'প্রতিটি মেয়েকে আমি আদর-স্নেহ করে মানুষ করি। তাদের আমি গাড়িও কিনে দিই। মাহিমাকে নিয়ে আপনি আমার অফিসে আসেন। আপনার ব্রেইন কলাপস হইয়া গেছে। আপনার বোনরে আমার অফিসে নিয়ে আসলেই আপনার ব্রেইন খুইল্যা যাইব। আমি কইব আমারে আপনারা হাতছাড়া কইরেন না। আমারে হাত ধইরা রাখলে আপনাদের লাভ হইব। লস্ হইব না।' ৩১ জুলাই বেলা ২টা ২৯ মিনিটে মুঠোফোনে আশিয়ান সিটির এমডি নজরুল ইসলাম তার সাবেক পিএস ইশারা মাহিমা সিদ্দিকীর ভাই মারুফ আনাম সিদ্দিকীর সঙ্গে ২৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ড আলাপনে এমনই ভাষা প্রয়োগ করেন।
পরে ৪ আগস্ট পুনরায় আশিয়ানের এমডি ফোন করেন ভুক্তভোগী ইশারার ভাই মারুফকে। দুই মিনিটের আলাপনে তিনি মারুফকে হুমকি দিয়ে বলেন, 'এইডা কিন্তু ঠিক করেন নাই। আপনারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মানুষ ধরছেন, বিভিন্ন মন্ত্রীর কাছে গেছেন। আমাগো কাছে সব রিপোর্টই আছে। আপনে আমারে অপমান করেছেন। আপনার লাইগ্যা আমি ১০০ কোটি টাকা বাজেট কইর্যা থুইছি। আমি আপনারে ছাড়মু না। যেই মন্ত্রীর কাছে যাইবার চান যান। আমি আপনাগো ছাড়মু না। আমি অলরেডি আপনার বইনের উপরে মামলা কইরা থুইছি।'
কেবল ইশারা মাহিমা জাহান সিদ্দিকীই নন অন্তত ১০ জন সুন্দরীকে বিভিন্ন সময় ব্ল্যাকমেইল করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছিলেন আশিয়ান সিটির এমডি নজরুল ইসলাম। তাদের সবাই আশিয়ান সিটিতে কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন প্রলোভন দেখানোর পরও কাজ না হলে জোরপূর্বক তাদের শ্লীলতাহানি করেছেন নজরুল। তবে তার ভয়ে ভুক্তভোগীদের কেউই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করার সাহস পাননি বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, প্রাণভয়ে ওই রমণীরা নজরুলের ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন। একপর্যায়ে তাদের সবাইকেই ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন নজরুল। তবে ব্যতিক্রম কেবল ইশারা। ইশারা র্যাব-পুলিশের দ্বারস্থ হবেন এমন কল্পনাই করেননি আশিয়ানের এমডি।
এদিকে, মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২৮ জুলাই নজরুল তার মুঠোফোন থেকে কল করে ইশারাকে তার কক্ষে ডেকে নেন। ইফতারের পর বিভিন্ন কথাবার্তার একপর্যায়ে জোরপূর্বক তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তবে ইশারা কৌশলে ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। ওইদিনই নজরুল ইসলামের ভয়ে রাজধানী ছাড়েন ইশারা। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ঘটনার পর থেকে ইশারা আশিয়ান সিটিতে না যাওয়ার কারণে তার ভাই-বোনদের মুঠোফোনে একের পর এক হুমকি দিয়ে আসছেন নজরুল।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভুক্তভোগী মেয়েটি ও তার পরিবারের সদস্যরা র্যাবের কোনো সহায়তা চাইলে তা দেওয়া হবে। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্টরাও কোনো সহায়তা চাইলে তা দিতে প্রস্তুত র্যাব। মেয়েটি ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি এবং বিভিন্ন ধরনের কুপ্রস্তাব-সংক্রান্ত ফোন রেকর্ড রয়েছে আমাদের হাতে।
প্রসঙ্গত, আশিয়ানের এমডির প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইশারার বিরুদ্ধে ৪ আগস্ট তিনটি মুঠোফোন ও দুটি ল্যাপটপ চুরির মামলা করেন আশিয়ান সিটির ডিএমডি জাকির হোসেন। এর পরও নজরুল ইসলামের প্রাণনাশের হুমকি বন্ধ না হলে ইশারা ৮ আগস্ট আশিয়ানের এমডি নজরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে গুলশান থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা করেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।