আমি যখন দর্শন এবং প্যারাসাইকোলজী নিয়ে মেতে আছি তখন আশপাশে আমার বন্ধুরা প্রেম এবং নারী বিষয়ক বিষয়ে মহাব্যস্ত, আমরা (আমি এবং আমার খুব কাছের বন্ধু) তখন তাদের কাছে রীতিমত নাদান। কেন জানি কোন এক অজানা কারণে আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করতাম, হতে পারে সেটা আমার কনফিডেন্সের অভাব কিংবা আমার উন্নাসিকতা। কবিতা এবং লিটল ম্যাগ এ দুটো তখন আমার ধ্যান জ্ঞান যদিও ২০০১~২০০২ সালে তখন আমাদের সেই মফস্বল শহরে বাস করে কবি হওয়া কিংবা লিটল ম্যাগ বের করার চিন্তা ভাবনা ছিল চরম ভাবে হাস্যকর এবং এগুলো পুরোনো ব্যাপার স্যাপার এই ভেবে কেউ এগুলো নিয়ে মাথাও ঘামাত না। আর আমার বেড়ে ওঠা হয়েছে এক মিশ্র অবস্হাতে তখন সদ্যই আমদের এই দেশে মোবাইলের ব্যবহার শুরু হয়েছে মানুষের ভেতরে এক পরিবর্তন হচ্ছিল,শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, সময়ের এই পরিবর্তন আমাদের মত ইয়াংদের উপর প্রভাব পড়েছিল বেশি । ইন্টারনেটের অবারিত দুয়ার আমাদের কাছে ধরা দিচ্ছিল একটু একটু করে এত কিছুর ভিড়ে আমরা হারাচ্ছিলাম আমাদের কিছু পাগলামি।
তারপরও যুগের নিয়মে কেউ কেউ থেকে যায়, সবাই তো আর যুগের সওয়ার হতে পারেনা। প্রেম তখনও করা হয়ে ওঠেনি আর করব এমনও ইচ্ছে ছিলনা প্রথমত বেশির ভাগ সময় প্রেমে মত্ত থাকতাম নিকোলাই অস্ত্রোভস্কির তোনিয়ার সজ্ঞে, কখনও বা রবীন্দ্রনাথের নন্দিনীর সজ্ঞে আর বন্ধুদের ছ্যাবলামো দেখে মনে মনে কষ্ট পেতাম। তবে বন্ধুদের কাছে নারী বিষয়ক ছবক পেতাম আর এই সময় আমার পরিচয় ঘটে পর্ণো মুভির সাথে প্রথম যেবার আমি দেখলাম সত্যি কথা বলতে আমি শিহরিত এবং রোমাঞ্চিত বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এমনও হয় !! আস্তে আস্তে শুরু এরপর আমার আর এক বন্ধু যে এখন ডাক্তার সে পরিচয় করিয়ে দেয় স্বমেহনের সাথে। আমি প্রতিবার পুলকিত হতাম আবার নিজেকে নিয়ে দ্বিধান্বিত হতাম কারণ আমার এতদিন শিখে আসা কিছু সংস্কার যা আমাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করত। ভালই চলছিল সবকিছু, বন্ধুদের সাথে আড্ডা , বই পড়া , ঘুরে বেড়ানো, মনের ভেতর চেপে থাকা কবি হওয়ার স্বপ্ন।
কিন্তু বাধ সাধল হুমায়ন আজাদের নারী এবং সঞ্জীবের “লোটা কম্বল” বইটি।
নারীকে নিয়ে সে ভাবে কখনও ভাবিনি বাড়ীতে মাঝে মাঝে যখন বাবা মায়ের ঝগড়া লাগত (আমাদের সামনে কম হত) তখন দেখতাম বাবা হয়ত কোন কিছু অযৌক্তিক বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে লাগত আর মা নিজ়ে জানত যে তার কোন ভুল নেই তারপরও বাবা যেন অখুশি না হন সেজন্য সে দোষ স্বীকার করে নিত। মায়ের জন্য খারাপ লাগত, কিন্তু মা সবসময় বলত সংসারে সুখ টিকিয়ে রাখতে গেলে কাউকে না কাউকে স্যাক্রিফাইস করতেই হয় । আমি মেনে নিতাম কারণ আমি বুঝতাম মায়ের পক্ষে স্যাক্রিফাইস এর বেশি কিছু করাও সম্ভব নয়।
নারী বইটি আমার সদ্য জাগ্রত গর্বের বস্তু পৌ্রুষ বিষয়টিকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় বলা ভাল নতুন ভাবে ভাবতে শেখায়।
সেই রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, গসপেল, হাদিস এবং পৌ্রাণিক কাহিনীর তথাকথিত নায়িকাদেরকে সতীস্বাদ্ধী, পতিব্রতা রুপটি যতটা না তাদের, তার চেয়ে বেশি আরোপিত এটা আমি বুঝতে শিখলাম। সেই কৃর্তিবাস বর্ণিত রাবনের মুখে সীতার বর্ণনা যেভাবে দেওয়া হয়েছে তাতে সীতা উত্তম ভোগ্যপণ্য ছাড়া কিছুই মনে হয়নাঃ
“হেম বর্ণে ! তুমি পদ্ম মাল্য ধারিণী পদ্মিনীর ন্যায় বিরাজ করিতেছ। ...তোমার দন্তসকল সমচিক্কণ পান্ডু বর্ণ এবং সুক্ষাগ্র...তোমার নিতম্ব মাংশল ও বিশাল, উরু করিশুন্ডাকার এবং স্তনদয় উচ্চ, সংশ্লিষ্ট, বতুল, কমনীয় ও তাল প্রমাণ, উহার মুখ উন্নত ও স্হুল, উহা উৎকৃ্ষট রত্নে অলংকৃ্ত এবং যেন আলিঙ্গনার্থে উদ্যত রহিয়াছে। “
নারী এবং পরবর্তীতে সিমোন দ্যা বোভেয়ারের লেখা হুমায়ন আজাদের অনুবাদ বই “দ্বিতীয় লিঙ্গ” আমাকে নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মান করতে শেখায়।
প্রথম প্রথম হুমায়ন আজাদের উপন্যাস আমাকে সেভাবে টানতনা কিন্তু তাঁর ক্ষুরধার লেখা, প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা, অনমনীয় মানসিকতা আমাকে মুগ্ধ করে আমি খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম যখন আমি প্রথম “পাক সার জমিন সাদ বাদ” পড়ি এবং সেটা পড়েছিলাম ইত্তেফাকের সেই ঈদ সংখ্যাতেই , পরে আমি আমার বাবাকে পড়তে দিই এবং বাবা পড়েই বলেছিলেন হুমায়ন আজাদের জীবন নিয়ে আমি চিন্তিত আর প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস তার কিছুদিন পরেই ২৭ শে ফ্রেব্রুয়ারীতে কাপুরুষ ঘাতকরা রাতের আঁধারে প্রগতিশীল, সাহসী চরম ভাবে সত্যবাদী এই মানুষটিকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে।
আমি তখন বাংলাদেশের বাইরে ইন্টারনেটে তার সেই রক্তাক্ত ছবি দেখে মনে হয়েছিল আমরা কোন দেশে বাস করছি ! এই কি কোন সভ্য দেশের অবস্থা । তবে এটাই বলতে পারি জীবিত হুমায়ন আজাদের চেয়ে মৃত হুমায়ন আজাদ আরও বেশি শক্তিশালী।
এই লেখাটা আমি যখন শুরু করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম আমি জীবনের ধারাবাহিকতায় অনুভূতি গুলো লিখব কিন্তু এই পর্যন্ত এসে মনে হচ্ছে আমার সেই পুরানো অনুভূতি গুলো অনেকাংশেই এখনকার অনুভূতি গুলো দিয়ে exploit হয়ে যাচ্ছে, সেজন্য এখন এইটাতে আর সময়কে ধরবনা এবং সেই চেষ্টাও করবনা, শুধু আমার একান্ত অনুভূতির কথা গুলো বলব।
মানুষ কোন কোন সময়ে তার ভেতরের কিছুকে অন্যভাবে অনুভব করে , হয়ত এমন হয় যেটা তার চোখের সামনে এত দিন ছিল কিন্তু তার ভেতরের রুপটি চোখে পড়েনি কিন্তু কোন বিশেষ সময়ে সেটা আবার নতুন ভাবে ধরা দেয়। এই ব্যাপারটা ঘটল সেদিন আমি অফিস থেকে আসার পথে গান শুনছিলাম Kenan এর Waving Flag গানটা আগেও কয়েকবার শুনেছি কিন্তু সেদিন শুনছিলাম Original version টা কোকাকোলার পরিবর্তিতটা না, তো শুনতে শুনতে আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলাম আর গানের কথা গুলো আমার মনের ভেতরে আঘাত করছিল আর আমার মনে হচ্ছিল আমি হাজার হাজার পতাকার সমুদ্রে সাঁতার কাটছি।
(চলব)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।