আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে দলের একটি অংশ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এবারের কাউন্সিলের পর গুরুত্বপূর্ণ পদ লাভ করতেই তারা এ চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এখনও পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া এবং মাথার ওপর ডজনখানেক মামলা ঝুলে থাকায় তারেক রহমানকে এখনই দেশে এনে বিপদের মুখে ফেলতে চান না তাঁর মা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
জানা যায়, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।
আর এ জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বিএনপির এমন নেতারা কাউন্সিলের আগেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। জানা যায়, তাদের কেউ কেউ লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানকে পরামর্শ দিয়েছেন আন্দোলন ব্যর্থ ও নির্বাচন বর্জনের পর দলের এখন এমন অবস্থা যে আপনি দেশে না ফিরলে দল টিকিয়ে রাখাই কষ্ট হবে। কারণ চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চারপাশে যাঁরা আছেন তাঁরা তাঁকে মিসগাইড করছেন। তাই এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার কাছে একজন বিশ্বস্ত নেতার বড় বেশি প্রয়োজন। এ সময় তারেক রহমান তাঁর মাথার উপর ঝুলে থাকা মামলার কী হবেÑ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক মামলা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা ভাল।
তার পরও মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে নিলে এই ইস্যুতে আন্দোলন চাঙ্গা হবে এবং বিএনপি তাতে লাভবান হবে।
সূত্র মতে, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনরা এখন তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যত চেষ্টাই করুক বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাতে কিছুতেই সায় দিচ্ছেন না। খালেদা জিয়ার যুক্তি হচ্ছে বিএনপিকে বেকায়দায় রাখতে বর্তমান সরকার একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই তারেক রহমান এখন দেশে ফিরে এলে তাঁকে মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে নিক্ষেপের পাশাপাশি নানান অপপ্রচার চালিয়ে তাঁর ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করা হবে। আর এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গেলে দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে আরও নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
তার চেয়ে লন্ডনে চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আরামেই থাকতে পারছে তারেক রহমান। তাই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে খালেদা জিয়া নারাজ।
২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। তখনও দলের একটি অংশ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে কাউন্সিল করতে খালেদা জিয়ার কাছে প্রস্তাব দেন। তখন খালেদা জিয়া এ প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে কিছুই বলেননি।
তবে দলের কিছু নেতা মনে করেছিলেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলে তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রে আর কোন সমস্যা থাকবে না। তাই তারা তখন কাউন্সিল পিছিয়ে দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর দলের নাজুক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আবার জাতীয় কাউন্সিলের উদ্যোগ নেয় বিএনপি হাইকমান্ড। এ জন্য সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি আমেজ সৃষ্টি করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার কৌশল নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ থাকায় তাঁরা এখন আন্দোলনে শরিক হতে নারাজ।
এ অবস্থা বুঝতে পেরে উপজেলা নির্বাচনের পর জাতীয় কাউন্সিল করতে আবারও নির্বাচন কমিশন থেকে সময় নেয় দলটি। উপজেলা নির্বাচনের পর জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার খবর শুনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এখন নিজ নিজ এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নানামুখী কৌশল নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। নিজ এলাকায় ভাল ফল করে দলীয় হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের কৌশল নিয়েছেন তাঁরা। কোন্ কোন্ নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না তাও দলের ওপর মহল থেকে নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও যুগ্মমহাসচিবরা এ ব্যাপারে নজরদারি রেখে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অবহিত করছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, এবারের জাতীয় কাউন্সিলের পর পদ-পদবী দেয়ার ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে থেকেই নেতাদের অতীত কর্মকা- নিয়ে ফাইলওয়ার্ক করছেন। বিগত দিনে বিএনপির যে সকল কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনে ঝুঁকি নেননি উপরন্তু পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়িয়েছেন এবার জাতীয় কাউন্সিলের পর তাদের পদ-পদবীর ব্যাপারে দলীয় হাইকমান্ড সতর্ক থাকবে। সেই সঙ্গে যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন এবং যাঁরা জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন তাদের পুরস্কৃত করার বিষয়টিও দলের উচ্চপর্যায়ের বিবেচনাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যেই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর দলকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
এরই অংশ হিসেবে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। এ কাউন্সিলের আগে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ২০টি জেলার কমিটি গঠিত হয়। এ পরিস্থিতিতে বাকি ৫৫টি জেলা থেকে জাতীয় কাউন্সিলের জন্য কাউন্সিলর ঠিক করে দেয়া হয় কেন্দ্র থেকেই। এবার জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়টি সামনে রেখে দলের সিনিয়র নেতাদের দিয়ে ৫৬টি টিম করে বিভিন্ন জেলা সফর করে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ থাকার বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর দলীয় হাইকমান্ড ৫৬ টিমের জেলা সফর কর্মসূচী স্থগিত করে।
তাই এবারও জাতীয় কাউন্সিলের আগে জেলা-উপজেলা কমিটিগুলো হচ্ছে না এটা স্পষ্ট। তাই এবারও কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন জেলার কাউন্সিলর মনোনীত করেই জাতীয় কাউন্সিল করা হবে।
বিএনপির এবারের জাতীয় কাউন্সিলে একজন মহাসচিব নির্বাচন করা হবে। তাই দলের তারেকপন্থী নেতারা এ পদবী পেতে তারেক রহমানকে রেখে জাতীয় কাউন্সিল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ৩ মার্চ যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতারের আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংস্কারের নামে তাকে দল থেকে মাইনাস করার চেষ্টার অপরাধে তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে নতুন মহাসচিব নিযোগ করেন।
এর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার পর ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব রেখে দলের ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই বছর ৬ এপ্রিল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া। এর পর থেকে তিনি ভালভাবেই দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে মির্জা ফখরুল পালিয়ে যান।
এ বিষয়টিকে দলের নেতাকর্মীরা ভাল চোখে দেখেননি। তাই এবারের জাতীয় কাউন্সিলে তাঁকে ভারমুক্ত মহাসচিব করা হবে নাকি অন্য কাউকে এ পদে আনা হবে, তা নিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে দলের তারেক রহমানপন্থী নেতারা মহাসচিব পদে তাদের নিজেদের পছন্দের লোকদের চাচ্ছেন।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে প্রতি ৩ বছর পর পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সে অনুসারে ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর ৩ বছর সময় শেষ হয়ে গেছে। তবে বিএনপি এ যাবত কয়েকবার নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। উপজেলা নির্বাচন সামনে থাকায় আরও একবার সময় বাড়িয়ে উপজেলা নির্বাচনের পর দলটি জাতীয় কাউন্সিল করতে চাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে ১৯৯৩ সালের ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলানগরে খোলা জায়গায় তাঁবু টাঙিয়ে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করা হয়।
২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমান যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন।
প্রায় দেড় বছর কারাবরণের পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এর পর ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর মা খালেদা জিয়া জেল থেকে মুক্তি পেলেও তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি তারেক রহমানের। কারণ সে দিনই চিকিৎসার জন্য লন্ডন চলে যান তারেক রহমান। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর থেকেই বিএনপিতে তারেক রহমানের অনুপস্থিতি জোরেশোরে আলোচনায় আসে। এরই প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বরের জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমানকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।
এর পর দলের কিছু নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো করতে থাকেন। দলের পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে ইদানীং তাঁরা আবার তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের দলের জাতীয় কাউন্সিল করতে হবে। কারণ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে ৩ বছরের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও ৪ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
আর দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অসুস্থ। তিনি লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাই তিনি যখন সুস্থ হবেন তখনই দেশে ফিরে আসবেন। দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে আসবেন না পরে আসবেন তা নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক সুস্থতার ওপর। সুত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।