জালিমের ফাঁসি হোক, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক, রাজাকারদের ফাঁসি হোক
সরকারি চিনিকলগুলোয় সরবরাহ করা আখের মূল্য না পেয়ে পথে পথে ঘুরছে হাজার হাজার আখচাষী। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য তারা এখন চিনিকল কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারি দলের নেতাদের কাছেও ধরনা দিচ্ছে। গভীর আর্থিক সঙ্কটে পড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের কাছে আখচাষীদের পাওনার পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অথচ চিনিকলগুলোয় অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে ৫৭৫ কোটি টাকা মূল্যের এক লাখ ১৫ হাজার টন চিনি। সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১২-২০১৩ মাড়াই মওসুমে করপোরেশনের অধীনে ১৫টি চিনিকলে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টন আখ মাড়াই করে এক লাখ ২৯ হাজার ৭৫ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে রাজশাহী, নাটোর ও নর্থবেঙ্গল চিনিকলে মওসুমের আখ মাড়াই শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য মিলগুলোও উৎপাদন শুরু করে। বর্তমান মাড়াই মওসুমে মিল জোন এলাকায় এক লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৩ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছিল। মিল কর্তৃপক্ষ আশা করেছিল ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৫৬ টন মাড়াইযোগ্য আখ পাওয়া যাবে।
কিন্তু সময়মতো টাকা পরিশোধ না করায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বলাবাহুল্য, সরকারের দুর্নীতি, দলীয়করণ ও অদূরদর্শিতার শিকার হয়ে দেশের সম্ভাবনাময় চিনিশিল্পে এখন বেহাল দশা বিরাজ করছে। লোকসান দিতে দিতে মরতে বসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকল। আড়াই লাখ টন ক্ষমতাসম্পন্ন এসব চিনিকলের উৎপাদন কমতে কমতে এখন লক্ষ্যমাত্রার এক-চতুর্থাংশে ঠেকেছে। গত বছর দেশে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৩৪৭ টন।
আখ ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে প্রয়োজনীয় আখের সরবরাহ না পাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সূত্রে পাওয়া প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন।
করপোরেশনের অধীনে বিদ্যমান ১৫টি চিনিকলের উৎপাদন ক্ষমতা আড়াই লাখ টনেরও বেশি। কিন্তু আখের অভাবে এ ক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে চিনির উৎপাদন প্রতি বছরই কমছে।
বাধ্য হয়ে করপোরেশনও লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করছে। কিন্তু সীমাহীন দুর্নীতি ও রাজনৈতিক শক্তির প্রশ্রয়ে একশ্রেণীর অসৎ গুড় উৎপাদনকারীর কবলে পড়ে চিনিকলগুলো এখন দিশেহারা। অভিযোগ রয়েছে, চিনিকলের সাথে সংশ্লিষ্ট একশ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তার ছত্রচ্ছায়ায় সরকারি টাকায় চাষ করা আখ বাইরে বিক্রি করে দেয়ায় চিনিশিল্পে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। টাকার অভাবে চাষীদের আখের মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না চিনিকলগুলো। এ কারণে চাষীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
টাকার জন্য মিলে ধরনা দিচ্ছে। অনেকে যাচ্ছে আখ সরবরাহে মধ্যস্থতাকারী সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে। সময়মতো টাকা না পাওয়ায় আগামীতে আখ চাষের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও আশঙ্কা করছে অভিজ্ঞরা। এমনিতেই গুড় তৈরিকারকরা চাষীদের কাছ থেকে মিলের দামের চেয়ে চড়া দামে আখ কিনে নিয়ে যায়। ফলে মাঠে আখ থাকতেও চাষীরা মিলে আখ বিক্রি করছে না।
এ কারণে দিন দিন আখচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষীরা।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর এলাকায় দিনে দিনে কমে যাচ্ছে আখের চাষ। সীমান্ত এলাকার সম্ভাবনাময়ী এ খাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর না দেয়ায় ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার চাষী তাদের চাষের ফসল পরিবর্তন করছে। আখ চাষের উপযোগী জমিতে চাষ হচ্ছে এখন অন্য ফসল। ৫ বছর আগেও সুনামগঞ্জে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হতো, এখন চাষ হয় ২৫০ হেক্টর জমিতে।
রাজশাহী জেলার আখ চাষীরা বিভিন্ন সমস্যার কারণে আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাই সবজি ও আম বাগানের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে এ জেলার কৃষকরা। এতে করে দিন দিন কমে যাচ্ছে এ জেলার আখ চাষ। এক সময় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যেভাবে কৃষকরা আখ চাষ করতো বর্তমানে তা লক্ষ্য করা যায়না। অতীতে আখ চাষ ছিল একটি লাভজনক কৃষি ফসল।
আজ আর সেই দিন নেই। বর্ষজীবী ফসল আখ চাষ করতে গিয়ে উচ্চ ফলনশীল জাত পাচ্ছে না আখ চাষীরা। আখ পরিমাপ কেন্দ্রে ওজনে কম, সরকারি দাম ও পুঁজি পেতে হয়রানি এসব কারণে আখ চাষীরা সবজি ও আম চাষে ঝুঁকছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে এ জেলায় আখের চাষ কমেছে ৫৫ হাজার ২৪৫ বিঘা। পাবনা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সরকারিভাবে গ্রামে গুড় তৈরিতে বাধা প্রদান করায় কৃষকরা আখ চাষ করা কমিয়ে দিয়েছে।
মূলত আখচাষের এ করুণ চিত্র এখন দেশের সর্বত্র। এতে করে দেশের চিনি শিল্প বিলুপ্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের চিনি বাজার ভারতের দখলে চলে গেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় সবটুকু আমদানি করতে হয়। আর চিনি আসে ভারত থেকে।
দেশে বেসরকারি খাতে যে কয়টি পরিশোধনকারী চিনি শিল্প গড়ে উঠেছে, সেগুলোর কাঁচামাল (‘র’ চিনি) আসে ভারত থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতে প্রতি টন চিনির উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ৪৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৯০ ডলার। আর বাংলাদেশে রফতানি করা হয় (শুল্কসহ) ৬৫৮ ডলারের বেশি দামে।
আর সেই চিনি খুচরা বাজারে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে এ দেশের চিনিশিল্প ধ্বংসের মুখে যাচ্ছে, আর বাজার দখল করছে ভারত।
সরকারের দূরদর্শিতার অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি আর অবহেলায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প বিলুপ্তির পথে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আখ চাষীদের সর্বনাশ, আখ চাষে অনাগ্রহ তৈরি, বিশেষ করে দেশের চিনি শিল্পগুলো মাঠে সাড়া দেয়া এবং বিশেষত চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ তথা মানবেতর জীবন-যাপন এসব কিছুর দিকেও আদৌ নজর দেয়নি সরকার।
পাশাপাশি ভোক্তা সাধারণত যে দেশীয় ভালো চিনি কমদামে কেনার পরিবর্তে বিদেশী খারাপ চিনি কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতেও কোন প্রতিক্রিয়া নেই সরকারের। প্রসঙ্গত আমাদের চোখের সামনেই, আমাদের নীরবতা, অসচেতনতা এবং অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে পাটশিল্পের সর্বনাশ ঘটানো হয়েছে। আজ পৃথিবীর দিকে দিকে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী মুক্তবাজারী তত্ত্বের উদ্যোক্তরা নিজেরাই গলায় সঙ্কটের ফাঁস আটকে হাসফাঁস করছে।
তাদের পরামর্শে এদেশের পাট, চা, কাগজ, গার্মেন্টস, চিংড়ি শিল্পসহ সবকিছুর একের পর এক সর্বনাশ হচ্ছে। চিনিশিল্পেরও সে একই পরিণতি হচ্ছে
কিন্তু নির্বিকার, নিষ্ক্রিয় সরকার। বোধোদয় নেই তার। মূলত, এসব দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।