আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুঁজিবাদ (Capitalism)

good

প্রাচীন কালে পাদ্রীরা তাদের ঐশী কিতাব সংরক্ষণ করত, সেখান থেকে তারা মানুষদেরকে ধর্ম শিক্ষা দিত। কিন্তু মানুষের উপর পরিপূর্ণ কতৃত্ব লাভের আকাঙ্খায় ক্রমান্বয়ে তাদেরকে শাসন ক্ষমতার দিকে ঝুঁকে পড়তে দেখা যায়। তারা তখন ঐশী কিতাবের বাণীকে নিজেদের মনগড়া বিষয় দ্বারা পরিপূর্ণ করে। তারা এত সুক্ষ্মভাবে লোক চক্ষুর অন্তরালে একাজ সমাধা করে যে, জনগণ তা বুঝতে পারেনি। তারা জনগণকে শাসকের প্রতি অনুগত হতে বলে, পোপের অনুগত হওয়া সাপেক্ষে।

আর শাসকসহ জনগণ পোপের বাণীকে ঐশী বাণী মনে করে তা পালন করতে থাকে। খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে খ্রিষ্টাণ চিন্তাবিদদের ধারণায় মানব সমাজে দ্বৈত সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ পরিলক্ষিত হয়। একটি হলো আধ্যাত্মিক অন্যটি জাগতিক। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে পোপ প্রথক গেলাসিয়াস “দুই তরবারি” নামক একটি তত্ত্ব প্রদান করেন যা ইউরোপে ব্যাপক সমাদৃত হয় এবং অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ে ,এটি রেনেসাঁ আন্দোলনের সময় পর্যন্ত একই অবস্থায় থাকে পরে এর রুপের কিছু পরিবর্তন হয়। গেলাসিয়াসের তত্ত্বটি হলোঃ পার্থিব ও পারলৌকিক ক্ষমতার উৎস্য হিসেবে ঈশ্বর একটি তলোয়ার দিয়েছেন পোপকে,আরেকটি তলোয়ার দিয়েছেন সম্রাটকে।

এর ফলে পোপ প্রভূত্ব করবে মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনের উপর আর সম্রাট প্রভূত্ব করবে মানুষের বাহ্যিক জীবনের উপর। ধর্মীয় ব্যাপারে সম্রাট যাযকের অধীন এ ব্যাপারে সম্রাটের শুধু শেখার আছে ,শিক্ষা দেওয়ার কিছু নেই। অন্যদিকে পার্থিব ব্যাপারে যেসব আদেশ নিষেধ আছে পোপ তা মানতে বাধ্য। তবে তুলনামূলকভাবে পার্থিব সংস্থার কর্মকর্তা কর্মচারীদের চেয়ে গীর্জার কর্মকর্তাদের গুরুত্ব অনেক বেশী কারণ, তাদেরকে রাষ্ট্রের শাসকসহ সকল মানুষের জন্য স্রষ্টার কাছে জবাবদিহী করতে হয়। কিন্তু শাসককে এটি করতে হয়না।

এতে পোপরাই রাষ্ট্রের দন্ডমুন্ডের অধিকর্তা হয়ে ওঠে। তারা একসময় জনগণকে গীর্জায় সম্পদ জমা করতে বলে। এর ফলে প্রত্যেকটা গীর্জা হয়, এক একটা ধন ভান্ডার। প্রচলিত হিসাব মতে আধুনিক কালের শুরুতে অর্থাৎ ষোড়শ শতাব্দীর দিকে রাজা বা রাষ্ট্রীয় শাসক পুরোপুরিভাবে পাদ্রীদের হাতের পুতুল হয়ে পড়ে। শাসক শ্রেণী পাদ্রীদের মতলব বুঝতে পারে এবং তারা গীর্জার বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করে।

এতে সমাজ (ইউরোপীয়) দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একভাগে থাকে পোপ ও তার সমর্থনকারী জনগণ, অন্যভাগে থাকে শাসকের সর্মথনকরীরা এবং পোপের অনৈতিক শাসনে অতিষ্ট জনগণ। জনগণ অতিষ্ঠ হয়েছিল এ কারনে যে,তাদের অনেককে ধর্মের নামে বৈরাগী বানানো হতো। তারা বিয়ে করতে পারতো না, পাদ্রীদের সেবা করে জীবন অবিবাহিত করতে হতো, সমস্ত সম্পদ গীর্জায় দান করতে হতো ইত্যাদি । তো রেনেসাঁর সময়ে পোপ ও রাজার মধ্যে যুদ্ধ হয়, সে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পোপের পরাজয় হয়।

তখন সমাজ আবার দুটি অংশে বিভক্ত হয় পড়ে। শাসকের পক্ষের শক্তির একটা অংশ মনে করে যেহেতু ধর্মের দোহায় দিয়ে পোপেরা মানুষকে দীর্ঘদিন শোষণ করেছে তাই ধর্মের অস্তিত্বই থাকবে না। অন্য শ্রেণী বলে ধর্ম থাকুক তবে তা শুধু গীর্জার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। রাজনীতিতে তার কোন ভুমিকা থাকবে না। কিছু ধর্মীয় রীতি নীতি থাকবে আমরা তা পালন করব আর সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপারে আমরা আমাদের প্রয়োজন মত পদ্ধতি প্রনয়ন করে চলবো।

এই শেষোক্ত অবস্থাকে কেন্দ্র করেই আধুনিক উদার নৈতিক গণতান্ত্রিক সমাজ বা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়। যার মূল কথা হলো সৃষ্টিকর্তা আছে তবে তার দেওয়া পদ্ধতি শুধু গীর্জার মধ্যে থাকবে। তাদের ভাষায় “যা কিছু রাজার তা তার মত কর,আর যা কিছু ঈশ্বরের তা তার উপর ছেড়ে দাও। ”সমাজ চালবে মানুষের তৈরী জীবন বিধান দিয়ে। জীবন সম্পর্কে তাদের ধারণা বা পুঁজিবাদী ধারণা হলো, সৃষ্টিকর্তা মানুষ সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন তবে তা গীর্জা সংক্রান্ত ব্যাপার।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মের ব্যবহার অবাঞ্চিত। রাষ্ট্র চলবে মানুষের তৈরী পদ্ধতি দিয়ে। মানুষ কিভাবে চললে তার দ্বারা ভাল হবে বা সর্বাধিক কল্যান সাধিত হবে তা মানুষই ভাল জনে। (এ ব্যাপারে মানুষের জ্ঞান কতটুকু তা বিভিন্নভাবে আলোচিত হয়েছে। ) পৃথিবীতে চলার ক্ষেত্রে মানুষ পুরোপুরি স্বাধীন আর আমাদের সব পাপ পাদ্রীরা মাথায় নিয়েছেন।

আমাদের কোন পাপ অবশিষ্ট নেই। অতএব অর্থ-সম্পদ ইনকাম কর,খাও-দাও ফুর্তি কর। মৃত্যুর পর আমরা স্বর্গে যাব। এটাই হলো পুঁিবাদী জীবন ব্যবস্থার মূল যা আজকের পশ্চিমা বিশ্ব ধারণ করে আছে,যা গণতন্ত্র নামক রাষ্ট্রীয় পদ্ধতির মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত। পুর্ব কথাঃ আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্রখ্যাত গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটল তার চিন্তালব্ধ রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থাপনা “গণতন্ত্র” জন্ম দেন।

এরিষ্টটল যা বলেছেন বা যা করেছেন তা ছিল মূলতঃ তার শিক্ষক প্লেটোর চিন্তা চেতনা। বলা হয় এরিষ্টটল প্লেটোর চিন্তাকে বাস্তবে রুপায়িত করেছেন। এরিষ্টটলের শিক্ষক প্লেটোর গণতন্ত্রের নমুনা ছিল এমন প্লেটো তার “ The Republic” গ্রন্থে বলেন -“আদর্শ সমাজে তিনটি শ্রেণী থাকবে ১. শাসক শ্রেণীঃ যারা শুধু আদেশ দিবেন কারণ তারা আদর্শ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ,তারা শিক্ষিত, ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা শুধু তাদেরই আছে । ২. দাস শ্রেণীঃ যারা শুধু কায়িক পরিশ্রম করবে,আদেশ মানবে। কোন আদেশ দেওয়ার যোগ্যতা,ক্ষমতা তাদের নেই।

৩. সৈনিক শ্রেণীঃ যারা শুধু দেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করবে। তিঁনি বলেছেন শাসক শ্রেণী কখনও কায়িক পরিশ্রম করবেনা, তাদের নির্দেশ শুনবে দাস শ্রেণী তারা তাদের প্রভূদের উচ্ছিষ্ট খাবে। তাদেরকে শেকলের সাহায্যে বেঁধে কাজ করানো হবে, প্রভুরা খাবার পর যা থাকবে তা তারা খাবে। তিঁনি তাদেরকে পেটভরে খেতে দেওয়ার ও বিপক্ষে ছিলেন। সৈনিক শ্রেণী বিয়ে করতে পারবেনা তবে তিঁনি তাদের জৈবিক চাহিদা মেটানোর পক্ষে বলেছেন যে, দাসীদেরকে তারা গ্রহন করবে লটারির মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক দাসী হবে সকল সৈনিকের স্ত্রী এবং সেখান থেকে যে সন্তান হবে তা হবে সকল সৈনিকের সন্তান।

রাষ্ট্র কোন শারিরীক,মানুষিক প্রতিবন্দী শিশুকে গ্রহণ করবে না। তাদের কে জাহাজে ভরে এমন এক দ্বীপে রেখে আসা হবে যেখান থেকে তারা আর কখনও ফিরে আসতে না পারে(অর্থাৎ আদর্শিক সমাজের মানুষের মঙ্গলের স্বার্থে মানুষ হত্যা)। যাই হোক পরবর্তীতে তা বিভিন্নভাবে রদ করা হয়েছে(একই কাজ অন্যভাবে করে বৈধ করা হয়েছে)। Democracy সম্পর্কে এরিষ্টটলের নিজস্ব মত হলো “গণতন্ত্র হলো অযোগ্যদের সরকার ব্যবস্থা” (এরিষ্টটলের এ মন্তব্যটি যে সঠিক তা বর্তমান বিশ্বব্যাবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু ভদ্র লোকটা বুঝে-শুনে এ জিনিস তৈরী করতে গেল কেন ? যাই হোক এটা আমার ব্যাপার নয়, এটা আমাদের জীবনাদর্শও নয়।

অবশ্য পরবর্তীতে গণতন্ত্র আর এরিষ্টটলীয় গণতন্ত্র থাকেনি,তা হয়েছে বহু চিন্তা বিদের হাজারো স্বাধীন চিন্তার ফসল)। যারা গ্রীক নয় এরিষ্টটল তাদেরকে জংলী ও বর্বর বলতেন। তিঁনি বলেন- জংলী ও বর্বরদের জন্ম হয়েছে দাস হবার জন্য। সম্রাট আলেকজান্ডারকে তিঁনি পরামর্শ দিতেন(তিঁনি আলেকজান্ডারের শিক্ষক ছিলেন),যেন তিঁনি গ্রীকদের নেতা এবং অ-গ্রীকদের প্রভূ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন । তিঁনি যেন গ্রীকদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করেণ আর অ-গ্রীকদের সাথে পশুর মত আচরণ করেন ।

(The Economic Life of the Ancient World :Twin, 1st Chapter,Page-82) অথচ ইসলামী জীবনাদর্শ মানুষ সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করতে শেখায়। রসূল (সাঃ) বলেন- কোন আরবের উপর কোন অনারবের এবং কোন অনারবের উপর, কোন আরবের শেষ্ঠত্ব নেই। তোমাদের(মানুষের) প্রত্যেকেই আদম থেকে সৃষ্ট আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। ( সহীহ মুসলিম) (এ দুই চিন্তা থেকে দুটি জীবনাদর্শ(Ideology) তৈরী হয়েছে। এরিষ্টটলীয় চিন্তা ধারা এবং সমজাতীয় অন্যান্য দার্শনিকদের চিন্তা চেতনার উপর নির্ভর করে ‘পুঁজিবাদ বা গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদ’ নামক জীবনাদর্শের জন্ম হয়েছে আর মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার বিধান এবং আল্লাহর নির্দেশে পরিচালিত রসূল সাঃ এর কর্মপদ্ধতি থেকে ‘ইসলাম’ নামক জীবনাদর্শের সৃষ্টি হয়েছে।

এখন সিদ্ধান্ত আপনার,আপনি কোন জীবনাদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হতে চান ?) । গণতন্ত্র শুধুমাত্র সরকার পরিচালনার পদ্ধতিই নয় বরং সময়ের ব্যবধানে তা একটি জীবন ব্যবস্থা (গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদ ) হিসেবে পাশ্চাত্য সমাজে সু-প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্র মানেই হলো- গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদ(পুঁজিবাদের আধুনিক নাম- ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতি’,এ নামটি পুঁজিবাদের মত পরিচিত হয়নি তবে আমার বিশ্বাস ভালভাবে পরিচিতি পেলে পুঁজিবাদ বিশেষজ্ঞরা আবারও নামটি পাল্টিয়ে রাখবেন)। তাই এটি এখন শুধুমাত্র কোন সমাজের মানুষদের রাজনৈতিক আচরণকেই নিয়ন্ত্রণ করে না বরং তার সামাজিক,রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক,আন্তর্জাতিক সকল আচরণই নিয়ন্ত্রণ করে। যুগে যুগে যারা গণতন্ত্রকে বিকশিত করেছেন তারা হলেন আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক ম্যাকিয়াভেলী, টমাস হব্স, জন লক, রুশো, জে.এস.মিল, জেরেমী বেন্থাম, লর্ড ব্রাইস, অধ্যাপক লাস্কী, আব্রাহাম লিংকন ইত্যাদি।

যুগে যুগে বিভিন্ন নীতি আবিস্কৃত হয়ে তা গণতন্ত্রকে দান করেছে বহুমাত্রিকতা যেমন উদারতাবাদ,উপযোগবাদ(Hedonism),ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ ইত্যাদি। উদারতাবাদ সর্বক্ষেত্রে মানুষকে উদার হবার শিক্ষা দেয়। অপরের কাল্যান কামনা করতে শেখায়। মাত্রাতিরিক্ত Freedom নিয়ে উদারতাবাদ গণতন্ত্রকে বিকশিত করেছে। তারা এত উদার হতে শেখায় যে, কেউ দুটো মিষ্টি কথা বলে আপনার বগলদাবায় থাকা বৌ’য়ের হাতটি সযতনে অবমুক্ত করে সপ্তাহ খানিকের জন্য নিজের মনে করে নিয়ে গেলে আপনার সত্যিই কিছু বলার নেই(যদি এতে স্ত্রীর মত থাকে)কারণ আপনি অতি উদার।

বড়জোর আপনি মন খারাপ করে বসে থাকতে পারেন,এর বেশী কিছু করেছেন তো মরেছেন, অবশ্য জেল জরিমার ভয় না থাকলে এ ব্যাপারে হস্তক্ষ্যেপ করতে পারেন। উপযোগবাদ সম্পর্কে জেরেমী বেন্থাম(Hedonism এর জনক) বলেন, Greaest happiness of the greatest number অর্থাৎ ‘সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের জন্য সর্বাধিক সূখ’। জেরেমী বেন্থাম বলেন “সুখ ভোগের চিন্তা এবং দুঃখ কে এড়িয়ে চলার চিন্তাই হলো মানুষের কর্ম প্রেরণার মূল। মানুষ জন্মলাভ করেছে সুখ ভোগের জন্য তা সে যেভাবেই হোক না কেন। কেউ মহাকাব্য পাঠ করে বা অশ্লিলতা চর্চা করে যদি আনন্দ পায় তাতে বাঁধা দেওয়ার কিছুই নেই।

আনন্দ ভোগের ক্ষেত্রে কোনটা উচিৎ আর কোনটা অনুচিৎ তা বিবেচ্য বিষয় নয় বরং উভয় ক্ষেত্রে সুখের পরিমান গত দিকটাই আসল। ” (মন্তব্য নি:প্রয়োজন) আধুনিক গণতন্ত্রকে যারা বিকশিত করেছেন, মানুষ সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পুরোপুরি তুলে ধরা সম্ভব নয় কারণ, তারা একেকজন বিশাল বিশাল এবং অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। টমাস হব্স একটি বিখ্যাত গ্রন্থ “লেভিয়েথান” রচনা করেন। তিঁনি এখানে মানুষের ব্যাপারে বলেছেন- প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের জীবন ছিল পশুতুল্য। নিয়ম শৃঙ্খলার অভাবে সেখানে মানুষ ছিল অসভ্য,বর্বর।

সেখানে প্রত্যেকেরই শত্র“ ছিল। তারা সারাক্ষণ দ্বন্দ,কলহ,খুন-খারাবিতে লিপ্ত থাকতো(নির্ভেজাল ভুল কথা)। সবমসয়ই ভয়াবহ যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করতো। মানুষের বুদ্ধি বিবেকের চর্চা,যুক্তিকে কাজে লাগাবার অবকাশ সেখানে ছিলনা (এটি সমাজতন্ত্রীদের পুরোপুরি বিপরীতমুখী চিন্তা,কারণ তারা বলে ‘প্রকৃতির সেই রাজ্যে’ অবাধ শান্তি ছিল,কোন শত্রতা ছিল না। মূলতঃ এরকম কোন যুগ কোন কালেও ছিলনা ।

)। হবসের মতে- মানুষ স্বার্থপর,লোভী,জড় বস্তুর সাথে তার কোন পার্থক্য নেই ইত্যাদি। আধুনিক রাষ্ট্র চিন্তার জনক ম্যাকিয়াভেলী যিনি গণতন্ত্রকে আরও প্রাণবন্ত করেছেন,তিঁনি বলেন ঃ রাষ্ট্রের কল্যানার্থে প্রয়োজন হলে শাসক ধর্ম ও নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে যেকোন পন্থা অবলম্বন করতে পারে,কারণ-শাসক নীতিবান,ধর্মপ্রাণ হলে ক্ষতির আশঙ্কা বেশী। ম্যাকিয়াভেলী বলেন-সৎ গুণ থাকুক আর না থাকুক শাসককে এমন ভাব করতে হবে ,যাতে মনে হয় তিনি প্রকৃতই সৎ ,ধার্মিক ও ন্যায় পরায়ন ব্যক্তি। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জনতার সাথে প্রতারণা যুক্তিযুক্ত বলে ম্যাকিয়াভেলী মনে করেন।

তিঁনি শাসককে প্রতারণা,চাতুর্য যেকোন ভাবেই হোক না কেন ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে বশীভূত করার কথা বলেছেন। তিঁনি শাসককে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন-শাসক হবে সিংহের মত বলবান এবং শিয়ালের মত ধূর্ত। ম্যাকিয়াভেলীকে আধুনিক রাষ্ট্র দর্শন অমর করে রেখেছে। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়-তিঁনি যথার্থই সময়ের সন্তান ( বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমারও তাই মনে হয়- গণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী তাকে চীর অমর করে রেখেছেন)। আজকের বিশ্ব ব্যবস্থা যাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে,তাদের আইন কানুন,নিয়ম,পদ্ধতি এজাতীয় রাষ্ট্র চিন্তাবিদ,দার্শনিকদের চিন্তা চেতনা থেকে উদ্ভুত।

আর মানুষ সম্পর্কে যাদের এমন সংকীর্ণ ও নিম্ন মানের ধারণা তারা যদি আইন তৈরী করে,তাহলে সে আইনের দশা কি হতে পারে ,ভেবে দেখেছেন ? এজন্যই দেখা যায় তাদের আইন-কানুন শুধুমাত্র তাদের ভূখন্ডের উঁচু শ্রেণীর বা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জনগণের নিরাপত্তার নিশ্চায়তায় প্রণীত,অন্য জনগণ অবাঞ্চিত। এ উদ্দেশ্যে বা নিজের জনগণের নিরাপত্তার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাই বৈধ,এটাই ন্যায় - অন্যায়ের ভিত্তি । এটাই তাদের দর্শন । এপ্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন ঃ “তাদের নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসের মাঝে নিজেদের মনগড়া ধারণাই তাদেরকে বিভ্রান্ত করে রেখেছে। ”(আল-কুরআন,৩ঃ২৪) পুঁজিবাদ এর শাসন পদ্ধতি গণতন্ত্র (Democracy) হলেও তা এখন এমন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার প্রয়োজন পড়েনা কারণ, শুধু শাসন পদ্ধতিতে নয়, জীবন যাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা গণতন্ত্র নিয়ে এসেছে।

আমি পুঁজিবাদী না বলে তারা এখন বলে আমি গণতান্ত্রিক। আজকের পশ্চিমা সভ্যতা (Western Civitization) পুঁজিবাদী (Capitalistic) ধ্যান ধারনার অনুসারী এবং এর উপর নির্ভর করে তাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছে। (পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র মতাদর্শ ভিন্ন হলেও একটি ক্ষেত্রে তাদেরকে একমত হতে দেখা যায় আর তা হলো “খাও দাও ফুর্তি করো” । মূলতঃ এ নীতিকে ফলপ্রসু করতেই তাদের জীবন বিধানের জন্ম। জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত তাই, যত পারো মজা করে নাও আর এর জন্য দরকার হয় প্রচুর অর্থ।

তাই এই অতি প্রয়োজনীয় বস্তু অর্থ নিয়েই তাদের যত চিন্তা। অর্থ দিয়েই তারা সবকিছুকে বিচার করে। ভালো মন্দের মাপকাঠি হলো অর্থ। আখিরাতের কথা বাদ দিয়ে যদি আমরা এই বিধানগুলোর বৈষয়িক লাভ ক্ষতির দিকেও তাকায়,তবুও স্বীকার করতে হয় যে, এটা তাদেরকে(এবং আমরা যারা সেভাবে চলছি তাদেরকে) সত্যিই লাভবান করেনি। সকল ক্ষেত্রে ভোগবাদী চিন্তা তাদেরকে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ এনে দিলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা খুবই গরিব,দূর্বল,অনুন্নত।

আমি জানি আপনি আমার কথা মানবেন না কারণ, আমরা জন্মের পর থেকে তাদেরকে আকাশের তারকা জ্ঞান করে মান্য করে আসছি। সকল ক্ষেত্রে তাদেরকে সফল বলছি এবং উন্নত বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি। তাই এ ব্যাপারে একটু আলোচনা করা যাক ...। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.