দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের এ উদ্যোগ সে সময় বেশ প্রশংসাও পায়। বলা হয়েছিল দল বা ব্যক্তি নয়, সরকার বা বিরোধী দল নয়, নির্বাচন কমিশন যাতে ১৬ কোটি মানুষের আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় সে জন্য এ পদ্ধতি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে আস্থার সংকটে ভুগছে এবং এই সংকট তাদের প্রতি গণমানুষের আস্থায় চিড় ধরাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতাসীন দলের 'আজ্ঞাবহ' বলে অভিহিত করেছে। বিরোধীদলীয় নেতা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে 'অথর্ব' উপাধিতে ভূষিত করেছেন। বিরোধী দল কিংবা বিরোধীদলীয় নেতার এসব বক্তব্যের সারবত্তা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। তবে সত্য হোক আর অসত্য হোক নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতার ওপর তাদের বক্তব্য যে আঘাত হেনেছে তা সহজেই অনুমেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, নির্বাচন কমিশন নিজেরাই নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দায়ী। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দুনিয়ার সব দেশেই নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত। যে ধরনের সরকারের আওতায় নির্বাচন হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনের যোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতার ওপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। দুনিয়ার সব গণতান্ত্রিক দেশে দলীয় রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতাও পায়। কিন্তু আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন একটি অসম্ভব বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এমনকি একই কারণে নির্দলীয় সরকারের আওতায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়েও বিতর্কের সুযোগ থাকছে। এ সীমাবদ্ধতা উত্তরণে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা যখন বোদ্ধাজনরা অনুভব করছেন তখন নির্বাচন কমিশন চলছে উল্টো পথে। নির্বাচনী আচরণবিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রদ করা হয়েছে। আরপিওতে সংশোধনী এনে সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পথ বন্ধ করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দলের হাতে। রাজনৈতিক দলে ব্যক্তির স্বৈরাচার যখন সমালোচনীয় বিষয়, তখন নির্বাচন কমিশনের এ উদ্যোগ তা আরও উৎসাহিত করবে। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব বিতর্কের ঊধের্্ব থাকতে হবে। নিজেদের জন্য অথর্ব বা আজ্ঞাবহ পরিচয় গড়ে তোলার ভুল পথ বর্জন করতে হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।