আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্প - যৌনাবেগ - দুলাভাই এবং ...

তুমি আমি আমরা ......

(ক) সরফরাজ রীতিমতো ঘামছে । তার মাথায় কেবলমাত্র একটি বাক্য ডিগবাজী দিচ্ছে । “ কি খেইল দেখাইলেন গো মমিনসাব ! উত্তেজনায় ঘামাইয়া গেছি “ বর্তমানে দেশে মমিন একটা জাতীয় নিক হলেও ( “ কস্কি মমিন “ থেকে উদ্ভব ) সরফরাজের কাছে মমিন নামের আলাদা মাজেজা আছে । সরফরাজের পিতার নাম মমিন । সম্পূর্ণ নাম মমিনুল হক ।

সরফরাজ আজ যতবার তার পিতাকে দেখছে ততবার বলছে – “ কি খেইল দেখাইলেন গো মমিনসাব ! উত্তেজনায় ঘামাইয়া গেছি “ সরফরাজ এই কথা বলছে ফিসফিসিয়ে । কিছু সময় অন্তর অন্তর তার হাতের রুমাল নাকে চেপে এই কথা আবৃতি করছে । নিজের বাবাকে কেন তিনি এই কথা বলছেন ! তার কারণ মমিনুল হক এই বছর হজ্বে যাচ্ছেন । হজ্বে যাওয়ার আগে তিনি তার একমাত্র পুত্রের বিয়ে পড়িয়ে দিতে চান । সেই উদ্দেশ্যে তিনি পুত্রের জন্য পাত্রী দেখা শুরু করেন ।

কিন্তু সরফরাজের নিজের বাবার রুচির প্রতি ছোটকাল থেকেই চরম অবিশ্বাস । ছোটবেলার ঈদে যতবার মমিনুল হক সরফরাজের জন্য জামা কিনে এনেছেন ততবার সরফরাজ কেঁদে কুঁদে ঈদের জামাত পড়তে গিয়েছে । কারন একবারও বাবার পছন্দের ঈদ জামা তার পছন্দ হয়নি । তো যেই বাবা তার পুত্রের জন্য ঈদের জামাটাই চয়েজ করতে পারেন না , তিনি কখনোই সেই পুত্রের মনের মতো পছন্দের পাত্রী খুঁজে বের করতে পারবেন না । হিসাব সহজ এবং তরল ।

কিন্তু সরফরাজ টাস্কিত । অরুচিবান মমিনুল হক পুত্রের জন্য পরী নিয়ে আসলেন । পাত্রী মমিনুল হকের অফিস সহকর্মী ইব্রাহিম খলিলের বড় মেয়ে । দেখতে অপরুপা । পূর্বধলা ডিগ্রি কলেজে পড়ে ।

খুব সাংসারিক । পরহেজগার । সেলাইয়ের কাজ জানে । শোনা যায় কম্পিউটার চালাতেও নাকি এক্সপার্ট ! আর এইদিকে পাত্র সরফরাজ বহু কষ্টে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স পাশ । মাস তিনেক আগে একটি চলনসই ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিটিভ হিসেবে জয়েন করে ।

সে উচ্চতায় খাটো । গায়ের রঙ ময়লা । মাথায় কিঞ্চিত টাকের আভাস দেখা যায় । সবমিলিয়ে বলা যায় সরফরাজের তুলনায় এই পাত্রী তো শুধু পরী নয় , পরী টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি । সরফরাজ যেদিন পরী টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি মানে পাত্রীর ছবি দেখে সেদিন সারারাত তার দু চোখের পাতা এক হয়নি ।

অবিশ্বাসে । এই মেয়ে কি সত্যি ই তার বউ হবে ! (খ) আজ সেই পরী তুল্য পাত্রী সরফরাজের বউ হতে যাচ্ছে । কিছুক্ষন পরেই খাওয়া দাওয়া । তারপর পরই আঞ্জুমান জামে মসজিদের ইমাম সাহেব তিন কবুল পড়িয়ে পরীর সাথে সরফরাজের কপাল জোড়া লাগিয়ে দিবেন । সরফরাজ রীতিমত কাঁপছে ।

কাঁপাকাঁপির পরিমাণ রিক্টার স্কেলে ৮ মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে । সেই সাথে হচ্ছে ঘাম । সরফরাজ আবার বিড়বিড় করলো -- “ কি খেইল দেখাইলেন গো মমিনসাব ! উত্তেজনায় ঘামাইয়া গেছি “ মেয়ে পক্ষ থেকে ভালো রকম খাবারের আয়োজন করা হয়েছে । আস্ত খাসি প্লেটে দাড়া করিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে । এসেছে জামাই বাবুর জন্য ।

জামাই বাবু সরফরাজ বেশ ক্ষুধা অনুভব করছে । অতিরিক্ত উত্তেজনায় আজ সকাল থেকে সে কিছু খেতে পারিনি । এক গ্লাস পানি ছাড়া । তার উপর সামনে আস্ত খাসির রোষ্ট দাড়িয়ে থাকা দেখে ক্ষুধা আরও বেয়াড়া হয়ে উঠেছে । কিন্তু না ।

ক্ষুধা লাগলেও এখন চুপচাপ সহ্য করতে হবে । এইসব বিয়েতে জামাইয়ের খাওয়া-দাওয়ার হেনতেন নিয়ম আছে । জামাই বাবুর হাত জামাই বাবু নিজে ধৌত করলে চলবে না । ধুয়ে নিতে হবে শ্যালা শ্যালী মারফত । শুধু তাই না ।

উক্ত হাত ধৌতকারীকে নগত ক্যাশ প্রদান করতে হবে । সাধারণত পাত্র পক্ষের সাথে তার বন্ধু বান্ধব থাকে যারা চাপাবাজি করে নগদ ক্যাশের পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসে । কিন্তু সরফরাজের সাথে তার কোন বন্ধু নেই । হুট করেই বিয়ে । বন্ধুদের জানানোর সময় পাওয়া যায়নি ।

আসল কথা সরফরাজ নিজেই তাদের কাউকে জানায়নি । তার ইচ্ছা তার পরী টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি বউকে সবার সামনে হটাত উপস্থিত করে তাক লাগিয়ে দেয়া । কেউ বিশ্বাস ই করতে চাইবে না , আলাভোলা সরফরাজ একটা হুর পরী বউ নিয়ে ঘুরছে !! মেয়ে পক্ষ থেকে পাত্রীর ছোট বোন সাথে চার পাচজন এসেছে সরফরাজের হাত ধুয়ে দিতে । পাত্রীর ছোট বোনের নাম সুরভী । এই বালিকা স্কুলে পড়ে ।

ক্লাস সিক্স নাকি সেভেন । ঠিক মনে নেই । এই অল্প বয়সেই মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর হয়ে গেছে । এরা আসলে সুন্দরী পরিবার । সরফরাজের ধারনা মেয়ের বাড়ির কোন কুকুর থাকলে কুকুরটাও দেখতে সুন্দর হবে ।

সবাই বলবে – “ আহ কি কিঊট ডগি “ সরফরাজের বাচ্চা বাচ্চা শ্যালা শ্যালীরা তার হাত ধুয়ে দিতে দু হাজার টাকা দাবী করেছে । সরফরাজ বিনা বাক্য ব্যায়ে টাকা দিয়ে দিয়েছে । আজ তার দিল উদার । দু হাজার তো তার কাছে আজ নস্যি নস্যি নস্যি । (গ) সুরভী সরফরাজের ডান পাশে বসে তার হাত ধুয়ে দিচ্ছে ।

চারিদিকে চিৎকার হাসাহাসি । একেকজন একেক কথা বলছে আর চারিদিকে হাসির ফোয়ারা উঠে যাচ্ছে । সুরভী নতুন কেনা লাক্স সাবান দিয়ে নতুন দুলাভাইয়ের হাত ধুয়ে দিচ্ছে । হাত ধুয়ে দেয়ার মুহূর্তে সে তার বুকের বা পাশে খুব ধীরে ধীরে একটা চাপ অনুভব করলো । সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো তার নতুন দুলাভাই কুনুই দিয়ে তার বুকের বা পাশে চাপ দিচ্ছে ।

সুরভী কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে রইল । কোনমতে হাত ধুয়ে দিয়ে সে জামাইয়ের স্টেজ থেকে ছুটে পালালো । সুরভীর নতুন দুলাভাই পছন্দ হয়নি । বড় আপুটার জন্য তার খুব খারাপ লাগছে । তার ইচ্ছা হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে ।

কিন্তু সে পারছে না । বিয়ে বাড়িতে পাত্রী ছাড়া আর কোন মেয়ের চিৎকার করে কাঁদবার নিয়ম নেই ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।