আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার খেরো খাতা-৩ ( আমার বিশ্বাস, অবিশ্বাস)



আজ ১লা সেপ্টেম্বর, সকাল থেকেই টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে , অফিসও আজকে ছুটি কিন্তু আমার চোখ সেটা জানেনা কিংবা মানেনা সে বরাবরের মত ৭টায় নিজেকে মেলে ধরে বসে আছে। আর আমি আমার দুষ্ট চোখ দুটোকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সাত সকালে কম্পু খুলে খেরোখাতা লিখতে শুরু করেছি। কিছু কিছু দিন কিছু কিছু স্মৃতিকে তীব্রভাবে ফিরিয়ে দেয় , আজকে সেটাই হচ্ছে। স্মৃতি ব্যাপারটা এমন যেটা খারাপ সেটা বার বার মনে করিয়ে দেই কিন্তু যেটা ভাল তাকে এক্কেবারে হাইড ফাইল করে ফেলে। আজকে আমার বান্ধবী অনুপমার এবং বন্ধু হেরাতের জন্মদিন।

কিন্তু এখনও তাদের কে আমি সরাসরি উইশ করতে পারিনি, কারণ অনুপমা মূলত কেরালার মেয়ে এখন থাকে ভুবনেশ্বর এ আর হেরাত শ্রীলংকার ক্যান্ডির ছেলে এখন থাকে কলোম্বোতে, আর আমি বসে আছি ঢাকাতে । একটা সময় ছিল যখন ১২ টা বাজার সাথে সাথে জন্মদিনের উইশ না জানলে বন্ধুরা অভিমান করত , কিন্তু এখন সেগুলো দূ্র অতীত। অনেক সময়ই আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছি আসলে বিশ্বাস, নৈতিকতা এই জিনিসগুলো কিভাবে তৈরী হয় বা কিভাবে একে সঙ্গায়িত করা যায়। অনেকেই একে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যায়িত করে থাকে হয়তবা বলে এটা একটা ব্যাক্তির বেড়ে ওঠার পরিবেশ, তার পারিপ্বার্শিকতা এবং অবশ্যই তার জিন এর বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভর করে। সবই বুঝি কিন্তু সমস্যা হয় যখন বুঝি, না এটা করলে নৈতিকতার কোন সমস্যা নেই কিন্তু তারপরও মন পরিপূর্ণ সায় দেয় না তখন।

এটা প্রথম হয়েছিল যখন আমি তীব্র ভাবে অনুপমাকে অনুভব করতাম কিন্তু ও মূলত ভালবাসত অন্য এক ছেলেকে। কিন্তু আমরা খুবই ভাল বন্ধু ছিলাম তখন খুব ইচ্ছে করত ওকে একটা চুমু দেই, কিন্তু এই ইচ্ছেটার কথা কখনই ওকে বলতে পারিনি, কেন পারিনি কারণ আমার মনে হত একটা মেয়েকে ভালবাসা ছাড়া বন্ধুত্বের পর্যায় থেকে চুমু দেওয়া যায়না এবং এটা ঠিক না, এটাতে বন্ধুত্বের অবমাননা হয়। এরপরে আমার অনেক বন্ধুই তাদের সেক্সুয়াল অভিজ্ঞতার কথা বলেছে এবং আমি বুঝতে পারতাম যে তাদের অনেকের ভেতরেই প্রেম বিষয়টা অনুপস্থিত, তাদের যেটা আছে সেটা হচ্ছে তীব্র কাম। যদিও এখন আমি বিশ্বাস করি যে দু জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সম্মতিতে যদি কোন সম্পর্ক তৈ্রী হয় তাহলে সেটাকে কোন ভাবেই ন্যায় বা অন্যায় এর পর্যায়ে ফেলা যায় না। তবুও এটা কেন জানি আমি মেনে নিতে পারিনা , হতে পারে সেটা আমার কমজোরী ব্যাক্তিত্ব কিংবা সমস্ত বিশ্বাস কেই বাস্তবে দেখার সাহস না থাকা।

ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে আসলে কিছুই বলতে ইচ্ছে করেনা এই সামহোয়্যারইন ব্লগে। এর প্রথম কারণ এখানে যারা ধর্মের পক্ষে এবং বিপক্ষে কথা বলে তারা প্রত্যেকেই সমান ভাবে প্রতিক্রিয়াশীল এবং কেউ কেউ এক কাঠি সরেস, তারা আবার গালিগালাজ করে শান্তি পায় না সেটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে যা করে তাতে ব্লগের আলোচনা করার পরিবেশ টাই নষ্ঠ হয়ে যায়। যা সামহোয়্যার এর মত পাবলিক ব্লগে কোন ভাবেই কাম্য নয়। তবে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে সংশয়বাদী । আমি বিশ্বাস করি ধর্ম মানা না মানা এক জন ব্যাক্তির একান্তই ব্যাক্তিগত অভিরুচি সেটা নিয়ে গালিগালাজ, দলাদলির কোন মানে হয়না।

এটা অবশ্যই ঠিক যে, প্রতিটা ধর্মেই কিছু Controversy জিনিস আছে, আছে কিছু ফ্যানাটিক মানুষ, তারপরেও আমরা যদি অভার অল চিন্তা করি তাহলে দেখব নৈতিক উন্নতি, মানুষ মানুষের প্রতি সৌহার্দ্য ভ্রাতৃ্ত্ববোধ বৃ্দ্ধিতে ধর্মের অবদান নিতান্তই ফেলে দেওয়ার মত নয় কিন্তু সমস্যা যেটা হয় সেটা আসলে ধর্ম নিয়ে নয় ধর্মের ব্যাবহার নিয়ে। কারণ নাস্তিকরা ধর্মের মূল দোষ ত্রুটির চেয়ে মোল্লা, পুরোহিত, পাদ্রীদের যথেচ্ছ ধর্মকে ব্যবহারের সমালোচনা করে থাকে বেশি কিন্তু কিছু মাথা মোটা তথাকথিত আস্তিক ধর্মের যে কিছু ভূল থাকতে পারে বা ভূ্ল ব্যাবহার হতে পারে সেটা স্বীকার না করে ধর্মের মুখোশ পরে সবচেয়ে অধর্মের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আর নাস্তিকেরাও তাদের বিশ্বাসের যে মূলভিত্তি মানবতাবাদি তার থেকে সরে এসে তারাও সমান ভাবে ওই সব আস্তিকদের সাথে লড়তে থাকে, তখন সত্যিকার অর্থেই আমি তাদের মধ্যে কোন পার্থক্যই খুঁজে পাই না। ধর্মের সবচেয়ে অন্ধকার দিক হচ্ছে এর কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস। কারণ যেখানে যুক্তি নেই সেখানে মুক্তি অসম্ভব।

তারপরে সবচেয়ে ক্ষতিকর হচ্ছে ধর্মের ভূল এবং মনগড়া ব্যাখ্যা , ছোটবেলা থেকে আমাদের বাড়ীতে দেখে আসছি আমার ঠাকুমা, মা যখন চন্দ্র কিংবা সূর্য গ্রহণ লাগত তখন সমস্ত রান্না করা ভাত, তরকারী ফেলে দিত কিংবা কূলের কাঁটা দিয়ে রাখত, ফেলে দেওয়ার না হয় একটা যুক্তি আছে যে, গ্রহণের সময় আলোক রশ্মির প্রভাবে খাবার গুলো নষ্ঠ হতে পারে কিন্তু সবচেয়ে বড় কুসংস্কার কূলের কাঁটা , এটা দিয়ে রাখলে তা আর গ্রহণের প্রভাবে খাবার নষ্ঠ হয়না এর যুক্তি সঙ্গত ব্যাখ্যা আমি পাইনি। এটা শুধু একটা উদাহরণ এরকম হাজার হাজার কুসংস্কার তৈরী হয়ছে ধর্মকে ঘিরে আর এগুলোই ধর্মের মূল জায়গা থেকে চিন্তাশীল মানুষ কে সরিয়ে দিচ্ছে বার বার। আর এভাবেই ধর্ম হয়ে পড়ছে প্রতিক্রিয়াশীল, লোভী, সুবিধাভোগী মানুষের ব্যাবসায়িক হাতিয়ার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।