আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলাম ও আধুনিক বিশ্বে এর চ্যালেঞ্জসমূহ (শেষ পর্ব)

মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ!

ক্রমবর্ধনশীল সেক্যুলার বিশ্বে কি মুসলিমরা আধুনিক সমাজের সাথে একাত্ম হতে পারবে? পশ্চিমের দেশগুলোতে সেক্যুলার রাজনীতি দাঁড়িয়ে আছে জনগণের সার্বভৌমত্বের উপর যারা প্রতিটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সরকার নির্বাচিত করে। তাত্ত্বিকভাবে, ইসলামে সকল সার্বভৌমত্ব মহান আল্লাহ্‌তাআলার আর তথাকথিত নির্বাচিত সরকার ততদিনই অস্থায়ীভাবে থাকবে যতদিন না দেশে আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ও শরীয়া আইন প্রবর্তন না হচ্ছে। তাত্ত্বিকভাবে যাই-ই থাকুক, যেকোন সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় রেখে এর প্রভূত উন্নতি সাধন করা এবং শক্তিশালী নৈতিক নীতিমালার মাধ্যমে একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করা। সমস্যার শুরু ঠিক তখনই, যখন বিভিন্ন রকমের মত ও পথের উপস্থিতি থাকে। কার ইসলাম, কোন ইসলাম, কখন কোথায় প্রয়োগ করা হবে?এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে সৌদিআরব, সুদান, পাকিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তানে ইসলামকে রাজনৈতিক আদর্শ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, কিন্তু আভ্যন্তরীণ নানা বিরোধ, এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাথে বা অন্যান্যদের সাথে বিরোধ বা মতবিভেদ ঘুচেছে খুব কমই।

এসব দেশগুলোতে সম্পদের পুনর্বন্টন বা সাধারণ জনগণের কাছে অর্থনৈতিক বা সামাজিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছেছে খুব কমই। ইসলাম যে সুবিধাদির কথা বলে তার বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে। যেসব মুসলিম দেশগুলোতে সেক্যুলার ভাবধারার উপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে যেমন তুরষ্ক, মিশর, তাদের জনগণের সাধারণ অবস্থা তূলনামূলকভাবে অল্পকিছু ভাল, যদিও বিশ্বাস এবং কর্মতৎপরতার অবাধ স্বাধীনতাই এখানে চর্চিত হয়। বেশির ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠি যারা বিভিন্ন সেক্যুলার আদর্শের সরকারের অধীনে আছে, তাদের অবস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য। এসব রাষ্ট্র আধুনিক রাজনীতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পশ্চিমা মডেল গ্রহণ করেছে, আর নিজেদেরকে ইসলামী ভাবধারায় উদ্ধুদ্ধ রেখেছে।

কিন্তু সমস্যা রয়ে গেছে যেসব জায়গায় তা হলোঃ ইসলাম কি করে রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ আর রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনকে হ্যান্ডেল করবে? ব্যক্তিপর্যায়ে আর রাষ্ট্রপর্যায়ের মূল্যবোধের সংজ্ঞা কি হবে, আলাদা সংজ্ঞা কিভাবে কারা তৈরী করবে, এজন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাই বা কিরূপ হবে? যেখানে আল্লাহ্‌তাআলা কর্তৃক নাযিলকৃত ও নির্দিষ্ট কিছু আইন-কানুন ইতিমধ্যেই আছে, এর মাঝে কোন কোনটার পক্ষে বা বিপক্ষে বিতর্ক তোলা যাবে বা করা যাবে? এর মাঝে সুস্পষ্টভাবে কারা সত্যিকার অর্থে বিতর্ক করতে চায়, আর কারা শুধু তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকেই প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের মতকেই কেবল প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেটাও চিহ্নিত করতে হবে। রাজনৈতিক ইসলাম নিজেদের ভাষ্য ও বক্তব্যের মাধ্যমেই নানারকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনঃ নিজেদের আদর্শমত চলা, যেসব মূলনীতি গঠন করা হয়েছে নিজেদের ও অন্যান্যদের জন্য সেগুলো মেনে চলা, কোন ইসলামী সরকার বা আন্দোলন যদি ইসলামের বাইরের কোন পদক্ষেপ নেয় তার প্রতিবাদ করা, প্রয়োজনে এড়িয়ে যাওয়া, মুসলিম সমাজের নানা ব্যর্থতার দায়ভার নিজেদের কাঁধে নেয়া বা শেয়ার করা, সকল সমস্যাতেই পশ্চিমাদের বিষেদাগার না করা ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা উল্লেখযোগ্য ইস্যু হলো কিভাবে ইসলামী সরকারগুলো ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীদের সাথে আচরণ করবে বা অন্যান্য দেশে মুসলিম সংখ্যালঘুদের কি করণীয় হবে। বর্তমানে ইসলামের যে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচলিত আছে তাতে মুসলিম ও অমুসলিমদের নিয়ে একটি সাম্য ও বহুজাতিক সমাজের তেমন সুযোগ নেই। এটা কেবল সহনশীলতার প্রশ্ন নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেকোন বিশ্বাসের মানুষদের সমান গণ্য করা এবং সমান নাগরিক অধিকার দেয়া প্রয়োজন।

বিভিন্ন সোশাল ও লিগ্যাল ইস্যুতে যেসব রাজনৈতিক মতপার্থক্য আছে, বা এসব বিষয়ে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন বা মিডিয়ার কি কি ভূমিকা বা প্রভাব থাকবে, সেটা নিয়ে পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে। সামাজিকভাবে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে একজন নাগরিক কি কি আইনি সুবিধা পেতে পারেন তার একটা নতুন ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা তৈরী করতে হবে। একইভাবে যেসব দেশে মুসলিমরা সংখ্যায় কম তারা সেদেশগুলোর সরকারদের সাথে এক ধরণের নতুন সমঝোতায় আসতে পারেন। ভারতীয় মুসলিম (মোট জনসংখ্যার ১২%) এবং ফিলিপিনো মুসলিমগণ (মোট জনসংখ্যার ৮%) তাদের কমিউনিটির ভিতরে যেকোন ধরণের বাড়াবাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে দেখেই এটা বোঝা যায় আলাদা হয়ে যাওয়া কোন ভাল কিছু বয়ে আনতে পারে না।

সামাজিক সুসম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঐক্য এখন আর ভালভাবে কাজ করছে নয়া, সে তুলনায় সাংস্কৃতিক ঐক্য বেশি কার্যকর হচ্ছে যেটা বসনিয়ার সার্বদের বেলায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সারা মধ্য এশিয়া জুড়ে, এবং সে সাথে আফ্রিকায় ও পশ্চিমা নানা দেশে ইসলামের নামে যেসব সন্ত্রাসী কার্জকলাপ চলছে এগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। একই সাথে মুসলিম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীদের বিভিন্ন আইনি চাহিদা সেদেশগুলোর সরকারদের নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় ৫ কোটি চাইনিজ মুসলিমকে কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না, সেদেশের জনসংখ্যার বিচারে যত কমই হোক না কেন। আন্তর্জাতিকভাবে ইসলামী রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিকভাবে, সম্পদের দিক থেকে এবং রাজনৈতিকভাবে নিজেদের উত্তরোত্তরভাবে উন্নতি ঘটাচ্ছে।

উম্মাহ্‌র মাঝে ইসলামী খেলাফতের চেয়ে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু ইসলামী রাষ্ট্র যেমন লিবিয়া, ইরান, ইরাক, ইয়েমন পশ্চিমাদের প্রতি ততটা উদার নয়, আবার সেটা ভারসাম্য পাচ্ছে সৌদিআরব, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন, ব্রুনেইর মতো রাষ্ট্রের তাদের সাথে সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে। তার মানে এই নয় যে পশ্চিমাদের সাথে এদের কোন ফারাক নেই। বরং ডঃ মাহাথির মোহাম্মদ, লী কুয়ান ইয়ে এবং গোহ চোক টং (সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী)-এর মতো নেতারা পশ্চিমাদের বিভিন্ন সমস্যার খুব কঠোরভাবেই সমালোচনা করেছেন। বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা ধ্যান-ধারণার ব্যাপক প্রভাব সত্ত্বেও তাদের এখনো তেমন কোন শক্ত ভিত্তি নাই।

বিংশ শতাব্দীতে সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, পশ্চিমাদেশগুলোতে যেসব আদর্শ লালন-পালন করা হয়েছে, সেগুলো দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের প্রতি তাদের হিপোক্রেটিক আচরণের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি, এমনকি তারা পারেনি ইউরোপীয় নানা জাতির মাঝে বিদ্যমান যুদ্ধগুলো থামাতে। পশ্চিমের অবশ্যই ইসলামকে বুঝতে হবে, অবশ্যই নতুন হুমকি হিসেবে নয়। বরং তাদের সেক্যুলার তত্ত্বের জয়জয়কার অবস্থার পরেও ইসলামে অনেক আইডিয়া এবং নৈতিক মূল্যবোধ আছে যা তারা কাজে লাগাতে পারে। পশ্চিমাদের সারা বিশ্বে মুসলিমদের অভিজ্ঞতাগুলোর ব্যাপকতা সম্বন্ধেও ভাল জানতে হবে। তাদের যে কেবল আভ্যন্তরীণ ইসলামিক সমস্যাই আছে তা নয়, পশ্চিমের মতো মুসলিমরাও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পরিবেশগত, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধজনিত সমস্যায় ভুগছে।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ঔষধ, শিক্ষার মতো মানবিক অভিজ্ঞতাসমূহ এবং সুবিধাদি সকলে মিলেই সমানভাবে শেয়ার করতে হবে। পশ্চিমারা যদি তাদের তৈরী শব্দগুলো যেমনঃ ব্যক্তিস্বাধীনতা, উদারতা, সাংবিধানিক সরকারব্যবস্থা, মানবাধিকার, সমানাধিকার, স্বাধীনতা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মুক্ত বাজার, রাষ্ট্র ও চার্চের আলাদা অবস্থান এসবে বিশ্বাস করে তাহলে তাদের উচিত হবে আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে এগুলো বিশ্বের অন্য প্রান্তের দেশগুলোর সাথে শেয়ার করা, অবশ্যই বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নয়। যেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে তারা ভাল এবং খারাপ রাষ্ট্র সংজ্ঞায়িত করে সেগুলোকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। যে সব বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমাদের সাথে চীনের সম্পর্ক নষ্ট হয় না, একই বৈশিষ্ট্যের কারণে আলজেরিয়ায় আর বসনিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দাবী করা হয়, এটা স্রেফ হিপোক্রেসী ছাড়া আর কিছুই নয়। একদিকে পশ্চিমা বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্র সৌদিআরব, কুয়েত আর পাকিস্তানকে সহযোগিতা করে, অন্যদিকে ইরান, সিরিয়া, ইরাক, সুদানের সাথে খারাপ আচরণ এমনকি আক্রমণ করে বসে, এতে করে তারা মুসলিমদের মাঝে কোন আস্থা তৈরি করতে পারে না।

একদিকে তারা আফগানিস্তানের মুজাহেদিনদের সহায়তা করেছে, অন্যদিকে তারা ফিলিস্তিনিদের দমনে ইসরাইলকে সহায়তা করছে। ইসরাইলদের ক্রমাগত ভূমি অধিগ্রহণ কিছুতেই মেনে নেবার মতো নয়, অথচ ফিলিস্তিনিদের অনুভূতি ও ইচ্ছার প্রতি পশ্চিমাদের আচরণ মোটেও তেমন আন্তরিক নয়। এমনকি মুসলিমদের অ্ত্যধিক আবেগপ্রবণতাও এক্ষেত্রে কোন কাজে আসছে না। পশ্চিমাদের নিজেদের সংস্কৃতি “বিশ্বসংস্কৃতি”র নামে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা আজ প্রতিরোধের মুখে পড়ছে, এটাকে এক নতুন ধরণের আগ্রাসন হিসেবেই দেখছে সবাই। “সাংস্কৃতিক আগ্রাসন”, “মানবাধিকার আগ্রাসন” ইত্যাদি নামে এগুলোকে অভিহিত করা হচ্ছে।

বিশেষ করে ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের তরুণ প্রজন্মদের মাঝে নিজেদের স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের প্রতি নতুন করে জাগরণ ও সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলে এসব পশ্চিমা আগ্রাসনকে ক্ষতিকর হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আজ পশ্চিমাদের যেমন তাদের সুপিরিয়র আদর্শের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, ঠিক তেমনি মুসলিমদেরও বুঝতে হবে যে তাদের ঐতিহ্যেরও পুনর্ব্যাখ্যা হওয়া প্রয়োজন। আলেমগণের গোঁ ধরে বসে থাকলে চলবে না যে ইসলাম সম্পূর্ণ আলাদা জীবন ব্যবস্থা। এটা অন্য সব ব্যবস্থার চেয়ে ভাল। এই ধারণার ফলে পশ্চিমা আদর্শগুলো কেবল আপেক্ষিকভাবেই কম মূল্যায়িত হয় না, সেসাথে মুসলিম সমাজে তাদের কোন গ্রহণযোগ্যতাই থাকে না।

আদর্শের দিক থেকে বিতর্ক সাধারণত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে হয়, যেমন ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব কার হাতে আছে, তাওরাত, বাইবেল নাকি কোরআনের? যারা এর যেকোন একটিকে অগ্রগণ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তখন বাকীগুলোকে বাতিল গণ্য করার সমস্যা তো থাকেই, সেই সাথে যারা এর কোনটিকেই মানে না, তাদেরকে নিয়েও ভাবতে হয়। এটা খুব অযৌক্তিক যে যারা কুরআন মানে না, তাদেরকে কুরআনের কর্তৃত্ব বোঝাতে যাওয়া। তাই আসলে বিতর্কের লেভেল আলাদা করতে হবে, বিতর্ক অবশ্যই হতে হবে যুক্তি ও তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে। এটা দেখে গেছে মানুষ বছরের পর বছর জীবন-যাপনের নানারকম বাস্তবতার কারণে মূল আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে। তার মানে এই নয় যে আদর্শগুলো অর্থহীন হয়ে গেছে, বরং মূলে ফিরে যাবার একটা চাহিদা তৈরী হয়েছে।

এখন প্রয়োজন একটা প্রচন্ড সাহসী ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেয়া যার মাধ্যমে কালের বিবর্তনে ঐতিহাসিকভাবে যেসব ধারা বা আদর্শ সংযোজিত হয়েছে সেখান থেকে সহজ-সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা যার কথাই মূলত কোরআনে বলা আছে। ইসলাম এবং পশ্চিম পরস্পর পরস্পরকে অনেক কিছু দিতে পারে। যদি একজন আরেকজনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে যায় তাহলে কেবল সন্দেহ, অসহিষ্ণুতা আর ভয় ছাড়া আর কিছু জন্মাতে পারে না। যখন ইউরোপে মূর্খতা আর বর্বরতার অন্ধকার যুগ চলছিল, তখন ইসলামই জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা কিছু সংরক্ষণ করেছিল। পরবর্তীতে সেসব জ্ঞান পুনরায় আবিষ্কারের মাধ্যমে আজ ইউরোপ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রদূত হয়েছে।

দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া ধর্মীয় নেতারা সেখানে পরাজিত হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে একই রকম কিছু পথভ্রষ্ট ধর্মীয় নেতার কারণে মুসলিম সমাজে ইজতিহাদ এবং যুক্তিসহকারে মতপার্থক্য বা বিতর্কের যে চর্চা ছিল সেটাকে অবদমন করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ইউরোপ সারা বিশ্ব জুড়ে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আগ্রাসন আর উপনিবেশিকতার চর্চা করে গেছে। এখন জ্ঞানের একটা আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রবাহ যদি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে মুসলিম বিশ্বে দেয়া যায়, তাহলে মুসলিমরা আবারো নতুন করে সঞ্জীবিত হতো, আর আধুনিক বিশ্বে নতুন করে সৃজনশীলতার উজ্জ্বল সাক্ষর রাখতে পারতো। শুধুমাত্র বস্তুবাদের স্থানান্তরই পর্যাপ্ত নয়।

দুই সমাজেই নতুন করে আদর্শের উপর কাজ করতে হবে। ধর্মীয় যেকোন অসহিষ্ণু ইস্যুর মোকাবিলার ক্ষেত্রে এটা মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ্‌তাআলার নাযিলকৃত কোরআনের মতে অমুসলিমদের স্বীকৃতি দেয়াটা একটা ফ্যাক্ট। যদি আমরা একেশ্বৈরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি এবং রাসূল(সাঃ) এর আদর্শ মানি তবে উনি যেভাবে বলেছেন সেভাবেই আমাদের অন্যদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা অবশ্যই আমাদের ঐতিহ্যকে পুনঃনিরীক্ষণ করবো, তবে সেটা স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে, বাতিল বা বর্জন করার মাধ্যমে নয়। আজ পশ্চিমা সমাজে যেসব প্রভাববিস্তারকারী দ্রুতবর্ধনশীল টার্ম আছে, মানে ব্যক্তিস্বাধীনতা, বস্তুবাদ, ভোগবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ –সেসব ক্ষেত্রে ইসলাম অনেক কিছু তাদের দিতে পারে।

মানবসমাজকে চরিত্রায়িত করতে যেসব নৈতিক মাপকাঠির প্রয়োজন হয়, তার সবকিছুর মধ্যম অবস্থানটাই ইসলামের দখলে আছে। ‘ইসলাম এবং পশ্চিম’ নামক ফান্সের এক এসোসিয়েশন প্রসিডেন্ট ফ্রাঙ্কিস ল্যামান্ড বলেন, “ইসলাম পশ্চিমে তিনটি অতি প্রয়োজনীয় মূল্যেবোধের পুনর্জন্ম দিতে পারেঃ বিশ্বের যে অংশে অতিমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার চর্চা হচ্ছে সেখানে কমিউনিটির ধারণা, পবিত্রতার ধারণা এবং সত্যবোধ। আর এটাই হতে পারে পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের অবদান। ” আবারো যে কথা বলা পশ্চিমাদের অবশ্যই বিশ্বের অন্য প্রান্তের প্রতি তাদের আগ্রাসী মনোভাব প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাদের বাকী বিশ্বের প্রতি তাদের মনোভাবের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। মূলত “বাকী বিশ্ব” বলতে যা বুঝায়, এই ধারণাটাই পরিবর্তন করতে হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.