কে বোঝে কতটা বিষন্ন অনন্ত এই চন্দ্রায়ণ
এসো সমূদ্র জলে পা ভেজাই
# মন মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে কষে জীবনের অংক
বার্ধক্যের সীমানায় একটি দেহ আজ বড় ক্লান্ত বড় পরিশ্রান্ত
মধ্যরাতে ডান হাতে সিগারেটের আগুন
আঙ্গুলের শেষ সীমানায় এখনও রয়েছে জ্বলন্ত!
আজ বহু রাতের নির্ঘুম দু'টি চোখে
কী এক অদ্ভুত মায়ায় ঘুমন্ত।
#স্পর্শকামী আগুনের আঁচে
চমকে উঠে সিগার টা ফেলে
দেখি খোলা দুটি চোখ ধোঁয়ার আস্তরণে
বন্দি বহুদিনের চেনা চারটি দেয়ালে।
বদ্ধ বাতাসে ধোঁয়ার গাথা মালা
তার সাথে হঠাৎই অসহ্য
তামাকের পোড়া গন্ধ
মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে,
অল্প কয়েকটি অবশিষ্ট শ্বাস
প্রায় করেছে বন্ধ..
সমস্ত দেহ ও মনে-
ফেলে আসা জীবনের ব্যর্থতার জ্বালা।
অপূরাণ কামনার ব্যর্থ নির্গত
জৈবিক তরল রসে ভেজা
অঙ্গ হতে হঠাৎ গেল পাওয়া
মৃত কোষের চিরচেনা
আরেক দম বন্ধ করা হাওয়া।
চোখ ফিরিয়ে পাশে
আরেকটি দেহ ভেজা
ঘামে ও রসে..
কামনার স্বপ্নে চোখ দু'টি বুঁজে
ভাবে ও মনে বিরক্তি নিয়ে
বোঝায় বারে বারে
'তুমি তো গেছো ফুরিয়ে..'
হঠাৎ সম্মুখে কে যেন দাঁড়ায়ে
ভয়ংকর সুন্দর কামদেবী মুর্ত্তিতে..
কাছে এসে সে, মমতায় স্পর্শ বুলায়ে
বুক বেঁধে দিল নতুন আশাতে..
'জীবনের অবশিষ্ট শেষ নিশ্বাস
ভরে দিতে পারে, তোমার
চির আকাঙ্ক্ষার সৈকতের বাতাস..'
উঠে গিয়ে খুব গোপনে
এতটুকুও শব্দ না করে
দরজাটা খুলতে, বাহির পানে-
একি! বিশ্বাস করলো না চোখ।
একটা আস্ত সমুদ্র নিয়ে
সৈকত দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপারে..!!
মুহূর্তে তুলি দুই হাত
ঢাকি বার্ধক্যের বলিরেখা আঁকা
ব্যর্থতার বেদনায় ছাওয়া
ভীত সন্ত্রস্ত মুখ...
কিছুক্ষণ পরে হাতটা নামিয়ে
বাড়াতে পা..
হঠাৎ মৃত্যু এসে বলল,
'আগে আমায় পেরিয়ে যা..'
আমি এক পলকে মৃত্যুকে পেরিয়ে
পা রাখলাম সৈকতের বালুতে..
শান্ত সমাহিত নীল সমূদ্র
দিগন্ত পেরিয়ে গিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে
তারই বুক চিড়ে পঞ্চমীর চাঁদ
তার সবটুকু আলো নিয়ে রূপে রূপালী হয়ে
নিশার স্বর্গরথে উঠে বসেছে।
দীর্ঘ জীবন! অতঃপর এক পলকের
মৃত্যুকে পার করে..অবশেষে
সৈকতের বিস্তৃত বালু রাশিতে পা রাখা!!
এইবার মনে হচ্ছে,আমি স্বাধীন!
এখান থেকে আর ফিরতে হবে না!
ফেরাবেও না কেউ কোনদিন।
অনেক অপেক্ষার পর
অনেক ব্যর্থতার পর..
আজ আমার আছে
নিজস্ব এক সৈকত
সম্পূর্ণ নিজস্ব এক সমুদ্র
একখানা পঞ্চমীর রূপালী চাঁদ
যা কখনো অস্ত যাবে না!
আছে অজস্র নক্ষত্র খচিত
অনন্ত অনন্যা মায়াবিনী রাত
যা কখনোই দিন হবে না!!
আমি সূর্যকে কোন দিন চাইনি
শয্যা শেষে ওর মুখ দেখবো না
বলে কোন দিন সকালে উঠিনি;
কী আনন্দ! কী যে আনন্দ!
গেয়ে চলেছে, নেচে চলেছে
মৃদু বাতাসে সমুদ্র জলে
ঢেউয়ের নৃত্য ছন্দ;
এইবার এই ঢেউয়েই, সমুদ্র জলে
এসো পা ভেজাই...
এক পা এগুলেই সমুদ্র..
এইতো নীল জলের প্রথম স্পর্শ
এইতো পাতা জল...
আরে! এইতো হাঁটু জল!
কিন্তু!কিন্তু! আমার সমুদ্র জলে
পা ভেজানোর অনুভূতি কই?
আরে! আমার পা কই?
আরে,আরে! আমার দেহটা কই?
আমি কই?....................নাআআআ!! নাআআআ!!
# অতঃপর সব শেষে, অতি প্রত্যুষে
কয়েক জন পথচারী, দেখতে পেলো পথে
গত রাতের থেবড়ে যাওয়া মস্তিষ্কের একটি বাসী লাশ।
সমুদ্র জলে নয়! লাল তরলে ভেজা। ।
(১৬/০৯/০৬)
[ছবি:ইন্টারনেট]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।