সুখ চাহি নাই মহারাজ—জয়! জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ। ক্ষুদ্র সুখে ভরে নাকো ক্ষত্রিয়ের ক্ষুধা কুরুপতি! দীপ্তজ্বালা অগ্নিঢালা সুধা জয়রস, ঈর্ষাসিন্ধুমন্থনসঞ্জাত,সদ্য করিয়াছি পান—সুখী নহি তাত, অদ্য আমি জয়ী।
(চিত্রনাট্য, দৈর্ঘ্যঃ সম্ভাব্য ৬০ মিনিট)
দৃশ্যঃ ১/ সময়ঃ সন্ধ্যা/ স্থানঃ রাস্তা
ঢাকার অদূরেই উত্তরার কোন এক সেক্টরের ভিতরের দিকে একটি দোতলা বাড়ি। সড়কটি এখনও অনেকটা নিড়িবিলি, কারণ জায়গাটা একটু ভিতরের দিকে বলে যানজট এখনও গ্রাস করতে পারেনি তাকে। আসেপাশের নতুন গজিয়ে উঠা বাড়িগুলোও একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো- সনাতনী মধ্যবিত্ত প্রতিবেশীসুলভ মাখামাখি বাড়িগুলোর মধ্যে নেই।
সন্ধ্যে হলে রাস্তায় মিউনিসিপালিটির বাতিগুলো জ্বলে উঠে বটে, তবে বাতির আলোগুলো টিমটিমে, বেশ কিছু স্ট্রিট লাইটও নষ্ট। যে দোতলা বাড়িকে নিয়ে এই গল্পের খসড়া, তার সামনের স্ট্রিট লাইটের বাতিটি নষ্ট। বাড়ির সামনের রাস্তাটা তাই প্রায়োন্ধকার হয়েই থাকে। ক্যামেরায় দোতলা বাড়ি ও সংলগ্ন রাস্তার মিক্সড শট্ দেখানো হবে।
কাট টু
দৃশ্যঃ ২/ সময়ঃ সন্ধ্যা/ স্থানঃ বাড়ির ভিতর
এবার বাড়ির ভিতর যাওয়া যাক।
বাইরের মেইন গেইট দিয়ে একটু হেঁটে ভিতরে এলে বাড়ির প্রবেশ দরজা। দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলে প্রথমেই একটা ছোট এনট্রেন্স। এনট্রেন্সে কিছু বিসাদৃশ্য ক্যাক্টাস গাছের টব রাখা আছে। ক্যাক্টাসের আকৃতি ও গঠনগুলো একটু যেন বেমানান, যেনবা ঘর সাজাবার জন্য এগুলো ঠিক যায় না। এনট্রেন্সের ডান দিকের দেয়ালে একটি পুরোন আমলের বেশ বড় সাইজের পেন্ডুলাম ঘড়ি দেয়ালে ঝুলানো আছে।
দেয়াল ঘড়িটা অনেকটা এন্টিক ধরণের।
এনট্রেন্স দিয়ে ঢুকে একটু বাঁয়ে মোড় নিলেই মূল ড্রয়ইং রুম। ড্রয়ইং রুমের একদিকের দেয়ালে এন্টিক সাদৃশ্য বিভিন্ন সাইজের বেশ কিছু মুখোশ টাঙানো আছে। জানালার ভারী পর্দাগুলো ভালো করে ঢাকা। খুব দামী নয়, তবে রুচীশীল কয়েকটা সোফা পরিপাটি অবস্থায় সাজানো আছে।
মাঝখানে একটি সেন্ট্রাল টেবিল। টেবিলে পরিপাটি সাজানো কিছু ম্যাগাজিন ও একটি ফ্লাওয়ার ভাস। এক কোণে একটা টিভি। টিভি চলছে।
ড্রয়ইং রুম পেরিয়ে একটি ডাইনিং স্পেইস।
ওখানে একটা বড় ডাইনিং টেবিল। ডাইনিং স্পেইস-এর ডান ও বাম দিকে যথাক্রমে কল্পিত রান্নাঘর ও ব্যালকনি।
মিক্সড টু
দৃশ্যঃ ৩/ সময়ঃ সন্ধ্যা/ স্থানঃ বাড়ির ভিতর
দৃশ্যের শুরুতেই ক্যামেরার ফ্রেইমে দেয়ালে ঝুলানো বড় পেন্ডুলাম ঘড়িটা দেখানো হবে। ঘড়িতে রাত ৭টা ৪৫ মিনিট। ব্যাকগ্রাউন্ডে টিভি সাউন্ড শুনা যাচ্ছে, কোন একটা এ্যাকশানধর্মী মুভির শব্দ।
খন্ড খন্ড শট্-এ এনট্রেন্সের ক্যাক্টাস গাছ, দেয়ালে ঝুলানো মুখোশ, সেন্ট্রাল টেবিলের ম্যাগাজিন ইত্যাদি দেখানো হবে। এরপর ক্যামেরা ধীরে ধীরে প্যান করে একটা সোফার পেছনের দিকে দেখিয়ে টিলট্ আপ করে ব্যাক টু ক্যামেরায় একটি মেয়ের সাইড ফেইস-এ এসে স্থির হবে। মেয়েটি দাঁত দিয়ে নখ খুঁটছে। তার দৃষ্টি সামনে টিভি পর্দায়।
ড্রয়ইং রুমে টেবিল ল্যাম্পটা শুধু জ্বলছে।
ল্যাম্প ও টিভি পর্দার আলো মেয়েটির সাইড এঙ্গেল-এর উপর একটা আলো ছায়ার প্রতিচ্ছবি তৈরী করছে। সোফায় পা দুটো লম্বা করে ফেলে বসে আছে মেয়েটা। ক্লোস শট্-এ দু’পায়ের পাতা কচলানোর দৃশ্য। টিভি পর্দায় কোন এ্যাকশান ছবির গাড়ি চেসিং-এর দৃশ্য। ক্লোস শট্-এ এবার মেয়েটির পূর্ণ মুখ দেখা যাবে।
এখনো দাঁত দিয়ে নখ খুঁটছে সে। এই সময় টিভিতে গাড়ি এক্সিডেন্টের তীক্ষ্ণ শব্দ। এবং তার পরক্ষণেই রাস্তায় একই রকম একটা তীক্ষ্ণ শব্দ শুনা যাবে। মেয়েটা হতবিহ্বল মুখে একবার পর্দা ঢাকা জানালার দিকে তাকায়। পরমূহুর্তেই টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে আবার জানালার দিকে তাকায়।
যেন বা বুঝার চেষ্টা করছে গাড়ি এক্সিডেন্টের শব্দ শুধুই কি টিভি পর্দা থেকে আসলো নাকি রাস্তায়ও একই শব্দ হলো। মেয়েটা এবার মুচকী হেসে দু’দিকে মাথা নেড়ে আবার টিভি দেখায় মন দেয়। মেয়েটার পড়নে একটা আটপৌরে মেক্সি।
কাট
দৃশ্যঃ ৪/ সময়ঃ রাত/ স্থানঃ বাড়ির ড্রয়ইং রুম
ফ্রেইমে বাড়ির দরজা দেখা যাবে। অফ স্ক্রীনে কলিং বেইল-এর শব্দ শুনা যাবে।
মেয়েটা একবার তার হাতঘড়ির দিকে তাকায়। তার চোখে মুখে বিরক্তির অভিব্যক্তি। মেয়েটা সোফা ছেড়ে উঠে দরজার পিপ হোল-এ চোখ রাখে।
ঐশিঃ কে?
জামানঃ (অফ ভয়েস) এটা কি ঐশিদের বাসা?
ঐশিঃ জ্বী। কিন্তু আপনাকে তো ঠিক...
জামানঃ (অফ ভয়েস) আমি জামান।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের জামান ভাই। তুমি কি ঐশি?
(ঐশি পিপ হোল থেকে চোখ সরিয়ে ঠোঁট কামড়ে কী যেন চিন্তা করে। )
ঐশিঃ জা-মা-ন ভাই! মানে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের জামান ভাই?
জামানঃ (অফ ভয়েস) হাঃ হাঃ হাঃ... চিনতে পেরেছো তাহলে? আমি কিন্তু তোমার গলা শুনেই চিনে ফেলেছি যে তুমি ঐশি।
ঐশিঃ (একটু ইতস্ততঃ ক’রে) প্লিস একটু দাঁড়ান।
(ঐশি টিভি বন্ধ করে, তারপর সোফার কাছে যেয়ে পড়ে থাকা ওড়নাটা দ্রুত গায়ে দিয়ে এসে দরজা খুলে।
ক্যামেরা জামানের উপর চার্জ করে। জামানের মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে একটা ওভাল শেইপ-এর চশমা। চুলগুলো খুব বেশি পরিপাটি নয়। পড়নে অতি সাধারণ একটা ঢোলা হাওয়াই শার্ট ও টেট্রন প্যান্ট। জামানের মুখে হাসি।
তার একটা হাত পেছনের দিকে আড়াল করা। )
জামানঃ চিনতে পারছো তো?
ঐশিঃ জামান ভাই, আপনি? কী আশ্চর্য! এতো দিন পর হঠাৎ...
জামানঃ ভয় হচ্ছিল তুমি যদি আমাকে চিনতে না পারো! কি বিব্রতকর অবস্থা হতো, বলো তো? হাঃ হাঃ হাঃ...
ঐশিঃ ইয়ে মানে... প্রথমে আসলেই চিনতে পারিনি... আপনি বেশ চেঞ্জ হয়ে গেছেন।
জামানঃ তাই কি? চেঞ্জ এর মধ্যে শুধু আমার এই চশমাটাই...
ঐশিঃ আসুন না, ভিতরে আসুন... অবশ্য আমার হাসবেন্ড এখনো ফেরেনি। ওর কিন্তু এতোক্ষণে চলে আসার কথা।
(ঐশি আবার হাতঘড়িটা দেখে।
)
জামানঃ হ্যাঁ, শুনলাম তুমি বিয়ে করেছ। তোমার সাথে তো শেষ কবে যেন দেখা হলো, মনেই নেই। ভাবলাম তোমার বরের সাথেও পরিচয়টা এই ফাঁকে হয়ে যাবে।
(ঐশি জামানকে একটা সোফা দেখিয়ে...)
ঐশিঃ বসেন না! ও এখনি চলে আসবে।
(জামান হঠাৎ পিছনের আড়াল করা হাতটা ঐশির দিকে তুলে ধরে।
ওর হাতে একটা লাল গোলাপের লম্বা স্টিক। )
জামানঃ তোমার বিয়ের শুভেচ্ছা।
ঐশিঃ ওহ... থ্যাঙ্কস!
(ঐশি গোলাপের স্টিকটা হাতে নিয়েই ‘আহ’ করে অস্ফুট শবড করে উঠে। তারপর একটা আঙুল মুখে ঢুকিয়ে চুষতে থাকে। আরেক হাত দিয়ে গোলাপের স্টিকটা পাশেই সোফার উপর রাখে।
)
জামানঃ কী হলো!
ঐশিঃ না না তেমন কিছু নয়... ঐ একটা কাঁটা হঠাৎ করে...
(ঐশি মুখ থেকে আঙুলটা বের করে। ছোট্ট এক বিন্দু রক্ত তার আঙুলের ডগায়। )
ঐশিঃ না না তেমন কিছু নয়... ঐ একটা কাঁটা হঠাৎ করে...
জামানঃ বলো কী! দেখি দেখি!
ঐশিঃ (সোফায় বসতে বসতে) আপনি বসুন তো! এটা কোন ব্যাপারই না।
জামানঃ (বসতে বসতে) আশ্চর্য! বেটারা যে ডালের কাঁটাগুলো ঠিকঠাক মতো পরিষ্কার দেবে... তা না!
ঐশিঃ বাদ দিন। সামান্য একটা কাঁটা।
এবার বলেন তো, হঠাৎ এতোদিন পর কি মনে করে?
জামানঃ হাঃ হাঃ হাঃ... কঠিন প্রশ্ন করলে। কাউকে মনে করতে আবার কোন অজুহাত লাগে নাকি?
(ঐশি চট করে আবার হাতঘড়িটা দেখে নেয়। )
ঐশিঃ না না, আমি তা মীন করিনি। আসলে এতো বছর পর... তা ৬/৭ বছর তো হবেই!
জামানঃ ৬ বছর ৮ মাস ২৬১ দিন... টু বি প্রিসাইস... হাঃ হাঃ হাঃ...
ঐশিঃ (চোখ গোল গোল করে) বলেন কী! একদম দিনক্ষণ পর্যন্ত হিসেব করে রেখেছেন?
জামানঃ আমি কিন্তু একাউন্টেন্টে আমার ডিপার্টমেন্টে সেরা ছাত্র ছিলাম, ভুলে গেছ?
(ঠিক এই সময় দেয়ালে ঝুলানো পেন্ডুলাম ঘড়িটা ঢং ঢং শব্দে বেজে উঠে। ক্লোস শট্-এ ঘড়িতে ৮টা বাজতে দেখা যায়।
দেয়াল ঘড়ির ঢং ঢং শব্দে ঐশির রিএ্যাকশান দেখানো হবে। ঘড়িতে ৮টা বাজার শব্দ শেষ হওয়া পর্যন্ত দু’জনের নিরবতা। )
ঐশিঃ হাসানটার যে কী এক স্বভাব! যত দুনিয়ার এন্টিক আর পুরোন জিনিস এনে বাসাটা সাজাবে। এমন পেন্ডুলাম মার্কা ঘড়ি আজকাল আর কেউ ইউস করে, বলেন?
(জামানের ঠোঁটে মুচকী হাসি। )
জামানঃ বছর দু’য়েক তো হলোই তোমাদের বিয়ের, তাই না?
ঐশিঃ হ্যাঁ, তা তো হলোই।
কিন্তু জামান ভাই, আপনি আমার খোঁজ কি করে পেলেন বলুন তো?
জামানঃ তোমাদের অনার্স ক্লাসে পড়তো মোনা মেয়েটা... মনে আছে? ঐ যে তোমার তখনকার সেই বেস্ট ফ্রেইন্ড...
ঐশিঃ ওহ্, মোনা তো এখন ঢাকায়। মাঝে মাঝে ফোনে যোগাযোগ হয়। তবে খুব রেয়ার।
জামানঃ সেই মোনার খালা আর আমার বড় বোন কিন্তু বেশ ভালো বন্ধু। কুমিল্লা শহরে দু’জনরেই বাড়ি কাছাকাছি।
ঐশিঃ আচ্ছা?
জামানঃ সেদিন বোনের বাসায় গেলাম, দেখি মোনা ওখানে। অনেকদিন দেখা হলো। ওর কাছ থেকেই তোমার বাসার ঠিকানা, ফোন নাম্বার- এসব পেলাম।
ঐশিঃ তাই? কিন্তু মোনা তো আমাকে এসব কিছুই জানায় নি! যাকগে, ফোন দিলেই পারতেন।
জামানঃ (হেসে) পারতাম।
কিন্তু ভাবলাম ঢাকায় যখন এসেছি, একবারে বাসায় এসে তোমাদের দু’জনকে একটা সারপ্রাইস দেই।
ঐশিঃ কবে এসেছেন ঢাকায়?
জামানঃ এই তো আজ দুপুরেই। কাল দুপুরের বাসে আবার রাজশাহী ছুটবো।
ঐশিঃ রাজশাহী কেন?
জামানঃ ওখানে একটা বাইং হাউসের চিফ একাউন্টেন্টের জব পেলাম। কুমিল্লা কলেজে ছাত্র ঠেঙ্গাতে ঠেঙ্গাতে একদম হাঁপিয়ে উঠেছিলাম।
ঐশিঃ তারপরও... কুমিল্লাতেই তো আপনি সেটলড্। নতুন জায়গায় গিয়ে ভালো লাগবে?
জামানঃ “আমি যেথা যাই, সেথা সর্বত্র সমভাবে যাই...”, হাঃ হাঃ হাঃ...
ঐশিঃ (একটু ইতস্তত ভঙ্গিতে) জামান ভাই, চা চলবে তো?
জামানঃ তা একটু চলতে পারে। ততক্ষণে আশা করি তোমার হাসবেন্ড, মানে হাসান চলে আসবে নিশ্চয়ই। দেখাটা করেই না হয় উঠি।
ঐশিঃ (হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে) ও কিন্তু এতো দেরী করে না।
সাতটার মধ্যেই চলে আসে বাসায়।
জামানঃ ঢাকায় যে ট্র্যাফিক জ্যাম! সাতটার ঘড়ি হয়তো দেখা যাবে রাত বারটায় গিয়ে ঠেকেছে।
ঐশিঃ মানে?
জামানঃ কিছু না... ওই কথার কথা আর কী! হাঃ হাঃ হাঃ...
ঐশিঃ (উঠে দাঁড়িয়ে) আমি চট করে চা করে নিয়ে আসি। আপনি একটু বসুন।
জামান মুচকী হেসে মাথা নাড়ে।
ঐশি ফ্রেইম আউট হয়।
কাট
দৃশ্যঃ ৫/ সময়ঃ রাত/ স্থানঃ বাড়ির ড্রয়ইং রুম
ক্লোস শট্-এ দু’টো পায়ের পাতা দেখা যাবে। পায়ে সস্তা চামড়ার স্যান্ডেল। স্যান্ডেলে কাঁদা মাখা। ক্যামেরার ফ্রেইম ধীরে ধীরে ওয়াইড হয়।
ব্যাক টু ক্যামেরায় জামানের পূর্ণ অবয়ব। জামান এক দৃষ্টিতে দেয়ালে ঝুলানো মুখোশগুলো দেখছে। এক সময় একটা মুখোশ হাতে তুলে নিয়ে জামান ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকে। এই সময় ওয়াইড শট্-এ ঐশি ফ্রেইম ইন করে। তার হাতে ট্রে।
ট্রে তে চা, বিস্কুটের প্লেইট ও এক গ্লাস পানি। ঐশি জামা বদলে একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছে। ঐশি দাঁড়িয়ে প্রে কিছুক্ষণ জামানকে দেখে, তারপর ডাইনিং স্পেইস থেকে ড্রয়ইং রুমে পা রাখে।
জামানঃ সরি, মুখোশটা হাতে নিয়ে দেখছি...
ঐশিঃ (ট্রে টা টেবিলে রাখতে রাখতে) ইটস ওকে। নিন, চা নিন।
জামানঃ জিনিসটা খুব ইন্টেরেস্টিং। এটা অরিজিনালি কোথাকার?
ঐশিঃ (হেসে) তা তো জানি না! ওগুলো সব ওর কালেকশান। দুনিয়ার যত সব উদ্ভট জিনিস এনে ঘর ভরিয়ে রাখে।
জামানঃ যার যেমন শখ। যেমন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়াতে পড়ার সময় তুমি মার্কেটিং আর একাউন্টিং বইয়ের ভাঁজে গাছের পাতা, গোলাপের পাঁপড়ি, ময়ুরের পেখম গুঁজে রাখতে... হাঃ হাঃ হাঃ...
ঐশিঃ তখনকার ছেলেমানুষীগুলো বেশ মধুর ছিল।
জামানঃ (মুখোশ দেখতে দেখতে) মুখোশের আদলটা অনেকটা নিউজিল্যান্ডের মাউরি এবরিজিনদের মুখোশগুলোর মতো।
ঐশিঃ আপনার ইন্টেরেস্ট আছে নাকি এসব ব্যাপারে?
জামানঃ একটু আধটু।
(জামান মুখোশটা দেয়ালের যথাস্থানে ঝুলিয়ে রাখে। মুখোশটা চোখে লাগার মতো বাঁকা হয়ে ঝুলতে থাকে। ঐশি তা লক্ষ্য করে।
জামান ও ঐশি সোফায় এসে বসে। )
ঐশিঃ আমার অনেক কথাই তাহলে আপনার মনে আছে?
জামানঃ যেমন?
ঐশিঃ ঐযে বইয়ের পাতায় আমার টুকটাক এটা ওটা ভাঁজ করে রাখার অভ্যাসের ব্যাপারটা...
জামানঃ ওহ্... তুমি তো প্রায়ই আসতে পড়াশুনার ব্যাপারে হেল্প নিতে। কিছু স্মৃতি তাই মনে গেঁথেই আছে।
ঐশিঃ আপনি কিন্তু বেশ বোকা টাইপ ছিলেন।
জামানঃ তাই নাকি?
ঐশিঃ একাউন্টিং আর মার্কেটিং-এর নোটগুলো যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখতেন।
কাউকে দিতেন না। আমিই শুধু ব্যতিক্রম ছিলাম...
জামানঃ অত খেটেখুটে বানানো আমার কষ্টের নোটগুলো... শুধু তুমি চাইলেই আর না করতে পারতাম না।
ঐশিঃ আপনি তখন মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে, আর আমি সবে মাত্র অনার্স। অথচ আমি মনে হয় আপনার চািতে বেশী চালাক ছিলাম... হাঃ হাঃ হাঃ...
জামানঃ আসলেই তাই। মনে আছে, সিনেমা দেখতে যাবার কথাটা? তোমরা এক গ্রুপ মেয়ে মিলে আমার কাছ থেকে কেমন টিকেটের পয়সাটা হাতিয়ে নিতে?
ঐশিঃ আর আপনি টাকাটা দিতে দিতে কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, “ঐশি, তুমিও যাচ্ছো তো দেখতে?”
জামানঃ সত্যি, ঐ বয়সের... মানে স্কুল কলেজ জীবনের স্মৃতিগুলো সারাজীবন বয়ে বেড়াই আমরা।
(দু’জনের কিছুক্ষণ নিরবতা। সেন্ট্রাল টেবিলে গুছিয়ে রাখা কিছু ম্যাগাজিন থেকে দুটো ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে জামান উল্টেপাল্টে দেখে। তারপর ম্যাগাজিন দুটো যথাস্থানে না রেখে টেবিলে অন্য প্রান্তে রাখে। ঐশির দৃষ্টিতে ব্যাপারটা ধরা পরে। )
জামানঃ তোমার বাবাকে দেখলেই খুব নারভাস লাগতো।
একবার তোমার বাসায় নোট পৌঁছে দিতে যেয়ে একদম উনার মুখোমুখি!
ঐশিঃ মনে আছে। আপনি প্রশ্নবাণে একেবারে জর্জরিত... বাবার পারসোনালিটিটা বাইরে থেকে ওরকমই। আফটার অল কুমিল্লার ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার বলে কথা! এমনি কিন্তু বাবা বেশ জলি একটা মানুষ ছিলেন।
জামানঃ ছিলেন, মানে?
ঐশিঃ বছর তিনেক হলো উনি আর নেই।
জামানঃ ওহ্ সরি!... আর তোমার মা?
ঐশিঃ মা আছেন।
ধানমন্ডিতে ভাইয়ার সাথে থাকেন।
(দু’জনের নিরবতা। )
জামানঃ তোমার বরের কথা বলো। কি করেন উনি?
ঐশিঃ হাসান একটা ওষুধ কম্পানীর হেড অফ মার্কেটিং। কাজের ব্যাপারে ভীষণ সিনসিয়ার একটা মানুষ।
ভালই আছি আমরা।
(দেয়ালে ঝুলানো পেন্ডুলাম ঘড়িতে রাত দশটার ঘন্টা বেজে উঠে। ঐশির রিএ্যাকশান। )
জামানঃ দশটা বেজে গেল। আমার মনে হয় এবার উঠা উচিত।
ঐশিঃ যাবেন? কিন্তু হাসানের তো এতো দেরী হবার কথা নয়!
জামানঃ প্রফেশনাল ফিল্ডে দেরী হয়ে যায় এরকম দু’একদিন।
ঐশিঃ তারপরও... দেরী হলে ও সবসময়ই ফোন করে জানায়। ... আমার খুব খারাপ লাগছে জামান ভাই। এতোদিন পর দেখা... যত্ন করে আপনাকে কিছু খেতেও দিতে পারলাম না...
জামানঃ ওসব ফরমালিটির কোন দরকার নেই। ঢাকায় এসেছিলাম, ভাবলাম তোমার সংসারটা একবার দেখে যাই।
ঐশিঃ খুব অসুবিধা না হলে আরও কিছুক্ষণ বসবেন প্লিস? রাতে ডিনারটা অন্ততঃ করে যান। ততক্ষণে ও নিশ্চয়ই চলে আসবে।
জামানঃ উম... আমার কোন আপত্তি নেই।
ঐশিঃ আমি তাহলে টেবিলে খাবারটা লাগিয়ে আসি।
ঐশি উঠে ফ্রেইম আউট হয়।
কাট
দৃশ্যঃ ৬/ সময়ঃ রাত/ স্থানঃ বাড়ির কিচেন
টাইট ফ্রেইমে ঐশিকে দেখা যাবে মোবাইল ফোনে ডায়াল করছে। ও প্রান্তে কেউ ফোন ধরছে না। ঐশির রিএ্যাকশান।
কাট
দৃশ্যঃ ৭/ সময়ঃ রাত/ স্থানঃ বাড়ির ড্রয়ইং রুম
জামান পকেট থেকে একটা ট্যাবলেটের স্ট্র্যাপ বের করে টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে পানি নিয়ে একটা ট্যাবলেট খায়। স্ট্র্যাপ-এর শেষ ট্যাবলেট ওটা।
জামান খালি স্ট্র্যাপটা নিজের অজান্তেই টেবিলের উপর রাখে। পকেট থেকে একটা টিস্যু পেপার বের করে এবার সে তার চশমার গ্লাস পরিস্কার করে। অফ স্ক্রিণে ডাইনিং স্পেইস থেকে প্লেট গ্লাস ইত্যাদি টেবিলে রাখার শব্দ আসছে। জামান কল্পিত ডাইনিং স্পেইসের দিকে একবার তাকিয়ে নেয়। তারপর টিস্যু পেপারটা দিয়ে নাক ঝেড়ে পরিস্কার করে টিস্যুটা কোথায় ফেলবে বুঝতে না পেরে একসময় টেবিলের উপর দলা পাকিয়ে রেখে দেয়।
জামান এরপর উঠে দাঁড়ায়। টিভির উপর রাখা সুদৃশ্য ডেস্ক ক্যালেন্ডার দেখতে থাকে। ক্লোস শট্-এ মার্চ মাসের পাতা দেখা যাচ্ছে। জামান ডেস্ক ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে উলটে ছবিগুলো দেখতে থাকে। December লেখা পাতার ছবি দেখছে জামান।
এই সময় ঐশির প্রবেশ। জামান ডেস্ক ক্যালেন্ডারটি ঠিক ওই অবস্থায় রেখে ঐশির উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায়।
ঐশিঃ খাবার গরম করে রেডি করে রাখলাম। ও আসলেই বসে যাবো একসাথে।
(ঐশির দৃষ্টি টেবিলের দিকে যায়।
টেবিলে ছড়ানো ট্যাবলেট স্ট্র্যাপ, দলা পাকানো টিস্যু পেপার, ম্যাগাজিনগুলো অগোছালো। )
জামানঃ আমার মনে আছে, কলেজে থাকতে তুমি ভীষণ অগোছালো ছিলে।
ঐশিঃ তাই কি?
জামানঃ শেয়ার ইস্যু, এমালগেমেশান, ফাইনাল একাউন্ট... সব অংকগুলো একটা ঢাউস খাতায় করতে। যতবার বলতাম প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা খাতা বানাতে, ততবারই তুমি হেসে উড়িয়ে দিতে।
ঐশিঃ আপনি বকাটাও ঠিক মতো দিতে পারতেন না।
আমাকে বকা দিতে যেয়ে মনে হতো নিজেই কষ্ট পাচ্ছেন... হাঃ হাঃ হাঃ...
জামানঃ হাঃ হাঃ হাঃ... সত্যি, তোমার মতো অমন এলোমেলো টাইপ মেয়ে আমি দেখিনি। অথচ এখন দেখ! সবকিছু কেমন গোছানো... তোমার ঘরদোর, তোমার জীবন...
ঐশিঃ আর আপনার জীবন?
জামানঃ অমাবস্যা... ঘোর অমাবস্যা... হাঃ হাঃ হাঃ...
(ঠিক এই সময় এলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। সারা ঘরে নিকষ অন্ধকার নেমে আসে। ঐশি ‘ওহ্ নো’ বলে একটা অস্ফুট শব্দ করে উঠে। )
জামানঃ লোড শেডিং।
ঐশিঃ একটু দাঁড়ান, আমি আলো নিয়ে আসছি।
(ঐশির হেঁটে বেরিয়ে যাবার পায়ের শব্দ শুনা যায়। কিছুক্ষণ নিরবতা। তারপর অন্ধকারের মধ্যেই ভরাট কন্ঠে একটা রবীন্দ্রসংগীত গাইবার আওয়াজ শুনা যায়। জামান রবীন্দ্রসংগীত গাইছে- ‘তুমি মোর পাও নাই পাও নাই পরিচয়/ তুমি যারে জানো সে যে কেহ নয়/ পাও নাই পরিচয়...’।
একটা চার্জার লাইট হাতে ঐশি ফ্রেইম ইন করে। )
ঐশিঃ (হেসে) গান গাইতে তো আপনাকে কখনও শুনিনি!
জামানঃ এই লোডশেডিং-এর ঘুটঘুটে অন্ধকারে বসে থাকার যন্ত্রণা এড়াতে গান হলো সবচে’ উত্তম দাওয়াই, বুঝলে?
ঐশিঃ আইডিয়াটা মন্দ না। কিন্তু কেমন লাগে, বলেন তো! এই টাইমটাতে আমাদের এখানে কখনই কারেন্ট যায় না। বিকেলেই তো একবার গেল এক ঘন্টার জন্য...
জামানঃ তাই? তাহলে দেখো একটু পরেই চলে আসবে... বিকেলে যখন একবার গেছে...
ঐশিঃ তাই যেন হয়! এই অন্ধকারে বসে থাকার যন্ত্রণাটা যে কী! হাসানটাও এখনও ফিরছে না। জানেন, ওর উপর এখন আমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে!
জামানঃ হুম... চিন্তিত হবারই কথা... অলমোস্ট এগারোটা বাজে...
ঐশিঃ এই একটু আগেই আবার ফোন দিলাম।
কিন্তু যেই কে সেই- মোবাইল বন্ধ!
জামানঃ আমি কি একবার বাইরেটা যেয়ে দেখে আসবো?
ঐশিঃ তারচে’ আরেকটু ওয়েইট করে দেখি...
জামানঃ সেটাই ভালো।
(দু’জনের নিরবতা। ঐশি দাঁত দিয়ে নখ খুঁটছে। )
জামানঃ তোমার এই অভ্যাসটা এখনও তাহ্লে আছে?
ঐশিঃ কোনটা?
জামানঃ এই যে, নখ খাবার অভ্যাসটা।
ঐশিঃ ওহ্... এটা আমার ছোটবেলা থেকেই...
জামানঃ তোমার ছোটবেলার কথা জানি না, তবে কলেজে পরীক্ষার আগে দিয়েই দেখতাম সমানে নখ খাওয়া চলছে।
ঐশিঃ আপনি আমাকে খুব খুঁটিয়ে লক্ষ্য করতেন, তাই না?
জামানঃ তোমার তাই মনে হতো?
ঐশিঃ টের পেতাম।
জামানঃ আর কি কি টের পেতে?
(ঐশি পূর্ণ দৃষ্টি মেলে জামানের মুখের দিকে নিরবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। )
ঐশিঃ থাক ওসব কথা।
(জামান টেবিল থেকে গ্লাসটা তুলে অল্প পানি খায়। )
ঐশিঃ আপনার হোটেলটা কোথায়?
জামানঃ মহাখালীতে।
ঐশিঃ আপনার সাথে তো ট্রান্সপোর্ট নেই। এতো রাতে হোটেলে ফিরতে নিশ্চয়ই বেশ ঝামেলা হবে!
জামানঃ ঝামেলার কিছু নেই। রাস্তায় একটা কিছু পেয়ে যাবো।
ঐশিঃ তবু... আমার বেশ খারাপ লাগছে...
জামানঃ খারাপ লাগার কিছু নেই ঐশি। তুমি তো ডাকোনি, আমি নিজেই এসেছি।
ঐশিঃ হঠাৎ এতোদিন পর কেন এসেছেন দেখা করতে, জামান ভাই?
জামানঃ এই প্রশ্নতা তুমি আগেই একবার করেছ। আমিও উত্তর দিয়েছি।
(দু’জনের নিরবতা। )
ঐশিঃ একটা প্রশ্ন করবো?
(জামান নিরবে ঐশির দিকে তাকায়। )
ঐশিঃ আপনি কি আমার প্রেমে পড়েছিলেন?
(ঠিক এই সময় এলেক্ট্রিসিটি চলে আসে।
ঘরের বাতি জ্বলে উঠে, এবং তারপরই দেয়ালের পেন্ডুলাম ঘড়িটিতে ঢং শব্দে রাত বারটা বাজার শব্দ শুনা যায়। ঐশি চমকে ঘড়িটার দিকে তাকায়। ক্লোস শট্-এ ঘড়িতে বারোটা বাজার দৃশ্য। )
ঐশিঃ (অস্ফুট কন্ঠে) বারোটা বাজলো! ... আমার ভীষণ টেনশান লাগছে...
জামানঃ সব যন্ত্রণারই অবসান আছে। টেনশান ক’রো না।
এই যে যেমন দেখ, অন্ধকার কেটে আবার আলো ফিরে এলো!
ঐশিঃ আপনি... আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন?
জামানঃ (মৃদু হেসে) কে জানে! পৃথিবীর কিছু কথা অর্থবহ রয়ে যায়, কিছু কথা ঠাট্টাই থেকে যায়...
(ঐশি জামানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, তারপর মোবাইল হাতে নিয়ে ডায়াল করে। ঠিক এই সময় বেশ জোরে জোরে একই সাথে কলিং বেল আর দরজা নক্-এর শব্দ হয়। )
ঐশিঃ (উত্তেজিত স্বরে) নিশ্চয়ই হাসান!
(ঐশি মোবাইল রেখে একরকম দৌড়ে দরজা খুলতে চলে যায়। ক্যানেরা ধীরে ধীরে জামানের মুখ চার্জ করে। )
ঐশিঃ (অফ ভয়েস) কে? হাসান?
হাসানঃ (অফ ভয়েস) ঐশি, দরজা খোলো!
ক্লোস শট্-এ জামানের মুখে মৃদু হাসি খেলে যাবে।
কাট
দৃশ্যঃ ৮/ সময়ঃ রাত/ স্থানঃ ভিতর বাড়ির এন্ট্রেন্স
ঐশি দ্রুত হাতে দরজা খুলে। হাসান দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একতা অফিস ব্যাগ। চেহারায় একটা বিধ্বস্ত ভাব। টাই-এর নট্-টা অল্প খোলা।
ঐশিঃ (ভীষণ উদ্বিগ্ন কন্ঠে) কোথায় ছিলে তুমি? তুমি ঠিক আছো তো?
(হাসান দরজা পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এসে দাঁড়ায়। )
হাসানঃ সরি ঐশি। একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পরেছিলাম। কিন্তু তোমার ব্যাপারটা কি, বলো তো? না হলেও ১৫/২০ বার ফোন দিলাম তোমাকে। রিং হয়, কিন্তু তুমি ফোন ধরছো না!
ঐশিঃ ফোন ধরছি না- মানে? কই, আমি তো কোন কল পাইনি! আমিই বরং উল্টো তোমাকে ফোনের পর ফোন দিয়ে যাচ্ছি, অথচ তোমার মোবাইল বন্ধ।
হাসানঃ আমার মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই জন্যই তো তোমাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন দিচ্ছিলাম। কিন্তু...
ঐশিঃ বিশ্বাস করো, আমি তো কোন ফোন পাইনি!
হাসানঃ আশ্চর্য!
ঐশিঃ ঠিক কি হয়েছে, বলো তো হাসান! কোথায় ছিলে এত রাত পর্যন্ত? কি ঝামেলায় জড়িয়েছিলে?
হাসানঃ আর বলো না! আমি তো বাসাতেই ফিরছিলাম। সাড়ে সাতটার মত বাজে হয়তো তখন। বাসার কাছাকাছি আসতেই দেখি একটা ভ্যান গাড়ি দ্রুত অপসিট সাইড দিয়ে আসছে।
সম্ভবত কন্ট্রোল হারিয়ে বিকট শব্দ করে গাড়িটা ক্সিড কেটে ঘুরে গেল। আর তারপরই সাইড দিয়ে হেঁটে যাওয়া একতা লোককে ধাক্কা দিয়ে ভ্যানটা ছুটে পালিয়ে গেল।
ঐশিঃ বলো কী!
হাসানঃ আমি আর কী করবো! বাধ্য হয়ে গাড়ি থামিয়ে লোকটার কাছে গেলাম। দেখি রক্তে ভিজে যাচ্ছে শরীর। সিরিয়াসলী ইনজুরড্! শেষে আশেপাশের দু’তিনজন লোকের সাহায্যে ওকে ধরাধরি করে গাড়িতে তুলে সোজা হসপিটাল।
ঐশিঃ তুমি শুধু শুধু কেন এসবের মধ্যে জড়াতে যাও, বলো তো? লোকটাকে হাসপাতালে দিয়ে চলে আসলেই পারতে!
হাসানঃ কি করবো, বলো? পুরো দায়িত্বটা অনিচ্ছা সত্বেও আমার কাঁধে এসে চাপলো। লোকটা যে স্পট ডেড, তা বুঝতেই পারিনি! শুধু শুধু হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করলাম।
(ঐশির রিএ্যাকশান। )
হাসানঃ ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য লোকটার ব্যাগ ট্যাগ ঘেঁটে আসল পরিচয় মিললো। কী যেন নাম... ও হ্যাঁ, জামান।
জামান আবু শাহরিয়ার। কুমিল্লার কোন কলেজের যেন লেকচারার। রিয়্যালি ব্যাড লাক...
(ঐশির রিএ্যাকশান। )
হাসানঃ যাকগে বাদ দাও তো এসব! যা হবার হয়েছে। তুমি খেয়েছো?
(ঐশি যন্ত্রের মতো দু’দিকে ‘না’ সূচক মাথা নাড়ে।
)
হাসানঃ চলো তবে। ভীষণ টায়ার্ড আমি। ক্ষিদায় জান যাচ্ছে... তুমি প্লিস খাবার লাগাও, আমি চট করে শাওয়ারটা নিয়ে ফেলি।
(হাসান এগিয়ে গিয়ে আবার থামে। )
হাসানঃ কই, এসো!
হাসান ফ্রেইম আউট হয়।
ঐশি ভাবলেষহীণ মুখে যন্ত্রচালিতের মতো এক পা এক পা করে এন্ট্রেন্সের বাঁক ঘুরে ড্রয়ইং রুমে প্রবেশ করে। ঐশি ড্রয়ইং রুমের চারিদিকে তাকায়। খন্ড খন্ড দৃশ্যে জামান এই বাসায় প্রবেশ করার আগে ড্রয়ইং রুমের পূর্বাবস্থা বুঝানো হবে। দেয়ালের বেঁকে থাকা মুখোশটা আগের মতই সোজা হয়ে ঝুলছে। টিভির উপর রাখা ডেস্ক ক্যালেন্ডারের পাতায় আগের মতোই মার্চ মাস দেখা যাচ্ছে।
সেন্ট্রাল টেবিলে রাখা ট্রে সহ চায়ের কাপ, পানির গ্লাস, ট্যাবলেটের স্ট্র্যাপ, দলা পাকানো টিস্যু পেপার- সব উধাও। টেবিলটা আগের মতই পরিপাটি, ম্যাগাজিনগুলো আগের মতই গুছিয়ে রাখা আছে। ক্যামেরা ঐশির দৃষ্টি অনুসরণ করে ধীরে ধীরে প্যান করে সোফায় পড়ে থাকা গোলাপের স্টিকটার উপর এসে স্থির হয়।
ফ্রীজ
@ লেখক কর্তৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।