আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেনেডি বিমানবন্দর আ’লীগ বিএনপির সংঘর্ষে রণক্ষেত্র

দীর্ঘ এক পথ শেষে আমি আজ পথের কিনারে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত এবং কালো পতাকা প্রদর্শন নিয়ে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় দলের কমপক্ষে ১০ জন গুরুতর আহত হয়। এ সময় জেএফকের তিন নম্বর টার্মিনাল রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। নজিরবিহীন এই মারামারির জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এবং বিএনপি নেতাকর্মীরা কালো পতাকা প্রদর্শন করতে গিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন এয়ারপোর্টে পৌঁছেন তখনই ঘটে এ ঘটনা। ফলে বিশেষ নিরাপত্তা পথে প্রধানমন্ত্রীকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে যায় নিরাপত্তাকর্মীরা। এতে এয়ারপোর্টে অপেক্ষমাণ শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো সম্ভব হয়নি। এ সময় দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, মারামারি, ধস্তাধস্তিতে আতঙ্কিত বিদেশিদের প্রাণভয়ে দৌড়াতে দেখা যায়।

পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে বাংলাদেশীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা এটাই প্রথম। মূল ধারার বিভিন্ন সংবাদে খবরটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা স্থাপনা এয়ারপোর্টে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা কমিউনিটিতে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার জন্ম দিয়েছে। ঘটনার সময় উচ্ছৃঙ্খল এক ব্যক্তিকে আটক করেছে এয়ারপোর্টের নিরাপত্তারক্ষীরা। মারামারির সময় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা মোস্তফা কামাল পাশা বাবুলের ছেলে রাজু পাশা বেধড়ক পিটুনির শিকার হন।

রক্তাক্ত রাজুকে উদ্ধার করতে তার বাবা মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল এগিয়ে এলে তিনিও শিকার হন সংঘবদ্ধ হামলার। ঘটনা নিয়ে জেএফকে এয়ারপোর্ট পোর্ট কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্রের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এয়ারপোর্টে যে ঘটনা ঘটেছে তা নজিরবিহীন। এতে যেই দায়ী হবে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মুখপাত্র বলেন, এয়ারপোর্টের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় পুরো ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। এখন আইন ভঙের ঘটনার তদন্ত করবে কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, বিষয়টি অবশ্যই গুরুতর। কারণ যে কোনো এয়ারপোর্ট হচ্ছে নিরাপত্তা স্থাপনাসমূহের অন্যতম। সেখানে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা প্রকারান্তরে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিউইয়র্ক সময় রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ৫ শতাধিক নেতাকর্মী জেএফকে বিমানবন্দরে জমায়েত হন। এ সময় তাদের হাতে ছিল ফুল ও শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ও ফেস্টুন।

অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে কালো পতাকা দেখাতে এয়ারপোর্টে গিয়ে জমায়েত হন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি সভাপতি আবদুল লতিফ সম্রাট, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, তারেক পরিষদের সভাপতি আখতার হোসেন বাদল, জাসাস সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক শাহীন, মো. আনোয়ারুল ইসলাম, কাজী আজম, এমএ খালেক আকন্দ, মাওলানা আতিকুল্লাহ, নূরে আলম, আতাউর রহমান আতা, আবদুল বাতেন প্রমুখ। সংবর্ধনা ও প্রতিবাদকারীদের অবস্থান ছিল একেবারেই কাছাকাছি। এ অবস্থায় শুরু থেকেই ছিল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। শুভেচ্ছা স্বাগতম শেখ হাসিনার আগমন ইত্যাদি স্লোগান ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের কণ্ঠে।

অপরদিকে বিএনপি সমর্থকরা কালো পতাকা উঁচিয়ে শেখ হাসিনা যেখানে/প্রতিরোধ সেখানে/ভারতের দালালরা হুশিয়ার সাবধান ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। এ নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। একপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আতিকুল ইসলাম আতিক আসেন বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে। তিনি তাদের অনুরোধ করেন একটু দূরে সরে যেতে। এতে আপত্তি জানান বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এ সময় যুবলীগ নেতা বজলুর রহমান এসে কথা বলেন যুবদল নেতা আবদুল বাতেনের সঙ্গে। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি হয় তুমুল উত্তেজনা। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজাকার আলবদর, বাংলা ছাড় ইত্যাদি স্লোগানে বিএনপি নেতাকর্মীদের আক্রমণ করে। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বাকশালের দালালরা/হুশিয়ার সাবধান বলে পাল্টা স্লোগান দেয়া হয়।

এ সময় ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুন্নবী বাকীর নেতৃত্বে কয়েকজন মারমুখি নেতাকর্মী বিএনপির বিক্ষোভকারীদের সামনে এসে তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় আকস্মিকভাবে শুরু হয় চরম ধস্তাধস্তি। এ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল আক্রান্ত হলে টার্মিনাল জুড়ে এক নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, স্লোগান পাল্টা স্লোগানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। এ সময় দৌড়ে পালাতে দেখা যায় তটস্থ বিদেশিদের।

তাদের লাগেজ ভাংচুর করা হয়। মোস্তাফা কামাল পাশা বাবুল আক্রান্ত হওয়ার পর তার ছেলে রাজু পাশা প্রতিশোধ নিতে ধাওয়া করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। আক্রমণের এ পর্যায়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আকস্মিকভাবে তাকে ঘেরাও করে বেধড়ক কিলঘুষি শুরু করে। তাকে উপুড় করে ফেলে দেয়া হয় ওয়ালের কাছে। এ সময় ফেস্টুনের লাঠি নিয়ে কয়েকজন বেধড়ক পেটাতে শুরু করে তাকে।

এ অবস্থায় মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে উদ্ধার করতে এলে দু’পক্ষের লড়াই ব্যাপক আকার ধারণ করে। এয়ারপোর্টের সিকিউরিটিরা এ সময় ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। এ সময় একজন সিকিউরিটি কর্মীকে যুবলীগ নেতা বজলুর রহমানকে পাজাকোলা করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ অবস্থায় যুবলীগ নেতা মিছবাহ আহমদ ও আখতার হোসেন বাদল পরিস্থিতি শান্ত করতে দু’পক্ষের মধ্যে আপসের চেষ্টা চালান। বিএনপি নেতা আবদুল লতিফ সম্রাট বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুরু করেন।

এ সময় চতুর্দিক থেকে এসে টার্মিনাল ঘেরাও করে পুলিশ। তারা অবস্থান নেয় দু’পক্ষের মাঝখানে। পুলিশ সবাইকে টার্মিনাল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এ অবস্থায় রাজু পাশাকে টার্মিনালের বাইরে পেয়ে যুবলীগ কর্মীরা আবার ধাওয়া করলে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এয়ারপোর্ট পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাইরে নিয়ে যায়।

পুলিশের উপস্থিতিতে এয়ারপোর্টের বাইরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন আবদুল লতিফ সম্রাট, আখতার হোসেন বাদল, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল প্রমুখ। বিএনপি নেতারা বলেন, কালো পতাকা প্রদর্শনকালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তারা ঢাকার লগি বৈঠার রাজনীতি এখানেও চালু করতে চায়; কিন্তু জনপ্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক মিছবাহ আহমদ ও বজলুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর ব্যাহত করতে বিএনপি সমর্থকরা এয়ারপোর্টে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তোপের মুখে তারা পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক খালিদ হাসান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদের মন্তব্য জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর বানচাল করতে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকরা এয়ারপোর্টে রাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সাধারণ প্রবাসীর পরিস্থিতির প্রতিরোধের মুখে শেষ পর্যন্ত তারা হটে যেতে বাধ্য হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা আবদুল লতিফ সম্রাটের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, অসহিষ্ণুতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের চরিত্রে গণতন্ত্র নেই। এটাই প্রমাণিত হয়েছে জেএফকে এয়ারপোর্টে হামলার মধ্য দিয়ে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি আলহাজ কমরউদ্দিন ঘটনার ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, একদলীয় স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার লেলিয়ে দেয়া লোকজন বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করেছে। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে তারা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমান জিল্লুু, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফউদ্দিন ঠাকুর, সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ আহমদ, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয়তাবাদী ফোরামের প্রেসিডেন্ট তোফায়েল চৌধুরী লিটন। নেতারা বলেন, এই ন্যক্কারজনক হামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার প্রমাণ করেছে এখনও তারা ফ্যাসিস্ট বাকশালী শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। তারা মানুষের প্রতিবাদ করার মৌলিক অধিকার গায়ের জোরে দমিয়ে দিতে চায়।

নেতারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.