আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটেনে শিক্ষা শেষে কাজের সুযোগ বন্ধ



বৃটেনে বিদেশী শিক্ষার্থীদের সুদিন ফুরিয়ে আসছে। কঠিন নিয়মের কড়াকড়িতে পড়তে হবে নতুন আবেদনকারীদের। ইতিমধ্যে যারা ভিসা নিয়ে বৃটেন গেছেন তাদেরও নতুন নিয়মের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে সে দেশের সরকার। সমপ্রতি ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছেন বৃটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেরেসা মে। আগামী বছরের এপ্রিল থেকে নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি আরোপ করার ঘোষণা এলেও এরই মধ্যে বেশ কিছু শর্ত পূরণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ওয়ার্মআপ চালানো হচ্ছে।

গত ১০ বছরে বৃটেনে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে যাওয়া এবং কোয়ালিশন সরকারের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়ার পরপরই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ঘরে বাইরে। এ ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে স্টুডেন্ট ভিসার সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ৫ বছর। এর মধ্যে পড়ালেখা শেষ করে তাদের দেশে ফিরতে হবে। আগের নিয়মে শিক্ষা শেষে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজের সুযোগ থাকলেও এ নিয়মে সে দরজাও বন্ধ হচ্ছে। পার্টটাইম কাজেও আসছে নতুন বিধি-নিষেধ।

এখন থেকে কোন শিক্ষার্থীই ডিপেন্ডেন্ট (পোষ্য) সুবিধা পাবেন না। ডিগ্রি লেভেলে অধ্যয়নের জন্য নতুন ভিসা আবেদনকারীকে ‘আপার ইন্টারমিডিয়েট’ লেভেলের ইংরেজি জানতে হবে। এতদিন এর চেয়ে কম ইংরেজি জানা থাকলেও অনুমতি দেয়া হয়েছে। নতুন নিয়মে বিমানবন্দরে শিক্ষার্থীদের দো-ভাষীর সাহায্য ছাড়া কথা না বলতে পারলে তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। বৃটেনে শিক্ষা গ্রহণের জন্য যথাযথ লেভেলের ইংরেজি জানা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

এখন থেকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক ফান্ডে পরিচালিত ফার্দার এডুকেশন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা কাজে অধিকার পাবে। অন্যদের সে সুযোগ থাকছে না। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ওয়ার্ক প্লেসমেন্টেও যেতে পারবে না। ইউনিভার্সিটির পোস্ট গ্রাজুয়েট ও সরকারি আমন্ত্রণে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের স্পাউস ডিপেন্ডেন্টকে বৃটেনে আনতে পারবেন। অন্যরা তা পারবেন না।

নিম্ন লেভেলের স্টুডেন্টদের জন্য কোর্সের মেয়াদকাল ৩ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উচ্চতর শিক্ষার মেয়াদকাল হচ্ছে ৫ বছর। এর বেশি সময় কেউ থাকতে পারবেন না। পয়েন্ট বেইজড সিস্টেমের টিআর ওয়ান-এর অধীনে কোর্স শেষে শিক্ষার্থীরা ২ বছরের জন্য যে চাকরি সুযোগ এতদিন পেয়েছেন তা আর থাকবে না। তুলে নেয়া হবে এই সুযোগ।

তবে যেসব গ্রাজুয়েট অধ্যয়ন শেষে টিআর টু-এর অধীনে দক্ষ হিসাবে স্পন্সর এমপ্লয়ারের চাকরির অফার পাবেন শুধুমাত্র তাদের জন্য এ সুযোগ থাকছে। এখন থেকে শিক্ষা ব্যয় চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের প্রমাণ করতে হবে যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নের জন্য যথাযথ ফান্ডিং আছে। এজন্য বিশ্বস্ত ব্যাংকের স্টেটমেন্ট প্রদর্শন করতে হবে। স্থানীয় বিশ্বস্ত ব্যাংকের তালিকাও প্রকাশ করার চিন্তাভাবনা করছে বৃটেন সরকার।

নিয়মের কড়াকড়ি হলেও টেরেসা মে জানিয়েছেন, প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য বৃটেনের দরজা বন্ধ করতে নয় বরং সিস্টেমের অপব্যবহার বন্ধ করতে এ উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। বৃটেন সরকারের এ মুখপাত্র জানিয়েছেন, কেবল ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কলেজসমূহের কার্যক্রম পরিচালনায়ও প্রণয়ন হচ্ছে কঠোর নীতিমালা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশাবাদ, এ ঘোষণা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হলে বৃটেনে এক লাখ স্টুডেন্ট কম আসবে। গত ২০০৯-১০ সেশনে বৃটেনে আসার জন্য ৩ লাখ ৬২ হাজার শিক্ষার্থী ভিসা নিয়েছে- এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থীরা বৃটেনের অর্থনীতিতে শুধু অবদানই রাখছে না, এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বের সেরা করতেও সহায়তা করছে। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, পুরনো ভিসা সিস্টেম ইমিগ্রেশন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।

নিম্নমানের কলেজগুলো বৈধ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে পারেনি। কার্যকর হতে যাওয়া পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, প্রাইভেট কলেজের স্বীকৃতি প্রদানে কড়াকড়ি, শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম কাজে নতুন বিধিনিষেধ, ডিপেন্ডেন্ট ভিসায় কড়াকড়ি, কোর্সের জন্য ৩ থেকে পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ এবং শিক্ষা শেষে চাকরির সুযোগ বন্ধ করে দেয়াসহ আরও আনেক শর্ত। এদিকে সরকারের নতুন পরিকল্পনা ঘোষণার আগেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে বৃটেনজুড়ে। সমালোচকরা বলছেন, বৃটেনের স্টুডেন্ট বাণিজ্যকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এ পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী বৃটেনের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।

সমালোচকদের দাবি- যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বিদেশী শিক্ষার্থীরা ৪০ বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রাখে। টেরেসা মে’র পরিকল্পনায় অতি বিশ্বস্ত স্পন্সর কলেজ ছাড়া আর কেউ স্টুডেন্টদের ভিসা স্পন্সর করতে পারবে না। এই পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে এডুকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বীকৃতি থাকতে হবে। বর্তমানে কলেজগুলোর এ ধরনের কোন সংস্থার স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না। আর এ সুযোগে অনেক নিম্নমানের কলেজ শুধু ব্যবসার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের বৃটেনে নিয়ে প্রতারণা করছে।

হঠাৎ কলেজ বন্ধ হওয়াসহ নানামুখী দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে অনেক বাংলাদেশী ছাত্রকে। এ সিদ্ধান্তের ঘোর সমালোচক সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান কিথ ভাজ এমপি এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তার মতে, শিক্ষার্থীরা ইমিগ্র্যান্ট নয়, বিশ্বের সব দেশ থেকে তারা বৃটেনে যায় শিক্ষার জন্য। ফিস ও বসবাসের ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। যদি দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে তারা শিক্ষার জন্য অন্যত্র চলে যাবে।

link........... http://www.mzamin.com/ শনিবার, ০২ এপ্রিল ২০১১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.