Ho love of mine.. with a song and a wine.. You’re harsh and divine.. like truths and a lie..
কিছু দিন আগে ( প্রায় ৬ মাস ) আমি আমেরিকায় হস্তান্তর হই । আমেরিকা নিয়া অনেক বড় বড় ধারনা ছিল , যার তেমন কিছুই এখনো চোখে পরে নাই । তবে যে জিনিসগুলো আশা করছিলাম না , সে জিনিসগুলোর মধ্যে প্রায় অনেক কিছুই ইতিমধ্যে দেখা হয়ে গেছে । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে "বাংলাদেশ নিয়ে বাঙালিদের তাচ্ছিল্য " । কিছু ঘটনা যা আমার সাথে ঘটছে তা নিচে দিলাম ।
* প্রাইভেসি এর জন্য নাম প্রকাশ করা হল না ।
ঘটনা নাম্বার ১ : আমি স্কুল লাইব্রেরি এর কম্পিউটার ল্যাবে বসে ইন্টারনেটে প্রথম আলো পরতেছি । বেশিরভাগ পোলাপান ই নতুন আসছে আমেরিকায় তাই বাসায় কম্পিউটার নাই । কম্পিউটার ল্যাবে তাই বাঙ্গালিদের আনাগোনা একটু বেশিই চোখে পরে । তো একজন তেমনি নতুন ভাই আসলেন আমার কাছে ।
আইসা ভালা মন্দ এর পর্ব শেষ করে জিজ্ঞেশ করলেন কি করি । আমি বললাম প্রথম আলো পড়ি । বললেন , কি পড় ? আমি রিপিট করলাম। তারপর জিজ্ঞেশ করলেন , কেন পড়ি ? বললাম , ছোটকাল থেকে পড়ে পড়ে অভ্যাস হয়ে গেছে তাই না পড়ে থাকতে পারি না । তারপর ওই ভাইটা এমন তাচ্ছিল্লের একটা হাসি দিল যে আমার শরীর জ্বলে গেলো ।
উল্লেখ্য ওই ভাইজান মাত্র এক মাস আগে বাংলাদেশ ছেড়ে এসেছেন । আইসা ই বাংলাদেশ এর অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকার কথা ফটাস কইরা ভুইলা গেছেন ।
ঘটনা নাম্বার ২ : ২৬শে মার্চ । স্বাধীনতা দিবস । আমেরিকায় ঠিক বাংলাদেশি ওই আমেজটা নাই ।
আমি বললাম , আজকে স্বাধীনতা দিবস । বললো , তো ? আই ডোন্ট কেয়ার । বললাম আজকে একটা গুরুত্তপূর্ন দিবস আমাদের ইতিহাসে । বলল বাংলাদেশে তো প্রতিদিন ই একটা না একটা দিবস থাকে , এতে আর ইম্পরট্যান্ট কি পাইলে ? আমার বলার মত কিছু ছিল না, তাই আমি চুপ করে থাকলাম ।
ঘটনা নাম্বার ৩ : এইটা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার সমাবেশ ।
কিছু কথাকে এক সাথে দিলাম যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় শুনেছি ।
১) " আররে বিডি ( দেশের পুরা নামটা বলতে ও ওদের লজ্জা করে ! ) এর ছেলে গুলার মত নষ্ট আর বজ্জাত ছেলে আমি দেখি নাই । (আপনাদের বাপ কি বাঙালি না ? )
২) ওই দেশ থেকে যে আসতে পারছি , আল্লাহ বাচাইসে । ( কি সুকরানা আদায় , নিজের দেশের হাত থেকে মুক্তি চান তারা )
৩)"তরা ইমিগ্রেনটরা পাসপোর্ট রেডি রাখ । তোদেররে আমরা কিছুদিন পরই বের করে দিব ।
" (বেছারা নিজেও কিন্তু ইমিগ্রানট !)
৪)"তরা বাঙালি গরিব বাস্টার্ডরা নিজের দেশে ফিরে যা । তরা এই দেশকে গরিব করতেছিস । " (তিনি নিজেও কিন্তু একজন "বাঙালি" , হইত তিনি বড়লোক !)
দুঃখের কাহানির এখানে ই শেষ আপাতত । তবে শুধু যে দুঃখের কাহানি ই ঘটছে তা কিন্তু না , কিছু ভাল জিনিস ও দেখছি ।
যেমন ঃ ১) ইংলিশ ক্লাসে কোন একজন বাঙালি ভাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম নিয়া একটা কবিতা লিখছেন এবং ওইটা খুব সুন্দর ভাবে ওয়ালে টাঙ্গানো আছে ।
২) স্টুডেন্ট অফ দা মান্থ এর ওয়ালে একটা ছবি আছে একটা মেয়ের । মেয়ের পিছনে আরেকটা ওয়াল । ওই ওয়ালে আমি দেখেছিলাম বাংলাদেশের পতাকা নিয়া একজন বাঙালি বীর সদর্পে দৌড়ে যাচ্ছেন এই রকম একটা ছবি । ওইটা হইত কোন কবিতা বা গল্প । যে জায়গাটায় ওই ওয়াল টা , ওই জায়গায় খুজে ও ছবি টা পেলাম না ।
মনে হয় আগের ছবি ।
__________________________________________________
এইসব লেখার কারন হল , আমাদের ওই গরিব দেশটা ১৬ কোটি মানুষ বুকে ধারন করে আছে । কোন সময় কাওকে ওই ছোট্ট জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় না । দেশটার টাকা পয়সা তেমন নেই , তবুও প্রতিটা মানুষকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে বা দিবার চেষ্টা করছে । দেশটার ধন সম্পদ কম কিন্তু ওইটা তো আমাদের জন্মভূমি ।
কারো মা গরিব হলে সে কি তার মাকে অপমান করত ? অবশ্যই না ! তাহলে মার সমান দেশ কে কেন এই অপমান সহ্য করতে হবে ? কেউ কেউ বলেন যে " তুমি এখন আমেরিকায় , বাংলাদেশে না। এখন তুমাকে আমেরিকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে , বাংলাদেশ নিয়ে না । " আমি আমার মার কাছ থেকে দূরে বলে কি মাকে নিয়ে চিন্তা করবনা ?
ভাইরে আমিও তো আমেরিকায় থাকি , ইচ্ছা করলে তো আমিও নিজেরে আমেরিকান পরিচয় দিতে পারি । কিন্তু আমার তো আসল একটা পরিচয় আছে , যা আমার মনকে সব সময় বলে "আমি বাঙালি " , ওই পরিচয় তো ভাই আমি কোনোদিন ভুলতে পারুম না !!
© nil sagor
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।