বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ধস নেমেছে। নতুন বিনিয়োগ নেই, আমদানিও কমছে, তাই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কেউ। আবার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে যেসব উদ্যোক্তার টাকা প্রয়োজন তারাও স্থানীয় ব্যাংকে সুদের হার বেশি হওয়ায় বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতে একধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আর এ অস্থিরতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সরকারি ব্যাংকের পরিচালক জানান, বর্তমান পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা সরকারি ব্যাংকগুলোকে এমওইউ চুক্তির নামে গলা টিপে ধরেছে। চারটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংক মোট বিনিয়োগের ৪০ শতাংশ আগাম ঋণ দেয়। এদের যদি বড় ধরনের ঋণ দিতে বাধা দেওয়া হয় তবে বিনিয়োগ হবে না। ওই পরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এমওইউ চুক্তির কারণে তারা বড় ধরনের কোনো ঋণ প্রদান বা বিনিয়োগে যেতে পারছেন না। উদ্বৃত্ত তারল্য কলমানি মার্কেটে ধার দিয়ে কোনোভাবে ব্যবসা ধরে রেখেছেন বলে জানান তিনি। এদিকে বিনিয়োগ করতে না পেরে আরেক আশঙ্কায় রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বছর শেষে লোকসান কাটিয়ে মুনাফা ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ব্যাংকিং খাতে। সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের কাজ হচ্ছে ঋণ দেওয়া, তা-ই যদি তারা করতে না পারেন তবে বছর শেষে ব্যবস্থাপনা ব্যয় মিটিয়ে মুনাফা করা কঠিন হয়ে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমতে কমতে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের জুনে ছিল ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ ১১ মাসে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। বেসরকারি ঋণের প্রবণতা এত বেশি হারে কমার লক্ষণ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি আর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয় ঋণের প্রবৃদ্ধি। এর পর থেকেই নেতিবাচক প্রবণতা শুরু হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যা ১৪ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসে। আর বর্তমানে এটি ১১ শতাংশের কাছাকাছি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিদেশ থেকে বেসরকারি খাত যে ঋণ নিয়েছে তা হিসাবে ধরলে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়বে। সে হিসেবে তখন মে মাসে প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়াবে। কিন্তু ওই হিসাবেও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ পয়েন্ট প্রবৃদ্ধি কম থাকে। অর্থাৎ ওই সময় পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করতে চাইছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সম্পর্কে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় ব্যাংকগুলো যে হারে ঋণ ও আগামের বিপরীতে সুদ ধরছে তা তুলনামূলক বেশি। সে কারণে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বাধ্য হয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ অবস্থায় উচ্চ সুদে ব্যাংক-ঋণ নিয়ে নতুন বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইছে না কেউ। বিনিয়োগ মন্দা পরিস্থিতিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার আরও কমানো উচিত বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।