আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রম।

!!
কমিউনিটি সেন্টারগুলো আসলেই খুব কাজের। যদিও একগাদা টাকা নেয় তবু অনুষ্টান সুন্দর করে অ্যারেন্জ করাতে তাদের তুলনা হয় না। বলতে গেলে হোস্টের কোনও ঝামেলায় পোহাতে হয় না। "অতিথি"র বিশাল হলরুমটা ঘুরে দেখতে দেখতে ভাবতে লাগল ধ্রুব। এই সেন্টারটা নতুন হয়েছে।

পিছনটা বেশ খোলামেলা। গাছগাছড়ায় ভর্তি। কেমন যেন গ্রামীন পরিবেশ। ওদিকটার বারান্দাটা বেশ নির্জন। বিয়ের হৈচৈ নাই এখানটায়।

অনেকক্ষন চুপচাপ দাড়ানো ধ্রুব। পিছন থেকে কে যেন রাহাত ভাই করে ডাকছে একঠানা। কে কাকে খুজছে দেখার জন্য পিছন ফিরে থাকাল ধ্রুব। হ্যাংলামত একটা মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে অবাক হল সে। "আপনি কি এখানে কাউকে খুজছেন? এখানে তো আর কেউ নাই!" লজ্জায় লাল হয়ে গেল মেয়েটা।

"সরি ভাইয়া আমি আসলে আমার কাজিন... মানে রাহাত ভাই মনে করেছিলাম আপনাকে। " মুচকী হাসল ধ্রুব। "ওঃ আচ্ছা। তা লজ্জা পাওয়ার কি হল। আপনি তো আর সামনে থেকে আমাকে দেখেন নি।

আমি ধ্রুব। আপনি?" "আমি বর্ষা। " "নাইচ নেম। তা কোন পক্ষ?" "জ্বী মেয়ে আমার বান্ধবী। " 'হুম।

আমি বরের খালাতো ভাই। " "আচ্ছা ভাইয়া আমি এখন যাই তাহলে। "বলেই দ্রুত চলে গেল বর্ষা। লজ্জায় মেয়েটা এতক্ষন মাথা তুলে দাড়ায়নি ঠিকমত। হাসল ধ্রুব।

মফস্বলের মেয়েরা এখন আর এতটা লাজুক হয় না। ছেলেদের সাথে বসে আড্ডা তো ডালভাত একসাথে হাত ধরে চলা রাস্থার পাশে বসে প্রেম করা সবই পারে তারা। আচ্ছা এখনকার ছেলেরাও তো অন্যরকম! তাই না? একসপ্তাহ পর.... শীতটা এবার আগেভাগেই এসে পড়েছে। কিছু গরম কাপড় কিনার জন্য মার্কেটের সামনে যেতেই ধ্রুব বর্ষাকে দেখতে পেল। বের হচ্ছে সে মাত্র।

"আরে আপনি? কেমন আছেন? চিনছেন?" "চিনব না কেন? আমি কাউকে সহজে ভুলি না। " "তাই নাকি? আমাকে তো ভুল করেই চিনলেন। " হাসল বর্ষা। "তা আপনি এখানে কি জন্য?" "এই তো সোয়েটার কিনতে আসলাম। " "আপনার জন্য?" "হুম।

" "আপনি?" "আমিও কিছু কিনব। " "এই মার্কেটে তো কিছুই নাই। আমি দেখে আসলাম। এর চেয়ে ভালো চলুন অর্কিডে যাই। আচ্ছা একটা কথা বলি?" "হু,বলুন।

" "আপনি সোয়েটার না কিনে শাল কিনুন না। মানাবে বেশ। " "সত্যি বলছেন? বুড়ো বুড়ো লাগবে না তো আবার?" হাসল বর্ষা। "না আপনাকে মানাবে বেশ। " ৫দিন পর........ রাত সাড়ে এগারোটায় আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসা মানে হল কোনো ফালতু ছেলের কাজ।

রাতভর বাবার টাকা নষ্ট তো করবেই সাথে অন্যদেরও জ্বালাবে। বিরবির করতে লাগল বর্ষা। একঠানা ফোনটা বাজতে থাকাই শেষপর্যন্ত ধরল সে। যা ভেবেছিল তাই। "আপনি কি বর্ষা?" "আপনি কে?" "আমি ধ্রুব।

" "কোন ধ্রুব?" "কি আজব! আমি আপনার পছন্দের শাল গায়ে বসে আছি আর আপনি আমাকে চিনতেই পারছেন না। " "ওঃ আচ্ছা আচ্ছা! চিনেছি। তা আপনি আমার নাম্বার পেলেন কিভাবে?" "আপনার বান্ধবী মানে আমার ভাবীর কাছ থেকে। " "ও। তা কি জন্য ফোন করলেন?" "না এমনি।

আপনাকে বিরক্ত করছি না তো?" "না তা নয়। বলুন কি বলবেন। " এরপর চলতে লাগল কথা। যা যেভাবে হয় আরকী। কয়েকদিন পর বর্ষার নাম্বার সারাদিন বন্ধ।

বেশ অস্থির লাগছে ধ্রুবর। ঘটনাটা কি। ওর নাম্বার তো কখনই বন্ধ থাকে না। রাতে ফোন খুলতেই ঝাড়ি লাগাল সে। "কি ব্যাপার তোমার? সারাদিন কোথায় ছিলে? জান আমি কতবার ফোন দিয়েছি?" "কেন করেছেন?" "কেন মানে? মন চেয়েছে তাই করেছি।

" "ধ্রুব ভাই আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন। এটা কিন্তু ঠিক না। " "কেন ঠিক না? দেখুন আমি অন্যধরনের। এসব আমার ভাল লাগে না। যদি আমি বুঝি কেউ আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে তাহলে আমি দুরে সরে যাই।

আপনি একজন চমৎকার মানুষ। খুব খুব ফানি। আমি চাচ্ছি না আপনার সাথে কথা বলাটা বন্ধ করে দিতে। " "ওরেঃ বাবা! তাই নাকি! তা এই পর্যন্ত কতজনের কাছ থেকে সরেছ?" হাসতে লাগল ধ্রুব। "কয়েকজন।

" বলেই হেসে ফেলল বর্ষা। ফোন রাখতেই হেসে ফেলল ধ্রুব। মেয়েরা আসলেই আজব চিজ। দুনিয়ার সব মেয়েই মনে করে ছেলেরা শুধু প্রেম করার জন্যই তাদের পিছু ছুটে। যত্তোসব! মাসখানেক পর ধ্রুব পরিবর্তনটা বুঝতে পারল।

এই মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে। সামথিং ইজ ভেরি ভেরি স্পেশাল। প্রেমে পড়ার মতই। কি সেটা? ওর সরলতা? সব শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়ল বর্ষা। "ধ্রুব ভাই আপনিও? আমি আপনাকে অন্যরকম ভাবতাম।

কিন্তু আপনি যদি এমনি ভাবেন তবে আমি আপনার সাথে কথা বলা বন্ধ করতে বাধ্য হব। " হঠাৎ হো হো করে হাসতে লাগল ধ্রুব। বলল "তুমি আসলেই একটা গাধা। আমি তো মজা করেছিলাম। মজা করে তো তোমাকে প্রতিদিনই বউ ডাকি।

ডাকি না?" "আপনি এত শয়তান! এসব ফান আর করবেন না। " এগারাটো বাজে। নীলা একঠানা ফোন করেই যাচ্ছে। বর্ষা জানে এই মেয়েটার অনেক সমস্যা। সারাদিন বকবক করবে।

এই ফোন রিসিভ করলে সে কখন ছাড়ে কে জানে। একটু পর আবার ধ্রুব ভাই ফোন দিবে। শেষ পর্যন্ত ফোন ধরল সে। "কি রে কি ব্যাপার?" "তোর ব্যাপার স্যাপার কি তা বল। রাতে ফোন বিজি থাকে কেন? আমি তিনদিন ধরে দেখলাম মাঝরাত পর্যন্ত তোর মোবাইল বিজি।

কার সাথে প্রেম করিস?" বলেই হাসতে লাগল নীলা। "আরে গাধা প্রেম করব কেন?" "তাহলে কি করিস, আদর খাস?" "একদম নোংরামি করবি না। আমি আমার এক বড়ভাই এর সাথে কথা বলি। " "ভাল! খুবই ভাল। বড় ভাইদের সাথেই প্রেম করার মজা আলাদা।

ঐদিন তো দেখলাম ম্যাগপাই এ একজনের সাথে নুডলস খাচ্ছিস। এই ছেলেটাই নাকি?" স্তব্ধ হয়ে গেল বর্ষা। কোনমতে বলতে পারল "তুই দেখলি কিভাবে?" হাসল নীলা। "শুন ছেলেটা অনেক সুইট। " "আরে যাঃ আমি ধ্রুব ভাই এর সাথে প্রেম করি না।

ঐদিন দেখা হয়ে গেল ম্যাগপাই এর সামনে তাই ধরে নিয়ে গেলেন। " "আরে ছেলেটার নামও তো হেব্বী স্মার্ট। তুই প্রেম না করলে আমাকে দিয়ে দে। "হিহিহি। "শুন নীলা আমি প্রেম করছি না।

তুই তো জানিসই আমি এসব পছন্দ করি না। আর ধ্রুব ভাই হল মজার মানুষ। সবসময় দুষ্টুমি,বাদড়ামি করে। কোনও কিছই সিরিয়াসলি বলেও না করেও না। তাই আমার ভাল লাগে তার সাথে কথা বলতে।

ব্যাস এইটুকুই। " চারমাস পর... "কি ব্যাপার বর্ষা দুইদিন ধরে তোমার ফোন বন্ধ কেন?" "আমাকে দেখতে আসছিল। বাসায় অনেক গেস্ট তাই মোবাইল বন্ধ। " "দেখতে আসছিল মানে?" "আমাকে বিয়ে দিচ্ছে। সব ঠিক হয়ে গেছে।

" "বল কি? আমি তাহলে কি করব?" "আপনি কি করবেন মানে?" ধরা গলায় ধ্রুব বলল "বর্ষা তুমি কি আসলেই বুঝ না আমি তোমাকে ভালোবাসি?" "আপনি কাদছেন নাকি ধ্রুব ভাই? মজা তো। আচ্ছা কাদেন তো দেখি। আপনি কেমন কাদতে পারেন দেখি। " বলে হাসতে লাগল সে। "ধ্রুব ভাই একটা কথা শুনুন।

সবসময় ফান করবেন না। সবকিছু নিয়ে মজা করতে নাই। আচ্ছা আরেকটা কথা আপনি কিন্তু আমার বিয়েতে একটা সুন্দর ছবি গিফট করবেন। পেন্সিল স্কেচটা আপনি খুব ভাল পারেন। ঠিক আছে?" ফোনটা রেখে দিল ধ্রুব।

"দোস্ত তুই সামনাসামনি বসে সব বল ওকে। " "আর বলে কি হবে? সে তো আমাকে বিশ্বাষই করে না। আর আসলে দোষটা আমারই। সবসময় ওর সাথে ফান করেছি। প্রতিরাতে দশবার ফাজলামো করে কিস করেছি বউ বানিয়েছি।

সকালেই বলেছি সব মজা করে করেছি। এখন কেন সে আমায় বিশ্বাষ করবে বল?" নড়েচড়ে বসল আদনান। "তাহলে আমি বলি?" "না। কোনো লাভ নাই। বাদ দে।

" আজ বর্ষার বিয়ে। ওর নামের সাথে মিল রেখেই দুপুর থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়তে লাগল। গেস্টরা সব ভিজে একাকার। কাগজে সুন্দর করে মোড়ানো ছবিটা খুলে অবাক হল বর্ষা। মানুষ এত সুন্দর আকে! কিন্তু ছবিটার মানে কি? অন্ধকারে একটা ছেলে দাড়ানো।

পিছনে খাদ। সামনে অনেকগুলো রাস্থা। ধ্রুব ভাইটা আসলেই আজব। কি যে একেছে আল্লাহ জানে। মুচকী হাসল বর্ষা।

ছাদে একা ধ্রুব। বৃষ্টির অনেক গুন। তবে সবচেয়ে বড় গুন হল চোখের জলকে নিজের মাঝে বিলীন করে দিতে পারে বৃষ্টি।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।