আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি সহজ সরল ভূতের গল্প

আজ সারা বাড়িতে আমি একা। বড় ভাই ভাবী গিয়েছে রাঙ্গামাটি । মা গিয়েছে কুমিল্লা ফাহিমদের বাসায় । ছোট দুই ভাইয়ের একজন গেছে কলিগের বিয়েতে নারায়নগঞ্জ আর ছো্টজন উত্তরা বন্ধুর বাসায়- সেখানে আজ তাদের বারবিকিউ পার্টি । আমার কোথায় যাওয়ার জায়গা নেই।

সারাদিন বাইরে বাইরে ছিলাম । এখন বাসায় । নিজেকে কেমন জানি এতিম এতিম লাগছে । টিভিতে রাত ১১ টার খবর দেখলাম । হঠাত খুব ক্ষুধাবোধ হতে লাগল ।

সন্ধ্যায় হালিম দিয়ে নান রুটি খেয়েছিলাম । মনে হয়েছিল রাতে আর খেতে হবে না । বিস্কুটের ডিব্বা, চানাচূরের বোতল খালি । ফ্রীজ খুলে দেখলাম কোনো খাবার নেই । দু'টা দিম আছে ।

ডিম দু'টা সিদ্ধ করে খেলাম । ক্ষুধা দমন হলো । রাত সাড়ে ১২টায় সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে ব্যালকনিতে বসলাম । এক কাপ চা পেলে ভালো লাগল । আমি চা বানাতে পারি না ।

এই চায়ের জন্যই বিয়ে করতে হবে। যখন খুশি তখন এক কাপ চা- তো পাওয়া যাবে । একটার পর একটা সিগারেট শেষ করে করে- এলোমেলো অনেক বিষয় নিয়ে ভাবলাম । কখন রাত দুইটা বেজে গেলো বুঝতেই পারিনি । আধা গ্লাস পানি খেয়ে বিছানায় গেলাম ।

তখন কোনো কারন ছাড়াই একটা কৌতুক মনে পড়লো- টিচার : শাহজাহান কে? টিংকু : জানিনা। টিচার : পড়া লেখায় মন দে, তাহলে জানবি। টিংকু : স্যার, রিংকু কে? টিচার : জানিনা। টিংকু : আপনার মেয়ের দিকে মন দেন, তাহলে জানবেন!! লাইট অন করে আমি ঘুমাতে পারি না । পাতলা একটা চাদর গায়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছি ।

চোখে একটুও ঘুম নেই । ঠিক এমন সময় আমার ঘরের দরজায় কে যেন নক করছে । জন্মগত ভাবে আমি অনেক ভীতু। খুব অল্পতেই অনেক ভয় পাই । কিন্তু আজ এই মধ্যেরাত্রে নিজেকে বললাম- গুল্লু সোনা ভয় পেও না ।

সাহসী হও । যাও দরজা খোলো । যে আসছে তাকে স্বাগত জানাও । নিজের কাছ থেকেই পেয়ে গেলাম এক আকাশ সাহস । দরজা খুলে দেখি একটি মেয়ে দাঁড়িয়েছে ।

সাদা রের শাড়ি পরা । সারা শাড়িতে হাতের কাজ করা । হাসি খুশি মুখ । চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। হাত ভরতি লাল সবুজ কাঁচের চুড়ি।

নিচের মেইন গেট লাগানো, মেয়েট কিভাবে আমার দরজার সামনে এসে দাড়ালো- কে জানো ! ঠিক করেছি আজ আমি ভয় পাবো না । সব কিছুই সহজ ভাবে নিবো । আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম- আসো, ভেতরে আসো । আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে দাও । আর তোমার ইচ্ছা হলে নিজের জন্যই এক কাপ বানাতে পারো ।

মেয়েটি খুব অল্প সময়েই এক মগ চা নিয়ে এলো আমার জন্য । আমি ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করলাম না । চা শেষ করে আমি মেয়েটিকে বললাম- আমি ঘুমাই । সকালে পরোটা আর ডিম বাজবে । নাস্তা রেডী করে আমাকে ডাক দিবে ।

গোছলের জন্য গরম পানি করতে ভুলে যেও না । মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল- আমি কে তুমি জানো ? আমি একটা ভূত । তুমি আমাকে ভয়ই পাচ্ছো না । আমি বললাম যাও- বেবি কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করো না । ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে দাও ।

মেয়েটি বলল- আমি কোথায় ঘুমাবো ? আমি জবাব দিলাম না । মেয়েটি গুটিসুটি মেরে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল, একটা হাত রাখল আমার বুকের উপর । আমি চলকে গেলাম । ভুত মেয়েটির হাত ভয়াবহ ঠান্ডা । মেয়েটি বলল- আসো আজকের রাতটি গল্প করে কাটিয়ে দেই ।

আমি বললাম -কিসের গল্প ? ভূতের গল্প ? মেয়েটি বলল- না, ভালোবাসার গল্প । আমি বললাম বাহ, ভূতনী করবে ভালোবাসার গল্প ! মেয়েটী একটু রাগ দেখিয়ে বলল- আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখো- আমাকে কি ভূতনীর মতন লাগছে ? দেখো, তুমি যেমন পছন্দ করো, তোমার মনের করে সেজে এসেছি । আমি উঠে বসে ভূতনীর দিকে ভালো করে তাকালাম । আসলেই ভূতনীকে দারুন সুন্দর লাগছে । হঠাৎ আমার মধ্যে এক ধরনের তীব্র আবেগ অথবা মোহ ভর করলো ।

ভূতনীকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করলো । এক আকাশ আদর করতে ইচ্ছা করলো । ভূতনী সম্ভবত আমার মনের তীব্র ইচ্ছাটা বুঝতে পারলো । ভূতনী তার ঠোঁট আমার ঠোঁটে রাখল । সারাটা রাত আদর করে পার করে দিলাম ।

আমার বুকে আদরের দাগ। ভূতনীর চোখে মুখে খেয়াল করলাম এক আকাশ আনন্দে ঝলমল করছে । ভূতনী আমার বুকে মাথা রেখে বলল- আমাদের বাবুর নাম কি রাখবো ? আমি বললাম- গেদু । ভূতনী বলল- এটা আবার কি রকম নাম হলো ? আমি বললাম- নাম কোনো ব্যাপার না, মানুষের কর্মটাই হচ্ছে আসল । আমরা যাদের কে মনে রাখি- তাদের কর্মের জন্যই মনে রাখি ।

ভূতনী খুব আদুরে গলায় আবদার করলো- আমাকে শাহবাগ প্রজন্ম চত্তরে নিয়ে যাবে ? আমি ভূতনীর কপালে একটা ছোট্র চুমু দিয়ে বললাম- হুম, নিয়ে যাবো । আমরা দুইজন চিৎকার করে বলল- রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই । জামাত শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করা হোক । জয় বাংলা । ভূতনী বলল- আমি লাল সবুজ একটা শাড়ি পড়বো ।

আমি বললাম আচ্ছা । লাগল ভালো, মন ভোলালো, এই কথাটাই গেয়ে বেড়াই-- দিনে রাতে সময় কোথা, কাজের কথা তাই তো এড়াই। মজেছে মন, মজল আঁখি-- মিথ্যে আমায় ডাকাডাকি-- ওদের আছে অনেক আশা, ওরা করুক অনেক জড়ো-- আমি কেবল গেয়ে বেড়াই, চাই নে হতে আরো বড়ো ॥ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.