প্রত্যেক শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় আমার মাথয় এই প্রশ্নটা ঘুরঘুর করে। কিন্তু বাড়িতে ফিরে এসে পরিবারের সবার সাথে খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বিষয়টা নিয়ে আর লেখা হয় না। তাই আজ সকাল সকাল বিষয়টা নিয়ে লিখতে বসলাম।
ঢাকা ঘন বসতি পূর্ন এলাকা হওয়ায় বর্তমানে শুধু পাড়ায় পাড়ায় নয় প্রত্যেক গলিতে গলিতে এখন মসজিদ রয়েছে। সেই মসজিদগুলো বহুতল বিশিষ্ট।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে একাধিক লাউড স্পিকারের ব্যবহার থাকে। অবশ্য লাউড স্পিকার বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সব মসজিদেই থাকে। যা নামাজ পড়ানো ও জুম্মায় খুতবা পাঠের সময় বিশেষ প্রয়োজনীয়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মাইক। যার মাধ্যমে আযান দেওয়া হয়।
এবং এর আওয়াজ শুধু মসজিদের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ছড়িয়ে পড়ে অনেকদূর পর্যন্ত। বেশ কিছু মসজিদ জুম্মার দিন লাউড স্পিকারের পাশাপাশি মাইকেও খুতবা প্রচার করে। উদ্দ্যেশ্যটা খুবই স্পষ্ট, যারা নামাজে আসেনি তারাও যেন খুতবায় বর্নিত জ্ঞান থেকে বঞ্চিত না হন এবং যারা এখনও মসজিদে পৌঁছাতে পারেননি তারা যেন বুঝতে পারেন মূল নামাজ শুরু হতে আর কতটা সময় বাকি।
সম্প্রতি আমাদের বাড়ির কাছে নুতন একটি মসজিদ চালু হয়েছে।
যা অতি ক্ষুদ্র তবে মানুষ আসছে প্রচুর। বেশির ভাগ মুসল্লীকেই রাস্তায় দাঁড়াতে হয়। প্রথম দিকে আর্থিক কারণে একাধিক মাইক কেনায় ক্ষমতা না থাকায় বাইরে দাঁড়ানো মুসল্লীদের ইমামের খালি গলার খুতবা শুনতে হত। কিন্তু পাশের গলির বড় মসজিদে সে সময় ইমাম সাহেবর একাধিক মাইকের সাহায্যে উচ্চস্বরে পাঠকৃত খুতবার কারণে মূলত দুই ইমামের মধ্যে একজনেরটাও ঠিক মত শোনা যেত না। বর্তমানে ক্ষুদ্র মসজিদটিতেও একাধিক বড় বড় মাইক লাগানো হয়েছে।
যার ফলে জুম্মার সময় এলকাটি মোটামুটি সরগরম থাকে। বিষয়টি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা সংগত আমার জানা নেই তবে সামাজিক এবং পরিবেশগত ভাবে অবশ্যই অসংগত।
এখানে আমি আরো একটি বিষয় উল্যেখ করতে চাই। ইসলামী জলসা এবং রাজনৈতিক সভা-এই দুই সমাবেশে, সমাবেশ স্থলের বাইরেও বহুদূর পর্যন্ত সারি সারি মাইক বেঁধে দেওয়া হয় যাতে করে আগ্রহী শ্রোতাদের পাশাপাশি অনাগ্রহী শ্রোতারাও বাধ্য হন তাদের বক্তব্য শুনতে। বিষয়টির মাঝে কতটা ভব্যতা রয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়।
আমার পাড়ায় একটি হাসপাতাল রয়েছে যা কেবলমাত্র হৃদ রোগের চিকিৎসার জন্যেই পরিচিত। কয়েক দিন আগে সপ্তাহ ব্যাপি এক ইসলামী জলসায় প্রায় মাইল খানেক এলাকাজুড়ে প্রকম্পিত হচ্ছিল। প্রত্যেক লাইট পোস্টে দুইটা করে মাইক বাঁধা থাকলেও হাসপাতালের সামনের লাইট পোস্ট দুটিতে সৌভাগ্যবশতঃ একটি করে মাইক বাঁধা ছিল। আমার জানা নেই হাসপাতালের রোগীদের সে সময় অবস্থা কি ছিল। হাসপাতালের কথাতে মনে পড়ল, কদিন আগে পি জি হাসপাতালে গিয়েছিলাম।
সেখানকার ছাত্র সংগঠনের কি এক অনুষ্ঠানে চার পাঁচটি ঘোড়ার গাড়ী এবং বড় একটি ব্যান্ড পার্টি হাসপাতালের ভিতরে অনেকক্ষণ ধরে খুব করে ঢাক ঢোল পিটালো এবং মেডিকেলের ছাত্ররা ভুভূজিলা বাজানোর প্রতিযোগীতা চালাল।
৯০ এর শেষের দিকে খবরের কাগজে একটি সংবাদ পড়ে খুব উত্তেজিত হয়েছিলাম। পশ্চিম বঙ্গে নাকি মসজিদে মাইক বাজিয়ে আজান দেয়া নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। পরে কলকাতায় চিকিৎসার জন্যে গিয়েছিল এমন একজনের কাছে জানতে পারলাম মাইক বাজানো নয় কেবল মাত্র জোরে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু মসজিদে নয় পূজা মন্ডব, রাজনৈতিক সভা সবখানেই র্নিদিষ্ট মাত্রার উপরে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ।
অর্থাৎ সেখানে নেতা বা মাওলানার কন্ঠ না চাইলে আপনাকে শুনতে হবে না। পূজার সময়ও আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গান বাজবে না। আমাদের দেশেও কি এমনটা হতে পারে না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।