কোথাও যদি হারিয়ে আমি যাইগো কোন দিন , যেও ভুলে , আমায় যেও ভুলে
জেলি মাখানো আধা খাওয়া রুটির প্লেটটা পরে আছে ডাইনিং টেবিলে। কিচেনের বাতিটা এখনো জ্বলছে। ড্রইং রুমের সোফায় কেউ ঘুমিয়ে ছিল বোঝা যায় পড়ে থাকা চাদর, কুশন গুলো এদিক ওদিকে পড়ে থাকতে দেখে। ফ্লাটের ভিতরের দিকে অন্ধকার বাতি নেভানো। দরজা জানালা বন্ধ থাকায় দিনের আলোতেও রাতের মতো মনে হচ্ছে।
দুই বেড রুমের একটিতে সব কিছু সুন্দর ভাবে গোছানো আর একটি মানে বড় রুমটিতে শুধু বিছানাটা অগোছালো বাকি সব নিপুন হাতে গোছানো। বোঝা যাচ্ছে এই খানেও সর্ব শেষ কেউ ঘুমিয়ে ছিল। বেড রুমের দেয়ালে টানানো মন মুগ্ধকর একটি পেইন্টিং।
পুলিশ অফিসার নিকোলাস রজার অবাক হয়ে বাসাটা দেখল। বিদেশীদের বাসা এরকম কখনো দেখেনি ।
এবার কাজ শুরু করা যাক ভাবল নিকোলাস। প্রথমে গেল টেলিফোনের কাছে। অনেক গুলো মেসেস দেয়া। কিন্তু কিছু সে বুঝতে পারছে না, অন্য ভাষা হওয়াতে। তবে একটা নাম সে ধরতে পেরেছে।
জুই যে মেয়েটির মেসেস দেওয়া তার নাম যে জুই সেটা সে নিশ্চিত। আর জুই ও নিকোলাসের মতো ছেলেটির ব্যাপারে চিন্তিত। কথার চেয়ে কান্না বেশী করছে মেয়েটি। তবে একটি নাম্বার নেই মেসেসে সব গুলো মেসেস আননোন নাম্বার থেকে। আর ্যত গুলো কল করা হয়েছে সব কলিং কার্ড দিয়ে।
টেলিফোন অফিস থেকে অবশ্য কোথা থেকে কল গুলো এসে ছিল তা বের করা যাবে। যা যা যেভাবে লিকোলাস দেখল তার হুব হু নোট নিয়ে বাসার গেটে থানায় যোগা্যোগ করতে অনুরোধ করা কাগজটি দরজায় আটকে দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল নিকোলাস।
টেলিফোন অফিস থেকে জানাল সব গুলো কল এসেছে রোম এয়ারপোর্ট এর টেলিফোন বক্স থেকে। শনিবার সকাল ১০ থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত কল গুলো করা হয়েছে। হাসপাতালের দিকে যেতে যেতে নিকোলাস মনে মনে একটা ছবি আকল ঘটনা কি ঘটেছিল।
ছেলেটার বান্ধবী দেশ থেকে প্রথমবারের মতো এখানে আসছে। তাদের মধ্যে ভালাবাসার সম্পর্ক অনেক গভীর। জুই আসছে এই খুশিতে সারা রাত ফাহিম ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি। তাই একটু বেড রুমে একটু ড্রইং রুমে শুয়ে বসে সময় কাটাবার বা অল্প একটু ঘুমোবার চেষ্টা করেছে। শেষ রাতে তার ঘুম এসে যায় চোখে, যার ফলে ঘুম ভাঙ্গে সকাল সাতটায়।
""ইস দেরি হয়ে গেল""। তারাতারি ফ্রেস হয়ে কোন রকমে একটু রুটি মুখে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় ফাহিম। ৯টার ফ্লাইটে জুই নামবে এয়ার পোর্টে। হয়তো কয়েক বছর পর দেখা হবে ওদের। এই রকম কোন ভাবনায় বিভোর ছিল ফাহিম।
তার সাথে সারা রাত জাগার ক্লান্তি। হঠাৎ করে পাশের লাইন থেকে লাল রংঙের গাড়িটা ফামিমের গাড়িটাকে ধাক্কা দিয়ে পাশে ফেলে দিল। আচমকা কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে আরেকটা গাড়ি ফাহিমের গাড়িকে আঘাত করল।
ফাহিমারে বেডের পাশে বসে নিকোলাস ভাবছিল কথা গুলো। হয়তো এমন হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
দুইদিন পার হয়ে গেল ছেলেটার কোন সেন্স* এখনো ফেরেনি। ছেলেটির পরিচিত কেউএখনো ওর খোজে আসেনি। মোবাইলটা এমন ভাবে ভেঙ্গেছে নাম্বার বা সিমটা একটিভ করা সম্ভব হয়নি। কেউ এলো না ছেলেটার খোজে ??????
কেউ কি নেই এখানে ওর পরিচত। একথা ভাবতেই মনে পড়ল জুই এর কথা ।
জুই তাহলে কোথায় এখন? কি করছে মেয়েটা এই অচেনা শহরে?
রোম এয়ারপোর্টে শনিবার সকালে বাংলাদেশ থেকে আসা ফ্লাইটের সকল যাত্রীর নামের লিস্টে জুই নামের কোন মেয়ে নেই। তবে সানজিদা হক নামের ২১ বছরের একটি মেয়ের নাম আছে। মেয়েটি বিবাহিত । তবে কি জুই সানজিদা হক!! ফাহিম ওকে জুই বলে ডাকে। কোথায় আছে মেয়েটি।
ডিপাচারের গেটের দোকানির কাছে এইরকম কোন মেয়েকে দেখেছে কিনা জানতে চাইলো নিকোলাস। দোকানি মেয়েটি জানাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একাট বিদেশী মেয়ে বেন্চে বসে কেদেছে আর কতক্ষন পর পর বক্স থেকে ফোন করেছে। আমি ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু মেয়েটি আমাদের ভাষা জানেনা। ইংরেজীতে কি কি যেন বলল আমি কিছু বুঝিনি পড়ে পুলিশ কে জানালে ওরা ওকে কোথায় যেন নিয়ে যায়।
পোর্ট পুলিশ ফাড়িতে একরকম দৌড়েই যায় নিকোলাস।
সেখান থেকে জানতে পারে মেয়েটা বাংলাদেশ থেকে তার স্বামী ফাহিম আহমেদের কাছে এসেছে। ফাহিমের ওকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিফ করার কথা । বাসার ঠিকানা জানেনা সানজিদা । বাসার যে নাম্বারটা ছিল টেনশন আর অস্থিরতায় কখন কোথায় যে পড়ে গেছে খেয়াল করেনি। মোবাইল নাম্বারটা মনে রেখেছে কিন্তু সেটা বন্ধ।
পড়ে বিকাল ৫টা বাজে আমরা ওকে এখানে নিয়ে আসি। রাতে এখান কার এক পুরনো বাঙ্গালীর বাসায় ওকে রেখে আসি।
নিকোলাস ঐ বাঙ্গালির বাসার ঠিকানা নিয়ে ছুটল মেয়েটাকে ফাহিমের কাছে নিয়ে যেতে। এমন সময় হাসপাতাল থেকে ফোন এলো..................।
চলতে পারে যদি..................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।