বাংলাদেশী জনগণের মতামত উপেক্ষা করে বর্তমান মহাজোট সরকার ভারতের দাবির কাছে মাথা নত করে ফ্রি ট্রানজিট চুক্তিতে সই করেছে। অথচ গ্রেট ব্রিটেনের মতো দেশও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেবে কি না সে প্রশ্নের সমাধানের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গণভোটের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং গণভোটে 'হ্যাঁ' হওয়ার পরই তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করে। বাংলাদেশ সরকার তা মোটেও করেনি।
আমরা হয়তো ভুলে গেছি, দেশের পারস্পপরিক সম্পর্ক নির্ভর করে উন্নয়ন-স্তরের ওপর। ইউরোপের সব দেশের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট একই স্তরের এবং উন্নত।
সংশ্লিষ্ট দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের অভিন্ন স্তরে পৌঁছলে ট্রানজিট সবার পক্ষে উপকারী প্রমাণিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পার্থক্য শুধু আয়তনগত নয়, সব দিক দিয়ে। ভারত সামরিক-অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকটা উন্নত। এ রকম অসম অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতি শাস্ত্র অনুযায়ীই ভারতের চাপে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও ট্রানজিটকে ভারত অর্থনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখানো হলেও, ভারতের মূল উদ্দেশ্য সামরিক কৌশলগত পূর্ব-উত্তর ভারতের সাতটি রাজ্যের বিদ্রোহ দমনে এবং ভবিষ্যতে চীনের সাথে কোনো যুদ্ধের আশঙ্কার সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দ্রুত সামরিক সরঞ্জাম এবং সৈন্য পাঠানোর জন্য ট্রানজিট তথা করিডোর পাওয়ার জন্য ভারত মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
এবং চীনের সাথে ভারতের কখনো যুদ্ধ শুরু হলে কিংবা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের বিচ্ছিন্নতা পরিপূর্ণতা লাভের দিকে গেলে ভারত বাংলাদেশের অনুমতি না নিয়েই ট্রানজিট নামের এই করিডোর ব্যবহার করবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলারের আত্রমণেল ভয়ে ফ্রান্স তার জার্মানির সীমান্তে অপ্রতিরোধ্য দুর্গ তৈরি করে। কিন্তু সমরবিশারদ হিটলার ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধে না জড়িয়ে সহজে ফ্রান্স দখলের জন্য বেলজিয়ামের মধ্য দিয়ে ফ্রান্স দখল করে বসে। হিটলার বেলজিয়ামের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পেরেছিল ট্রানজিট চুক্তির আওতায়। ওই দুর্গ ফ্রান্সের কোনো কাজে আসেনি।
ভারত ও চীনের সাথে সম্ভাব্য যুদ্ধে ভারতএকই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রা করার নৈতিক দায়িত্বের কোনো তোয়াক্কাই করে না ভারত (যেমন: গঙ্গার পানি বন্টন, সীমান্ত চুক্তির রেটিফিকেশন ও বেরুবাড়ী হস্তান্তর এমনকি সিডরের পর পাঁচ লাখ টন চাল বিক্রির প্রসঙ্গ)। ইতিহাসের সাক্ষ হলো : যে কোনো বৃহত্তর রাষ্ট্র তার সীমান্তবর্তী ছোট দেশকে ঠকাতে বা গ্রাস করতে কুণ্ঠিত হয় না। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত মেক্সিকোর উত্তরাংশ দখল করে নিয়েছে, যেটা বর্তমানে নিউ মেক্সিকো প্রদেশ হিসেবে পরিচিত।
অস্ট্রো-হাঙ্গেরি ও জার্মানি দিয়ে পরিবেষ্টিত পোল্যান্ডকে তিনবার স্বাধীনতা হারাতে হয়েছে।
কিন্তু দেশপ্রেমিক পোলিশরা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ঘোড়া দিয়ে জার্মান ট্যাঙ্ক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছে। পোলিশদের মতো দেশপ্রেম থাকলেই কেবল একটি ছোট রাদ্ব্র বৃহৎ রাষ্ট্রের পাশেও দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে।
সরকার সচেতন হলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির পরিবর্তে সার্ক-চেতনা অনুযায়ী আঞ্চলিক চুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু আওয়ামী সরকার সে পথে এগিয়ে যেতে পারেনি। অনেকে বাংলাদেশ-চীন ট্রানজিটের স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্ন দেখা ভালো। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ভারত যখন নেপালের মতো ছোট রাষ্ট্রকে বড় রাদ্ব্র হয়েও এবং নিরপত্তার অজুহাতে ১৫-২০ মাইল ট্রানজিট দেয়নি, সেখানে বাংলাদেশ কেন ৫০০ মাইল ট্রানজিট দেবে?
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নৌ-ট্রানজিট চুক্তিতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতও উপেক্ষা করা হয়েছে। ডিউটি, ফি, ট্যাক্স ও চার্জ গ্রহণের ব্যবস্থা না রাখায় এই ট্রানজিট চুক্তি আইডবলিউটিটি প্রটোকলের লংঘন এবং চুক্তির খসড়া ২০০৯ সালে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত আইডবলিউটিটি চুক্তি অনুযায়ী হয়নি বলেও আইনমন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।