আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটেনে অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড

অনেকবার চেষ্টা করেছি কলম আর ক্যামেরার দাসত্ব থেকে বের হয়ে যেতে..কিন্তু পারি নি....পারবো কিনা জানি না---এভাবেই হয়তো চলবে...

অবৈধ বাংলাদেশীদের মধ্যে আতঙ্ক আর কোন জল্পনা কিংবা কোনো কল্পনা নয়। এবার সত্যিকার অর্থেই বৃটিশ হোম অফিস চালু করছে আইডি কার্ড। অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে ননইউরোপীয়দের জন্য এই বিতর্কিত বিতর্কিত ন্যাশনাল স্কীমের অধীনে গত ২৫সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা হলো বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড। আগামী নভেম্বর থেকে এই কার্ডটি ইস্যূ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের ছাত্র এবং ম্যারিজ ভিসাধারীদের জন্য এই কার্ড চালু করা হবে।

কার্ডটিতে সংযুক্ত থাকবে প্রত্যেক বিদেশী ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট। এছাড়া কার্ডে লাগানো চিপে বিস্তারিত লিপিবদ্ধ থাকবে কার্ডধারীর জন্ম, তারিখ, ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসসহ অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় তথ্য। আর এর প্রথম শিকার হচ্ছেন অভিবাসী শিক্ষার্থী ও ডিপেন্ডন্টরা। আইডি কার্ড নিয়ে বৃটেন জুড়ে চলছে এখন এক অজানা আতঙ্ক। এর ফলে লাভ-ক্ষতি কি হবে?- এ ধরণের সরব আলোচনা চলছে এথনিক কমিউনিটিগুলোতে।

বিশেষ করে অভিবাসী ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের ডিপেন্ডন্ট হিসেবে যারা স্বপ্নের লীলাভূমিতে ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্নের বুদ হয়ে আছেন তাদের মধ্যেই আলোচনার মাত্রা যেন আরোও এক ধাপ এগিয়ে। কারণ পরিচয়পত্র আসছে প্রথমে তাদের হাতেই। ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স নম্বর আছে ঠিকই কিন্তু ট্যাক্সের খাতা শূণ্য। অথচ বছরের পর বছর বৃটেনের থাকছে, কাজ করছেন। নিজ দেশে বিপুল অর্থ পাঠানোর রেকর্ড আছে।

বার বার ঠিকানা পরিবর্তন, পরিচয় গোপন এমন নানা অভিযোগের অন্ত নেই বৃটিশ হোম অফিসের কাছে। আর এসব কারণে একের পর এক কঠোর নিয়ে নীতি দিয়ে কঠিন থেকে কঠিনতর করা হচ্ছে ইমিগ্রেশন আইন। বৃটিশ সরকার মনে করছে পরিচয়পত্র দেয় হলে অবৈধ অভিবাসীদের পাকড়াও করা আরও সহজ হবে। ট্যাক্সনেটের আওতায় আসবে তাদের কর্মকান্ড। বৃটিশ হোম অফিস থকে ধারণা দেয় হয়েছিল যে যারা হিথ্রোসহ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরগুলোয় কর্মরত রয়েছেত তাদের ক্ষেত্রে আগে চালু করা হবে।

তবে সে সম্ভবনা নাকছ করে অতি স¤প্রতি হোম অফিস ঘোষণা দিয়েছে যে সব ননইউরোপীয় ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের ডিপেন্ডন্টরা ভিসার মেয়াদ বাড়াবেন তাদের হাতে পরিচয়পত্র তুলে দেয় হবে এর পর বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর ননইউরোপীয় অভিবাসীদেরও পরিচয় পত্র দেয়া হবে। ২০১৫ সাল নাগাদ বৃটেনের কমপক্ষে ৯০ভাগ ননইউরোপীয় অভিবাসীর জন্য পরিচয় পত্র ইস্যূর কাজ সম্পন্ন হবে বলে বৃটিশ হোম অফিস আশা করছে। আগামী নভেম্বর মাসের ২৫তারিখ থেকে এই পরিচয়পত্র চালু করা হবে। বিশেষ করে যে সব বিদেশী বৃটেনে অবস্থান করার জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানাবেন তাদের ক্ষেত্রে এই নয়া নীতি প্রযোজ্য হবে। আপাতত যে সব ক্যাটগরীতে পরিচয়পত্র দেয়া হবে তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে অভিবাসী ছাত্র-ছাত্রী।

স্টুডেন্ট ভিসার আওতায় ডিপেন্ডেন্ট অর্থ্যাৎ স্বামী-স্ত্রী, সিভিল পার্টনার অথবা কারও অবিবাহিত সঙ্গী হিসেবে স্থায়ীভাবে বসবসা করছেন এমন ব্যক্তিবর্গকেও দেয়া হবে এই পরিচয়পত্র। একজন ছাত্রের স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করা হলে তাকে দেয়া হবে এই পরিচয়পত্র। বৃটিশ হোম অফিস সূত্রে জানা গেছে পরবর্তীতে কাজ কিংবা চাকুরী, ইনকাম ট্যাক্স, পরিবহনের মেয়াদী কার্ড গ্রহণ, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে সেবা ও সুযোগ সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। ব্যাংকের একটি ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড কিংবা ওয়েস্টার কার্ডের মতো হোম অফিসের দেয়া এই পরিচয়পত্রটি ব্যবহার করতে হবে। এতে একজন অভিবাসীর বৃটেনের অবস্থানে পূর্ব ইতিহাস, বাসা ও কাজের ক্ষেত্র, নিজ দেশের ঠিকানা, অপরাধসহ ব্যক্তিগত অপরাধের ইতিহাস কিংবা পুলিশ রেকর্ডসহ আনুষাঙ্গিক তথ্যের সংযোজন ঘটানো হবে এই পরিচয় পত্রে।

২৫নভেম্বর থেকে যারা উক্ত ক্যাটাগরিতে ভিসার আবেদন জানাবেন তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট আবেদন ফরম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই আবেদন ফরমটির নাম দেয়া হয়েছে এফএলআর(এস) অথবা এফএলআর(এম)। হোম অফিস জানিয়েছে বিদেশীদের জন্য পরিচয়পত্র সংক্রান্ত তথ্য জানা ইমিগ্রেশন সেকশনে একটি টীম কাজ করছে। তাদের কাছে এই পরিচয়পত্র চালুর কারণ, পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব, এর সুযোগ সুবিধা, পরিচয়পত্র ব্যবহার করার নিয়ম নীতি প্রভৃতি জানা যাবে। কেন পরিচয়পত্র এক ব্যাখ্যায় হোম জানিয়েছে, বিদেশীদের পরিচয়পত্রের মাধম্যে বৃটেনে অবৈধ অভিবাসীদের পাকড়াও করা আরো সহজ হবে।

ঠেকানো যাবে অবৈধ অভিবাসীদের বৃটেনের জাতীয় পরিচয়পত্র স্কীমের প্রথম পর্বে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের ডিপেন্ডন্টরা যারা বৃটেনে থাকার জন্য ভিসার মেয়াদ বাড়াতে চান। তিন বছরে পর্যায়ক্রমে সকল ক্যাটাগরির অভিবাসীদের জন্য এই স্কীম বাস্তবায়ন করা হবে। যারা বৃটেনে অভিবাসীদের জন্য এই স্কীম বাস্তবায়ন করা হবে। যারা বৃটেনে ন্যূনতম ছয় মাস কিংবা তারও অধিককাল অবস্থান করবেন তাদের দেয়া হবে পরিচয়পত্র। সবার জন্যই এই পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

অবৈধ অভিবাসীদের কাজ ও অবস্থান মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে হোম অফিস মনে করছে। ওদিকে বৃটেনে কত সংখ্যক ব্যক্তি প্রবেশ করছে এবং কত মানুষ বৃটেনে ছেড়ে যাচ্ছে তার সঠিক হিসাব রাখার জন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ নতুন প্রযুক্তিও শুরু করতে যাচ্ছে। ২৫ নভেম্বর থেকে পরিচয়পত্র ইস্যুর জন্য বৃটেনের ছয়টি এলাকা থেকে আবেদনকারীদের আঙুলের ছাপ এবং ছবি গ্রহণ করা হবে। পরিচয়পত্র স্কীমের আওতায় সমগ্র বৃটেনকে এসব এলাকায় বিভক্ত করা হয়েছে। এসব স্থানগুলো হচ্ছে ক্রয়ডন, শেফিল্ড, লিভারপুল, বার্মিংহাম, কার্ডিফ এবং গ্লাসগো।

যেভাবে কাজ করবে পরিচয়পত্র বৃটিশ হোম অফিস বলেছে, আগেই বলা হয়েছিল যে পরিচয়পত্রের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে অবৈধ কাজ ও অবস্থানকে নিয়ন্ত্রণ করা। পরিচয়পত্র গ্রহণকারীর জাতীয়তা, বৃটেনে স্ট্যাটাস এবং পরিচয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের একটি নিরাপদ ব্যবস্থা। বৃটেনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী সংস্থা এবং চাকুরীদাতাদের বৈধ অভিবাসীদের সনাক্ত করতে সাহায্য করবে এই পরিচয়পত্র। ২০১৫ সালের মধ্যে কমপক্ষে নব্বই ভাগ ননইউরোপীয় অভিবাসীদের হাতে পরিচয়পত্র তুলে দেয়ার কাজ সম্পন্ন হবে বলে হোম অফিস আশা করছে। বৃটিশ হোম সেক্রেটারী জ্যাকি স্মীথ নতুন এই আইডি কার্ডটি উদ্বোধন করে জানান - এই কার্ডটি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিদেশী জনগণ সহজে এবং নিরাপদে তাদের নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে।

যারা অবৈধভাবে বৃটিশ সরকারের সুবিধাগুলো গ্রহণ করছে তাদের দমনে এই আইডি কার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া কর্মদাতা, কলেজ, কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং ইমিগ্রেশন চেক আপে এই কার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে বৃটেনে অবস্থানরত সকল দেশী বিদেশীদের হাতে আইডি কার্ড পৌছে যাবে বলে জানা গেছে। ন্যাশনাল এই স্কীমের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১১মিলিয়ন পাউন্ড। আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ইস্যু করা হবে প্রাথমিকভাবে ৫০হাজার কার্ড।

স্টুডেন্ট এবং ম্যারিজ ভিসায় থাকা ইমিগ্র্যান্টদের ভিসা এক্সটেনশনের সময় আগামীতে অবশ্যই এই আইডি কার্ড দেখাতে হবে। তবে এই কার্ডটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ থেকে আসা বিদেশীদের জন্য ইস্যূ করা হবে না, কারণ তাদের এমনিতেই বৃটেনে স্বাধীনভাবে আসা যাওয়ার অধিকার রয়েছে। কনজারভেটিভ দল ইমিগ্রেন্টদের জন্য বায়োমেট্রিক কার্ড তৈরীর স্কীমকে সমর্থন করলেও বৃটিশ নাগরিকদের জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ড তৈরীর কোন যৌক্তিকতা নেই বলে জানিয়েছে। আইডি কার্ড চালুর ব্যাপারে বিদেশী ছাত্রদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কোরিয়ান এক ছাত্রের মতে, আইডি কার্ড দেখিয়ে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।

তবে শুধু ছাত্রদের জন্য এককভাবে আইডি কার্ড দেখিয়ে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। তবে শুধু ছাত্রদের জন্য এককভাবে আইডি কার্ড তৈরীর বিরোধিতা করে বাংলাদেশী ছাত্রটি। পাকিস্তান থেকে আসা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়া এক ছাত্রের মতে, ছাত্রদের জন্য কলেজ কার্ডই যথেষ্ট, আইডি কার্ডের কোন প্রয়োজন নেই। এই কার্ডটি খারাপ মানুষের হাতে পড়ে আগামীতে ব্ল্যাক মার্কেটে চলে যেতে পারে বলে আশংকা করেছেন পাকিস্তানী ছাত্র। ..........................................ই-মেইল :


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.