আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড্ড বেমানান দেখায়



আমার আজকের লেখার শিরোনাম দেখে একটু অবাকই হবেন পাঠককূল। আজ ১৬ ই মে' ২০১০ দেশের পত্রিকাগুলোর শিরোনাম কি তা বোধকরি কাউকে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের সকল সচেতন ও শিক্ষিত-অশিক্ষিত লোক মাত্রই খবরটি জানেন বৈকি। সংবাদটি হলো গতকাল দেশের সবগুলো শিক্ষাবোর্ড একযোগে তাদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছ । ভালো ফলাফল, জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি, পত্রিকার পাতা জুড়ে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ উৎসব, শিক্ষকদের মহান বাণী, অভিবাবকদের তৃপ্তির হাসি ইত্যাদি ছিল আজকের পত্রিকার প্রধান উপজীব্য।

তার উপর রয়েছ আমাদের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের আনন্দে আত্নহারা হওয়ার সংবাদ। সবই ঠিক আছে, আমরাও খুশি ছেলে মেয়েদের এ আনন্দে। তবে পত্রিকার এ আনন্দের সংবাদগুলোর মাঝে যেন বাধ সেধেছে দু-একটি ছিটেফোঁটা নিরস সংবাদ। আমার দৃষ্টি কেন জানি বারবার সে দিকে শুধু নিবন্ধিত হয়। অনেকে হয়তো বলবেন এ আবার কেমন বেরসিক লোক।

আজ সবাই আনন্দে মশগুল, তার মধ্যে লোকটা বিষাদের গন্ধ খোঁজে । তবুও কি করা-- আনন্দের পাশাপাশি দু:খের খবরগুলোর মধ্যে একটা তুলনা করাই আমার এ লেখার উদ্দেশ্য। আমি বলছিলাম নীলফামারির সদর উপজেলার পাটকামুড়ী গ্রামের হাসিনুর রহমানের কথা। হত দরিদ্র কৃষকের ছেলে সে, এবার এসএসসিতে নীলফামারী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছ হাসিনুর। আরেকজন হলো বগুড়ার শাহজানপুর উপজেলার মাঝিড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রী তহমিনা।

তার পিতা-মাতা বেঁচে নেই, পাঁচ ভাইবোন। তহমিনা জানায়, ইংরেজী ২য় পত্র ও বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষার দিন তার বাড়িতে কোন ভাত রান্ন হয়নি এবং অগত্যা সে ঐদিন না খেয়েই পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। সিলেটের হাতেম আলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে সোহেল রানা। তার বাড়ী চট্টগ্রামের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালি গ্রামে। তার বাবা সিলেট একটি সরকারী হাঁস-মুরগী খামারে ৩য় শ্রেণীর চাকুরী করেন।

অভাবের সংসারে সোহেল নিজে সব্জি চাষ করে বাজারে বিক্রি করে উর্পাজন করতো। উপরের তিনটি কাহিনী একটি পত্রিকায় উঠে এসেছে। এজাতীয় অনেক ঘটনাই হয়তো আমাদের জানার তীমিরেই থেকে যেতো যদি না পত্রিকায় দেখতাম। শহুরের উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়া ছেলে মেয়েগুলোকে এবং উপরের বর্ণিত হতদরিদ্র অদম্য ছেলেমেয়েগুলোকে একই চোখে উপলব্দি করলে যেন বড্ড বেমানান দেখায়। আজকের পত্রিকার পাতার উৎফুল্ল সৌন্দর্যটুকু যেন মলিন বদনগুলো চুষে নিয়েছে।

যদি একটা অবান্তর প্রশ্ন করি পাঠককে- কারা প্রকৃত মেধাবী? হাস্যেজ্জল মুখগুলো যাদের পেছনে কাড়ি কড়ি টাকা খরচ করা হয়েছে, প্রায় প্রতিটি বিষয়ের প্রাইভেট টিউটর, মা-বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম, যত্ন-আত্তি ইত্যাদি নাকি সেই আধপেটা দরিদ্র তহমিনা, সব্জি বিক্রেতা সোহেল বা হতদরিদ্র হাসিনুর। আমি আগেই বলেছি আমার কারা মেধাবী এ প্রশ্ন আজ অবান্তর । কারণ সবাই দেখে ফলাফল। আর আমি কিন্তু কারো বিপক্ষে নই । আমি শুধু সমাজের ব্যবধানটুকু বুঝানোর জন্য এ লেখা লিখছি।

কাউকে ছোট বা বড় করার জন্য নয়। যারা সোনার চামুচ মুখে দিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছ এটা তার কলংক নয় বরং আর্শীবাদই বলা চলে। আর যারা সোনার বা রূপার চামুচ থাক বরং কোন চামুচই মখে দিয়ে জন্মায়নি তাদের জন্মই আজন্ম অভিশাপ বলতে হবে। সমাজে এত বিত্তবান, এত এত কোটিপতি- আমরা কি পারিনা আমাদের নিজ নিজ এলাকায় একটু খবর নিয়ে দেখতে যে কোন ছেলেমেয়েটা খেয়ে না খেয়ে লেখাপড়া করছে। আমাদের যাদের বিস্তর রয়েছে তারা তাদের অঢেল সম্পদ থেকে সামান্য ছিটেফোঁটা দিলেও হত দরিদ্রদের লেখাপড়ায় কোন সমস্যা হবার কথা নয় ।

আমরা চাই সমাজের সবাইকে নিয়ে সমানভাবে বাঁধভাঙ্গা হাসতে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।