কোথাও যদি হারিয়ে আমি যাইগো কোন দিন , যেও ভুলে , আমায় যেও ভুলে
আকমল সাহেবের বাসার নিচে দাড়িয়ে নিকোলাস ভাবছিল কি বলবে ও জুইকে। এখন গেলেই তো জুই ফাহিমের খবর জানতে চাইবে। ওর কাছে যেতে চাইবে। "কি বলব আমি এই মেয়েটাকে? কি করে বলব ফাহিমের এই অবস্থার কথা। একজনের দোষে আজ তিনটা মানুষের জীবন বিপন্ন।
আগের অংশটুকু পড়তে চাইলে
নিজের প্রতি নিজেই খুব বিরক্ত হলো নিকোলাস । কি এত সব ভাবছি আমি, কি হয় এরা আমার? এদের নিয়ে এত কেন ভাবছি আমি। হাইওয়ে পুলিশের অনুরোধে কেসটাতে কাজ করছি। এটা আমার ডিউটি। এখন মেয়েটাকে হাসপাতালে পৈাছে দিয়ে আমি এই ঝামেলা শেষ করব।
পুলিশের পরিচয় দিতেই আকমল সাহেব গেট খুলে দিল। যেমন টা ভেবে ছিল নিকোলাস আকমল সাহেবকে নিয়ে তেমন নয় এই লোক ২৮/৩০ বছরের এক যুবক। বাসায় ঢুকে নিকোলাস নিজের আসার কারণ জানাল আকমলকে। নিজের অজান্তেই কেমন যেন একটু ব্যকুল ভাবেই জুইয়ের কথা জানতে চাইল নিকোলাস। তার ব্যকুলতা দেখে আকমল জানতে চাইল আপনি কি ফাহিমের পরিচিত কেউ? ফাহিমকে চেনেন? জুই কোথায় ? আবার ও জানতে চাইল নিকোলাস।
আছে জুই এখন ঘুমাচ্ছে। বিমান জার্নি আর গত দুই দিনের ধকলে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে জুই। সারা রাত কান্না করছে। ওকে এভাবে রেখে আজ কাজে যেতে পারিনি। পরে ওর কাজ থেকে দেশের নাম্বার নিয়ে বাসায় কথা বলিয়ে দিয়েছি।
দেশ থেকে ফাহিমের দুলাভাই জানাল ফাহিমের বড় ভাই এখানেই আছে তাকে জানানো হয়েছে। তবে ফাহিমের বাসার ঠিকানা না থাকায় এখনো ফাহিমের ব্যাপারে কিছু বলতে পারছে না। আর জুই কে নিতে বা দেখতে ফাহিমের বড় ভাই নাকি এখানে আসবে না। আমার সাথে ও কোন কথা বলবে না। একথা জুই এর বাসায় জানার পর লন্ডন থেকে জুই এর ফুপা রোমের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন দুপুরে।
নিকোলাস ফাহিমের দুর্ঘটনার খবরটাকে আকমলকে জানাল। মাতাল অবস্থায় এক জনের ভুলের খেসারত ,ফাহিমকে চরম ভাবে দিতে হচ্ছে। মাতায় আঘাতের কারণে এখন ফাহিম কোমায় আছে। বাচার সম্ভাবনা খুব কম। জুই এর কি অবস্থা, একথা এখন কি ওকে বলতে পারবেন? বললে ও কি সইতে পারবে?
সকালে দেশে কথা বলার পর জুই একটু রুটি মুখে দিয়েছিল।
এরপর ফাহিম আর নিজের অনেক কথাই বলেছিল। ৪ বছরের সম্পর্ক ফাহিমের সাথে। সম্পর্কের ২ বছর এর মাথায় ফাহিম এখানে চলে আসে। জুই লেখা পড়া আর ফাহিমের অপেক্ষায় সময় পাড় করতে থাকে। বাসা থেকে অন্য জায়গায় ওর বিয়ে দেবার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু জুই অনড় থাকাতে পারেনি।
গত বছর ফাহিম দেশে গিয়ে বাসায় জুই কে ঘরের বউ করার কথা জানায় কিন্তু বাসায় কেউ রাজী হয়নি। আর ফাহিমের ফ্যামিলি রাজী না থাকায় জুইয়ের ফ্যামিলিও বাধা হয়ে দাড়ায়। শেষে ফাহিমের এর দুলাভাইয়ের সহযোগিতায় দুজনে সবার অমতে বিয়ে করে। কিছু দিন পর ফাহিম চলে আসে। আসার পর থেকেই জুইকে আনার চেষ্টা করতে থাকে।
জুইকে বিয়ে করার কারণে ফাহিমের বড় ভাই ওকে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরে ফাহিম রোমে এসে একা বাসা নিয়ে থাকা শুরু করে সবার সাথে কোন রকম সম্পর্ক না রেখে । কিছু দিন আগে জুইয়ের ভিসা পাঠায় ফাহিম । আর যে কারনে আজ জুই এখানে। ফাহিম ওকে বলে ছিল এয়ারপোর্টে থাকবে কিন্তু কয়েক ঘন্টা বসে থেকেও ফাহিমের কোন দেখা পায়নি।
বক্স থেকে ফাহিমের মোবাইল অনেক বার ট্রাই করেছে কিন্তু বন্ধ বলে,বাসায় কেউ রিসিভ করে না। আমি বাসার নাম্বার চেয়ে ছিলাম কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছে আমাকে দিতে পারেনি।
মেয়েটা নিজের চিন্তায় যতটা না অস্থির তার চেয়ে বেশী অস্থির ফাহিমের চিন্তায়। কোথায় আছে? কি হয়েছে? কেন এলো না? আমি ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম যাইহোক না কেন তুমি তারাতারি ওর খবর পাবে। আর তোমার এত কষ্টের ভালবাসা এত সহজেই হারাতে পারেনা।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে জুই কাদছিল আর ফাহিমের কথা ভাবছিল। কি হলো আমার ফাহিমের। এমন কি কারণ হতে পারে যে আমি আসার পরেও ফাহিম এলো না। নাকি ওর কোন সমস্যা হয়েছে। না না কিছু হয়নি আমার ফাহিমের।
হয়তো কাজে আটকা পড়েছে। অন্যকোন এক শহরে যাবে বলেছিল,রাতে বাসায় ফিরে ভোর বেলায় এসে বসে থাকবে এয়ারপোর্টে এরকম কথাই হয়েছিল সর্বশেষ। বিয়ের পর এরকম অনেক বারই হয়েছে। রাতে ফোন করার কথা ফোন নেই, কল করলে রিসিভ করেনা। দুই দিন তিন পর ফোন করে মাফ চায় কান্নাকাটি করে বাচ্চাদের মতো।
সব ওর ঐ কাজটার কারণে । সব আমার জন্য ,আমার কারণেই আজ ফাহিম এত কষ্ট করছে। আমার মন বলছে হয়তো একটু পরই ফাহিম এসে বলবে চলো বাসায় চলো, সরি একটু দেরি করে ফেললাম। কিন্তু ও জানবে কিভাবে আমি এখানে আকলম সাহেবের বাসায়? এয়ারপোর্টে গেলে নিশ্চই ওরা বলেদেবে আমি কোথায়। খুজতে থাকুক আমাকে কষ্ট দিয়েছে না, মজা বুঝুক।
কিন্তু আমাকে না পেয়ে তো ফাহিম পাগল হয়ে যাবে। কি হতো আর একটু এয়ারপোর্টে বসে থাকলে। নিজের প্রতি রাগ লাগল জুইয়ের।
জুইয়ের কান্না আর ভাবনায় ছেদ পড়ল বসার রুমে আকমলের সাথে কারও কথার আওয়াজ পেয়ে। ওরা কি যেন বলাবলি করছে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না জুই।
এই জন্যই ফাহিম আমাকে বার বার ভাষাটা শিখে আসতে বলেছিল। ধ্যত কেন যে আমি ওর সব কথা শুনি না। দরজায় টোকা শব্দ আকমল সাহেব ভেতরে আসার অনুমতি চাইল। দরজা একটু ফাক করে আকমল জানাল পুলিশ এসেছে আপনাকে ওর সাথে যেতে হবে সাথে আমিও যেতে পারি যদি আপনি চান। আপনার মালামাল থাক এখানেই।
কোথায় কেন , ফাহিমের কোন খবর এরকম কোন প্রশ্ন না করেই জুই রেডি হয়ে বসার ঘরে এলো।
নিকোলাসের গাড়িতে করে ওরা তিন জন হাসপাতালে আসল। হাসপাতাল দেখেই জুই চিৎকার শুরু করল কি হয়েছে আমার ফাহিমের ? আপনারা আমাকে হাসপাতালে আনলেন কেন? আকমল বা নিকোলাস কেউ ওর কথার কোন জবাব দিল না। ফাহিমের কথা বলতে একজন নার্স জুইকে ফাহিমের রুমের দিকে নিয়ে গেল। পেছনে পেছনে আকমল ও যাচ্ছে।
নিকোলাস গেল ডাক্টারের সাথে কথা বলতে।
ডাক্টারের চেম্বার থেকে একরকম দৌড়েই নিকোলাস ফাহিমের রুমে আসল। এসে দেখে জুই ফাহিমকে জড়িয়ে ধরে অঝোড় ধারা কাদছে। সেই সাথে কাদছে ফাহিম, আকমল নার্সটাও। ওদের কান্না দেখে নিকোলাসের চোখেও পানি এলো।
হাসপাতাল থেকে ফোনে নিকোলাসকে জানিয়ে ছিল হাইওয়েতে দুর্ঘটনায় আসা রোগী কোমায় চলে গেছে কিন্তু সেটা কি ফাহিম ছিল না ফাহিম কে ধাক্কা দেওয়া মাতালটা ছিল সেটা নিকোলাস ও জানতে চায় নি বা হাসপাতাল থেকে ফোন করা ব্যাক্তিটিও বলেনি। আজ সকালে ফাহিমের অব্স্থা একটু ভাল হলে সে জুই জুই করে অস্থির হয়ে উঠলে ডাক্টার তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।
এর কিছু দিন পর জুই আর ফাহিম ওদের বাসায় চলে যায়। একাকি ফাহিম জীবনের এই কঠিন সময়টাতে নিকোলাস আর আকমলের মতো দুজন ভালো মনের মানুষ পায়। সর্বপরি ওদের এই বিলম্বিত মিলন ওদের ভালবাসাকে চিরদিনের জন্য একই সুতায় বেধে দেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।