তুমি চুপচাপ বসে থাক। কী দারুন মজা পাচ্ছি ! মনে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে কোথাও উড়ে যাচ্ছি। চুপচাপ মজাটা উপভোগ করো।
মেয়েঃ নাহ্ ।
এটা কোন মজা না। আমি সত্যিই ভয় পাচ্ছি।
ছেলেঃ তাহলে বলো, তুমি আমাকে ভালবাস।
মেয়েঃ বেশ বলছি। আমি তোমাকে ভালবাসি।
এবার হলো তো। এবার স্পীড কমাও।
ছেলেঃ এবার আমাকে খুব ভাল করে একবার জড়িয়ে ধরো। খুব জোড়ে। আবার বলো, আমি তোমাকে খুউব ভালবাসি।
মেয়েঃ আরে বাবা বললাম তো। আর আমিতো তোমাকে ধরেই আছি। এই নাও আরও জোড়ে ধরলাম। এবার স্পীডটা কমিয়ে দাও।
ছেলেঃ দ্যটস্ এ গুড গার্ল।
এবার এক কাজ করো। তুমি আমার মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে নাও। এবার সেটা তোমার মাথায় পড়ো। প্লীজ ডু ইট নাউ। আমার মাথাটা খুব ঘামছে।
ভীষণ চুলকাচ্ছে। কেমন অস্বস্তি লাগছে।
মেয়েঃ ওকে বাবা নিচ্ছি। এবার তুমি স্পীড কমাও।
মেয়েটা ছেলেটার মাথা থেকে হেলমেটটা খুলে নিজের মাথায় পড়ে নিলো।
ঘটনার শেষ এখানেই নয়। পরেরদিন খবরের কাগজে একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা ছাপা হলো। একটা মটোরবাইক ব্রেক ফেইলের কারনে সরাসরি একটা বিল্ডিং এ যেয়ে প্রচন্ড আঘাত হানে। মোটরবাইকের আরোহী ছিল একজন ছেলে আর একজন মেয়ে। দুইজন আরোহীর একজন দৈবক্রমে বেঁছে গ্যাছে।
মোটরবাইক চালাক মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে মারা যায়।
এর পেছনেও কিছু ঘটনা ছিল যা মেয়েটা জানতো না। অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর ছেলেটা যখন বুঝতে পারলো তার মোটর বাইকের ব্রেক কিছুতেই কাজ করছে না, সে নানাভাবে স্পীড কমাতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছুতেই স্পীড কমাতে পারছিল না। মেয়েটা এই কথা জানলে ভীষণ ভয় পাবে জেনে সে নানা কথা বলে মেয়েটাকে আসল ঘটনাটা বুঝতে দিতে চায়নি।
মেয়েটা জানতেই পারলোনা আসলে কী হয়েছিল। ছেলেটা ভালবাসার কথা বলে, জড়িয়ে ধরার কথা বলে মেয়েটার কাছে থেকে তার শেষ ভালবাসার অনুভূতিটুকু পেতে চাইছিল। মনে মেন ভাবলো যে করেই হোক মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে। তার ভালবাসা বেঁচে থাকুক। তাই সে তার হেলমেটটা মেয়েটাকে এটা সেটা বলে পড়তে দিলো।
কারন সে বুঝতে পেরেছিল সামনে দুর্ঘটনা অনিবার্য। যে কোন মুহূর্তে একটা কিছু ঘটে যেতে পারে। আর তেমন কিছু হলে তারা দুজনেই মারা যেতে পারে। ছেলেটা চেয়েছিল সে না বাঁচলেও অন্তত মেয়েটা যেন বাঁচে। তাই তার হেলমেটটা মেয়েটাকে দিয়েছিল।
দুর্ঘটনায় ছেলেটা সত্যিই মারা গেল। মেয়েটা জানতেও পারলো না তাকে বাঁচাতে ছেলেটা কতবড় ঝুঁকি নিয়েছিল। সবাই কী পারে অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে? নিজের ভেতরের ভালবাসাকে অন্যের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে। সত্যিকারের ভালবাসা হয়তো সবই পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।