এদেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবারের কিংবা মুক্তিযুদ্ধে নিহতের পরিবারের সদস্যরা জীবিকার জন্য বা চিকিৎসার সাহায্যের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, হচ্ছেন নানানভাবে হয়রানি আর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। বেশিরভাগ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা জামাতী জঙ্গি, রাজাকার, আল-বাদর ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ও তাদের তাবেদারদের কাছে অসহায়। নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে এই সকল অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার কিংবা শহীদ পরিবারের সদস্যরা আর্থিক অনটনের মধ্যে অর্ধাহারে অনাহারে জীবন-যাপন করছেন। অপরদিকে এদেশে জামাতী জঙ্গি তথা রাজাকার, আল-বাদর ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সদস্যরা কিংবা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা তাদের তাবেদার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুক্তিযোদ্ধা এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এমনকি এ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে এবং জঙ্গি, রাজাকার আল-বাদরসহ স্বাধীনতা বিরোধী চক্র জামাতীদেরকে সরকারি সমস্ত সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছে।
তাদের সন্তানদের জালজালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থাও করছে।
সম্প্রতি রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী তালিকাভুক্ত কুখ্যাত ঘাতক মীর কাশেম আলী হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে বিদেশে ভ্রমণ করে এসেছে। অথচ তার বিদেশ গমনে নিষেধজ্ঞা ছিলো। বিমান বন্দরে ১৮টি সংস্থা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করে। গোয়েন্দা সংস্থা ও ইমিগ্রেশনের নাকের ডগা দিয়ে এই যুদ্ধাপরাধী বিনা বাধায় ভিআইপি মর্যাদায় বিদেশ যেতে পারলো কিভাবে? এ থেকে এটাই মালুম হয় যে- দায়িত্বপালনকারী সংস্থাগুলোর ডিউটিরত সদস্যরা বিষয়টি সম্পর্কে জেনেও না জানার ভান ধরেছিলো নিশ্চয়।
আর এর নেপথ্যে রয়েছে বিমান বন্দরে জঙ্গি, রাজাকার, আল-বাদর ও স্বাধীনতা বিরোধী জামাত চক্রের সমর্থক একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা ১৮টি সংস্থায় কর্তব্যরত। এ কারণে কুখ্যাত জামাতী ঘাতক মীর কাশেম আলী বিনা বাধায় ভিআইপি মর্যাদায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। তবে এই নিয়ে বেশ তোলপাড়ও হয়েছে।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এমনকি সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন মন্ত্রী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিমান বন্দর ইমিগ্রেশনে গেলে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হন।
ইমিগ্রেশন ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঐ সকল ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে বিমান বন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘উপরের ক্লিয়ারেন্সের জন্য’ বসিয়ে রাখে। অথচ এই ইমিগ্রেশন দিয়ে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী ও দিগন্ত টিভির কর্মকর্তা সাবেক শিবির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বিদেশ যেতে পারে! এতে অভিযোগ উঠেছিলো, মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে বিমান বন্দর ইমিগ্রেশনে বহু অবৈধ কর্মকাণ্ড বৈধ হয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ প্রশাসনে জঙ্গি সমর্থক রাজাকার, আল-বাদর ও স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য এবং তাদের সমর্থনকারীর সংখ্যাই বেশি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিসিএস (পুলিশ) ও বিভিন্ন পদে ২৬ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। এরমধ্যে ৬০ ভাগ হচ্ছে রাজাকার, আল-বাদর ও স্বাধীনতা বিরোধী হিসাবে চিহ্নিত পরিবারের সদস্য।
সবচেয়ে বিস্ময়কর হল- এরা মুক্তিযোদ্ধার জাল সার্টিফিকেটে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় পুলিশে চাকরি নিয়েছে। ফলে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রায় ৯৮ ভাগই জঙ্গি, রাজাকার, আল-বাদর ও স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সদস্য।
এদিকে প্রতিমাসে চিকিৎসার সাহায্যের আবেদন জানাতে এবং হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার ১০ থেকে ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের পরিবারের সদস্য প্রতিকার পাওয়ার প্রত্যাশায় সাংবাদিকদের কাছে এসে নানা অভিযোগ-অনুযোগ শুনিয়েছেন। তারা সরকারের স্থানীয় ও শীর্ষ প্রশাসনের কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিকট বহুবার ধর্ণা দিয়েও সাহায্য বা প্রতিকার পাননি। এমনই একজন গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মেরি গোপিনাথপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শরীফ শাহিদুর রহমানের স্ত্রী শিরিয়া বেগম জানান, ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে তার স্বামী শরীফ শাহিদুর রহমান মারা যান।
স্বামী মারা যাওয়ার পর ছয় ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার স্ত্রী শিরিয়া নিদারুণ আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। বর্তমানে বড় ছেলে শরীফ নুর মুহম্মদ জটিল ব্যাধি গুলেনবেরী সিনড্রমে (জিবিএস) ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা সেবার খরচ যোগানো তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। পুত্রের চিকিৎসায় আর্থিক সাহায্যের সরকারের শীর্ষ প্রশাসন এবং প্রভাবশালী নেতাসহ বহু লোকের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। সাহায্য মেলেনি, উল্টো হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
সাংবাদিকদের কাছে ওই হয়রানির কথা বলতে গিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।