বান্দরবন আমার সপ্নের রাজ্য, কিন্তু অনেক দিন ধরে যাবার প্লান করেও শেষ পর্যন্ত যাওয়া হইতেছিল না। তাই এইবার ঠিক করছিলাম যেভাবেই হোক না কেন যাবই, একা হলে একাই যাব। ঠিক হলো কেওক্রাডাং যাব, যেই কথা সেই কাজ। সব ঠিক,মোট ১৮ জন কিন্তু যাবার আগেরদিন মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। ১০ জন গায়েব, মাত্র ৮ জন।
যা থাকে কপালে, ১৫ই অক্টোবর ২০১০ সকালে রওয়ানা দিলাম বান্দারবন এর উদ্দেশ্যে। রুমা বাজার পৌছাতে পৌছাতে প্রায় রাত ৮টা। ওখানে হোটেল কেওক্রাডাং এ রাতে থাকার ব্যবস্থা করে বের হলাম গাইড ঠিক করতে, কিন্তু বাঙ্গালিরা দেখি ওখানেও সিন্ডিকেট খুলে বসে আছে।
পরের দিন সকালে গাইড ঠিক করলাম, কেওকারাডাং হয়ে জাদিপাই ঝরণা পর্যন্ত। দিলাম রওনা।
পথের নান্দনিক দৃশ্য দেখে মাথা খারাপ হবার অবস্থা,
দুপুরেই বগালেকে পৌছানোর পর ঠিক করলাম ওই দিন রাতে দার্জিলিং পাড়াতে থাকব।
ওইদিকে যাবার জন্য রওনা দিলে চিংড়ি ঝরণার কাছে পৌছার আগেই বৃষ্টি শুরু হলে বগালেকে ফেরত আসতে বাধ্য হলাম। বগালেক এ তানপুই দির ওখানে ছিলাম।
দিদির আতিথেয়তায় মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। মানুষ এতটা ভাল, সহজ সরল হতে পারে ওনাকে না দেখলে হয়ত মানতাম না।
এর মধ্যে তুষার ভাই তারেক কে দিয়ে ২টা RED LADY পাঠালেন
(যাদেরকে আমরা পরের ২ দিন ব্রেকফাস্ট এ শিকার করেছিলাম)।
পরদিন দিলাম রওনা কেওক্রাডাং এর দিকে, পথে দারজিলিং পাড়াতে চা পানির বিরতি। ওখানে দেখা হল “D Way Expeditor” adventure club এর সাথে। ওরা তখন ওদের রুমানা পাড়া expedition শেষ করে বগালেক এ যাচ্ছিল।
কেওক্রাডাং পৌছে সে কি উল্লাস!!!!! আমি আমার ফেইসবুক এ স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে দিলাম দীপ্তর প্রোফাইল থেকে (ওই বেটা যে লগ আউট করে নাই কে জানতো), তারপর আর নেট কানেকশন পাই না।
কপালটাই খারাপ।
ওখানে ফটো সেশন শেষ করে যাত্রা শুরু করলাম জাদিপাই এর দিকে। মাঝখানে পাসিং পাড়াতে আবার চা পানির বিরতি।
ওখানে দুপুরে খাবার কথা বলে আমরা চললাম আমাদের গন্তব্যে।
১টু যাবার পর দেখলাম খাড়া নিচের দিকে নামতে হচ্ছে , নামতে তো সোজাই লাগছে কিন্তু উঠতে যে খবর হবে তা আগেই টের পাচ্ছিলাম।
ওখান থেকেই ঝরনার আওয়াজ পাইছি কিন্তু ওই ঝরনাতে পৌছাতে যে আরো ১ ঘন্টা লাগবে বুঝি নাই।
নিচে নেমে দেখি ১টা ভ্যালী এর মত জায়গাতে জুমিয়া দের করা ধান ক্ষেত। অন্য রকম ১টা অনুভূতি কাজ করছিল।
ধান ক্ষেতটা পার হয়ে ১টু উপরের দিকে উঠে দেখি সামনে পথ নাই, আমাদের গাইড বেলাল তখন সামনে আসলো। ঘন ঝোপ ১টার ভিতর খাড়া নিচের দিকে নামতে শুরু করলাম।
খুব পিচ্ছিল রাস্তা, কম বেশি সবাই ছোট বড় বোয়াল মাছ ধরলাম ওখানে।
ঝরণার আওয়াজ পাচ্ছি কিন্তু দেখা পাচ্ছিলাম না। ঝরণা আপা মনে হয় খুব লাজুক প্রকৃতির। ১৫ মিনিট পর পেলাম সেই কাক্ষিত ঝরণা আপাকে, বাপরে বাপ এত উঁচা চিন্তা করিনাই।
পোলাপাইন এর সে কি উল্লাস, , , পানি কি রকমের ঠান্ডা চিন্তা করলে এখনো শরীর কাঁপে।
পরে ফটো এনালাইসিস করে দেখলাম ঝরনার উচ্চতা প্রায় ৮০ ফিট, যদিও আমরা যেখানে নামছিলাম ওটা ছিল ঝর্ণার ২য় ধাপ এর নিচে আর ১টা ধাপ ছিল ওটা মাপা অথবা ফটো তোলা সম্ভব হয়নি।
পাসিং পাড়াতে দুপুরের খানাটা সেই রকম রাজকীয় হইছে। মুরগীর মাংস যে এত মজার হইতে পারে (জীবনের সবচাইতে সেরা খানা)।
বগালেক এ ফিরতে ফিরতে অন্ধকার হয়ে গেছিলো কারণ রাস্তায় অন্য আরেকটা গ্রুপ খুব ঝামেলা করছে। ওদের কারণে জোঁক ধরছে আমাদের সবাইকে।
রাতে দিদির বাড়িতে খাওয়ার পর আড্ডা দিলাম “D Way Expeditor” এর কয়েক জনের সাথে।
খরচাপাতিঃ
১) বাস ভাড়া- চট্টগ্রাম হতে বান্দরবন ৭০/-
বান্দরবন হতে কাইখ্যংছড়ি ৭০/-
(যারা ঢাকা থেকে আসবেন তাদের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম এর ভাড়া এক্সট্রা)
২) নৌকা ভাড়া- কাইখ্যংছড়ি হতে রুমাবাজার ৩০/-
৩) হোটেল ভাড়া- ৮০/- (হোটেল কেওক্রাডাং এর ভাড়া)
৪) গাইড – দিন প্রতি, আগে ছিল ৩০০/- এখন নাকি ৪০০/- করে (সিন্ডিকেট করার ফল)
গাইড এর থাকা খাওয়া আপনাকে বহন করতে হবে।
৫) বগালেক এ থাকা- ১০০/- (এক রাত)
৬) বগালেক এ খাওয়া- ৭০/- @ লারাম রেস্ট হাউস
{মেনু-(ভাত,ডাল,সবজি)unlimited, ডিম ১টি}
১টু কষ্ট করে রিয়েল মুন এর বাড়ি খুজে বের করলে আপনাদের কিছু টাকা বাঁচবে। আমরা ওর বাড়িতে ছিলাম, খাবার খরচ হইছিল ৪০/- করে।
যোগাযোগঃ
হোটেল কেওক্রাডাং- ০১৫৫৬৫৭৩৭৬৮ (মানিক)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।