Speak no evil, hear no evil, see no evil.
ভাইরে, চুম্বন কাহার না ভালো লাগে। প্রেয়সীর কামনাময়ী ঠোঁটে চুম্বন দিবার জন্য পুরুষকুল নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। ভাইরে, আমি পুরানা জমানার লোক। সেই আমলে আমাদের কোনো বান্ধবী ছিলো না, ছিলো না কোনো লাস্যময়ী রমণীর সাথে হ্যান ত্যান করার সুযোগ।
কিন্তু যৌবনের বাঁধা তো আর মানে না। তাই বিকল্প হিসাবে নিজের হাতে, আয়নায় এমনকি পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত নায়িকা বা রমনীকূলের ঠোঁটে কতবার যে প্র্যাকটিস করিয়াছি তাহার ইয়ত্তা নাই। ভাবিয়াছি যে জীবনের সত্যিকার চুম্বনের সময় প্রেয়সীকে আমার ঠোঁটের কলাকসরৎ দেখাইয়া তাক লাগাইয়া দিবো। কিন্তু ভাইরে, মানুষ ভাবে এক আর হয় এক!
আমার জীবনে প্রথম চুম্বন আসিলো ঠিকই। কিন্তু তাহা আমার যৌবনকে উল্লসিত করিলো না।
আমার আশা আকাংখা বাস্তবিত হইলো না। প্রথম চুম্বন খাইতে যাইয়া আমার জীবনে যাহা ঘটিলো তাহা চিন্তা করিলে এখনও ঘুমের মধ্যে চিৎকার করিয়া শিউরাইয়া উঠি!
তখন আমি বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমিতে (BMA) প্রথম টার্মের ক্যাডেট! BMA সম্বন্ধে যাহারা শুনিয়াছেন তাহারা জানেন উহা আসলে কি জিনিষ--দোজখ এর মত মারাত্মক, উহার সিনিয়াররা হালাকু খানের চেয়েও অধিক পাষান! BMA তে ক্যাডেটদের আবার GC (Gentleman Cadet) বলে।
যাহা হউক প্রথম টার্মে শাস্তি খাইতে খাইতে আর হুঁস নাই। কারনে অকারনে শাস্তি, মিনিটে মিনিটে শাস্তি, সকাল সন্ধ্যায় শাস্তি। এরই মধ্যে একদিন সকালে আমদের কে বলা হইলো অডিটিরিয়ামে বাংলা সিনেমা দেখিতে যাইতে হইবে।
আমি তো আনন্দে আটখানা। অডিটরিয়ামে রগড় বাংলা সিনেমা দেখিবার পাশাপাশি খানিক ঘুমানোও যাইবে!
আমরা প্রথম টার্মের GC রা একদম সামনের সারিতে বসিলাম এবং পিছনের দিকে বসিলো কঠিন হইতে কঠিনতর সিনিয়ার গন! বাংলা সিনেমা শুরু হইলো! ভাইরে কি বলিবো! নাচে গানে ভরপুর সিনেমার প্রথম মিনিটেই ১৪ খুন! সে এক মারাত্মক জিঘাংসা টাইপ চলচ্চিত্র। উহা ছিলো আংশিক রংগীন , শুধু গানের অংশ খানি রংগীন বাকী সাদেকালো। আমি মারামারি দেখিতে দেখিতে ঘুমের কোলে হারাইয়া গেলাম!
হঠাৎ এক চিৎকারে ঘুম ভাংগিয়া গেলো! শুনিলাম সিনেমার শব্দ ছাপাইয়া পিছন হইতে এক সিনিয়ার আমার নাম ধরিয়া ডাকিতেছে! আমি কিছু বুঝিবার আগেই হুংকার আরো বাড়িয়া গেলো! যে কথাবার্তা হইলো তাহা নিম্নরুপ:
সিনিয়ার - GC ডিসকো বান্দর! (আমার আসল নাম এর বদলে নিকটাই দিলাম!)
আমি - Yes Sir!!!!
সিনিয়ার - Are you damn sleeping? (তুমি কি ঘুমাইতেছো?)
আমি - (দাঁড়াইয়া) No Sir, No Sir! I am watching movie Sir!
(সে মুহূর্তে পর্দায় এক ঝাঁঝালো নাচ চলিতেছে, রংগীন নাচ! বিশাল দেহী নায়িকা হাজার খানেক সখী পরিবেস্টিত হইয়া আম বাগানে কলা কসরৎ করিতেছে!)
সিনিয়র- (চিৎকার করিয়া) Have you ever kissed a woman? (তুমি কি কোনো রমনীকে চুম্বন খাইয়াছ?)
আমি- (অতীব বোকার মতো বলিয়া উঠিলাম) No Sir, No Sir! But I have some practice Sir! (না স্যার, কিন্তু কিছুকাল প্র্যাকটিস করিয়াছি বটে!)
(বলিবার পরই বুঝিলাম কি মারাত্মক ভুলই না করিলাম!)
সিনিয়ার - Damn it, you practiced kissing? Ok, let us see how have you done! (তুমি চুম্বন প্র্যাকটিস করিয়াছো? দেখি কি শিখিয়াছো!)
আমি - (ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া) স্যার, স্যার!
সিনিয়ার - (অত্যন্ত চিৎকার করিয়া) Ok, go in front of the screen. NOW!
আমি মনে মনে প্রমাদ গুনিলাম। ততক্ষনে সিনেমার নাচ আরো বেগ পাইয়াছে।
এমন ভাবে লম্ফজম্ফ চলিতেছে যেনো এখনই পর্দা হইতে উহারা বাহির হইয়া যাইবে! যাহা হউক, আদেশমতো আমি দৌঁড়াইয়া পর্দার সামনে গেলাম।
ভাইরে, প্রজেক্টরের আলোতে তখন আমার চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়াছে! আমি চোখ বাঁচাইবার জন্য পর্দার দিকে মুখ করিয়া তাকাইলাম। বিশালকায় পর্দার সামনে ক্ষুদ্র এক কোনায় আমার জায়গা হইলো।
ততক্ষনে দর্শক সারি হইতে চিৎকার করিয়া আদেশ আসিলো:
সিনিয়ার - GC Disco Bandor, Kiss the heroine on her lips! (ডিসকো বান্দর, নায়িকার ঠোঁটে চুম্বন দাও)!
আমি তখন আসলেই ভ্যাবাচ্যাকা খাইলাম! ইহা কিভাবে সম্ভব? নিজের মান সম্মান এর কথা পরে আগে জান লইয়াই টানাটানি। আংশিক রংগীন নাচে নায়িকার কড়া লাল রংগের লিপিস্টিক মাখানো ঠোঁট।
তাহার সাইজ কমপক্ষে ১০ ফিট লম্বা আর ৫ ফিট চওড়া। এই বড় ঠোঁটে আমি ক্যানো, ২০ জন ডিসকো বান্দর আসিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িলেও নায়িকা কিছুই টের পাইবে বলিয়া মনে হইলো না। তাহা ছাড়া সবচাইতে বড় সমস্যা দেখা দিলো এই যে, নায়িকা উদ্দাম নৃত্য নাচিতেছে। তাহার ঠোঁটখানি পুরা পর্দা জুড়িয়া লাফালাফি করিতেছে, একটুও স্হির থাকিতেছে না। জীবন কে বড়ই সংকট ময় মনে হইতে লাগিলো।
এর মধ্যে পিছন হইতে শ'য়ে শ'য়ে সিনিয়রগন আদিম উল্লাসে চিৎকার করিতেছে KISS, KISS, GC Disco Bandor Kiss her damn Lips!
আমার অস্হা তখন তথৈবচ! যাহা হউক জীবন পণ করিলাম চুম্বন খাইয়াই ছাড়িব। পর্দার সামনে নায়িকার ঠোঁট লক্ষ্য করিয়া দৌঁড় শুরু করিলাম।
কিন্তু ভাইরে ব্যাপার খানি যে অতো সহজ নহে তাহা একটু পরেই টের পাইলাম। নাচিতে নাচিতে নায়িকার ঠোঁট একবার এদিকে যায় আরেকবার ওদিকে যায়। আর আমি, বেচারা ডিসকো বান্দর পর্দার সামনে নায়িকার ঠোঁট লক্ষ্য করিয়া একবার এদিক একবার ওদিক হাঁপাইতে হাঁপাইতে দৌঁড়াইতে থাকিলাম।
কিছুতেই লক্ষ্য ভেদ হয় না। ইতিমধ্যে উল্লোসিত সিনিয়ার গন আরো উত্তেজিত হইয়া চিৎকার করিতেছে KISS, KISS, GC Disco Bandor Kiss! কিন্তু যতোই তাহারা চিল্লায় আমার KISS ততই Miss হইয়া যায়। আমার জীবন যৌবন তখন ওস্ঠাগত।
হঠাৎ নায়িকা লম্ফঝম্ফ থামাইয়া স্হির হইলেন। আমিও এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলাম।
নিশ্বাঃস বন্ধ করিয়া দাঁড়াইলাম। এইবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ--যাহার জন্য জাতি এতোকাল অপেক্ষা করিতেছিলো। পণ করিলাম। স্হির হইলাম। এবং নায়িকার ঠোঁট লক্ষ্য করিয়া দিলাম এক লাফ।
সিনেমার ময়লা পর্দা হাত দিয়া পাকড়াইয়া ধরিলাম এবং ১০ ফিট লম্বা লাল টকটকা ঠোঁটের ঠিক কোনাকুনি আমার ঠোঁট খানি ডুবাইয়া দিলাম।
ভাইরে, পুরা হল তখন পিন পতন নিস্তব্ধ। ১ সেকেন্ড, ২ সেকেন্ড, ১০ সেকেন্ড! হঠাৎ গগণ বিদারী আওয়াজে পুরা হল ফাটিয়া পড়িলো। আমি বুঝিলাম না। পর্দা হইতে কিন্চিৎ সরিয়া আসিলাম।
যাহা দেখলাম তাহাতে মনে হইলো তখোনই আমি অক্কা পাইবে।
চুম্বন দিবার ঠিক আগ মুহুর্তে নায়িকা সরিয়া গিয়াছেন। তাহার ঠোঁটের বদলে ঐ জায়গায় তখন শোভা পাইতেছে ১০ মণ ওজনের এক এক্সট্রা নর্তকীর বিশালাকায় পুচ্ছদেশ!
চরম চিৎকার, শীৎকার ও শিষধ্বনীর মধ্যে মাথা হেঁট করিয়া আমার আসনে ফিরিয়া আসিলাম। চুম্বন করিবার স্বপ্ন আমার চিরজীবনের জন্য ধুলায় মিটাইয়া গেলো।
ইহার প্রায় ৯ বৎসর পরের কথা।
বিবাহ করিলাম। স্ত্রী আমাকে একদিন জিগ্গাসা করিলেন "তুমি কি আগে কোনো রমনীকে চুম্বন খাইয়াছো?" আমি মাথা নীঁচু করিয়া কাঁচুমাঁচু হইয়া অস্ফুট কন্ঠে উত্তর করিলাম "না"। এই সরল মিথ্যা কথাটা বলিতেই হইলো। কারন ভাবিলাম পৃথিবীর কোনো নারী একজন নর্তকীর পুচ্ছেদেশ চুম্বন করা পুরুষের সাথে বসবাস করিতে অনিচ্ছা পোষন করিতেই পারে।
চুম্বন সম্বন্ধে যে ভয় আমার মধ্যে সেইদিন প্রথিত হইয়াছিলো তাহা এখোনো আছে।
লক্ষী স্ত্রীর লাল লিপস্টিক ওয়ালা ঠোঁট দেখিয়া একবার আগাইয়াই লাল ট্রাফিক সিগনাল দেখার মতো থমকাইয়া যাই।
মনে বড় শংকা হইতে থাকে।
- আপনাদের একান্ত ডিসকো বান্দর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।