আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুঁজিবাদ ও আমাদের ক্রমবর্ধমান দুর্দশায় সরকারের দায়বদ্ধতা

---

একটি উঠতি পুঁজিপতিদের দেশে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এজন্য বহাল পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই পুরোপুরি দায়ী। তবে এ দায়ভার যেন প্রকাশ না হয়ে পড়ে সে জন্য নানারকম ফন্দিফিকির করে পুঁজিপতিরা। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার কলকব্জা কীভাবে কাজ করে তা জনগণের কাছ থেকে আড়াল করে রাখা হয় । এবং তা করা হয় পুঁজিবাদকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল হিসেবেই।

এ নকশা অনুযায়ী জীবনবিমূখী নিষ্প্রাণ অর্থনীতির উপর সবক দেয়া হয় স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ফলে সাধারণ জনমনে সৃষ্টি হয় এক সীমাহীন অজ্ঞতার। আমজনতা তাঁদের সমস্ত দুর্দশার জন্য দায়ী করে সরকারকে। বি.এন.পি’র সমর্থকরা আওয়ামিলীগকে আর আওয়ামীলীগ দায়ী করে বি.এন.পি’কে। আর কেউ কেউ তাদের দূরবস্থার দায়ভার চাপায় প্রতিবেশী দেশের উপর।

এই ভুলের একমাত্র কারণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যত সামনে এগিয়ে যায় ততই পুঁজিপতিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পুঁজিপতিরা অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক ও নিখুঁত কায়দায় জনগনের রক্ত চুষে টাকার পাহাড় বানায়। এ প্রক্রিয়ায় পুঁজিপতিদের সংখ্যা যতই বৃদ্ধি পায় ততই বাড়তে থাকে জনগণের দুর্ভোগ। পুঁজির সঞ্চয়নের সমানুপাতিক হারে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম দারিদ্রতা।

কেউ ঘি খেয়ে আমোদ ফুর্তি করে জীবন পার করে দেয় আর কেউ না খেয়ে রাস্তায় পড়ে মরে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। অভাব অনটন ও বৈষম্যের ফলে বাধ্য হয়ে অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে সমাজ। পুঁজিপতিদের পুঁজি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে ওঠে বিভিন্ন রকমের অপরাধ ও অপরাধ চক্র। জাতির প্রাণসঞ্চারক যুবক ও তরুণরা হয়ে ওঠে নৈরাজ্য প্রবন ।

জনগণকে মারামারি কাটাকাটি হানাহানি ও সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। তা প্রকাশ পায় রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ অথবা আন্ত:সংঘর্ষ, জনগণের মধ্যে আত্মহত্যা, গুপ্তহত্যা, নারী নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, ড্রাগ স্মাগলিং, শিশুপাচার, ইত্যাদি অপরাধের মধ্যে দিয়ে। যেহেতু জনগণকে আগে থেকেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ রাখা হয়েছে, তাই তারা সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেয় সরকারের উপর। অথচ জনগণ বুঝতেই পারে না, যে পুঁজিপতিরা তাঁদের দুঃখ দুর্দশার জন্য দায়ী, তাদের রক্ষা করাই নির্বাচিত সরকারের একমাত্র কাজ। দেশের পুলিশ বাহিনী, র্যাব বাহিনী, মিলিটারি, বি.ডি.আর এ সবকিছুর-ই একমাত্র ধ্যানজ্ঞ্যান পুঁজিপতিদের সেবায় নিয়োজিত থাকা।

সংসদে এমন সব আইন ও বিল পাস করা হয় যা শুধু পুঁজিপতিদের স্বার্থই রক্ষা করে চলে। তাই প্রতি পাচ বছর পর পর সরকার বদলায়। কিন্তু জনগণের কোন উন্নতি হয় না। পরিস্থিতি ক্রমশ খারপ থেকে আরো খারাপ হতে থাকে। পুঁজিবাদ চোরকে চুরি করার অবাধ সুযোগ করে দেয়।

পরিকল্পিতভাবে চোর ডাকাতদের সংখ্যা বাড়ায়। কারণ তালা-চাবির ব্যবসা করতে হলে চোর বাটপার আর ডাকাতদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর এই চোর বাটপার আর ডাকাতদের বাঁচিয়ে রাখার কাজটাই করে সরকার ও রাষ্ট্র। এটিই পুঁজিবাদী সরকার ও রাষ্ট্রের একমাত্র কাজ । বহাল এ ব্যবস্থায় সরকারের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করাটা বোকামি।

তা সেই সরকার আওমালীগ অথবা বি.এন.পি যে-ই হোক না কেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.