আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভটিজিংয়ের সেকাল, একাল ও আমাদের মিডিয়া

Woods are lovely dark and deep And I have a promise to keep

বর্তমানে এদেশে আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে ইভটিজিং। অতীতে ইভটিজিং থাকলেও এতোটা আলোচিত হয়নি এখনকার মত। তার মানে কি ইভটিজিং এদেশে নতুন কোন সামাজিক বাজে উপসর্গ। কিংবা মোবাইলে উক্তত্য করার মতো কোন আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পশুত্ব। আদপে কিন্তু তা নয়।

ইভটিজিং এদেশে অনেক আগে থেকেই ছিল। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এখনকার চাইতে অনেক জোরালো ভাবেই ছিল। আমদের অতীত প্রজন্মের মানুষেরা কি বলতে পারবেন তারা ইভটিজিং দেখেন নি বা এ বিষয়টার সাথে পরিচিত নন? অতীত প্রেক্ষাপটে আমাদের সমাজে ইভটিজিং প্রচলিত ছিল প্রবীনেরা অবশ্যই সেটি স্বীকার করবেন। আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্যের কথা এখনো আমার মনে পড়ে যেগুলো তৈরী হয়েছিল মূলত সত্তর কিংবা আশির দশকে। সে সব চলচ্চিত্রে দেখা যেত নায়করা প্রেম নিবেদনের কৌশল হিসেবে গানে গানে বা অন্যভাবে ইভটিজিং এ নিয়জিত হচ্ছেন।

অর্থাৎ নায়িকাকে পটাতে হলে তার শুরুটা হবে ইভটিজিং জাতীয় বিষয় দিয়ে। এ বিষয়টা নিশ্চয় সমাজ থেকেই আরোহিত। বা সংখ্যা গরিষ্ঠ পুরুষ দর্শকের মানস রুচির পরিপুরক ছিল চলচ্চিত্রে স্থান পাওয়া এ সকল দৃশ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ তো গেল চলচ্চিত্র বা সিনেমার কথা এবার আসা যাক বাস্তবে। আমি নিজে আশির দশকে মোটামুটি শিশু বা কিশোর থাকা অবস্থায় স্ব-চক্ষে কিছু ইভটিজিং এর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি।

ছোট ছিলাম বলে বড় বোনদের সাথে বিভিন্ন স্থানে যেতে হত আমাকে। বড় বোনদের সাথে যাতায়াতের সুবাদে দেখেছি রাস্তাঘাটে কিভাবে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হত। অশ্লীল মন্তব্য বা গান ইত্যাদি তো ছিল সাধারন বা নৈমত্তিক ব্যাপার। স্কুলে যাওয়ার সময়ও স্কুলে পড়–য়া আমদের বড় বোনদের প্রতি অনেক ইভটিজিং এর ঘটনা আমরা অবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করেছি। এখন একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে এতদিন ইভটিজিং নিয়ে এতোটা হইচই কেন হয়নি? অতি স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা।

এর নানাবিধ উত্তর হতে পারে। তবে আমার কাছে যেটি প্রধান বলে মনে হয় সেটি হল মিডিয়ার (প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স) প্রসার কম থাকা। আরেকটি মূল এবং প্রধান বিষয় ছিল সামাজিক লোক লজ্জার ভয়ে ইভটিজিং এর শিকার বা তাদের পরিবারগুলোর বিষয়টিকে প্রকাশ না করা। কালের বিবর্তনে আমাদের সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মানুষের চিন্তাগত পরিবর্তন তো বটেই, সে সাথে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনও মানুষের চিন্তা ভাবনাকে পরিবর্তিত করেছে অনেকখানি।

এখন যে কোন প্রান্তের যে কোন ঘটনা সারা দেশে জানাজানি হচ্ছে অতিদ্রুত মিডিয়ার কল্যানে। সে সকল ঘটনার ফলাফলও মানুষের জানা হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার ব্যক্তিগত সমস্যার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্যাগুলোর মিল খুঁজে নিয়ে করনীয় স্থির করতে পারছে। ফলে স্ব-সমস্যার সমাধানে মানুষ হয়ে উঠছে আরো সক্রিয় এবং প্রতিবাদ মুখর। আর এই প্রতিবাদের ফলে ইভটিজিং বা এ জাতীয় ঘটনাগুলো উঠে আসছে সবার সামনে।

ফলে জনমত ঘটিত হচ্ছে সহজেই এসব বিষয়ে। আলোচনা হচ্ছে বা সমালোচনা হচ্ছে। সুতরাং বলতে হবে বর্তমানে ইভটিজিং বা এসকল নির্যাতনের বিপক্ষে জনমত গঠনের বিষয়ে মিডিয়ার একটি বিরাট ভ’মিকা রয়েছে। জনসমক্ষে তুলে এনে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসার কাজটি করছে মিডিয়াই সে প্রিন্ট বা ইলেকটনিক্স যে ধারাই হোক। মিডিয়ার ভ’মিকা নিয়ে নানা বিধ প্রশ্ন থাকলেও মিডিয়ার এজাতীয় ইতিবাচক ভ’মিকার প্রয়োজনীতা অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে।

তবে এ সকল ক্ষেত্রে মিডিয়ার কিছু দায়বদ্ধতাও আছে যেমন, নির্যাতিতার সামাজিক সম্মান রক্ষা, তাকে শ্লীলভাবে উপস্থাপন করা ইত্যাদি। এগুলো মাথায় রেখে চলতে পারলে ইভটিজিং বা নির্যাতন বন্ধে মিডিয়া আরো বেশি পরিপূর্ণতা পাবে নিঃসন্দেহে। অতীতে এদেশে ভয়াবহ নারী নির্যাতন বা ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটলেও সেগুলোর বেশিরভাগই কেউ জানতে পারেনি। বা নির্যাতিতরা মুখ খোলেনি। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে।

মানুষ এখন অনেক সচেতন ও সোচ্চার। নির্যাতি হয়ে কেউ আর এখন মুখ বুঁজে সহ্য করে না। মানুষ প্রতিবাদের ভাষা শিখেছে বা শিখছে। ভবিষ্যতে আরো প্রতিবাদি হয়ে উঠবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.