আকাশ ভরা গাঙচিল
সন্ধ্যায় রিতুকে শুয়ে থাকতে দেখে ললিতা রিতুকে ডাকে। রিতু সন্ধ্যায় ঘুমানো ঠিক না। আব্বা রাগ করবেন। উঠে আয়।
রিতু ধীরে ধীরে উঠে রান্নাঘরের দিকে যায়।
কিন্তু দরজার কাছে যেতেই সবকিছু ঘোলাটে লাগে। সে ঠিক করতে পারে না কোথায় যাবে। পেটে তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে। দু হাতে পেট চেপে ধরে বসতে যায়। বসতে পারে না।
মুখ ভর্তি করে বমি করে। ললিতা দৌড়ে এসে রিতুকে ধরে।
খলিল সাহেব বারান্দায় পায়চারি করছেন। তিনি আজ বেশ উদ্বিগ্ন। তাছাড়া ক দিন ধরে শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না।
বাড়িতে পাড়ার এক বয়স্কা মহিলা এসেছেন রিতুকে দেখতে। তিনি লোকজনকে তাবিজ দিয়ে থাকেন। কবিরাজি করে তার সংসার চলে। অভীঙ্গা মহিলা রিতুকে দেখেই বুঝতে পারেন। কিন্তু এক অবিবাহিত মেয়ের সন্তান হবে জানতে পারলে যে সমাজ তাদের একঘরে করে রাখবে।
তিনি ললিতাকে কানে কানে বলেন, মা শোন, আমার কাছে তাবিজ আসে, এতেই কাজ হবে। ওর পেটের বাচ্চাটারে নষ্ট কইরা ফালা।
কি কন দাদি? রিতুর বাচ্চা হইব? ওর তো এখনো বিয়াই হয়নি। ললিতার কন্ঠে বিস্ময়।
এই জন্যই তো সমস্যাডা।
কেউ জানলে তোদের এ বাড়িতে থাকতে দিব?
ললিতার মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। সে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়।
সেদিন রাতে অত্যধিক উত্তেজিত হয়ে খলিল সাহেব হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু বরন করেন। এতিম তিন বোন নিরুপায়, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। রিতু তার অনাগত সন্তানকে এ পৃথিবীর আলো বাতাসের স্পর্শে নিয়ে আসতে চায়।
কিন্তু ললিতা লতা সমাজপতিদের নৃশংসতা থেকে নিজেদের বাঁচাতে কবিরাজ দাদির ঔষধ রিতুর খাবারের সাথে মিশিয়ে দেয় রিতুর অজান্তে। তার ঠিক দুই দিন পর প্রচন্ড রক্ত ক্ষরণে রিতুর মৃত্যু হয়।
মফস্বল শহরের রিতুদের গ্রামটা অনেক সেকেলের। বিদ্যুৎ পৌছুলেও যাবতীয় নাগরিক সুবিধা নেই। সে সুযোগে আদিম কিছু কুসংস্কারের চর্চা সেখানে বহাল তবিয়তে চলে আসছে।
রিতুর মৃত্যু সমাজে প্রশ্ন রেখে যায়। এ কান ও কান হতে হতে সবাই জেনে যায়। টনক নড়ে ফতোয়াবাজদের। আধুনিক ফতোয়াবাজরা প্রমাণ রাখতে চায় না। তারা দল বেঁধে রাতের অন্ধকারে হানা দেয় খলিল সাহেবের বাড়িতে।
বাড়িতে তখন ললিতা আর লতা গুটিসুটি মেরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাতের ঘন অন্ধকার ভেদ করে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে খলিল সাহেবের ছোট্ট টিনের কুঠির।
মানবতার মৃত্যু হয় বারবার। ভোর হয় না। দীঘল কালো অন্ধকার ঘনিয়ে আসে পৃথিবীর বুকে।
এ ঘন অন্ধকার বুক চিড়ে কিছু মানুষ বেঁচে থাকে পরিকল্পনাহীন। শুধু বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে থাকা। অন্ধকারেই স্বপ্ন রচনা করা। অন্ধকারেই অপেক্ষা করা। কেউ জানে না সে কথা।
রচিত ইতিহাসও একদিন হারিয়ে ফেলে তার লিপি। মুছে যায় স্মৃতি। শুধু বেঁচে থাকে হাহাকার।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে।
(চলবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।